আয়লা
– অঞ্জনা গোড়িয়া
সেদিন ও ছিল ভয়ঙ্কর রণচন্ডাল মূর্তি ।এক নিমেষেই “ও “সব তছনছ করে দিয়েছিল। সাধের বিয়ের আসর । প্যান্ডেল ,বর আসর আর কনের চোখের স্বপ্ন ।
ভাবতে পারে নি কনে । তাঁর স্বপ্নে দেখা রাজপূত্র এমন ঝড়ো হাওয়ায় স্বপ্নকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ।বরের চোখে ও নিরাশার ছায়া । এ বিয়ে কিছুতেই নয় । শূন্য আসরে বিনা শঙ্খধ্বনি বিনা উলুতে বিয়ে ?হবে না এ বিয়ে । অন্য কোন দিন, অন্য কোন সময় অন্য কোন কনে ?চমকে উঠে ছিল মেয়ের বাবা । কন্যা লগ্ন ভ্রষ্টা হবে ?
দুমাস আগে থেকেই ঠিক ছিল বিয়ের তারিখ ,সময়, দিন ।সব ঠিক মতই চলছিল। হঠাৎ তিন দিন আগে খবর শোনা গেল “ও “আসছে । সব কিছু ধ্বংস করতে । উড়িয়ে নিয়ে যেতে আসছে রনমূর্তি রূপে ।তখন উভয় পক্ষের সব আয়োজন ,সাজসজ্জা প্রায় সম্পূর্ণ ।এই অবস্থায় দিন পরিবর্তন ঠিক নয় । ভেবে ছিল হয়তো” ও” দিক বদলে অন্য কোন পথে চলে যাবে ।তাই ঠাকুরের নাম নিয়ে শুভ দিনটার অপেক্ষায় ছিল সবাই ।
অসহায় বাবার একমাত্র কন্যা ।সাধ্য মত আয়োজন করেছিল । ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়ে ছিল বর আসর। রাস্তায় তখন মিষ্টি, মাংসের গাড়ি । আত্মীয় পরিজন অনেকেই ভয়ে ভয়ে অনুপস্থিত । কেউ বা রাস্তায় ।
বরের বাড়ি ও দুশ্চিন্তার কালো ছায়া । বরের গাড়ি যেতেই চায়ছে না । বরযাত্রীর গাড়ি বন্ধ করা হল । গ্রামের গাছগাছালির ভেতর দিয়ে শুরু রাস্তা ধরে যেতে হবে কনের বাড়ি ।আসছে “ও “প্রচন্ড বেগে কাঁপিয়ে দাপিয়ে । ধেয়ে আসছে ধ্বংস করতে। বিয়ের আসর । ভেঙে পড়ল প্যান্ডেল । চারিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিন্ন ফুলের পাপড়ি । যার সুগন্ধে কনের চোখে বিষাদের ছায়া । কনের মা অসহায়া । কনের বাবা ঘনঘন ফোন । বরের বাড়ি । আসতে ই হবে যেনতেন প্রকারেন । একসময় ফোনটার ও সুইচ অফ হল । যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হল বরের সাথে ।মেয়ের মা ঘনঘন মূর্ছা যাচ্ছে ।বর,চুপচাপ সাজ খুলে দোর বন্ধ করে বিছানায় ।একটায় কথা আজ নয় বিয়ে শুন্য আসরে ।আনন্দের উৎসবে আজি বিষাদের সুর বেজে উঠল ।এক সময় শান্ত হল” ও “।চারিদিক শুনসান । চুপচাপ । এবার যাত্রা হোক শুরু । কিন্তু গাড়ি কোথায় ?
ঠিক সেই সময় এসে হাজির মেয়ের বাবা । চোখদুটি ছলছল । সঙ্গে কিছু লোকজন ।কাঠারি কুড়ুল যে যা পেরেছে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত ।বরমশাই কে রাজী করান হল। বরের পাঞ্জাবীতে সাজিয়ে দিল ফুলের মালায়। ভরিয়ে দিল সুগন্ধ বডিস্পে তে।সামনে যুদ্ধ গাড়ির ন্যায় যন্ত্রধারী লোকজনের গাড়ি । যেখানে যত গাছ ,ডালপালা ছিল পড়ে ।ওরা কয়েক জন সাফ করতে করতে এগিয়ে চলল সম্মুখে ।
ঠিক একমিনিট বাকি বিয়ের সময় । পৌঁছে গেল বর । শুরু হল শুভ পরিনয় ।
বেজে উঠল শঙ্খধ্বনি ,উলুধ্বনি ।কনের চোখে স্বপ্ন এল ফিরে ।ফুলের সুগন্ধে বিয়ের আসর ঘিরে ।আকাশে তখন বিদ্যুতের ঝল্ কানি ।গুরু গম্ভীর গর্জনে স্বাগত বিদ্যুৎবানী ।দুই হাত মালাবন্ধনে মিলিত হল । আবার একটা গর্জন ধ্বনি । পটকা বাজী নয় এযে প্রকৃতির আশির্বাদ ধ্বনি ।”ও ” এসে ছিল ধবংসের মাঝে সৃষ্টির বার্তা নিয়ে । “ও” যে আয়লা ঝড় ।