অণু গল্প

অণু গল্প- মৃত্যুর মাঝে

মৃত্যুর মাঝে
-অঞ্জনা গোড়িয়া

পাশের সিটটা ফাঁকাই পড়ে রইল।
আরো চারটি সিট এখনো আছে। প্রতিদিন সকাল- বিকাল এসে বসতো পাঁচ বন্ধু, গল্প করত। হাসি ঠাট্টা করতো। চা বিস্কুটে মুচমুচে দিন কাটত। আজ বিকালে একটা সিট ফাঁকা হয়ে গেল।

চলে গেল বহুদূরে। হসপিটালে ভর্তি করা হল। তবু বাঁচানো গেল না কানাইবাবুকে।
হার্টএটার্ক, মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল। হাসি খুশির দিনগুলিতে একটা আতঙ্ক গ্রাস করল। মনগুলি সব নিস্তব্ধ।

কিছু মাস যেতে না যেতেই আবার বিদায় নিল প্রফুল্ল মাস্টার। আরো একটা সিট খালি।
চিন্তায় ভাবনায় ওনারা তিন জন আরো ঝিমিয়ে পড়ল। এক দিন কেউ না উপস্থিত হলেই মনে আতঙ্ক আসে। তবে কি আর ফিরবে না?

পিতৃহীন অহনা নতুন করে বাবা পেয়েছে। স্নেহ মায়া মমতায় ভরিয়ে দিয়েছে শ্বশুরমশাই। বাবার অভাব বুঝতেই পারে নি। কবিতা ও সকল সুখ দুঃখ, সুবিধা -অসুবিধাগুলি বাবার সঙ্গে ভাগ করে নিত। অসুখ করলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেত ডাক্তার খানায়। শ্বশুর- বাবাকে কিছুতেই হারাতে দেবে না।

হঠাৎই কেমন চুপচাপ হয়ে গেল শ্বশুরমশাই। জানতে পারল কবিতার শ্বশুর অসুস্থ। ছোটবেলার পাঁচ বন্ধু আজও সমান বন্ধুত্ব, সম্পর্ক। কিন্তু একে একে সবাই চলে যাচ্ছে শ্বশুরমশাইকে ছেড়ে। একমাস আগে আরো এক বন্ধুকে হারিয়েছে। আর মাত্র দু’জন জীবিত সিটে। নদীর তীরে বসে, উদাস ভাবে চেয়ে মিলিয়ে যাওয়া ঢেউগুলিকে দেখে।

এমনি এক সকালে গিয়ে শুনল, সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার রথীনবাবুর প্রচণ্ড জ্বর। হাতে পায়ে ব্যথা। লাঠি ধরেও আর আসতে পারবে না।

অহনার শ্বশুর, সম্পূর্ণ একা হয়ে গেল।
কিছু দিন আগে মাথার পিছনে একটা ছোট্ট ফুসকুঁড়ি দেখা দিয়েছিল। অনেক হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়েও ভালো হয় নি। ডাক্তার বলল, অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। হসপিটালে ভর্তি করতে হল।
বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই আর নেই। এই অবস্থায় অপারেশন করলে জীবনের ঝুঁকি হতে পারে। একে হার্টের রোগী ।

অহনা বাবার কাছে গেল। কিছু কথা বলল।
কথাগুলি শুনেই চোখমুখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফুটে উঠল । হাসতে হাসতে অপারেশন রুমে চলে গেল। আর বলে গেল, আমার জ্ঞান ফিরলেই রথীনকে দেখতে চাই।দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

অহনার বুকচাপা যন্ত্রণা চোখ দিয়ে অশ্রুধারায় বেরিয়ে এল। মনকে শক্ত করে মনে মনে বলল, আমাকে ক্ষমা করো। আর যে কোনো উপায় ছিল না তোমাকে বাঁচানোর। ছোট্ট একটা মিথ্যা কথা, “রথীন বাবু সুস্থ”। 

সবে মাত্র রথীনবাবুর দেহ দাহ করে থেকে ফিরেছে কবিতার স্বামী। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page