কবিতা- হতভাগিনী

হতভাগিনী
-ডঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

 

সঙ্গতি ছিলনা কানাকড়ি! যানবাহন ছাড়াই শীতের ভোরে,
শহরের হাসপাতালের পথে, দৌড়ে গিয়েছিল ছেলেটি –
গ্রামের রাস্তা ধরে, দীর্ঘ সাত মাইল পথ ;
একাত্তর বছরের অসুস্থ মাকে, কাঁধে নিয়ে।
হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা তখন কোথাও, অন্য কোন কাজে!
পিতৃহীন যুবকের চোখে শুন্যতার কালো মেঘ, আসে ঘনিয়ে ;
ঘড়ির কাঁটা বিকেল তিনটের ঘর পেরিয়ে রাত নটা-
মুমূর্ষু বৃদ্ধার হৃৎস্পন্দন শোনবার সুযোগ করতে পেরেছেন-।।

পেরেছেন ডাক্তারবাবু, ” নিজের কাজ” সামলে উঠে এতক্ষণ পর;
মুমূর্ষু কোন মানুষের জীবনের, বিধান দেওয়ার সুযোগ!
“একবার দেখুন ডাক্তারবাবু, আমার মাকে বাঁচান “
মায়ের জন্য ছেলের আকুতি, সব বাঁধার প্রাচীর
যেন ভেঙে দেয়,কয়েকফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে
শীর্ন ছেলেটির চোখের কোল বেয়ে-
শুনেছিলেন ডাক্তার, তবে তার মতো, “সময়” করে।।
গাফিলতি মানতে চায়নি “রোগ “,ভীষন বিদ্রোহ করে,
নির্বাক প্রতিবাদে,এগিয়ে গেছে তার গন্তব্যের দিকে।

তিনটি দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে, উদভ্রান্ত ছেলে,
নিস্পলকে চেয়ে থাকে, মায়ের পান্ডুবর্ণ মুখের দিকে –
যে মুখ আত্মজের সাথে,চোখের ভাষায় বলে যায় ;
নিলামের হাটে জীবনের বাজী হেরে যাওয়ার কথা,
কড়ির কাছে ;
শ্মশানের চুল্লী অপেক্ষায় রাখেনি গেঁয়ো ছেলেটিকে;
পরম আদরে বুকে টেনে নিল –
অপাংক্তেয় ছেলের হতভাগিনী মাকে, প্রতীক্ষায় না রেখে ।।

Loading

6 thoughts on “কবিতা- হতভাগিনী

  1. মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লো…. এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না… কিন্তু হয়! এই প্রশ্নটা থাকলো মানে থেকে যাচ্ছে….

Leave A Comment