অণু গল্প

অনুগল্প- ভাত

ভাত
– শক্তি পুরকাইত

দাদা শুনছ, একটু বাইরে আসবে প্রধান সাহেব ডেকেছে! দরজার বাইরে চেনা কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে ভাতের থালা থেকে খেতে খেতে উঠে পড়ে আকাশ। মাখানো ভাতের থালা ঢাকা দিয়ে দরজা খোলে। রহিম, মেঘনাথ, সুরেশ দাঁড়িয়ে। সে জিজ্ঞাসা করে, এতরাতে প্রধানসাহেব কেন ডাকল? তারা বলল, কিছুই জানি না!
আকাশের মনের ভিতর একটা সংশয় বাসা বাঁধতে থাকে। তবে কী পুরানো হিসেব- নিকেশ মিটিয়ে নিতে চায়! ওদের দাঁড়াতে বলে, আকাশ ঘরে ঢুকে বউ সঙ্গীতাকে বলে, দরজাটা ভেজিয়ে দিও আসতে রাত হবে। ছোট মেয়েটা কখন কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে। একরত্তি মেয়েটাকে দেখলে মায়া হয়। সঙ্গীতা একা থাকে। কতবার বারণ করেছিল, বলেছিল রাজনীতি ছেড়ে দিতে। কে কার কথা শোনে! সঙ্গীতাও আর কিছু বলে না। শুধু স্বামীর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকে। আকাশ চলে যাওয়ায় সঙ্গীতা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়ে। সারারাত সঙ্গীতার দু’চোখের পাতা এক হয়নি। ভোরের আলো আধো আধো সবে ফুটেছে। সঙ্গীতার দু’চোখের পাতা জলে ভরা। সে মন খুলে কাঁদতে পারে না। স্বামীর না ফেরাই ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সে বিছানা থেকে উঠে বাড়ির উঠোন ঝাঁট দেয়। তারপর এঁটো বাসনগুলো বাইরে রেখে দেয়। আকাশের না খাওয়া ভাতগুলো থালায় যেমন ছিল, তেমনই আছে। শুধু মানুষটা নেই। দূরে পড়শিদের গুঞ্জন শোনা যায়। বড় রাস্তার ধারে কার একটা লাশ পাওয়া গেছে। শুনে সঙ্গীতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সে কী করবে জানে না। মনকে ঠিক রাখতে পারে না। তবে কী আকাশের কিছু হয়েছে! এতক্ষণে সে বুঝল আকাশ আর এ পৃথিবীতে নেই। প্রধান-সাহেবের দলবল গতকাল রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে আকাশকে খুন করেছে। সঙ্গীতা ঘরের বাঁশের খুঁটি ধরে বসে বসে কাঁদতে থাকে। সকালের সদ্য রোদে আকাশের মাখানো এঁটো ভাতগুলো খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে, কা -কা করে ডেকে যাওয়া এক ঝাঁক কাক। সঙ্গীতা দেখল কাক নয়, যেন হাসি মুখে আকাশ দাঁড়িয়ে। আর হাতের সরু সরু আঙুল থেকে ঝরে পড়ছে অজস্র সাদা সাদা ভাত।

Loading

One Comment

  • শক্তি পুরকাইত

    রাজনীতি করতে আসা মানুষগুলো নীরবে এইভাবে হারিয়ে যায় , আকাশের মত ।

Leave a Reply to শক্তি পুরকাইতCancel reply

You cannot copy content of this page