অসমাপ্ত
-শিলাবৃষ্টি
চোখে হাজার স্বপ্ন অরুণের। কিন্তু ব্যর্থতা পদে পদে। মা, বাবা, বোন তার মুখ চেয়ে দিন কাটাচ্ছে। জানে না অরুণ কিভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে! পার্টির লোকজন ধরে চাকরি তার মতো লাজুকের হবে না,
ইন্টারভিউ দিয়েই চলেছে কিন্তু কোথাও কোনো আলো দেখতে পায়না সে। টিউশনি করে কয়েকটা, বাবার সামান্য পেনশনে চলছে সংসার।
দীপা আর তার সম্পর্কটাও বন্ধুত্ব থেকে এগিয়ে গেছে। দীপার বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ দেখছে। কিছুই করার নেই। একে অন্য জাত, তার ওপরে বেকার ছেলেকে কেই বা কন্যা দান করবে!
হতাশা কুরে কুরে খায়। অরুণ মাঝে মাঝে অশান্ত হয়ে পড়ছে। দীপা পালিয়ে যেতে চায় কিন্তু অরুণের পক্ষে তাও সম্ভব নয়।
চোখের সামনে দীপার বিয়ে হয়ে গেল। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিই বা করতে পেরেছে সে!
অবশেষে প্রাইমারি স্কুলে চাকরিটা পেল অরুণ। মনটা তবু শান্ত হল না। দীপার বিয়ের আগে কেন সে চাকরিটা পেল না। এইসব চিন্তায় কষ্ট পায় সে। বছর দু’য়েক কেটে যায় ভালো মন্দে। বাড়িতে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ভালোবাসাহীন বিয়ে অরুণ করতে চায় না। আরও কিছুদিন পরে.. প্রায় সন্ধ্যে হয় হয়। অরুণ স্কুল থেকে ফিরছে। প্রচন্ড মেঘ আকাশে। কালবৈশাখী ঝড় প্রায় শুরু হয়ে গেছে, পা চালায় অরুণ। কিন্তু পলাশ গাছটার পাশে সাদা শাড়ী পরে কে যেন দাঁড়িয়ে, এই সময় এখানে দাঁড়িয়ে আছে কে! চলে যেতে পারে না অরুণ, অস্বস্তি দানা বাঁধে। এগিয়ে যায়, “কে ওখানে? ঝড় এসে গেছে। কে ওখানে?”
মহিলা খুব ধীরে আত্মপ্রকাশ করে। সামনে এগিয়ে আসে। দীপা! চরম বিস্ময় অরুণের। আলো আঁধারিতে ঠিক বুঝতে পারে না অরুণ।
-“অরুণদা, আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
-“অপেক্ষা? অপেক্ষা তুমি করতে পারোনি দীপা..” অরুণ না বলে পারে না কথাটা।
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে অরুণদা..”
-“কিন্তু ঝড়! বৃষ্টি শুরু হবে।”
– “হুম, তাই বল, বরাবর আশঙ্কাই করলে অরুণদা! চলো না ঐ নাটমন্দিরটায় একটু বসি, সেই আগের মতো”।
–“কেউ দেখলে কী ভাববে? তুমি পরস্ত্রী এখন”
– “অরুণদা! পরস্ত্রী ভেবে আমার দিকে এখনো ভালোভাবে তাকাওনি বুঝি? দেখ, আর আমি পরস্ত্রী নই, সব শেষ অরুণদা।”
কী বলছে দীপা, বুঝতে কষ্ট হয়, ভাবতে আরও কষ্ট হয়। দীপা কী বিধবা হয়ে ফিরে এসেছে! অন্ধকারে ভালোভাবে কিছু দেখতে পায়না অরুণ। নাট মন্দিরে বসে অনেক কথা বলে গেল দীপা। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়েই দীপা বুঝেছিল তার স্বামী একজন গে, কোন মেয়ের প্রতি তার আকর্ষণ কোনদিন ছিলনা। সমস্ত আকর্ষণ এক পুরুষ বাল্যবন্ধুর ওপর। নাম-কান্তি, তার সঙ্গেই সারাদিন মেলামেশা।
বুঝতে পারেনি বাড়ির লোক, ভেবেছিল বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, সবটাই ভুল। তাই ডিভোর্স অনিবার্য, তার স্বামীও তাকে মুক্ত করতে চায়।
ফিরে এসেছে অবশেষে দীপা, কিন্তু অরুণ কি করবে।কেমন যেন সব ওলোট-পালোট লাগে, দীপা অনেক্ষণ নীরব হয়ে বসে থেকে বলে, ‘চলো অরুণদা, বৃষ্টি থেমে গেছে।
হাঁটতে হাঁটতে দীপা আরও বলে, “অরুণদা, তুমি খুব সমস্যায় পড়লে তাইনা? তুমি চিন্তা করোনা। না, গো আর বিয়ে করার মানসিকতা আমার হবে না। তুমি আমার পরম বন্ধু, তাই তোমাকে সবটাই জানাতে চেয়েছিলাম, জানালাম। আমায় একটা কাজ খুঁজে নিতে হবে। জীবনকে আমি ব্যস্ত করে তুলবো অরুণদা। তুমি শুধু বন্ধু হয়ে আমার পাশে থেকো, হাতটা ছেড়ে দিওনা কোনদিন…”
অরুণ দীপার ডানহাতটা ধরে বলে, “নিশ্চিন্ত হয়ে পথ চলো দীপা, এই অন্ধকার বন্ধুর পথে তোমায় আমি পড়ে যেতে দেবনা।”