অণু গল্প

অণু গল্প- নীলা সবার জন্য নয়

নীলা সবার জন্য নয়
-সুস্মিতা ঘোষ

সারাবছর কার্নিশে জমে থাকা প্রেমগুলো পুজোতে যেন রঙ ফিরে পাই। কে জানে কেন? পুজো এলে বুঝি এই মনটাও ভালোবাসার সঙ্গী খোঁজে! একাকিত্বকে ভুলতে। এই সব আকাশ পাতাল ভাবছি, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো দৌড়ে গিয়ে ধরলাম, ফোনটা তখন খাটের উপর। নাম্বার উঠেছে বুঝতে পারলাম অচেনা কেউ। হ্যালো কে বলছেন, কাকে চাই, বললো তোমাকেই চাই ,অসভ্য বলে ফোনটা কেটে দিলাম। এই ভাবে দিনে সাত আট বার ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসে আর কেটে যায়। এবার প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে ফোনটা ধরলাম কিছু মন্দ কথা বলবো বলে, ও পাশ থেকে মৃদুস্বরে বলে উঠলো থামো শান্ত হও আমি তোমাকে চিনি মনে হচ্ছে তুমি ভুলে গেছো। কপালে একটা টিপ পড়ো তোমায় ভারী মিষ্টি লাগে। আপনি কে? সময় এলে জানবে। আস্তে আস্তে কৌতুহল বাড়তে লাগলো, যে সে কে? কিন্তু কিছু বুঝতে পারলাম না। পরদিন আবার ফোনে বলে উঠলো শোনো এখনো কী লাল রঙটা পছন্দ করো নাকি অন্য রঙ? আচ্ছা এখনো কী কাজল পড়লে জল বের হয় নাকি বড় হয়ে গেছ তুমি!! কিছুটা অবাক হয়ে ভাবলাম ও কী করে এতো কথা জানে। ষষ্ঠী মায়ের বোধন শুরু হয়েছে সবাই মুগ্ধ হয়ে মায়ের সাজ দেখছি কে যেন একটা লাল গোলাপ পাশে রেখে গেছে খেয়াল করিনি তাতে লেখা এখনো কী চেনার বাকি আছে। সপ্তমীর সকাল আবার ফোনটা এলো কি গো ফাঁকিবাজ পুজোর জোগাড় করবে না আমি যে অপেক্ষায় আছি আজ ধরা দেব বলে। কথাটা শুনে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে মন্ডপের দিকে ছুটে গেলাম কিন্তু কাউকে সেভাবে চেনা লাগছে না। মনটা উদাস হয়ে গেল। চেয়ার নিয়ে বসলাম কে যে মিষ্টি বলে ডেকে উঠলো, তাকাতেই এগিয়ে এলো চিনতে পারলে না বলেই নিজের ডান হাতের পাঞ্জাবির হাতটা গোটালো ,চোখ সামনে ভেসে উঠল ছোট বেলার স্মৃতি রেগে গিয়ে কাঁসার বাটি ছুড়ে মেরে ছিলাম নীলাভকে। হাতে চারটে সেলাই, লোমের ভেতর দিয়েও আজও সে দাগ চোখে পড়ছে পরিষ্কার। লজ্জায় কান দু’টো লাল হয়ে গেল। ও হাত দু’টো চেপে ধরে বললো ভেবে ছিলে চলে গেছি, আর ফিরব না। পাগলী জানো না “নীলা” সবার জন্য নয়।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page