কবিতা- কঙ্কনদিঘি

কঙ্কনদিঘি
-সুমিত মোদক

 

দিঘিটির নাম কঙ্কনদিঘি;
মেয়েদের হাতের কঙ্কনের মতো গোল;
তাই এই নাম;
মিঠে জলের এ দিঘি আজও আছে বাদাবনের গভীরে; 
চারিদিকে কেবল নোনা জল ….
নোনা নদী, নোনা সমুদ্র, নোনা দ্বীপ, নোনা বাতাস …
অথচ, সেখানেই একটা মিঠে জলের দিঘি;
যেখানে আজও জল পান করতে আসে বাঘ ও হরিণ;
সেখানেই মিঠে জলের মাছ খেলা করে;

এখন যেখানে সুন্দরী-গড়ান-হেতালের জঙ্গল,
বাদাবনের কাদাজল, শ্বাসমূল, খাঁড়িপথ,
জেলে-মৌলেদের প্রতিদিনের জীবন-মৃত্যুর লড়াই,
যেখানেও এক সময় সভ্যতা ছিল,
গঙ্গারিডি সভ্যতা;
আমার পূর্বপুরুষের সভ্যতা;

এক সময় এখানে দক্ষিণরায় রাজত্ব করতো বাঘের পিঠে চড়ে;
এখনও করে আমাদের বিশ্বাসে;
সে বিশ্বাস থেকেই আজও পূজিত;
আজও পালাগান ফেরে সেই কাহিনী;
যুদ্ধের গল্প, বরাভয়ের গল্প ….

এখনও সুন্দরবনের সহজ সরল মানুষগুলো
প্রতিদিনের লড়াইয়ে টিকে আছে;
টিকে থাকে, টিকে থাকতে হয়
নুন আনতে পান্তা ফুরানোর গল্পে;
জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ নিয়ে;

জটারদেউল থেকে সোনাঠিকারী;
মণিনদী থেকে মাতলা, বিদ্যাধরি….
ভেসে বেড়ায় ভাটিয়ালি, আগমনী গান ;

একটা সভ্যতা ধ্বংস হয়ে আরেক সভ্যতা গড়ে ওঠা দেখেছে কঙ্কনদিঘি;
দেখেছে মহাকাল …
হয়তো আবার দেখবে প্রলয় নৃত্য!
হয়তো আবার ডুবে যাবে আমার সুন্দরবন!
আমাদের সুন্দরবন, জলের গভীরে!

আমাদের প্রত্যেকেরই ভিতরে একটা করে দিঘি আছে,
মিঠে জলের দিঘি,
কঙ্কনদিঘি;
যে দিঘি বেঁচে থাকে একযুগ থেকে আরেক যুগে;
অথচ, সে খোঁজ রাখিনা কেউই;

দিঘিটির নাম কঙ্কনদিঘি।

Loading

4 thoughts on “কবিতা- কঙ্কনদিঘি

Leave A Comment