কবিতা

কবিতা- বিদ্রোহ চেতনা

বিদ্রোহ চেতনা
রীণা চ্যাটার্জী

বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে যাবার পরে
থমকে দেখো কোনোদিন পেছনে ভিড়ে
আছি আমি তোমাদের চেতনার বাহুডোরে।

ঝরা পাতার আগুনে চড়ানো ক্ষুধার অন্নে
জ্বাল দেয় সঞ্চয়ের খুঁদ-কুড়ো অতি সন্তপর্ণে
অস্তিত্ব আছে আমার সেই ধিকিধিকি আগুনে।

অভুক্ত-অর্ধভুক্ত পাতের পাশে জমা হাহাকার
পড়ে থাকে অদৃশ্য উচ্ছিষ্ট-রূপে স্তুপ বেদনার
অসহায় নীরবতার অস্তিত্বে সাক্ষী নিরাকার।

লজ্জারা কাঁদে নিরুচ্চারে শতছিন্ন রক্তাক্ত বস্ত্র পরনে
পাপ নয়, পাপীরা লালসা মোছে পঙ্কিল ধারাস্নানে
বয়ে যাওয়া পাপের হিসাব আমার রক্তাক্ত চরণে।

যে শিশুকে দেখানো হয় নি আলো, কন্যা ভ্রুণ পরিচয়ে,
নির্মম ইতিহাস লিখেছে আস্তাকুঁড়েই তার আশ্রয়
অব্যক্ত ক্রন্দনে, বিয়োগ জুড়েছি হিসেবের খাতায়।

হারানোর শোকে রুদ্ধ দ্বারে কেঁদেছে যত অসহায় প্রাণ, রাজনীতির অহংকারের শিকার তাদের প্রিয়জন, সন্তান
বিবশতায় কোলাহলে দেখেছি ছদ্মবেশীর ছদ্ম ক্রন্দন।

সত্যের মুকুরে ছিন্ন করে দিতে কপটতার লতানো মিথ্যায়
সহ্যের মিছিলে হেঁটে চলেছি যুগ যুগ সারিবদ্ধ যাতনায়
কবে পাব সংগ্ৰামী হাতিয়ার? আছি উদগ্ৰীব প্রতীক্ষায়।

কালচক্রের নিদানে সত্যরা অবগুন্ঠিত, নির্মম উপহাস!
চেতনারা ডাক দেয়, ধিক্কারে ভরিয়ে যায় ব্যঙ্গ পরিহাস,
দুরন্ত দুস্তর ক্ষোভে ডাক দেয় জ্বালাতে বিকৃত ইতিহাস।

আমি অসহায় কান্না, অব্যক্ত বেদনায় করেছি অশ্রুপাত
আমি সুপ্ত বিপ্লব, নীরব পরিক্রমায় দেখছি সকল আর্তনাদ
আমি নিদ্রিত বিদ্রোহ, বিক্ষোভে তুলিনি এখনো দু’হাত।

অভিসম্পাতের আগ্নেয়গিরি লাভা স্রোতে জ্বলবে
অব্যক্ত বেদনারা অসহ্যের বিদ্রোহী তুফান তুলবে
বিচারে আলোড়িত ভূ-পৃষ্ঠে সুনামি আছড়ে পড়বে।

ভুলো না আমায়, আমি চেতনা, আছি কাল চক্রের শীতঘুমে
শোধ- পরিশোধের গণিত মিটিয়ে নিতে মহা পরাক্রমে
ফিরবো সমাহিত সমস্ত শক্তি সঞ্চয়ে শুভ বোধ-ভূমে
আসবোই ফিরে।

Loading

4 Comments

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

You cannot copy content of this page