বাঁশি…
-দেসা মিশ্র
ঝিনুক এর মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে সে একাই চলে যায় নদীর ধারে। নদীর বয়ে যাওয়া দেখে সে ভীষণ শান্তি পায়। তার দুঃখগুলো যেন নদীর স্রোত বয়ে নিয়ে চলে যায়, মন হালকা হয়।
একদিন নদীর ধার থেকে বাড়ি ফিরে আসার সময়ে ঝিনুক বাঁশির আওয়াজ শুনতে পেলো,
সে সব দিক খুঁজলো… এত সুন্দর বাঁশি কে বাজাচ্ছে? হটাৎ ঝিনুক দেখতে পেলো কদম গাছের তলায় একটি অল্প বয়স্ক শ্যামবর্ণ ছেলে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ছেলেটির দিকে, আর বাঁশির সুর শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলো।
ঝিনুক বললো.. আচ্ছা রাখাল ছেলে তুমি তো ভারী সুন্দর বাঁশি বাজাও, এত সুর কোথায় পেলে বলো…
রাখাল ছেলে ঝিনুককে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল, হেসে বললো… নীল আকাশ থেকে, বাতাস থেকে, ফুলের গন্ধ থেকে, রামধনু রঙ থেকে।
চাঁদের হাসি থেকে, ঝর্ণার নৃত্য থেকে। প্রকৃতি আমার সুরের রসদ জোগায়।
ঝিনুক…….. ও মা তাই বুঝি!য়ভারী মিষ্টি কথা তোমার …. ও ছেলে তোমার ঘর কোথায় বলো…
রাখাল ছেলে বললো.. ঘর নেই আমার, এই পৃথিবী আমার ঘর। যখন যেখানে খুশি বাঁশি বাজাই, যখন যেখানে খুশি ঘুমিয়ে পরি আমি। যে যা খেতে দেয় তাই ভালোবেসে খেয়ে নি, এভাবেই চলে যায় দিন।
ঝিনুক বললো… তোমার জীবনটা বেশ অন্য রকম…. মুক্ত জীবন,, আমার বেশ পছন্দ।
খোলা আকাশের নীচে… মন খুলে তুমি বাঁশি বাজিয়ে সূর্য ওঠাও রাত্রি নামাও। আচ্ছা রাখাল ছেলে …. আমি বাঁশি শুনতে চাইলে বাজাবে তো তোমার বাঁশি? আমায় নিরাশ করবে না তো? তুমি দূরে চলে যাবে না তো?
রাখাল ছেলে বললো… হ্যাঁ হ্যাঁ বাজাবো। তুমি যখন শুনতে চাইবে বাজাবো আমি।
এই কথোপকথন এর পর ঝিনুক ফিরে গেলো তার বাড়ি।
রাখাল ছেলে ঝিনুকের কথা ভাবতে লাগলো,…..
মেঘের মতো ঢেউ খেলানো চুল, কালো কাজল আঁকা টানা টানা দু’টি চোখ আর টুকটুকে লাল ঠোঁট…কি জানি কোথায় থাকে….. এই সব ভাবতে ভাবতে রাখাল ছেলে গাছের তলাতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল হল, পাখিদের কিচির মিচির এ রাখাল ছেলের ঘুম ভাঙল।
উঠেই সে নদী থেকে স্নান সেরে আসলো, সূর্য প্রণাম করলো।
তার একটা ছোট্ট পুটলি ছিল, পুটলি খুলে দেখলো সেখানে দু’টি পেয়ারা রাখা আছে সে একটি তুলে খেতে লাগলো আর অন্য পেয়ারাটা দেখে মনে মনে ঝিনুকের কথা ভাবতে লাগলো। ঝিনুক এলে সে তাকে পেয়ারাটা খেতে দেবে।
রাখাল ছেলে মনে মনে ভাবতে লাগলো ঝিনুক তার বাঁশি শুনে কতো নাম করেছিল, এর আগে রাখাল ছেলের বাঁশি বাজানোর প্রশংসা কেউ করেনি।
বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো ঝিনুক আর আসেনি। সে বাড়িতে বসে রাখাল ছেলের কথা রোজ ভাবে আর তার বাঁশি বাজানোর সুর ঝিনুকের কানে যেন সবসময়ই বাজতে থাকে l
ওদিকে রাখাল ছেলে ঝিনুকের পথ চেয়ে থাকে…. এই বুঝি সে এলো – এই বুঝি সে এলো।
একদিন রাত্রে ঝিনুক স্বপ্ন দেখে.. রাখাল ছেলে বাঁশি বাজাচ্ছে আর তার দু’ চোখ বেয়ে জল এসে ঠোঁটে মিশে যাচ্ছে,… ঝিনুক তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো, তার মন অস্থির হয়ে গেলো,… হঠাৎ এরকম স্বপ্ন সে কেন দেখলো বুঝতে পারলো না।
ঝিনুক ছবি আঁকতে খুব ভালো বাসতো, ছবি আঁকাটা হল তার মন ভালো রাখার আরেকটা উপায়। সে ঘরের নীল বাতিটি জালালো… সব তুলে রাখা রঙ তুলি নামিয়ে ছবি আঁকতে বসলো… সে আঁকলো.. রাখাল ছেলে নদীর পাড়ে বসে হাসি মুখে বাঁশি বাজাচ্ছে। সে রাখাল ছেলেকে সর্বদা হাসি মুখে দেখতে চায় আর সেই মনের কথা ছবি তে রঙ মেখে ফুটে উঠেছে।
ছবিটি যত্ন করে ঘরে সাজিয়ে রাখলো, আর মনে মনে ভাবলো কাল সকালে তাকে খুঁজতে বেরোবে। সকালে সূর্য ওঠা মাত্র সে রাখাল ছেলের খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। প্রথমে সে কদম গাছের তলাতে খুঁজলো, দেখতে পেলো না। কয়েকটা বাচ্চা ছেলে মাঠে খেলা করছিলো ঝিনুক তাদের জিজ্ঞাসা করলো…. তোমরা কেউ রাখাল ছেলেকে দেখেছ গো? যে খুব সুন্দর বাঁশি বাজায়…
একসাথে উত্তর এলো.. কই না তো।
ঝিনুকের মন খুব খারাপ হয়ে গেল।
সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে সে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে।সূর্য পাটে বসলো… তার মুখ মন জুড়েও আঁধার নামলো।
এদিকে রাখাল ছেলে ও যে ঝিনুকের সন্ধানে এদিক থেকে ওদিকে ঘুরে বেরিয়েছে। সারাদিন তা ঝিনুক ভুলেও ভাবতে পারলো না। ঝিনুক বাড়ি ফিরে গেলো।
বাড়ি ফিরে তার কোনো কাজে মন বসলো না, খুব অস্থির লাগলো নিজেকে, তার আঁকা ছবিটির দিকে তাকিয়ে সে আরো চিন্তিত হয়ে পড়লো। কোনো উপায় না পেয়ে সে আবার ছুটে গেল সেই নদীর তীরে যেখানে সে মন খারাপ হলেই ছুটে যেতো। আজও সে তাই করলো l
কিন্তু নদীর বয়ে যাওয়া দেখে ঝিনুকের মন ভালো হলো না বরং তার হৃদয়ে দুঃখের ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগলো।
ঝিনুক বুঝতে পারলো না, তার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন, সে তো মাত্র কয়েক দিন আগে রাখাল ছেলেটিকে প্রথম দেখেছে ও তার বাঁশি শুনেছে।
হঠাৎ ঝিনুকের একটা কথা মনে পড়লো….. রাখাল ছেলে বলেছিল সে সুর পায় এই মুক্ত নীল আকাশ থেকে… বাতাস থেকে ঝর্ণা থেকে ফুল থেকে, ঝিনুক আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল…….. রাখাল ছেলে ও রাখাল ছেলে তুমি কি মিথ্যে বলেছিলে……? আমি যখন শুনতে চাইবো তখনই তুমি বাঁশি বাজিয়ে শোনাবে বলেছিলে। আজ আমার মন খুব অস্থির, দাও দাও সুরের ছোঁয়া প্রাণে,… বাঁশি বাজাও রাখাল ছেলে বাঁশি বাজাও।
রাখাল ছেলে সারাদিন ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসেছে তার কদম গাছের তলায়।
ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে এসেছিল, কিন্তু ঝিনুকের চিৎকারে তার ঘুম ভেঙে গেল। সে ঝিনুকের কথা শুনে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো। চারিদিকে খুঁজতে লাগলো ঝিনুককে..
হঠাৎ দেখতে পেলো জ্যোৎস্নার আলো স্নানে ঝিনুকের মুখটি।
কি সুন্দর মায়া জড়ানো মুখ…. চাঁদ যেন মাটিতে নেমে এসেছে।
কাজল আঁকা টানা টানা চোখ দুটি তার, …. রাখাল ছেলের সব কষ্ট ক্লান্তি যেন শুষে নিলো l ঝিনুক রাখাল ছেলের হাত দু’টি চেপে ধরে বললো… কোথায় ছিলে? আমি সারা দিন তোমাকে খুঁজে খুঁজে খুব ক্লান্ত আমার কিছু ভালো লাগছে না, কোথায় ছিলে তুমি বলো? রাখাল ছেলে যে তাকেই খুঁজতে বেরিয়ে ছিল তা সে মুখ ফুটে বলতে পারল না আর চুপ করে রইলো l ঝিনুকের দু’টি চোখে যেন সে না পাওয়া সব সুখগুলোকে ফিরে পেলো সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
ঝিনুক বললো.. এবার একটু বাঁশি শুনিয়ে দাও বাঁশির সুর না শুনে আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে।
সুন্দর মিষ্টি হাওয়া বইতে লাগলো, জ্যোৎস্নার বৃষ্টি দু’জনের অঙ্গ জুড়ে। চারিদিক থেকে বন ফুল এর গন্ধ আর কদম ফুলের গন্ধ মিলে মিশে একেবারে যেন স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হল। রাখাল ছেলে বাঁশি বাজাতে লাগলো, আর ঝিনুক তার বাঁশির সুরে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। তার মনের সব অস্থিরতা সব কষ্ট দুর হল, তার দেহে প্রাণ এলো।
বুকের উপর চাপানো পাথরটা যেন গলে ঝর্ণা হয়ে সেই নদীতে মিশে গেলো, স্রোতে বয়ে গেলো সব দুঃখ।
বাঁশি বাজানো শেষ হল, ঝিনুক নদীর ধারে আসার সময়ে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিল। রাখাল ছেলের দেখা পেলে দেবে বলে, সেই খাবারটুকু দিয়ে সে আবার আসব বলে বিদায় জানালো l ক্ষুধার্ত রাখাল ছেলেটি হাসি মুখে উপহার গ্রহণ করলো l
এর পর থেকে রোজ ঝিনুক রাখাল ছেলের বাঁশি শুনতে আসতো।
একদিন সে রাখাল ছেলের সাথে অনেক গল্প করলো। ঝিনুকের কি ভালো লাগে মন খারাপ হলে সে কি করে সব বললো, রাখাল ও বললো তার অল্প কথা।
ঝিনুক বাঁশি শুনে চলে গেলো বাড়ি।
বাড়ি গিয়ে ঝিনুক বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু তার দু’ চোখের পাতায় যেন ঘুম নামে না l
রাখাল ছেলেটি ঝিনুককে লজ্জায় আজও জিজ্ঞাসা করতে পারেনি তার বাড়ি কোথায় l
কিছু দিন কেটে গেল ঝিনুকের বেশ কিছু দিন থেকে খুব জ্বর, সে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি l না খাওয়া দাওয়া করে সে দুর্বল ও হয়েছে, জ্বর ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। রাখাল ছেলেকে ভীষণ মনে পড়ছে তার।
ওদিকে রাখাল ছেলেটিও ঝিনুকের পথ চেয়ে বসে আছে…. রাখাল ছেলে ঝিনুকের নাম দিয়েছে মেঘকন্যা, কিন্তু সে নাম রাখাল ছেলের মনের গোপন নাম, সে কথা ঝিনুক জানে না, তাকে জানানোর সাহস হয় নি রাখাল ছেলের।
তার বাঁশির সুর যে কারোর জীবনে এতটা প্রভাব ফেলবে তা সে ভাবতেও পারে নি কোনোদিন। বাঁশিটি রাখাল ছেলের প্রাণ আর সেই প্রাণ যে আরো একটা প্রাণের বাঁচার মূল মন্ত্র হয়েছে তা সে ভালোই বুঝতে পারলো।
জ্বরের মধ্যে ঝিনুক বলে চলেছে…. রাখাল ছেলে, ও রাখাল ছেলে বাঁশি বাজাও, বাজাও তোমার বাঁশি। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, চোখের সামনে আঁধার লাগছে সব।
তোমার সুরের আলো দাও…. বাঁশি বাজাও…
রাখাল ছেলে এসবের কিছু জানেনা, তবে তার মন আজ ঝিনুকের জন্য উতলা হয়েছে বড্ড, কেমন যেন সব হারানোর চিন্তা হচ্ছে মনে… কেন যে আর কোনো দিন ঝিনুককে খুঁজে পাবে না এই কথা মনে হচ্ছে সে জানে না l সে বাঁশি বাজিয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যদি সে বাঁশির আওয়াজ ঝিনুক শুনতে পায়, কিন্তু না সব চেষ্টা বৃথা।
ঝিনুকের বাড়ির সীমানার কাছাকাছি সে এখনো পৌঁছাতে পারেনি। সে অজানাতে খুঁজে চলেছে ঝিনুককে। তাই ঝিনুকের ঘরে তার বাঁশির আওয়াজ পৌঁছালো না।
ঝিনুক এক বার চোখ খুলে তাকালো তার সেই আঁকা রাখাল ছেলের বাঁশি বাজানোর ছবিটির দিকে। ছবিটা আবছা আবছা দেখলো সে, ধীরে ধীরে সব রঙ যেন কালো হয়ে গেলো। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ঝিনুকের, শ্বাস নিতে পারছে না সে। খুব আস্তে আস্তে সে বলল, রাখাল ছেলে বাঁশিটা বাজাবে না তোমার? আমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, একটি বার বাজিয়ে দাও… শুনি। আর বলবো না কখনো, একবার বাজাও লক্ষীটি।
কিন্তু সে সব কথা তো রাখাল ছেলের কানে পৌঁছানোর নয়। সে এখন অন্যত্র ঝিনুককেই খুঁজে বেড়াচ্ছে l
ভীষণ কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে ঝড় উঠেছে খুব, ঝড়ে ঝিনুকের ঘরের সব জিনিস পত্র দুমদাম পরতে লাগলো। এলোমেলো হয়ে গেলো গোছানো সব। ঝিনুকের আঁকা রাখাল ছেলের ছবিটি জানলা দিয়ে উড়ে গেলো, ঝিনুক একটা ভীষণ শূন্যতা অনুভব করলো। কিন্তু তার চোখ মেলে তাকানোর বিন্দু মাত্র শক্তি নেই। ছবিটি গিয়ে আটকে পড়লো বাইরে লাগানো রঙ্গন ফুল গাছটির উপর।
ভাগ্যক্রমে রাখাল ছেলে দীর্ঘ পথ ঘুরে এসে সেই রাস্তা ধরেই হাঁটছিলো। এতো বড় কাগজে রঙিন কিছু ছবি আঁকা দেখে সে ছবিটি হাতে তুলে নিলো। অবাক হয়ে গেলো সে এত ছবি নয় যেন আয়না।
নিজের ছবি দেখে তার বিন্দু মাত্র বুঝতে অসুবিধা হল না যে ছবিটি ঝিনুক এঁকেছে।ঝিনুক বলেছিলো সে ছবি আঁকতে ভালোবাসে।
দরজা খোলা…. রাখাল ছেলে বাড়ির পথ দিয়ে এগিয়ে এসে দরজা দিয়ে প্রবেশ করে আর সামনে এগিয়ে যায়। বাড়িতে ঝিনুক একাই থাকে, তার মা বাবা ছোট্টতেই একটা দুর্ঘটনাতে মারা গেছে,তার দিদার কাছে সে মানুষ কিন্তু সেই দিদা ও বছর তিনেক আগে মারা গেছেন, তাই ঝিনুক একা। রাখাল ছেলে তাই কাউকে না দেখতে পেয়ে ভেতর ঘরে প্রবেশ করলো।
আর দেখে চমকে উঠল…. ভীষণ ভয় নিয়ে এগিয়ে গিয়ে সে ঝিনুককে ছুঁয়ে বুঝতে পারলো সে ঝিনুক কে হারিয়ে ফেলেছে সারা জীবন এর জন্য।
রাখাল ছেলে মেঘ কন্যা বলে চিৎকার করে উঠলো…… তার মৃত দেহটিকে নাড়িয়ে বলতে লাগলো ওঠো মেঘ কন্যা তাড়াতাড়ি ওঠো আমি এসেছি, তোমাকে বাঁশি শোনাবো বলে, আমি এসেছি একটি বার দেখো। কাঁদতে লাগলো সে। চোখের জল থামলে রাখাল ছেলে শোকে পাথর হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর যখন সে বাঁশিটির দিকে তাকালো… দেখলো আজ বাঁশিটি বড় অসহায় লাগছে l দেখে যেন মনে হচ্ছে বাঁশি থেকে সব সুর হারিয়ে গেলো তার। মেঘ কন্যা আজ আর নেই মেঘ দৈত্য এসে তার প্রাণ কেড়ে নিয়ে গেছে।
রাখাল ছেলে আজ পৃথিবীর মাঝে বড় একা হয়ে গেল। সে বলে ছিল তার বাঁশিতে সুর আসে প্রকৃতি থেকে….. সে ভুল বলেছিলো। ঝিনুকের মৃত্যুতে প্রকৃতিও যেন উদাস, সুর রঙ সেও হারিয়েছে।
ঝিনুকের শেষ কাজ শেষ করে সে আজ নিঃস্ব হয়ে গেলো,,হাতের বাঁশিটিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো ঝিনুকের সেই প্রিয় নদীটির বুকে যে বাঁশি রাখাল ছেলের প্রাণ ছিল তা আজ বিসর্জন দিলো।
রাখাল ছেলে নদীর ধারে বসে রইলো দু’ চোখ দিয়ে তার নদীর স্রোতধারা।
এই নদীটির ধারে রোজ এসে বসতো ঝিনুক, দেখত নদীর বয়ে যাওয়া আজ সেখানে রাখাল ছেলে বসে আছে এক পৃথিবী শূন্যতা নিয়ে।
রাত গভীর থেকে আরো গভীর হল, কখন যে সে মেঘ কন্যাকে তার পৃথিবী তার আলো তার সুর মেনে নিয়েছিল সে নিজেও বোঝেনি এর আগে। ভোরের আলো ফুটতে আর দেরি নেই, দূর থেকে পাখি দের গান ভেসে আসছে……. নদীর সিঁড়ি বেয়ে নদীতে নেমে গেলো রাখাল ছেলে।
ক্ষণিক বাদেই উঠলো ভোরের আলো কিন্তু রাখাল ছেলে আর নদী থেকে উঠে এলো না।
ঝিনুক এর ভালোলাগা নদীটির বুকে চির ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লো সে।
কদম গাছটির তলা আজ ফাঁকা, মালিকহীন পুঁটলিটা ধুলাতে পরে আছে। সেখানে আর সুরের জাদু ছড়ায় না।বন ফুলেরাও তাদের গন্ধ হারিয়েছে।কদম ফুলগুলো সময়ের আগেই শুকিয়ে ঝড়ে গেছে সব। সেই নদীর ঘাটে আর কেউ বসে থাকেনা।নদীর বয়ে যাওয়া অবাক হয়ে দেখে না কেউ।বাঁশি শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে না কেউ আর।নদীর বুকে ডুবে গেছে সুরের জাদুকর ও তার বাঁশি।