অণু গল্প

অণুগল্প- ভাসানের শেষ পদধ্বনি

ভাসানের শেষ পদধ্বনি
– শক্তি পুরকাইত

 

 

দূর থেকে ভেসে আসছে ঢ্যাম – কুড়া- কুড় ঢাকের বাদ্যি। ঝিঁ ঝিঁ ডাকা অন্ধকারের ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে দুগ্গা মাঈ কী জয়! সুমনাও পাড়ার মেয়ে-ঝিদের সঙ্গে রঙ খেলেছে আজ।
শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকেও মুখে রঙ দিয়েছে। এত আনন্দের মধ্যেও সুমনা শুনতে পাচ্ছে, একটা বিষন্নতার সুর! একে- একে মঞ্চ থেকে প্রতিমা নামানো হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণ পর জলে পড়বে। আবার আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে একবছর পর। সুমনার মনটা অস্থির হয়ে ওঠে। বেশ কিছুদিন ধরে অমলের সঙ্গে অশান্তি চলছিল। সেই অশান্তিটা আরো জোরালো হয়ে উঠল মেয়েটা হওয়ার পর। অমল কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। ‘কন্যা সন্তান’ যেন অমলের কাছে একটা বড়ো বোঝা। সেই বোঝা যেন শেষ করে দিতে চায়! সুমনা, মা দুর্গাকে বিজয়ার প্রণাম করে, এক ছুটে ঘরে আসে। এক মাসের মেয়েটা ঘুমোচ্ছে। দরজাটা কোনো রকমে খুলে সে বুকে করে নিয়ে অন্ধকারের ভিতর একা ছুটে চললো। এতক্ষণ প্রতিমা জলে ভাসছে। মাটির গা থেকে গলে পড়ছে মাটি। তবুও মুখটা বার বার ভেসে উঠছে সুমনার। সে আজ শুনতে পাচ্ছে ভাসানের শেষ পদধ্বনি। পায়ের শব্দগুলো যেন অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে। ফাঁকা রেল লাইনের ধারে এসে দাঁড়ালো। তারপর এক ঝটকায় ঝোপের উপর নিজের কন্যাসন্তানকে ছুঁড়ে দিল। আর্তনাদ করে মেয়েটা কেঁদে উঠল মৃত্যুর কান্না। পিছনে না তাকিয়ে সুমনা ঘরের দিকে রওনা হল। জলভরা চোখে নিজের দুর্গাকে নিজের হাতে বিসর্জন দিল সে!

Loading

2 Comments

  • শক্তি পুরকাইত

    যে ভাবে কন্যাভ্রুন হত্যা চলছে , এই রকম চলতে থাকলে আমরা কাদের মা বলে ডাকব …

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

You cannot copy content of this page