রক্তদান
– ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
জল যেমন জীবনের অন্য একটি নাম,
তেমনই রক্ত জীবনের একটি প্রতিশব্দ যেন-
বুঝেছিলাম সেদিন, যেদিন মাঝরাতে
আমার দরজায় কড়া নেড়েছিল কেউ ;
আমি দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছিলাম,
যদি কোন বিপদ সেই নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে,
আমার ছোট্ট ঘরটাতে ঢুকে পড়ে,
তার হায়নার মতো থাবায় আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে ;
আবারও, করাঘাত আমার দরজায়
পাঁচবার, ছবার, সাতবার – বেশ জোরেই,
দরজা খুলে দিলাম, আমার ছোট্ট মেয়েটির বারণ সত্বেও –
সামনে দাঁড়িয়ে মনিরুল,
আমাদের সাতনাপাড়ার পুরানো পল্লীর শেষেই ওঁদের ঘর,
“দাদাভাই আমার ছেলেটা মরতে বসেছে গো,
শহরের হাসপাতালে ভর্তি, রক্ত লাগবে তার
মিলছেনা গো”-
মনিরুলের সজল চোখে করুন আর্তি
আমি কি করবো, মনি,?
ওর কালো হয়ে যাওয়া, ফ্যাকাসে মুখটার দিকে তাকিয়ে,
আমার প্রশ্নটা ঝড়ে উড়ে যাওয়ার মতো,
কোথায় যেন মিলিয়ে গেল-
মনিরুলের সব আবেগ আর যন্ত্রণা
চোখের জল হয়ে নেমে এলো,
“যতীনদাদা তোমার রক্তের গ্রুপের সাথে,
আমার ছেলেটার রক্তের মিল আছে,
আমার সাথে মেলেনি ওর গ্রুপ,
সেবার আমাদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে জানতে পেরেছিলাম
এখানে একমাত্র তোমার সাথেই রক্ত মেলে,
আমার ছোট খোকার ;
তাই, তো এত রাতে, হুড়মুড়িয়ে
তোমার কাছে ছুটে আসা আমার যতীনদাদা-
একবারটি চলো, তোমার রক্তে আমার খোকা
জীবন ফিরে পাক-যতীনদাদা”
“যাবো মনিরুল,আমি যাবো –
রক্ত যে জীবন ফিরিয়ে দিতে জানে-
সে জানে না, সে রক্তের মালিক হিন্দু, না মুসলমান-
সে জানেনা, জানতে চায়না
যাকে দেবে কিংবা যে নেবে সে বৌদ্ধ, পার্সি না খৃষ্টান!
রক্ত জানে শুধু মানবতা,
আর জীবনের কথকতা –
তাই সেখানে মিলে যায় টমাস -যতীন- মনিরুল, আরও সবাই
আজীবন, এমন করেই একবুক ভালোবাসা নিয়ে।