রবিঠাকুর
– ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
এসে গেলো আরেকটি পঁচিশে বৈশাখ –
রবিঠাকুর – তোমার জন্মদিন।
তবে একি শুধু জন্মদিন!
জন্মদিন বলবো না একে ,
এযে এক জন্মোৎসব, এদিন এক সাগরকে সরবে ছুঁয়ে দেখার দিন-
যে উৎসবে সংস্কৃতির সব ধারা,
নদী হয়ে মিশতে চায়, ছুঁতে চায় এক সাগর –
মহাসাগরীয় গভীরতায় এক হিল্লোল তুলে।
পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ,
আবার নতুন বছরের প্রথম দিন,
তোমাকে ঘিরে ভালবাসা আর শ্রদ্ধার বিস্ফোরণ!
পুষ্পস্তবক, আর মালাতে তোমার ছবি ঢাকা-
প্রভাতফেরী, পথ পরিক্রমা, অনুষ্ঠান, নাটক,
আর তোমার গান আর কবিতার বাহুবন্ধনে
এক অনন্য আবহে বিদ্যমান আজকের
আরেকটি পঁচিশে বৈশাখ-
সব পঁচিশে বৈশাখ, নববর্ষ,
আর শ্রাবণের বাইশে
যেমন অন্য সব বছরেও হয়-
তেমন রঙিন,আর ছন্দময়,আজও তেমন করে।
তোমার মর্মরমূর্তি আর ছবিতে দেওয়া,
মালা আর ফুল
যেন তাদের অমূল্য অস্তিত্ব,
নতুন করে বুঝতে পারে এই তিনটে দিন;
মাল্যদানের প্রতিযোগিতা চলবে, নানাস্থানে-
গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মতো,
সভামঞ্চে, বিদ্যালয়ে, প্রতিষ্ঠানে, প্রশাসনিক কার্যালয়ে
তোমার গান বাজবে,
কেউ বলবে রবীন্দ্রসঙ্গীত,
কেউ বা বলবে, রবিবাবুর গান-
কারো কন্ঠে গান, কারওবা কবিতা
কেউ বলবে আমাদের “রবিপুজোর” উপাচার,
তাঁর সৃষ্টি দিয়েই কি সুন্দর করে সাজানো!
কবিতা পাঠ আর আবৃত্তির আবহে,
পুজোর মাঙ্গলিক সানাই বেজে উঠবে,
প্রতিবারের পঁচিশে বৈশাখের মতো ;
নিজের জন্মদিনের জন্য নৈবেদ্য
তুমি নিজেই সাজিয়ে রেখে গিয়েছ, রবিঠাকুর!
জীবনের নানা উৎসবে, তাকেই আমরা
সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করে থাকি-
আর তুমি যেন চিরবিগ্রহের মতো, সেই পুজো
নিয়ে চলেছ নিরন্তর!
আমি তোমাকে ওই তিনটে দিনের বাইরে,
সারাটি বছর, বাকী তিনশো বাষট্টি দিন,
বড় আপন করে পাই-
একেবারে নিজের মতো করে;
কখনও জাগরণের রাত ভোর করে,
স্নিগ্ধ, শান্ত উষার বুকে
কখনও সন্ধ্যার মেঘমালায়-
আবার কখনও রঞ্জন- নন্দিনীর বাহুস্পর্শে,
অমিত- লাবণ্যর নির্মল প্রেমে ভাস্বর হয়ে,
আবার কখনও,
সুধা আর অমলের চোখের আলোয়
তোমার উপস্থিতি এক অনন্য জীবনদর্শন –
কখনো বা হতাশার অন্ধকারে আলোর পথ বেয়ে
সকল দুঃখের ত্রাতা হয়ে,
বিরহে, বেদনায়, মরণে,আনন্দে,
বাঙ্ময় তুমি রবীন্দ্রনাথ।
আবার নতুন জীবনের পদার্পণ ঘিরে-
তুমি এই হৃদয়ের গহন প্রান্তরে,
আপন উজ্জ্বলতায় দীপ্যমান আজও –
যেমন ছিলে বিগতের কালে;
সুরের ঝর্ণাধারায় ভাসিয়ে, পাগলপারা করে-
শুধু নয় পঁচিশে বৈশাখে, শ্রাবণের বাইশে,
কিংবা নববর্ষের উন্মাদনায়,
সর্বক্ষণে, সর্বকালে, মননে, মনের গোপনে
রয়ে গেছো অচঞ্চল, তুমি রবীন্দ্রনাথ;
যেন এক বিগ্রহের মতো হয়ে,
আমৃত্যু অবিচল থাকবার ব্রত নিয়ে-
তোমাকে এই কটা দিনের বাইরে জীবন ধুয়ে,
জীবন দিয়ে আবিস্কার করতে চাই
অবগাহন করতে চাই অনন্যতায়,
তোমার দর্শনে,
তোমার জীবনদর্শনে স্নাত হয়েছি বারবার,
সবার মতো আমিও জ্বেলেছি, জ্বালতে চেয়েছি মশাল-
তোমার দীপ্তিতে দীপ্যমান হয়ে ওঠার সংকল্প নিয়ে,
নতুন সে আলো জ্বেলে,
যে আলো আমার সারাটি পথ
আলোকময় করে দেবে,
আরও অনেকের পথের আলোকবর্তিকা হয়ে;
আলো জ্বেলে দেবার প্রত্যয়ে, রাবীন্দ্রিক দর্শনে।