পরম্পরা
– উজ্জ্বল সামন্ত
এমন এক কাহিনী সমাজের চোখে প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া হয়তো কঠিন ।
দেশের কোন এক সীমান্তের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা ও কন্যা তিন জনের সংসার। কন্যা একটু বড় হলে তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য দূরে পাঠানো হয়। বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ খুব কম কোনো এক অজানা কারণে। বাবা-মা তার সঙ্গে যোগাযোগ কম রাখেন। মাসে হয়তো একবার খবর আসে বাড়ি থেকে। মাসের প্রথম সপ্তাহে তার খরচের টাকা পৌছে যায়। সোহানা কারণ জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর পায় না, কেন সে বাড়ি প্রায়ই যেতে পারবে না।
মেয়েটি সতীত্ব রেখেছে। কোন পুরুষের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক হয়নি। সে মানতেও পারেনা পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক, বিবাহের আগে। সোহানা স্বপ্ন দেখে স্বপ্নের পুরুষের। মনে মনে তার একটা চিত্র কল্পনা করে । ইতিমধ্যে বাড়ি থেকে চিঠি আসে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। সোহানা বাড়ি ফেরে।
পাত্রপক্ষ দেখতেও আসে। কন্যা যেন পণ্য সামগ্রী। তার রঙ ,রূপ, চেহারার যেন খোলাবাজারে নিলাম। অবশেষে মোটা পণে পাত্রপক্ষ রাজি হয়ে যায়। কোন মতে ধারদেনা করে করে বিবাহ নির্বিঘ্নে হয়। স্বপ্নের রাত্রে সোহানা ফুলশয্যার খাটে বসে অপেক্ষারত। আড়চোখে দেখে স্বামীর পরিবর্তে অন্য কেউ তার ঘোমটা নামিয়েছে।
তারস্বরে চিৎকার করে ওঠে।
সোহানা প্রশ্ন করে: কে আপনি? এই ঘরে কেন এসেছেন?
উত্তরে পুরোহিত জানায়: তোমার স্বামীর অনুরোধে বংশ পরম্পরা রক্ষার্থে আমি এই ঘরে এই মুহূর্তে।
সোহানা তার স্বামীকে ডাকে। তখন তার স্বামী ঘরে আসে।
সোহন: উত্তর দেয়, কুলো পুরোহিত সোহানার আজ রাতের সঙ্গী হয়েই কাটাবে। এটাই এই বংশের পরম্পরা। কূল পুরোহিত প্রথম ভোগের নৈবেদ্য গ্রহণ করেন। বহু বছর ধরে এই পরম্পরা নাকি চলে আসছে।
লজ্জা, ঘৃণা, অপমানে সোহানার চোখ রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে।
তখন সোহানা প্রশ্ন করে: যদি তাদের পরিবারের কোন বিবাহিত নারীর স্বামী মারা যায়, তার জন্য কোন পরম্পরা আছে?
সোহন: (তার স্বামী) চুপ করে থাকে। সোহানা প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।
সোহানা দেয়ালে টাঙানো ছুরি বের করে পুরোহিত ও স্বামীকে আঘাত করে। রক্তে লাল হয়ে যায় ঘরের বারান্দা। নিজেকে আইনের হাতে তুলে দেয়। এভাবেই হয়তো একটা পরিবারের পরম্পরা শেষ করে নিজের আত্ম বলিদানে।
সোহানা: পরম্পরা বংশের গর্বের হওয়া উচিত বলে তার মনে হয়, লজ্জা বা অপমানের নয়…