কেউ আসে না
– সুমিত মোদক
এখন এদিকে কেউ আসে না বাবু,
এদিকে কেউ আসে না …
এখন আর কেউ ত্রাণ বিলি করতে আসে না;
আসে না ত্রাণ বিলির ছবি করতে;
আমাদের হাভাতে ঘরের ছবি,
হাভাতে মানুষগুলোর হাড় জিরজিরে ছবি
দু’ চার দিন শহরের বাবুদের মোবাইলে
ঘোরা ফেরা করতে পারে;
দু চার দিন …
তা বলে দিনের পর দিন,
মাসের পর মাস কার আর ভালোলাগে বাবু!
এখন এদিকে কেউ আসে না বাবু,
এদিকে কেউ আসে না …
বিনা পয়সায় রেশনে চাল পাই,
আটা পাই,
দুবেলা দুমুঠো খেতে পাই বাবু,
এখন দুবেলা দুমুঠো খেতে পাই …
খাল পাড়ে লতিয়ে ওঠা কলমি শাক, হিংচে শাক, কচু শাক …
পুঁই শাক গাছটা বর্ষার জল পেয়ে
ফলফলে হয়ে উঠেছে;
কঞ্চি ধরে একেবারে ঘরের চালে …
টালির চাল গলে ঢুকে পড়ে বর্ষার বৃষ্টি;
ভাঙা জানালা গলে ঢুকে পড়ে ঝোড়ো বাতাস;
প্রতিদিনের সুখ, দুঃখ, অভিমান …
কার উপর আর অভিমান করে থাকবো বাবু!
কার উপর …
এখন যে মরদের কারখানা বন্ধ;
বন্ধ লক্ষ্মীর ভাড়ার;
আর বাজারে যে আগুন বাবু;
বাজারে আগুন …
আলুতে আগুন, সবজিতে আগুন, আগুন মাছে …
সে আগুনে পুড়ছি যে;
ভাতের থালায় পুড়ছি;
পুড়ছি ভিতরে ভিতরে প্রতিদিন;
সে কথা কে শুনতে চায় আর!
এ জল-জংলার দেশে অন্ধকার নেমে
সন্ধ্যে হতে না হতে;
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার;
অন্ধকার আর অন্ধকার .…
এ অন্ধকারে কে আলো জ্বালবে বাবু!
কে আলো জ্বালবে …
তোমার ওই শহরের মোবাইল বাবুরা!
যারা ত্রাণ দেওয়ার নাম করে কেবল
নিজেদেরই ছবি তুলে নিয়ে গেল;
মোবাইলে মোবাইলে ত্রাণের ছবি ঘুরলো দিনরাত;
এখন এদিকে কেউ আসে না বাবু;
এখন এদিকে আর কেউ আসবেও না।।