হে ঈশ্বর
– সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
হে ঈশ্বর, প্রশ্ন করে মানুষ,
কিসে হও তুমি তুষ্ট?
কত সাধনায় যুগ যুগ ধরি,
শত ক্লেশ সহি মাথা কুটে মরি তব দ্বারে।
বারেবারে নিজেরে করেছি পেষণ,
তোমাকে পাবার সাধন যন্ত্রে।
কত মন্ত্রে বেঁধেছি তোমার জয়গান।
আজান দিয়েছি কত সারাদিন ধরি তোমারি তরে।
গড়ে গেছি নিজের শিল্পে ভরা তোমারই বাসগৃহ,
মসজিদ গির্জা মঠে মন্দিরে,
চিড়ে কাঠ, পাথর খোদাই করে,
অষ্টধাতুতে তোমাকে এঁকেছি নিজের মতন করে।
ভরে দেছি খাদ্য পানীয়ে কাঞ্চন পাত্র,
মাত্র তোমায় পাবার আশায়।
তবু কেন বঞ্চিত করো মোরে তব কৃপা হতে,
কি মতে পূজিলে, তব দানে ধন্য হয়ে শাসিবো এ ধরাতল?
বল দেব, কোন ধর্ম তব, কোন গ্রন্থ পাঠে তব দেখা মেলে।
পেল কোন গুরু কৃপা,
মেলে আসন তোমারি সমুখে?
কত দুখে চেয়ে দেখি,
আমি ব্যতি আরও জীবকূল,
ভুলেও ডাকেনা যারা,
আনেনা তোমার নাম দিনমানে একবারও মনে।
প্রতি ক্ষণে নিজেরে বাঁচাতে কর্ম তার।
আহার নিদ্রা তরে লড়াইয়ের মাঝে শুধু ব্যস্ত বংশের বিস্তারে।
তোমারে চেনে না সে হীন,
নহে দীন তোমার ভজনে ভবে।
তবে কেন তোমার করুণা বর্ষিত তাদেরই পরে,
যুগ যুগ ধরে?
আর আমি, সত্য হতে কলি,
মক্কা কবায়, গয়া কাশী হতে আরও
দূর্গম পথে চলি, ব্যর্থ মনোরথ,
কিঞ্চিৎ করুণা তব নাহি কি আমার পরে,
আমার ঘরে নাহি সে প্রদীপ,
তোমার আলোকে প্রজ্জ্বলিত।
ভীত মোরে জানাও বারতা তব হে নাথ,
কেন অকরুণ তুমি,
করিতে করুণা মোরে?
ওরে ভ্রান্ত মতি, কহেন দেবতা মৃদু হাস্য করি।
স্মরিতে আমারে কে কহিয়াছে তোরে?
ধরে যুগ যুগ যে দোর ঠেলিস,
আমি নাই সেই ঘরে।
নাই আমি তোর গীর্জা মঠে,
মসজিদ মন্দিরে।
চিড়ে কাঠ আর পাথরে,
বাঁধিবি মোরে?
ফলবতী গাছে মূর্তি গড়িয়া, ফল চাস তারি কাছে?
আছি আমি প্রতি ধূলিকণা মাঝে,
প্রতি প্রাণে, প্রতিটি কর্ম মাঝে।
বাজে স্পন্দন নিখিল বিশ্বে আমারই হৃদয় হতে।
কি মতে তবে মূঢ় তুই,
শত ছিন্ন করি মোরে,
বাঁধিবারে চাস, শত নামে গড়া
তোর নকল দেবাগারে?
আর যারে তুই দীন হীন বলি,
তুচ্ছ করিলি চিরদিন,
ক্ষীণ শক্তি লয়ে আমারে পাইলো তারা,
আপন কর্ম বলে,
জ্বলে আমার প্রদীপ তাদের নয়ন মাঝে,
অসীম সময় ধরে।
আর পড়ে রোস তুই ভ্রান্ত বুদ্ধি নিয়ে,
দেবালয়ের আঁধার ঘরেতে আগল দিয়ে।