অণু গল্প

অণুগল্প- এসো মা লক্ষ্মী

এসো মা লক্ষ্মী
– রাণা চ্যাটার্জী

 

 

“আহ্ রথীন, এই তো ঠেকে এলি, আরেকটু আড্ডা দেই, বোস।”

‘নারে ভাই, উঠি-ভর সন্ধ্যায় পোয়াতি বউমা একা ঘরে আছে। সন্ধ্যা দেবো, সময়ে একটু ঔষধ, টিফিন যদি না দেই অসুস্থ বৌমাকে এই বুড়ো বয়সে পাপ হবে ভাই’ বলে উঠে দাঁড়ালো তাদের বন্ধু রথীন।

রঞ্জন বললো, ‘কিন্তু বন্ধু রে তোরও তো বয়স বাড়ছে এতো চাপ নিস না রে।’

‘না না চাপ নয়, একটু শরীর চালনা আখেরে আমারই লাভ তাছাড়া ছেলেটা হাড়ভাঙা খাটুনি সেরে ফেরে সেই রাত এগারোটা। যতদিন পারি সংসারটাকে ঢাল হয়ে না হয় রক্ষা করি” বলে পরিতৃপ্তির হাসি হাসলো সত্তর ঊর্ধ বৃদ্ধ তাদের শুভাকাঙ্খী বন্ধু।

বাল্যবন্ধু প্রভাত বললো, “তুই নমস্য রে, গিন্নি মারা গেলো এক বছরও হয়নি। এতখানি মনের জোরে যেভাবে সংসার বুকে আগলে, বৌমার খেয়াল রাখিস, প্রণাম তোকে।”

চার পাঁচ জন বয়স্ক বন্ধু শীত হোক কি গ্রীষ্ম বা বর্ষা রেল পাড়ের এই বট তলায় চা দোকানের লাগোয়া বেদীটায় বসে ঘন্টা খানেক নানা আড্ডা গল্প গুজবে জীবনে বেঁচে থাকার রসদটুকু সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরে। এই চেনা ছবির খুব একটা অদলবদল হয়নি বিগত পঞ্চাশ বছরেও।লকডাউন তাদের মুষড়ে দিলেও পরস্পরকে তারা ফোনে যোগাযোগ রাখতো। প্রায়শই শোনা যায় একাকিত্ব ঘর বন্দি জীবন বাড়ির অনেক পৌঢ় সদস্য-সদস্যাদের প্রাণ কেড়েছে তবু এনাদের বাঁচার  ইচ্ছেটা অনেকখানি বাড়িয়েছে সুস্থ বন্ধুত্ব।’

‘আমার নাতনি হয়েছে’-উচ্ছাসে সবাইকে ফোনে জানিয়েছে রথীন। খুশিতে বলেই চলেছে ‘জানিস, বাচ্চাটার একদম গিন্নির মুখ বসানো’।

চার প্রৌঢ় বন্ধু খুশিতে আজ রথীনের বাড়িতে নাতনি দেখতে হাজির। বহুদিন পর বৈকালিক আড্ডায় তারা বন্ধুর খুশির খবরে উৎফুল্ল।সকলকে দেখে খুশিতে ডগমগ রথীন, ‘দেখ দেখ আমার ঘর আলো করে যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মীমা এসেছে।’

Loading

One Comment

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

<p>You cannot copy content of this page</p>