অণু গল্প

অণু গল্প- শেষ চিঠি

শেষ চিঠি
– শম্পা সাহা

 

 

জানো তো, ক’দিন ধরে তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। আসলে যবে থেকে জানতে পেরেছি আমি আর বেশিদিন নেই, মানে ডাক্তার বলেছে!ডাক্তার বলেছে আমার নাকি হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, ওই তোমরা যাকে বল ভালভ্ ব্লক হয়ে যাওয়া। তাতে যা অবস্থা মাস দুই তিন বা তারও কম। এখন আমি লাইফ সাপোর্টে আছি, তাই চিঠি লিখতে পারছি না আর তোমার ফোন নাম্বার তো নেই। থাকলেও ফোন করতে পারতাম কিনা জানি না? কারণ তিন সন্তানের মা তার কোনো এক প্রাক্তন প্রেমিককে ফোন করবে আর তার সন্তানেরা সেটা মেনে নেবে, ভারতবর্ষ এখনো এতোটা আধুনিক হয়নি।
হৃদযন্ত্র বিকল তো হবেই, এমন একটা অমনোযোগী, নিষ্ঠুর আর অহংকারী লোকের হাতে দিয়েছি বিকল তো হতেই হতো। এতো অযত্ন, তবু যে এতদিন কিভাবে একেবারে ছন্দবদ্ধ ভাবে চলে গেলো, এটাই আশ্চর্য! মাঝে মাঝে অবশ্য বিদ্রোহও করতো। তখন এই নাকে নল আর বুকে তার লাগিয়ে শুয়ে থাকতাম হাসপাতালের কেবিনে। আসলে যন্ত্রণা হত প্রচন্ড, “সবাই বলত কোলেস্টেরল জমেছে” তারা তো কেউ জানত না এই হৃদযন্ত্রের শুধু কাঠামোটি ছিল আমার কাছে প্রাণটা তো ছিল না কোনো দিনই। সে যাই হোক বেচারা হৃদয় অকারণেই দোষী হতো। জানো তো ডাক্তার যাই বলুক, আমি কিন্তু মরবো না এখন কারণ আমার যে একটা গোপন স্বপ্ন আছে, সেই কিশোরী বয়স থেকেই। যবে থেকে তোমার সঙ্গে আলাপ তবে থেকেই। তা
তোমাকে বলিনি কোনোদিন, তুমি হাসবে বলে তবে আজ মনে হচ্ছে বললেই হতো। শুনে হাসবে না তো? আমার বড় ইচ্ছে এক শরৎ শেষের বর্ষণমুখর রাতে যে দিন সারারাত ধরে অঝোর বৃষ্টিতে চারিদিক সঁপসঁপে, তুমি আর আমি পাশাপাশি বসবো খোলা জানালার সামনে খাটের ওপর। তোমার কাঁধে থাকবে আমার মাথা, নাকে ভেসে আসবে তোমাদের উঠোনের ভেজা শিউলির গন্ধ, মাঝে মাঝে সামনের জানালার অর্ধেক ঢাকা পর্দা উড়বে আর সামনের রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলো এসে পড়বে তোমার মুখের ওপর।
অন্ধকার সেই রাতে আমরা কোনো কথা বলবো না, শুধু অনুভব করবো আমার পাশে তোমার থাকাটুকু। তোমার গায়ের মৃদু পুরুষালী গন্ধ আমাকে আশ্বস্ত করবে। তোমার কাঁধে মাথা রেখে আমি ঘুমিয়ে পড়বো ধীরে ধীরে । জানতো ডাক্তার যতই বলুক, এ স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছুতেই মরতে পারবো না, কিছুতেই না…
“মা, মা, ও মা.. ডাক্তারবাবু দেখুন তো, মা কিছুতেই চোখ খুলছে না, এতো ডাকছি! ও মা মা… “

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page