রম্য রচনা

রম্য- হাগ ডে

হাগ ডে
-জয়তী মিত্র

পাড়ার মোড়ের মাথার দোকানে ডিম আনতে গিয়ে চম্পা শুনল আজ হাগ ডে। পাশের চায়ের দোকানে কিছু অল্পবয়সী ছেলে হাগ ডে নিয়ে কি সব বলছে। ওরা নাকি ওদের প্রেমিকাদের সাথে হাগ করবে মানে হাগবে।
এইকথা শুনে চম্পা ভাবল, হাগার আবার কোনো দিন আছে নাকি। আমরা তো রোজ হাগি। ছেলেগুলো মেয়েদের সাথে হাগবে। জামা কাপড় খুলে? ছি!ছি! কি লজ্জা। কি দিন এলো, এইসব শোনা যে পাপ। ছি! এইসব শুনে আর কাজ নেই।

ডিম নিয়ে চম্পা বাড়ির দিকে পা বাড়াল। চম্পার বর রতন শহরে ব্যাগ বিক্রি করে, ছোট একটা দোকান আছে। প্রত্যন্ত গ্রামে ওরা থাকে। হাতে সেই পুরোনো ছোট্ট একটা ফোন আছে শুধু কথা বলার জন্য। এইসব হাগ ডে, প্রপোজ ডে, রোজ ডে এইসব তার অজানা। তাছাড়া এই গ্রামটা এখনও সেই অর্থে উন্নত হয় নি। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে।
চম্পার স্বামী রতন বলে গেছে আজ ডিম কষা দিয়ে পরোটা খাবে, তাই চম্পা ডিম আনতে গিয়ে হাগ ডের কথা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
সারাদিন মাথায় চলছে হাগার কথা। হাগার জন্য একটা বিশেষ দিন, নিজের মনেই হেসে কুটিপাটি চম্পা। চম্পাকে একা হাসতে দেখে পাশের বাড়ির লক্ষ্মী ভাবল, চম্পা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি, একা, একা হাসছে।
লক্ষ্মী চম্পার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি রে, একা-একা হাসছিস, মাথাটা গেছে নাকি! চম্পা বললো, না রে, হাসছি কেন জানিস? পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে,শুনলাম, আজ নাকি হাগ ডে। আজ হাগার দিন। লক্ষ্মী বললো, কি যা তা শুনেছিস, আমরা তো রোজ হাগি। তার আবার কোনো দিন হয় নাকি? তুই এক পাগল আর ওই ছোকরাগুলো আর এক পাগল, যত সব মূর্খের দল, আমি চললাম, তোর সাথে কথা বললে আমার সময় নষ্ট হবে, আমি যাই।
লক্ষ্মী চলে যাবার পর রান্না শুরু করল চম্পা, ডিমের কসায় নুন দিতে ভুলে গেছে। ভাবছে কতক্ষণে তার স্বামী আসবে তাকে হাগ ডে র কথা বলবে। সারাদিন হাগ ডে নিয়ে ভেবেই চলেছে।

রাতে স্বামী ফিরলে তাকে যত্ন সহকারে খেতে দিয়ে বলল, জানো আমি শুনেছি আজ হাগ ডে, হাগার দিন। আজকের দিনে লোকে মনে হয় অনেকবার হাগে, ছেলেমেয়েরা, একসাথে হাগে। কথাটা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো, চম্পার স্বামী রতন। আরে হাগ করা মানে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরা। আমি তো আজ দোকানে বসে দেখলাম, অনেকে অনেককে জড়িয়ে হাগ করছে। বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো তো একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে।
তারপর চম্পাকে হাগ করে রতনবললো, এই দেখো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরছি মানে হাগ করছি। বিদেশে সবাই আজকের দিনে হাগ ডে পালন করে। লজ্জায় লাল হয়ে চম্পা বললো, তাহলে হাগ ডে মানে হাগা নয়। এতক্ষণে বুঝলাম। সব বুঝে আবার হাসতে লাগল চম্পা।
এদিকে আলু ডিম কষা খেয়ে রতন বললো, হাগ ডের কথা ভাবতে গিয়ে ডিমে নুন দাওনি সেই খেয়াল আছে? চম্পা তাড়াতাড়ি করে ডিমের বাটিতে নুন মিশিয়ে বললো, হাগ ডের জ্বালায় সব গোলমাল হয়ে গেছে রাগ কোরো না গো। এইবার খেয়ে দেখো ঠিক লাগছে কিনা?
পরোটা দিয়ে ডিম কষা মুখে দিয়ে আবার চম্পাকে জড়িয়ে ধরলো রতন। সত্যিকারের হাগ ডে পালন করলো রতন আর চম্পা।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page