কবিতা

কবিতা- ঝাপসা চোখে

ঝাপসা চোখে
-অমিতাভ সরকার

 

 

ভাগীরথীর জলে কত আলপনা আঁকা হল,
পারে দাঁড়ানো মাঝির বৌয়ের বুকে ধড়াস ধড়াস শব্দ।
আকাশে চিল মেঘের সঙ্গে খেলা করছে। দুরন্ত বাতাস বইছে।
কবিতার ছন্দ মাঝির বউয়ের বুকের ধড়াস ধড়াস শব্দে গম্ভীর। কি হয়, কি হয়।
বেপরোয়া পানকৌড়ি ডুবসাঁতার দিয়েই চলেছে।

চাঁদনী রাত ছিল, ছই দেয়া ডিঙি ছিল। ঝিরি ঝিরি বাতাস ছিল।

লজ্জা ভরা সোহাগ ছিল। চাঁদ শুধু হেসেছিল। কেন হেসেছিল জানা নাই–

মোটামুটি একটা পরিবার ছিল। নাতিপুতি, নাতনিরা ছিল, বউ-জামাই ছিল।

ছেলেমেয়েরা ছিল। হরিদ্বারের গঙ্গা।গোধূলির পর সাঁঝ- সন্ধ্যা।

শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত পার। গঙ্গা পুজো চলছে।

পাতার ঠোঙ্গায় লক্ষ্যপ্রদীপ ভেসে চলেছে গঙ্গার বুকে।

নাতির থলে থেকে বেরোল দুটো ঘট, নতুন কাপড়ে মোড়া।

বাবা ও ঠাকুমার অস্থি ছিল ঘট দুটোতে একযুগ ধরে।

এক কোমর গঙ্গার জলে নেমে করজোড়ে প্রণাম ক’রে ঘটদুটো ভাসিয়ে দিলো।

পুরোহিতের কন্ঠে মন্ত্র উচ্চারিত হলো।

মা ও ছেলে দুলতে দুলতে জড়াজড়ি করে অদৃশ্য হল।

নাতি ঝাপসা চোখে শুধু অনুভবে তৃপ্তি পেল।

দীর্ঘদিনের অমূল্য গচ্ছিত ধন গঙ্গাবক্ষে দিয়ে বুক হালকা হলো।

ডাঙ্গায় উঠে দেখলো পরিবারের সকলের চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে।

গঙ্গাবক্ষে তখন প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের আলপনা এগিয়ে চলেছে ধীর গতিতে।

আকাশের তারারা হাসছে দুটো সঙ্গী পাবো বলে।

Loading

One Comment

Leave A Comment

You cannot copy content of this page