গল্প- দীশার মতিগতি

।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

 

দীশার মতিগতি
-লোপামুদ্রা ব্যানার্জী

 

 

বিয়ের পর থেকেই দীশা লক্ষ্য করে আসছে তার বড় ভাসুর সমীর তার প্রতি একটু বেশিই খেয়াল রাখে।

সমীর একজন সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও অকৃতদার।দীশার মনে বারবার প্রশ্ন আসে যে, তার সরকারি চাকুরিওয়ালা ভাসুর ঠাকুরের বউ জুটলো না কেন?

প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সমীর গরম গরম তেলেভাজা নিয়ে আসে দীশার নাম করে।

দীশার শাশুড়ি মঞ্জু দেবী ঠেস দিয়ে প্রায়ই বলে, কপাল করে একখানা ভাসুর পেয়েছো তুমি বৌমা।বরের থেকে ভাসুর খেয়াল রাখে বেশি।

দীশার বর অরুন সি আর পি এফ এর একজন জোয়ান।এখন অরুনাচলে থাকে।মাত্র একমাস হয়েছে তাদের বিয়ে। এখন ও কোয়াটার পায় নি বলে সে দীশাকে বাড়িতে ই রেখে গেছে।

অরুনদের পরিবার খানা বেশ ছোট।বিধবা মা, আইবুড়ো দাদা, অরুন আর দীশা।

অরুণ যেহেতু বাড়িতে থাকে না সেই হেতু সমীর ই এখন দীশার লোকাল গার্জেন। অরুনের সাথে কথা বলে দীশা তার ভাসুর কে জানায় সে সপ্তাহের দুটো দিন যুব কেন্দ্র থেকে কম্পিউটার শিখতে যাবে।

সমীর খুব খুশি হয়ে বলে, ভালোই হলো।এই সুযোগে ঘর থেকে বের হতে পারবে।

দীশা প্রথমদিনেই ক্লাস শেষ করে যুব কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে দেখে তার ভাসুর ঠাকুর তার পুরানো আমলের স্কুটার খানা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একেবারে হাসি হাসি মুখ করে।দেখেই দীশার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। তবুও নিজেকে সংযত রেখে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভাসুরের স্কুটারে ওঠে একপ্রকার বাধ্য হয়ে।

ও মা তার ভাসুর ঠাকুর বাড়ি না গিয়ে একটা পার্কে সামনে এসে দাঁড়াল।হাসি মুখে বলে, এই তো সবে বিকাল বেলা।তাই আর বাড়ি ফিরলাম না।চল দুজনে পার্কে গিয়ে একটু বসি।

দীশা আর করে কি।সে ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গুটি গুটি পায়ে পার্কে ঢোকে।

কি সুন্দর পার্ক টা! গাছ গুলো কি সুন্দর করে কেটে আকার দেওয়া হয়েছে জিরাফের, নারী পুরুষের। দেখে মন খানা ভরে গেল দীশার।

সমীর ও দীশা এক বেঞ্চিতে বসে আছে তবে দুপ্রান্তে। হঠাৎ করে সমীর দীশার অনেক খানি কাছে এসে বসল। কেমন ঢিপ ঢিপ করে উঠলো দীশার বুকটা।মনটা কেমন কু গাইতে শুরু করলো। কদিন ই বা চেনে সে সমীরকে। কেমন তার স্বভাব চরিত্র কে জানে? তার ওপর অবিবাহিত ।ভাই থাকে না বলে সুযোগ নেবে না তো সে?
মনে মনে দীশা বলে,যদি কোনো রকম বেচাল দেখি তাহলে চালিয়ে দেবো টাইকন্ডুর একটা পোজ। তারপর যা হবে দেখা যাবে।

সে একাকী নারী বলে যদি তার ইজ্জতে কোনরকম হাত দিতে আসে তার ভাসুর সে কিন্তু ছেড়ে দেবে না।
ওদিকে ধীরে ধীরে সমীর ও দীশার খুব কাছে এসে যায়।সমীরের গরম শ্বাস পড়ছে দীশার গায়ে।সমীর হঠাৎ দীশার ওড়না টা এক ঝটকায় টান মেরে খুলে ফেলে দেয়।

দীশা হাতের মুঠো শক্ত করে একটা ঘুঁষি বাগিয়ে মারতে যাবে সমীরের মুখে ঠিক তখনই সমীর বলে ওঠে, কি বিপদ ঘটত বলতো দীশা যদি শুয়োপোকা টা তোমার ঘাড়ে বুলে যেত।

শুয়োপোকার কথা শুনে দীশা বেশ ভয় পেয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকে স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ। ততক্ষনে সমীর একটা শক্ত কাঠি দিয়ে ওড়না থেকে শুয়োপোকা টা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।দীশা মনে মনে বলে, ছিঃ কি সাংঘাতিক ভুল বুঝেছিলাম মানুষ টা কে। পুরুষ মানে যে সুবিধাবাদী এই কথাটা ষোলো আনা সঠিক নয়। কিছু স্বার্থান্বেষী পুরুষের জন্য সমগ্র পুরুষ জাতিকে সন্দেহ করা উচিত নয় সেটা সেদিন বুঝে ছিল দীশা।

চুপচাপ দাঁড়িয়ে না থেকে সে এগিয়ে আসে তার ভাসুরের কাছে।তার পর দুই হাত দিয়ে ওড়নাটা টাইট করে ধরে আর সমীর অতি সাবধানে কাঠির ডগাটা দিয়ে শুয়োপোকা টা ধীরে ধীরে তুলে দূরের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসে।

তারপর হাত ধুয়ে পাশের কফি স্টল থেকে দুকাপ কফি আর সিঙারা এনে হাজির ।
আজ সিঙারা টা কেন তার ভাসুর আনলো তা নিয়ে অনর্থক মস্তিষ্ক চালান না করে পরম আনন্দে গরম সিঙ্গাড়া আর কফির স্বাদ আস্বাদন করল দীশা।

Loading

Leave A Comment