উৎসব রাত শেষ হলে
-সুনির্মল বসু
উৎসব রাত শেষ হলে, পড়ে থাকে শূন্য দেব দেউল,
বিষন্ন প্রদীপ জ্বলে, তখন স্মৃতিরা জীবনের বেমিশাল অভিজ্ঞতার কথা বলে,
তখন স্মৃতি পথে তুমি আসো, অনুরাধা, ধান জমি পেরিয়ে উদাসী বাতাসের মতো শাড়ির আঁচল উড়িয়ে তুমি আমার কাছে আসো,
বিকেলে অরণ্য পাখিরা ঘরে ফেরে, মোহনার কাছে নদীও থমকে থেমে যায়, রাতের জোছনায় ভেসে যাওয়া নদীতে উদ্দেশ্যহীন সাম্পান ভেসে যায়, আকাশ জুড়ে আলোর মেলা,
মন বিজন অন্ধকার নিয়ে বসে থাকে, সত্যি সত্যি
তুমি আসো না, রাত আসে, আকাশে তারা ফোটে,
অপেক্ষার জন্য অপেক্ষারা একসময় বিষন্ন হয়,
স্মৃতির ক্যানভাসে অতীত জেগে ওঠে,
হাইওয়ে, মিলেনিয়াম পার্ক, ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের সোনালী ঈগল, শহরের রাজপথ অজস্র স্মৃতির মালা গেঁথে দেয়, সত্যি সত্যি
তুমি কখনো আমার কাছে আসো না,
রাতের আকাশ, রাতের নদী কেঁদে যায়, দেবদারু ঝাউবনে বাতাস হাহাকার করে, গাছের পাতায় রাতের শিশির ঝরে পড়ে, বাঁশবনে রাতপাখি কেঁদে যায়,
কত সহজেই তুমি আমায় ভুলেছো,
হয়তো কোথাও ভুল ছিল, জাহাজ বন্দর ছেড়ে পথ হারালো, নদী নাব্যতা হারালে, কি নিয়ে থাকি,
ভালোবাসা আজও আমার কাছে ঝরা বকুল ফুলের গন্ধ নিয়ে আসে, বাসী ফুলের গন্ধ নিয়ে আমি আমার নিজস্ব পৃথিবীতে অন্যরকম ভাবে বাঁচি, স্মৃতির হাজারদুয়ারীতে গোলকধাঁধায় ঘুরে মরি,
পৃথিবীর যে কোনো শহরে, যে কোনো বন্দরে, শহরের রাজপথে, নির্জন পার্কে কতদিন তোমাকে খুঁজেছি আমি, এভাবে একতরফা কতদিন ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করা যায়,
ভালোবাসায় শুকিয়ে গেলে, নদীও মরুভূমি হয়ে যায়, হেমন্ত দিনের ঝরা পাতার মতো তুমি আমার জীবন থেকে ঝরে গেছো, এই সত্যটা বুঝতে জীবনের কত মূল্যবান প্রহর চলে গেল,
মিথ্যে প্রেম কেঁদে বুক ভাসালো, গভীর রাতে এপিটাফের ওপর দীর্ঘ শ্বাস বয়ে গেল,
এসব কোনদিন তুমি জানলে না, অনুরাধা,
অথচ, আরন্য ভূমি, নদীর খাড়ি পথ, শহরের স্কাইস্ক্রাপার থেকে রাজপথ, এই ভালবাসার কথা জানে, তারার আলোর মালা পরা রাত, আকাশে জোছনার বৃষ্টি সে কথা জানে,
শুধু তুমি, অনুরাধা, কোনোদিন এ কথা জানলে না,
ভালো থেকো তুমি, খুশি থাকো,
আমি আমার মতো নিজের মতো বাঁচি।