ই যুগের ই স্নান
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
প্রস্তর যুগ তাম্র যুগ লৌহ যুগ এইভাবে নানান যুগের হার্ডল রেস পেরিয়ে এখন ই`যুগে ঢুকে পড়েছি।
রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা বাজছে রাতের যুগকে অনেক পিছনে ফেলে ডাকহরকরাকে সরিয়ে টেলিগ্রামকে আদিম করে দিয়ে এখন, ই মেল @.com স্বাগতম।
ই পোর্টাল, ই মানি লেন্ডিং, ই টেন্ডার, ঠিকই আছে। যুগের সঙ্গে সময়ের সঙ্গে চলাই জীবন। নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। তবে আমার খুব আশ্চর্য লেগেছে, ই স্নান। সত্যি বলতে হাসিও পেয়েছে খুব। ঘটনাটা বলি।
ঠাকুমার খুব ইচ্ছে, বলতে গেলে বিরানব্বই বছরের বৃদ্ধার অন্তিম ইচ্ছে শেষ বারের মতো গঙ্গা স্নান করে।
ডক্টরকে কথাটা জানাতেই তিনি হাঁ হাঁ করে লাফিয়ে ওঠার মতো ক`রে বললেন, আরে ওনার না-হয় বয়স হয়ে গিয়েছে ভুলভাল বলছেন, আপনারাও পাগল হলেন না-কি?
বললাম না না সেই স্নান নয়, একেবারে নিরাপদ পবিত্র নির্ভয় স্নান। ই স্নান।
ডক্টর স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন, ও তাই বলুন। ওকে, ই স্নান Absolutely lovely Idea. You may proceed.
ঠাকুমাকে আর সাত মাইল দূরে গিয়ে নাক টিপে ডুব দিয়ে পূণ্যলাভ করতে হবে না, ঘরে বসেই গঙ্গাস্নান। ই স্নান। ঠাকুমা আকাশ থেকে পড়লো।
সেটা আবার কী?
একটু সন্দেহ ছিল ঠাকুমার। স্বাভাবিক, পুরনো দিনের মানুষ, আধুনিকতার চাকচিক্যের প্রতি নাক সিঁটকানো অবিশ্বাস।
তাই বুঝিয়ে বলতে হলো, এই জল সাধারণ ঐ মাটি গোলা নোংরা গঙ্গাজল নয়। এ একেবারে হরিদ্বারের হর কী পৌড়ী ঘাটের জল। অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসতে হয়।
সেই কথা শুনে ঠাকুমার সেকি আনন্দ হাসি।
বলিস কি! এমনও হয়? বেশ বেশ, তাহলে সেই ব্যবস্থাই কর। হলো ব্যাবস্থা।
ঠাকুমা আজ আর নেই। কিন্তু ক্যামেরায় ধ`রে রাখা তার সেই ফোকলা দাঁতের সরল হাসি, ই স্নান সমেত আজও ঘরের দেওয়ালে উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে আছে।