গল্প

গল্প- নেপালের ঝুলন্ত ব্রীজ

নেপালের ঝুলন্ত ব্রীজ
-অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ)

 

 

দূরে দেখা যাচ্ছে একটা ঝুলন্ত দোলনা।
দোলনা আবার এমন ঝুলে নাকি?
গাড়ির কাঁচের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে ওরা দুলছে। বাহ বেশ তো। তখন থেকেই ইচ্ছে করছে আমিও যাবো। কিন্তু গাড়িটা যে চলছে। থামানোর উপায় নেই।
কী মজা তাই না! স্রোতস্বিনী নদী বয়ে চলেছে পাহাড়ের ধার বরাবর।
পাশ দিয়েই পাথুরে রাস্তা। কোথাও উঁচুনিচু আবার কোথাও পিচের তৈরি রাস্তা।
অনেক জায়গায় কাজ হচ্ছে রাস্তার। তাই আমাদের দোতলা গাড়িটা দুলতে দুলতে চলল।
ভাবছ,কোথায় যাচ্ছি?
আমরা যাচ্ছি নেপাল। আমাদের প্রতিবেশী দেশ।
আমাদের গাড়িটা দোতলা। স্লিপার বাস। তাই খুব একটা কষ্ট হয় নি যেতে। তবে অনেকটা পথ। তাই কখনো শুয়ে কখনো বসে আবার কখনো দাঁড়িয়ে রাস্তার দুপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি।
তারই ফাঁকে চোখে পড়ল এই ঝুলন্ত দোলনা। পরে বুঝলাম এটা ঝুলন্ত রাস্তা।
প্রথম দেখে কিছুটা অবাক হলাম। পাহাড়ের ওপারে যারা আছে তাদের এপারে আসার একমাত্র জলপথ। নেপালের কাঠমান্ডু যাওয়ার রাস্তায় পাশেই স্রোতস্বিনী নদী। যদিও খুব সরু খুব।কিন্তু বেশ গতি। পড়ে গেলেই আর উঠতে পারব কিনা জানা নেই। কিন্তু কাছে যাবো কীভাবে? এ যে অনেক দূরে।

কিন্তু মনের ইচ্ছে থাকলে ঈশ্বর ঠিক সুযোগ করে দেয়।
তখন সবে মাত্র গাড়ি থামিয়ে একটা হোটেলে দুপূরের খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। কাঠফাটা রোদে গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন হোটেলে আবার কয়েকজন বাসেই বসে আছে। হঠাৎ একবয়স্ক জ্যাঠু বিরক্ত হয়ে বলল,চলো তো সবাই একটু আশপাশে ঘুরে আসি। চুপচাপ গাড়িতে বসে থাকার চেয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখি।
যারা রাজি হলো তাদের মধ্যে ছিলাম আমরা। ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তার ধার দিয়ে যেতে যেতে খুঁজে পেলাম সেই ব্রিজটা। আরে,এই তো সেই ঝুলন্ত দোলনা। যেটা আমরা বারবার গাড়ি থেকে দেখে আসছি।আর মনে মনে ভেবেছি কখন গাড়ি থেকে নেমে একবার সামনাসামনি দেখব।
সবাই দৌড়ে গেলাম দোলনার কাছে। নীচে দেখা যাচ্ছে সেই স্রোত। স্থানীয় কিছু মানুষ পিঠে বোঝা নিয়ে ছুটতে ছুটতে চলে গেল। হিন্দিতে বুঝিয়ে দিল এটা তাদের যাতায়াতের পথ। ওপারের মানুষের সঙ্গে একমাত্র সংযোগস্থাপন রাস্তা।এটা একটা সম্পূর্ণ তারের ব্রিজ। ব্রিজে পা রাখলেই ব্রিজটা দুলে উঠছে। একপা দুপা যেতে যেতে পৌঁছে গেলাম ওপারে। মনে হলো এভারেস্ট জয় করলাম।
আসলে তেমন কিছু নয়। তবু ভীষণ আনন্দিত হলাম। এদিকে গাড়ি ছাড়বে, একজন খুঁজতে খুঁজতে এসে বলে গেল,তাড়াতাড়ি এসো। এখুনি গাড়ি ছেড়ে দেবে।
আমি তখনও ওপারে। এবার ফিরতে হবে। সবাই চলে গেল। সেলফি আর ভিডিও করতে করতে বুঝতেই পারিনি আমি কখন একা হয়ে গেছি। ভীষণ ভয় করছে। ওই সময় একটু বেশী দুলছে মনে হলো। ওপার থেকে মালপত্র নিয়ে আসছিল অনেকে। তাই। একজন নেপালী মেয়ে বুঝতে পেরে হাতটা বাড়িয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল,আমি আছি চলে এসো। ভরসা পেলাম। হাতটা শক্ত করে ধরে ব্রিজ পার হলাম। আসার সময় মেয়েটির সাথে একটা সেল্ফি তুলতে ভুলিনি।
ছবি তুলতে তুলতে একেবারে বাসের কাছে। কিন্তু বাসের বাকি সবাই রেগে আগুন। এত দেরি হওয়ার জন্য দুচারটি বাংলায় উত্তম-মধ্যম গালাগাল শোনালো। কিছু না বলে চুপচাপ বসে পড়লাম সিটে।তারপর পরিবেশ ঠান্ডা হতে ঝুলন্ত ব্রিজে ওঠার অভিজ্ঞতা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতাম।
বাকিরা শুনে ভীষণ আফসোস করছে। এত সুন্দর একটা স্পট ছিল,তারা জানতেই পারল না।
আমাদের গাড়িটা আবার চলতে শুরু করলো। দূরে দেখা যাচ্ছে আরও একটা ঝুলন্ত ব্রিজ। আমাদের দোলনা।

Loading

2 Comments

Leave A Comment

You cannot copy content of this page