অণু গল্প

অণুগল্প- আশির্বাদ

আশির্বাদ
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ

হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। পাড়ার বৃদ্ধ বিষ্টু মাষ্টার। বাজারের ব্যাগটা শক্ত করে ধরলেন। তবু বয়স হয়েছে তো,মাথাটা কেমন ঘুরে গেল। লাঠিটা ঠিকরে পড়ল দূরে। চশমার ফ্রেমটা গেল খুলে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জিনিস। কত লোক। স্কুলের সবচেয়ে ভালো ছেলেটা পাশ দিয়েই ফিরছিল। কোন ভ্রুক্ষেপ করল না। অদেখার ভান করে এগিয়ে গেল। স্যার, একবার ডাকার চেষ্টা করল। কিন্তু কি যেন ভেবে থেমে গেল।
অন্যান্য যে যার কাজে ব্যস্ত।ধীরে ধীরে ওঠার চেষ্টা করলেন। কেউ একজন বাড়িয়ে দিল হাতটা। শ্রদ্ধার সঙ্গে বলল, আমার হাতটা শক্ত করে ধরুন স্যার। বৃদ্ধ স্যার একবার তাকাল ছেলেটার দিকে। চোখে চশমা নেই। বয়সের আড়ালে ঢাকা দৃষ্টি। ছেলেটা স্যারকে যত্ন করে তুলে ধরল। বাজার সামগ্রী ব্যাগে ভরে দিল। মাষ্টার মশাই বললেন, কে বাছা? ঠিক চিনতে পারছি না তো।
সেই রকমই দুষ্টু হেসে বলল, স্যার আমায় চিনলে না? আমি আপনার ক্লাসের সেই বদমাশটা, বাদল। যার জ্বালাতনে সারা ক্লাস অতিষ্ঠ হয়ে যেত। যার জন্য আপনার কাছে কত বকুনি খেয়েছি। তা কি ভুলতে পারি?
আমি সেই লাষ্ট বেঞ্চের লাষ্টবয় বাদল।
মাষ্টার মশাই মনে করার চেষ্টা করলেন, মাথা মোটা একটা দুষ্টু ছেলে। সবার অপ্রিয় ছিল স্কুলে। বন্ধুদের সাথে মারামারি, গন্ডগোল এসব করতে ওস্তাদ।
তাই যেদিন স্কুল থেকে বিদায় নিল বাদল, সব স্যারেরা একটু স্বস্তি পেয়েছিল।
শুধু এই বিষ্টু স্যার মাথায় হাত দিয়ে বলেছিল, বাদল এবার একটু মানুষ হও।
বাদল মুচকি হেসে বলেছিল, আপনারা শান্তি পেলেন স্যার। আর জ্বালাতে আসব না।
মাষ্টার মশায়ের আজ সব মনে পড়ে যাচ্ছে।
বাদল, শক্ত করে হাতটা ধরে স্যারের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এল।
স্যারও বাদলের হাতটা ধরে বলল, আবার এসো বাদল।
বাদল মুচকি হেসে বলল, না স্যার,কথা দিয়েছিলাম আর জ্বালাতে আসব না। আজ বাধ্য হয়েই…তবে আপনি ডাকলে না বলতে পারব না স্যার।
আপনার আশির্বাদ বিফলে গেছে সেকথা যাতে কেউ না বলে সেজন্য মানুষ হওয়ার একটু চেষ্টা করছি স্যার। আমি হতে পেরেছি কি স্যার?
স্যার- চুপ হয়ে গেলেন। বাদল হাসতে হাসতে চলে গেল।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page