প্রেম ডট কম
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
চন্দ্র সেদিন রাতে মত্ত অবস্থায় তার বউ বিন্দুকে পরকীয়া প্রেমের অপরাধের শান্তি হিসেবে গলা কেটে খুন করে নিজেও গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে গেল।
একটি অপ্রেম দাম্পত্য জীবনের নিদারুণ পরিসমাপ্তি।
এটা পাঁচশো বছরের পুরনো কথা।
পাঁচশো বছর পরে পুনরায় চন্দ্রের নরলোকে আগমন এবং দৈবযোগে সঙ্গে বিন্দু । বিধাতার লিখনে তাদের আবারও মিলন কিন্তু পরিনতি ?
এবার ঘটনা এক্কেবারে বিপরীত। চন্দ্রর পরকীয়া প্রেমের অপরাধের শান্তি হিসেবে তাকে গলা কেটে খুন করে নিজেও গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে গেল বিন্দু।
ব্যস হ’য়ে গেল এবারের মতো আপদের শান্তি ।
আবারও পাঁচশো বছর পরে পুনরায় চন্দ্রর মর্তলোকে আগমন এবং সঙ্গে যথারীতি চিরসঙ্গী বিন্দু। বিধাতা বিগবসের অদ্ভুত খেল ।
এবারেও মিলন বিবাহ ঘরসংসার এবং পরকীয়া।
তবে এবার আর কোনও ঝামেলা ঝঞ্ঝাট না, কারণ দুজনেই দু’ জায়গায় মন দেওয়া-নেওয়ার পালায় মেতেছে। দু’জনেই খোস মেজাজে আছে। অপূর্ব সমঝোতা। যে যার পছন্দের ডালে বসে মনের সুখে দোল খাচ্ছে। তুমিও সুখী আমিও সুখী। অসাধারণ দাম্পত্য সুখ যাপন।
জীবনের খেলাঘর। ইয়েস, খেলাঘর। যে যেভাবে পারো খেলে যাও। মানিয়ে নাও নয়তো মেনে নাও। আরে বাবা সুখ হলো দর্শনধারী। দেখানোতেই সুখ। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়দের কাছে
নৈনিতালের নাম করে নৈহাটির গঙ্গা দর্শন লজে দুর্বিষহ সাতদিন কাটিয়ে এলেই মিলন মধুর দাম্পত্যের অকাট্য দলিল প্রমাণ। যেমন দেখানো হবে, লোকে তেমনই দেখবে। পাক্কা খেলোয়াড়, ডুব সাঁতার মাষ্টার।
ভালই চলছিলো চন্দ্- বিন্দুর মন কী খেল, কিন্তু ঐ-যে কথায় আছে,,
সুখের পরমায়ু বডই ক্ষণিকের। এই আছে এই নেই,,,
মুঠোয় ধরে রাখা বরফের মতো। ফাঁকা হাতের তালুতে জল লেগে আছে ঠান্ডা পরশ আছে কিন্তু বরফ নেই, সে আঙুলের ফাঁক গলে ফক্কা। শুধু স্মৃতি রেখে গেছে, সে নেই।
চন্দ্রর মন পাগল করা মানবী, পরিনতি বিহীন প্রেমের জালে হাঁসফাঁশ করতে করতে জাল ছিঁড়ে নতুন নৌকোর সওয়ারী হল। বাই জান,
সেই বিরহে বিরহী হয়ে চন্দ্র সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী হয়ে বিবাগী হল।
বিন্দু এখন একা ঘরে আনন্দে ডগমগ । ভাবে, যাক ভালোই হল, বাঁচা গেল । হাত পা ঝাড়া। ওপেন সিক্রেট ছিল ঠিকই, দুজনের তরফেই ছিল, তবুও চক্ষুলজ্জা বলে তো একটা কথা আছে, তাই একেবারে খুল্লামখুল্লা, কিন্তু এইবার?
এই তো পরকীয়া প্রেমের অবাধ আনাগোনার ভরপুর সুযোগ।
কিন্তু ঐ-যে কথায় আছে, সবার কপালে সুখ সয় না। বিন্দুতে বেশিদিন মন পোষালো না বিন্দুর মনের মানবের।
সে-ও নিজের সুখময় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নতুন কোকিলার কুহুতানে মন মজিয়ে রাধাচূড়ার ফুলেল শাখে দোল খেতে চলে গেল।
বিন্দু দুঃখে আফসোসে দিশাহারা হয়ে কব্জির শিরা কেটে রক্তের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে ইহজীবনের সমাপ্তি ঘটালো।
পাঁচশো বছর পরে তারা দুজনেই আবারও এলো ধরাধামে, মিলিতও হল কিন্তু কেউ-ই আর পরকীয়ার ফাঁদে হৃদয় গলালো না। কেন !
এমন হবার কারণ কী?
এবারে ওরা যৌথ ভাবে দেবতা বিগবসের কাছ থেকে বর চেয়ে এসেছে ,
‘যা ইচ্ছে তাই দাও শুধু প্রেমের ডোজ কম করে দাও।’ ওটা বড্ড জ্বালিয়ে মারে, লণ্ডভণ্ড করে দেয় জীবন। প্রেম কম, ঝামেলা কম।
এ জীবনে শুধুই প্রেম ডট কম।
এদিকে আপনাদের চুপিচুপি একটা কথা ব’লে দিই, এদের সঙ্গে কিন্তু ওদিকে সেই
মানব আর মানবীও জন্ম নিয়েছে। আরও সমস্যার কথা, ওদের সঙ্গে কিন্তু দেবতা বিগবসের কোনো চুক্তি কিংবা বর ইত্যাদি কিছুই হয়নি, সুতরাং ওদিকের রাস্তা খোলা।
কে জানে কী আছে বিগবসের মনে। চন্দ্র-বিন্দুকে, কে যে কখন আপন করে নেয় কে জানে?
খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে, হা হা হা হা