অণু গল্প

ভাইরাল

ভাইরাল
-অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ

এই যে দিদি, একটু শোনো। আমি একটা নতুন ভিডিও বানিয়েছি। আমার চ্যানেলটাকে ‘সাবক্রাইব’ করে দেবে দিদি?
মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। আমাদের গাঁয়ের সেই লাজুক বউটা। মার্জিত শাড়ি পরে পরিপাটি হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত। যার সাজপোশাক, কথাবার্তায়, চলাফেরায় মধ্যে একটা আভিজাত্য ফুটে উঠত।
আজ সেই বউটা উৎফুল্ল হয়ে বলছে, ‘আমি এখন ভাইরাল’।
-তার মানে?
-আমার কত কত ভিডিও এখন ভাইরাল হচ্ছে। কিছু দিন পর টাকা পাবো। তাই যাকে সামনে পাচ্ছি একটু বলে রাখছি।
-তা তুমি কী জাতীয় ভিডিও করো?
একমুখ হেসে বলল- সে আমি একটা লিঙ্ক পাঠিয়ে দেব, দেখলেই বুঝতে পারবে? ওসব মুখে বলা যায় নাকি?
-তার মানে?
-মানে! আজকাল ছেলেরা যা দেখতে চায়? যুগ যেমন এগিয়েছে, তেমন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে না পারলে লোক ভিডিও দেখবে কেন? ওই একটু ‘স্লিপ ব্লাউজ’ কিংবা ‘স্লিপ নাইটি’ পরে বিছানায় শুয়ে… একটু আকর্ষণীয় করে নিজেকে সাজাতে পারলেই রাতারাতি ভাইরাল।
-তা তোমার স্বামী, শ্বশুর মশাই, বাড়ির লোক কিচ্ছু বলবে না?
-দূর! ওদের এসব জানাতে আছে নাকি? আর জানলেই বা কে পাত্তা দিচ্ছে?
কয়েকমাস পর রাস্তায় হঠাৎ দেখা।
-কী ব্যাপার আর ভিডিও করছ না?
একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল- খুব ভুল করে ফেলেছি। ভিডিও করতে গিয়ে, যার সাথে নতুন ঘর বাধতে ঘর ছাড়লাম। সে আমাকে লুঠ করে পালিয়েছে। আমার কেউ নেই এখন, ভীষণ একা। সংসারে ঠাঁই নেই। ছেলেটাও ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একটা কাজ খুঁজে দেবে দিদি?
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তথাকথিত মধ্যবিত্ত সমাজের উন্নত আধুনিক নারীর দিকে!

Loading

3 Comments

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

You cannot copy content of this page