
অণুগল্প- বেকার কবি
বেকার কবি
-লোপামুদ্রা ব্যানার্জী
এবারের ঝগড়াটা ভীষণ রকমের সিরিয়াস হয়ে উঠেছে। নীরা সম্পর্ক শেষ করে দিতে চেয়েছে। আঁতে লেগেছে রূপকেরও। এতদিনের আলাপ, এভাবে শেষ!
কিন্তু মন মানছে কই? বারবার রূপকের চোখের সামনে ভেসে উঠছে কলেজের দিনগুলোতে নীরার বিস্মিত চোখের ভাষা। অফ পিরিয়ডে কলেজ ক্যান্টিনে রূপক উচ্চারণ করত তার দরাজ কন্ঠে স্বরচিত কবিতার লাইন। ওর রোমান্টিক কবিতা শুনে বন্ধু বা বান্ধবীরা ইয়ার্কি জুড়ে দিলেও নীরা কিন্তু মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে নিষ্পলক চাহনিতে অনুভব করতে চাইত রূপকের কবিতার প্রতিটি লাইন। নীরার এই আ্যাটেনশন কিছুদিনের মধ্যেই টের পায় রূপক। ধীরে ধীরে নীরা হয়ে ওঠে রূপকের কল্পলোকের মানসী। তিন বছরে প্রায় শ’খানেক কবিতা লিখে ফেলে নীরাকে নিয়ে। নীরাও ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে রূপকের প্রতি। থার্ড ইয়ারের শেষ দিকে একটা চিঠি লিখে নীরা জানায় তার মনের কথা। নীরার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না রূপকও। ক্লাস অফ করে গ্রীষ্মের ভরদুপুরে ছাতা মাথায় দিয়ে পার্কের জ্বলে যাওয়া ঘাসের ওপর বসে দুটিতে কত না স্বপ্নের বীজ বুনেছিল। নীরা বলত, ‘রূপক তুমি অনেক অনেক বড় কবি হবে। তোমার প্রতিটা প্রেমের কবিতা প্রেমিক প্রেমিকাদের হৃদয় স্পর্শ করে যাবে অহরহ। প্লিজ তুমি কিন্তু কখনো কবিতা লেখা ছেড়ে দিও না। তোমার সৃষ্টির মাঝেই লুকিয়ে আছে তোমার আসল অস্তিত্ব।’
গ্রাজুয়েশনে দূর্দান্ত রেজাল্ট করে নীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। আর রূপক মাঝারি মানের রেজাল্ট করে পড়াশোনাতে ইতি টেনে রোজগারের চেষ্টায় নেমে পড়ে চাকরির ময়দানে। দুটো বছর বিভিন্ন রকমের চাকরি ধরা ছাড়া করতে গিয়ে সে ক্রমশ কবিতার থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। নীরা কিন্তু সবসময় পাশে থেকে কবিতা লেখার উৎসাহ বাড়িয়ে এসেছে ।
অন্য দিকে মাস্টার্স পাশ করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে নীরা। এক বছরের মধ্যে একটা সরকারি চাকরি জুটিয়ে ফেলে সে। আর নীরার চাকরি পাওয়ার পর থেকেই ওদের মিষ্টি সম্পর্কটা হঠাৎ তিতো হয়ে উঠতে লাগল।
মান অভিমানের পালা যেন আজকাল অত্যাধিক লম্বা হয়ে গেছে। কথায় কথায় নীরা সম্পর্ক শেষ করার ধমকি দেয়। তবে রূপক এতদিন সিরিয়াসলি নেয় নি । কিন্তু আজ যেভাবে নীরা তাদের পুরানো বন্ধু বান্ধবদের সামনে রূপককে ‘বেকার কবি’ বলে সম্বোধন করল তাতে ভীষণ রকমের আঁতে লেগেছে রূপকের। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয তাদের সম্পর্কের ইতি টানার। কারণ যে সম্পর্কের মধ্যে অসম্মান, অপমান মিশে থাকে সেই সম্পর্কের পরিণতি কখনো ভালো হতে পারে না।
সমাপ্ত
