• কবিতা

    কবিতা- প্রেম-কথা

    প্রেম-কথা
    -সুমিত মোদক

     

     

    সময় কি ভাবে চলে যায় জানে না প্রেমিক যুগল ;
    নদির মতো গতি পরিবর্তন করা
    খুই কঠিন হয়ে ওঠে ;

    তবুও তো স্বপ্ন দেখতে থাকে ভেসে থাকা
    ছোট ছোট নৌকা গুলো ;

    যে দিন মাঝি হয়ে এপার থেকে ওপারে যাবো ;
    ছুঁয়ে আসবো নিজেরই শিকড় ;
    এখনও ঠিক ঠিক জানা হয়নি ঠিক কতটা
    মাটির গভীরে ছড়িয়ে দিয়ে আছে ;

    সময় পেলেই অসময়ও ছুটে যায় নদীর কাছে ;
    নিজস্ব প্রেম-কথা স্রোতে ভাসিয়ে দেবে বলে ;

    প্রেম জেগে থাকে বলেই বিকালের আলো
    মায়াবী হয়ে যায় প্রতি বার , বার বার ।

  • কবিতা

    কবিতা- অভিমুখ

    অভিমুখ
    -সুবিনয় হালদার

     

     

    পাইন গাছে আইন ঝুলে চোখ বুজিয়ে দোলে
    খবর হলো মিথ্যে কথা আনন্দে বর্তমান ভয়ে ;
    সবাই কেমন ভীড় করে সব দেখছে সদলবলে !

    ফুসুরফাসুর গুজুরগুজুর নানান মুখে ঘোরে
    ঠিক ভুল বুঝিনে বাপু পট্টি খুলে শক্ত তুমি হলে,
    শ’কৌরব থাকতো বেঁচে গৌরবে দীর্ঘায়ু ধরে !

    তুমি ভাবছ কেউ বোঝেনা গুলিয়ে দিলেই হলো
    ঘোলা জলে সাঁতার কাটবে ওরা আমি শুধুই খাবো ;
    লড়িয়ে দিয়ে বিলিয়ে দেবো কিলিয়ে নেবো অন্য পথে
    আহাম্মক মূর্খ যারা তাদের কাছে এটাই অনেক !

    সেই ছকে ছকবাজিটা চলছিলো বেশ বেগে
    হঠাৎ করে শনিরদশা ব্রহ্ম রূপে প্রজা-পতি এসে
    অভি-মুখটা ঘুরিয়ে দিলো চোখ পাকিয়ে রেগে !

    মায়ায় ভরা এসংসারে আমিও তো মানুষ
    জ্বালিয়ে দিয়ে উড়িয়ে দেবো জালিয়াতির ফানুস ;
    একটু আধটু ভুলভ্রান্তি হয়েই থাকে সবার
    তা বলে কী ছেড়ে দেবো পুরানো অভ্যাস ?

    এই-না বলে আওয়াজ তুলে হাঁক দিলেন তিনি
    সবার সেরা সবুজ ঘেরা আমার মাতৃভূমি ।

  • গল্প

    গল্প- আনন্দ পার্বণ

    আনন্দ পার্বণ

    -সুমিতা দাশগুপ্ত

     

     

    ছেলেবেলা থেকেই শুনে এসেছি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ,পরিণত বয়সে এসে বুঝতে পারলাম, সদা পরিবর্তনশীল এই সময়ে , প্রবচনটিকে বোধহয় একটুখানি শুধরে নেওয়াই যায়।আজ বোধহয় বাঙালি নির্দ্বিধায় বলতেই পারে, উঁহু ,আর তেরো নয় , গোটাগুটি চোদ্দোটি পার্বণের গৌরবময় উপস্থিতি বাঙালির পার্বণ লিষ্টিতে। সেই সানন্দ সংযোজনটি হলো বই -পার্বণ, পৌষ পার্বণের পিছু পিছুই যার সগৌরব উপস্থিতি। আপামর বঙ্গসন্তানদের সে বড়ো প্রিয়, বড়ো আপন।
    পিকনিক, হস্তশিল্পের প্রদর্শনী ইত্যাদি শীতের সাতকাহনের মাঝেই হৈ হৈ করে বইমেলার রব উঠে পড়ে।
    লেখক, প্রকাশক, প্রচ্ছদ শিল্পী,প্রুফ রিডার, ছাপাখানা মায় বাঁধাই কর্মী, ভ্যান গাড়ি কারুরই আর দম ফেলার অবকাশ থাকে না। ওদিকে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে হেথা হোথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা বাঁশ, কাঠের তক্তা, ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়ে উঠতে থাকে ছোট বড়ো নানা আকারের স্টলে। কথ্যভাষায় স্টল বটে, আদতে সেগুলি বুঝি সুন্দর লাল নীল কাপড়ে মোড়া, অজস্র মণিমুক্তো ঠাসা মণিমঞ্জুষা। দেশী বিদেশী বিদগ্ধ পন্ডিতজনের মণীষায় উজ্জ্বল, নানা আকারের পুঁথিপত্তরের পাশাপাশি নব নবীন সমস্ত লেখকের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ভাস্বর কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের গৌরব এই বইমেলা। সমগ্র বিশ্বে খুব কম জায়গাতেই এমন মহাসমারোহে বই উৎসব পালিত হতে দেখা যায়।
    ইতিহাসের পৃষ্ঠা একটু ওলটালেই দেখা যায় বইমেলা প্রথম শুরু হয় ফ্র্যাংকফার্টে।আজও সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বইমেলা বলে পরিগণিত ।আন্তর্জাতিক স্তরেও আকারে এবং চরিত্রে পৃথিবীর সমস্ত দেশকে টক্কর দেবার ক্ষমতা রাখে সেটি। সেই তুল্যমূল্য বিচারে না গিয়ে, বাঙালি যা পেয়েছে তাতেও সে অখুশি নয় মোটেই। শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত পাঠকের উপচে পড়া ভীড় তার সাক্ষ্য দেয়। ওই ক’টা দিনে সোনার কাঠির ছোঁয়ায় জীবনের যতো অভাব, দারিদ্র্য, হতাশা ,বুঝি ছায়ার মতো মিলিয়ে যায়। সম্বৎসর মনের মাঝে জমানো যতো বইয়ের নাম ছিলো, সেগুলিকে ছুঁয়ে, হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখার এই তো সুবর্ণ সুযোগ, সে পকেটে রেস্তর জোর থাকুক চাই নাই বা থাকুক। পুস্তকপ্রেমী এই সুযোগ কি ছাড়তে পারে! এবারে হয়তো কেনা হলো না, সামনের বার নিশ্চয়ই হবে, এই আশাই, আগামী দিনে পথ চলার পাথেয়। আসলে আমরা যখন বই সংগ্রহ করি তখন তো শুধু বই নয়, আমরা আনন্দও সংগ্রহ করি।
    বিগত বেশ কয়েকটি বছর বইমেলা যাওয়া, হয়ে ওঠে নি, এই বছর আকস্মিকভাবে সেই সুযোগটি এসে গেল। ভিড়ের মাঝে নয়, কিঞ্চিৎ ফাঁকায় দুপুর দুপুর সেরে ফেলার সংকল্পে বেলাবেলি পৌঁছনো গেল। তখনই শুরু হয়ে গেছে নামকরা প্রকাশনার স্টলগুলোতে, আবালবৃদ্ধবনিতার লম্বা লাইন। কেনার পাশাপাশি ছুঁয়ে দেখার আগ্রহও কিছু কম নয়। শিশুদের ঝলমলে মুখ, তরুণ প্রজন্মের সদ্য প্রকাশিত বইসমূহ উল্টেপাল্টে দেখার পাশাপাশি, প্রাজ্ঞ ও বয়স্কজনের তালিকায় থাকা জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ সমন্বিত গুরুগম্ভীর পুস্তক সংগ্রহের আকাঙ্ক্ষা দেখতে দেখতে মনে হয়, বাঙালির যে দিন গেছে, তার সবটুকুই হারিয়ে যায় নি, কিছু তো আছেই,যার খবর আমরা রাখি না।
    মনে রাখতে হবে এই মেলা কেবলমাত্র লেখকের নয়, বছরের পর বছর ধরে সে নবীন পাঠকও নির্মাণ করে এসেছে, আজও করে। বাবা, মা, অভিভাবকদের হাত ধরে আসা শিশু কিশোরের দল, উত্তেজনায় ভরপুর তাদের জ্বলজ্বলে মুখচ্ছবি, সেই সাক্ষ্য দেয়।
    পূর্ব অভিজ্ঞতায় বিশ্বভারতীর ফাঁকা স্টল এক বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ছিলো। । এই বছরে সেখানে উপচে পড়া ভীড়, চিত্তে শান্তির প্রলেপ দিলো। স্টলের নিভৃত কোণটিতে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, এরা শুধুই ঘর সাজানোর সামগ্রী সংগ্রাহকদের দলভুক্ত, না-কি হুজুগে মাতামাতি করা,”পাবলিক”!
    অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত মধ্যবয়সিনী গৃহবধূ, অথবা যৌবনের প্রান্তসীমায় দন্ডায়মান, কিছু এলোমেলো পোশাকের যুবকের , হাতের লিস্টি মিলিয়ে বই সংগ্রহের ছবি ,আমায় আশ্বস্ত করলো, বুঝিয়ে দিলো আমার সে আশঙ্কা মিথ্যে করে এঁরা প্রকৃতই পাঠক শ্রেণীভুক্ত।
    হেরে যাওয়াও যে কখনো সখনো এতো আনন্দদায়ক হতে পারে, তা কে কবে ভেবেছে!
    এই যে নানা আলোচনায় শুনি বাঙালি আজকাল আর বই পড়ে না, সেকথা সর্বৈব সত্যি নয় তাহলে ! বাঙালির সব কিছুই হারিয়ে যায়নি একেবারে।
    আমার নিজস্ব সংগ্রহের তালিকায় থাকা , এবং ভালোবাসার জনদের উপহার দেবার জন্য কিছু বই সংগ্রহ করে নিয়ে চটপট বেরিয়ে পড়ি।
    সূর্য আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঢলে পড়বে। ভিড় বাড়ছে। ঠেলাঠেলি এই বয়সে আর পোষায় না।
    দুপাশে স্টলের সারি, মধ্যিখানে সোজা রাস্তা। খানিকটা এগোতেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য নজরে পড়তেই, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ধুলোমাখামাখি রাস্তার ঠিক মাঝ মধ্যিখানে বসা বছর ছয়েকের একটি শিশু , অভিভাবকদের অন্যমনষ্কতার সুযোগে স্টল ছেড়ে বেরিয়ে এসে সদ্য সংগৃহীত ছড়ার বইখানি পথের মাঝে খুলে রেখে , তার উপরে উপুড় হয়ে রয়েছে। আশেপাশের ভীড়ের দিকে তার হুঁশ নেই।
    স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রই।
    অবধারিত রবীন্দ্রনাথের পংক্তিতে ছেয়ে যায় মন। —
    “শুধায়ো না কবে কোন গান,
    কাহারে করিয়াছিনু দান—
    পথের ধুলার পরে
    পড়ে আছে তারই তরে
    যে তাহারে দিতে পারে মান।
    তুমি কি শুনেছো মোর বাণী
    হৃদয়ে নিয়েছ তারে টানি ?
    জানি না তোমার নাম,
    তোমারেই সঁপিলাম
    আমার ধ্যানের ধনখানি। “

  • রম্য রচনা

    রম্য- মানুষ যখন ফানুস হয়ে যায়

    মানুষ যখন ফানুস হয়ে যায়
    সুনির্মল বসু

    আমাদের পাড়ায় এক ভদ্রলোক আছেন, সব সময় তিনি ভুল ইংরেজিতে কথা বলেন। অথচ, মাতৃভাষায় কথা বলায় তাঁর প্রবল বিরক্তি। প্রায়ই বলেন, বাংলা ভাষাটা আমার ঠিক আসে না। পথে দেখা হলে, জিজ্ঞাসা করেন, তারপর, সব ভালো তো। উত্তর শোনার অপেক্ষা না করে, এর পরেই বলেন, ঘড। আসলে, উনি যে গুড কে ঘড বলেন, এটা বুঝে নিতে আমার অনেক দিন সময় লেগেছিল।

    পরে বন্ধুদের কাছে শুনেছি, ভদ্রলোক ভালো মন্দ যাই ঘটুক, সব সময় ইংরেজিতে ঘড বলে থাকেন। ইংরেজরা এ দেশ থেকে বহুদিন আগে চলে গিয়েছেন, ইংরেজিয়ানা যায়নি।

    একটি খ্যাতনামা জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে আমার বাড়ি। এখানে ঊর্ধ্বতন কর্মচারীদের স্ত্রীরা অনেকেই বলেন, আমাদের উনি ম্যানেজার হইছেন।
    ম্যানেজার, সোল পুটিং ডিপার্টমেন্ট।

    পাড়ার বখাটে ছেলেরা বলে, ম্যানেজার, কথাটার ব্যাসবাক্য সহ সমাস কি হবে বলো তো?
    নিজেরাই উত্তর দেয়, এরপর। বলে, মানে নেই যার।

    পূজোর কিছুদিন আগে ছাত্র পড়াতে অফিসার্স কলোনিতে গিয়েছি, কলিং বেল বাজলো।মিসেস চৌধুরী দরোজা খুলে দিলেন। আমি এ বাড়ীতে পারচেজিং ম্যানেজারের ছেলে বিক্রমকে পড়াই। শাড়ী বিক্রেতা কাঁধে প্রচুর শাড়ি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। মিসেস চৌধুরী গোটা পনেরো শাড়ি পছন্দমতো বেছে নিলেন। শাড়ি বিক্রেতা ভদ্রলোক তখনও বসে রয়েছেন।

    মিসেস চৌধুরী বললেন, কি হলো, শাড়ি নিলাম তো, আপনি এখনো বসে রয়েছেন, ব্যাপারটা কি?

    শাড়ি বিক্রেতা বললেন, মাইজি, আমি এই শাড়িগুলোর দাম চাইছি না, গতবছরের শাড়িগুলোর দাম যদি দেন!

    মিসেস চৌধুরী খুব রেগে গেলেন। যখন তখন দাম চাইবে না, আমি কি তোমার টাকা দেবো না বলেছি?

    এই সময়ের জন্য তৈল একটি অতি মূল্যবান বস্তু। আমার ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া বন্ধু জগন্ময় বাটা কোম্পানির এক ম্যানেজারের গাড়ি ধুয়ে এবং বাজার করে দিয়ে, বর্তমানে ম্যানেজার হয়েছে।

    এখানে কর্মীদের সপ্তাহে বেতন। প্রোডাকশন বেশি হলে, খুশি হবার কথা।

    কিন্তু আমার বন্ধুটি এই ঘটনায় রেগে যায়। কারণ, কর্মীদের একেক জনের সাপ্তাহিক বেতন কি হবে, সে অংকটা জগন্ময়ের জানা নেই।

    আজকাল সুখ একটা দেখাবার বস্তু হয়ে গেছে। কোনো উৎসব উপলক্ষে এই জিনিসটা খুব চোখে পড়ে। গিন্নীকে পটের বিবি সাজিয়ে মোটরসাইকেলে হাওয়ায় আঁচল উড়িয়ে ভেসে-যাওয়াতে কী প্রমাণিত হয়। প্রমাণিত হয়, আমরা দুজন কত সুখী!

    বর্তমানের দুনিয়াদারিতে দেখনদারিটাই আসল। আমার ফ্ল্যাট দ্যাখো, আমার গাড়ি দ্যাখো, আমার অফিস দ্যাখো, আমার স্ট্যাটাস দ্যাখো। সবই ভালো, তবে বৃদ্ধাশ্রম গুলি ব্যাঙের ছাতার মতো চারদিকে এত গজিয়ে উঠছে কেন?

    সুখটা ঠিক কোথায়, মনের শূন্যতা ওয়ালা মানুষগুলো সেটা ধরতেই পারছে না।

    অনেক দিন আগের কথা। কলেজে পড়ি। পাড়ার ভবতোষ কাকু একটি পোস্ট কার্ড এনে বললেন,
    আমি বলি, তুই লেখ্। আমি কাকুর ডিকটেশন লিখে চললাম। আর জায়গা নেই।

    কাকু বললেন, পুনশ্চ,
    এখানে ইলিশ মাছ সস্তা হইয়াছে।

    পোস্টকার্ডের দাম উসুল করাই আঙ্কেলের লক্ষ্য।

    একদিন সন্ধ্যায় কাকুর বাড়িতে প্রবল ঝগড়া। কাকু আর কাকিমার মধ্যে খন্ড যুদ্ধ চলছে। পরদিন কাকুর হাতে প্লাস্টার। বললাম, কি করে হলো?
    কাকু বললেন, কুয়োতলায় সিলিপ কাইটা গেছিলাম।

    আমার বন্ধু হেবো ভালো ইনফর্মার। ও এসে বলল, কাকিমার সঙ্গে কাকুর মহা সংগ্রাম কালে কাকিমার হাতপাখার প্রবল আঘাতে এই দূর্ঘটনা।

    মনের শূন্যতা, মনের দেউলিয়াপনা আজকাল যেমন যত্রতত্র দেখা যায়, এমনটা আমরা আগে কখনো দেখিনি।

    আমার এক বন্ধু আছেন, তিনি প্রায়ই সস্ত্রীক মুখ পুস্তকে ছবি দেন। একদিন প্রশ্ন করায়, তিনি বললেন, আমার বাড়িতে আবার কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হয় না, গিন্নির ইচ্ছায় সবকিছু হয়।
    ও খুব লাইক কমেন্ট পছন্দ করে। আশ্চর্য হই, বাহাত্তর বছর বয়সে ভীমরতি!

    দু কলম লেখার জন্য আজকাল মাঝেমধ্যে সাহিত্যসভায় ডাক পড়ে। তবে অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয় না। অনেক জায়গায় সাহিত্য আলোচনা বা সাহিত্য পাঠ ততটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। এত চিল চিৎকার।

    মনে হয়, ভুল করে কোনো চিটে গুড়ের আড়তে বাইচান্স ঢুকে পড়েছি। চারদিকে নিজস্বী তোলা চলছে। কোলে মার্কেটে কিংবা মানিকতলার বাজারে এত চিল চিৎকার নেই।

    সাহিত্য সাধনা কাহাকে বলে!

    আমাদের এক দাদা স্থানীয় কবি আছেন, যিনি দীর্ঘ কবিতা পড়ে দর্শক মন্ডলীকে অনুষ্ঠান থেকে ফুটিয়ে দেন, আজকাল তাঁর সঙ্গে দেখা হলে, আমি পিছনে গিয়ে লুকোই।

    ডজন দুয়েক ছবি তোলার পর, তাঁর দাবি, আমার একখান ভালো ফটো তুলে দাও, ভাইটি!
    জিজ্ঞাসা করি, এত ছবি তুলে কি করবেন?

    দাদার সাফ জবাব, আমার ইস্তিরি বলে দেছেন, হ্যাঁগো, এই বয়সে তোমাকে তো নদের নিমাইয়ের মতো দেখতে, তুমি ছবি তুলে এনো, আমি মৌটুসীর মাকে দেখাবো।

    এটা হল দেখনদারির যুগ। যে ছেলে বাবা মাকে চেনে না, ভাই বোনের সঙ্গে কোনো কালে সম্পর্ক রাখে নি, সে শ্বশুর মশাইয়ের শ্রাদ্ধে রজনীগন্ধা ফুলের গোছা নিয়ে দৌড়াচ্ছে, ভাবা যায়। কী ডিউটিফুল জামাই!

    বিয়ের পর মায়ের আঁচল ধরা ছেলে সেই যে লব কুশ করা বউকে নিয়ে লাপাতা হয়ে গেল, তারপর তাঁর আর দেখা নেই।

    মুখ পুস্তকে তাঁর সর্বশেষ স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে সে
    লিখলো, বউ আমার সম্পত্তি নয়, সম্পদ।
    সম্রাট শাহজাহান আজ বেঁচে থাকলে ,লজ্জিত হতেন। মমতাজের প্রতি এতদূর ভালোবাসা তিনি কি দেখাতে পেরেছিলেন?

    একসময় শিক্ষকতায় ছিলাম। সন্ধ্যেবেলায় বাড়িতে একটি বি,এ ক্লাসের ব্যাচ পড়াতাম। একটি মেয়ে পড়তে এলো। সবে মেঘনাদবধ কাব্য পড়াতে শুরু করেছি, মিনিট পনেরো হয়েছে, মেয়েটি বলল, আমাকে ছেড়ে দিতে হবে, জামাইবাবুর সঙ্গে একটু মার্কেটে যেতে হবে, স্যার। প্রতিদিন একই ঘটনা ঘটল। মাসের শেষে ওর বাবা দেখা করতে এলেন।
    মাষ্টারমশাই, ওকে কেমন বুঝলেন?
    বললাম, ওকে তো পড়াবার অবকাশ পাই না। ও জামাইবাবুর সঙ্গে প্রতিদিন বেরিয়ে যায়।
    ভদ্রলোক আকাশ থেকে পড়লেন।
    বললেন, আমার তো ওই এক মেয়ে। আমার আবার জামাই কোথায়?

    মনের দেউলিয়া পনার কত ছবি। কত গভীর শূন্যতা মনের মধ্যে থাকলে, চারদিকে মানুষ নয়, ফানুস ঘোরে।

    ট্রামে বাসে ট্রেনে, সর্বত্র দেখবেন, এখন শ্রোতা কম। বক্তা বেশি। প্রত্যেকেই এখন এডমন্ড বার্কের ভায়রা ভাই। এখানের মানুষ ডায়লগবাজিটা ভালো রপ্ত করেছেন।

    অফিসে স্যুটেড-বুটেড মানুষজন দেখে, তার পদমর্যাদা আন্দাজ করা যায় না। সবাই নাকি অফিসারের চাকরি করেন। তাহলে, sub-ordinate কারা।

    আমি বাংলাদেশের মানুষ। ওদেশ থেকে এদেশে যারা এসেছেন, তাদের কেউ কেউ বলেন, গাছের ইলিশ মাছ আর পুকুরের আম এত খাইছি, এখনো মুখে সেই টেস লাইগ্যা আছে।
    দূর্গা পূজার বিসর্জনের সময় কেপে কেঁপে নাচ আর ক্ষেপে ক্ষেপে গানের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতিক গরম মশালা পরিবেশন করা হয়। মুখোমুখি চারটে মাইকে চার রকম হিন্দি গান। কোনটার কথাই বোঝা যাবে না। এই না হলে পুজোর আনন্দ!
    সরস্বতী পূজার সময় প্যান্ডেলের ঠাকুরের চেয়ে রাস্তার সরস্বতী দেখার জন্য তরুণ তুর্কিদের হামলে পড়া। সে ভারী দেখার মতো দৃশ্য!
    আমাদের পাড়ার টোকনদা পড়াশুনোয় চতুর্থ শ্রেণীর সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন, ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারেননি। তিনি সব সময় ইংরেজী কাগজ বগলে নিয়ে ঘোরেন। রোববার সকালে দেখি, উনি শচীনের চায়ের দোকানে বসে আছেন। চোখ ইংরেজী কাগজের দিকে। জিজ্ঞাসা করলাম, কাগজে কি লিখেছে টোকনদা?
    তিনি উল্টো করে কাগজ ধরেছেন।
    maruti suzuki র অ্যাড ছিল। বললেন, গাড়িটা এক্সিডেন্ট করেছে। চাকা উল্টে গেছে।

    আসলে, নিজের শূন্যতা ঢাকবার জন্য মানুষকে কত মিথ্যে অভিনয় করতে হয়।
    একে বলে, দেউলিয়া মনের উদাস পণা।

    শূন্যতা ঢাকবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আরকি!

    আমাদের পাড়ার ভ্যাবলা যেদিন বিয়ে করতে গেল, সেদিন ওর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেছিল, বিয়েতে তোর কোনো ডিমান্ড আছে?
    ভ্যাবলা বলেছিল, সারকেল ছাড়া বিয়ে করবু নি!

    সমাজের পাঁজরে কবে যে এমন ক্যান্সার জন্মালো, আমরা প্রথমটা টের পাই নি। যত দিন যাচ্ছে, মানুষের এই হৃদয়ের দীনতার ছবি প্রকটিত হচ্ছে।

    এর শেষ কোথায়, আগামী দিন, আগামী সময় বলবে!

  • কবিতা

    কবিতা- শরীরী পলির ছড়ে ব্রজের বন্দিশ

    শরীরী পলির ছড়ে ব্রজের বন্দিশ

    -অসীম দাস

     

     

    এখনও বিরহে টান , বানপ্রস্থে যাবো কেন ?
    আয়ুর ধৈর্য্য কম , পুড়ে যায় দ্রুত ।
    অথচ মনের বৃন্তে যৌবনের পাখা
    চনমনে বনবন , হয় না বিচ্যুত ।
    অপ্রেমের কুরুক্ষেত্রে নয়
    এ ব্রজজন্মে এই সবে জন্মালাম যেন !

    শরীরী পলির চরে কোথা থেকে
    এক অনির্বাণ নদী জেগে ওঠে ।
    বিকেল বেঞ্চে বসা ম্যাড়মেড়ে মোহানার দল
    — বেশ আছি লড়ঝড়ে , ভেবে
    খোঁজে না অন্য কোনও বন্য হদিশ ।
    আমার সুশ্রুত স্রোতে বালিয়াড়ি ডুবে গিয়ে
    বারবার ‘ মধুকর ‘ ফোটে ।
    সাতসুরে বাঁধা আছি , বেঁধেছো নীলাম্বরী
    তুমি ছাড়া আমি কী লিখতে পারি
    খাপছাড়া ডিএনএ’র এমন বন্দিশ !

  • কবিতা

    কবিতা- তমসার ব্রীড়া

    তমসার ব্রীড়া
    -শুক্রাচার্য্য…

    চন্দ্রিমা প্লাবিত সলিলে চিত্তের তরণী
    যত স্বপ্ন সে স্রোতে ভেসে যায়…
    অলির গুঞ্জনে শরমের অভিষেকে
    অপলক শির নিশিথের ন্যায়…
    হিমিকার বিন্দুর মতো স্মৃতি যত
    চিত্তের সায়াহ্নে মালা গেঁথে…
    হৃদয়ের সোপান তলে জলধির তরঙ্গ
    চিত্তের শ্বশ্মানে মৃত্যু বেঁধে…
    চারুতার আমি কালিমাখা লজ্জা
    অপছন্দের চেনা অচেনা লগ্নে…
    কৌমুদী রজনী চলে গেল সেদিন
    নির্ভুল রুদ্রাণী নিপুণ আচরণে…
    ঝটিকার বারি চূর্ণ বিচূর্ণ করেছে
    কত শত ভাবনা না জানি…
    জন্ম অসমাপ্ত মৃত্যুর নাহি অন্তিম
    কায়া শুধু চিতার ফুলদানি…

  • গল্প

    গল্প- কয়েকটি লাল কাঁকড়া এবং ঘর খোঁজা

    কয়েকটি লাল কাঁকড়া এবং ঘর খোঁজা
    -সুনির্মল বসু

    ঝাউবন পেরিয়ে সামনে নীল সমুদ্র। রঞ্জনা বিয়ের পর এই প্রথম স্বামী অনিকেতের সঙ্গে এখানে বেড়াতে এসেছে।
    সামনে ধূ ধূ বালিয়াড়ীর ওপর দিয়ে ওরা হাঁটছিল। এই জায়গাটা বেশ নিরিবিলি।
    অনিকেত রঞ্জনার হাত ধরেছিল। বিকেলের ঠান্ডা বাতাসে রঞ্জনার শাড়ির আঁচল বাতাসে উড়ছিল।
    অনিকেত কম কথা বলা মানুষ।
    রঞ্জনা বলল, কি মশাই, একেবারেই চুপচাপ যে,
    অনিকেত বলল, সমুদ্র দেখছি, বড়র সামনে এলে,
    মুখে ভাষা আসে না।
    রঞ্জনা বলল, সমুদ্র কত পুরাতন, কত নতুন,
    আমাদের আগে কত মানুষ এখানে এসেছে, কত মানুষ ফিরে গিয়েছে, সমুদ্র একই রকম আছে।
    অনিকেত বলল, আমরা একদিন এই পৃথিবীতে থাকবো না, সমুদ্র থাকবে।
    রঞ্জনা তাকিয়ে দেখল, দূর সমুদ্রের ধারে কিছু
    নুলিয়ারা একটি দাঁড়িয়ে থাকা নৌকোর পাশে ব্যস্ততার সঙ্গে নিজেদের কাজ করে চলেছে।
    সমুদ্রের পাশে অস্থায়ী চায়ের দোকানে ওরা চা খেতে এলো।
    তখন পেছন থেকে পরিচিত কন্ঠে একটা ডাক এলো, এই অনিকেত,
    পেছন ঘুরে অনেকেত দেখল, রিমঝিমকে। সঙ্গে একজন সুদর্শন যুবক।
    রিমঝিম পরিচয় করিয়ে দিল, আমার হাসবেন্ড
    পার্থ, আর এ হোল, অনিকেত। আমার কলেজ লাইফের বন্ধু।
    অনিকেত রঞ্জনার সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল।
    অনিকেতের মনে পড়ছিল, এই সেই রিমঝিম, যে একদিন ওকে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়েছিল। পরে অনিকেত জানতে পেরেছিল, বাবার মনোনীত বড়লোক পাত্র পেয়ে, তাকেই বিয়ে করেছে রিমঝিম।
    ভালোবাসা আজকাল বড় সস্তা হয়ে গেছে। আর অনিকেত অংক করে ভালবাসতে শেখে নি।
    সেদিন কত কথা ছিল ওদের।
    কফি হাউসে, বসন্ত কেবিনে, গোলদীঘির পাড়ে প্রতিদিন দেখা হতো ওদের।
    রিমঝিম বলেছিল, তোমাকে না পেলে, আমি মরে যাবো, অনিকেত।
    কী মিথ্যে, কী মিথ্যে,
    সেদিনের রিমঝিমের সঙ্গে আজকের এই সুখী রিমঝিমকে একটুও মেলানো যায় না।
    রিমঝিম সত্যিই কি সুখী হয়েছে। নাকি, সুখে থাকার অভিনয় করছে। একটা মানুষের কত অসংখ্য মুখ থাকে।
    আজকে ওই ভালোবাসাকে প্রবলভাবে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে, অনিকেতের।
    রিমঝিম জিজ্ঞেস করল, কোথায় উঠেছো,
    রঞ্জনা বলল, হোটেল তরঙ্গমালায়। আপনারা একদিন আসুন না।
    পার্থ বলল, যাবো কাল সকালে,
    অনিকেত চুপ করে ছিল। ও কিছুতেই রিমঝিমকে আর সহ্য করতে পারছিল না।
    তখন আকাশে একটি দুটি তারা ফুটেছে। পাখিরা ঘরে ফিরছে। পার্থ রিমঝিমকে বিদায় দিয়ে ওরা হোটেলে ফিরে এলো।
    পরদিন রিমঝিম স্বামী পার্থকে সঙ্গে করে, অনিকেতের সঙ্গে দেখা করতে এলো।
    রিমঝিম বলল, কবে বিয়ে করলে, জানাওনি তো,
    অনিকেত বলল, চাকরি পাবার বছর তিনেক বাদে
    বাবা মা বিয়েটা দিলেন।
    ও, ভালো, তোমার বউ তো খুব সুন্দরী হয়েছে।
    আমি একটা সুন্দর মন খুঁজেছিলাম,
    পার্থ তখন টিভি চালিয়ে খেলা দেখছিল।
    রঞ্জনা অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত ছিল।
    রিমঝিম বলল, আমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলছো না কেন, অনিকেত। দেখছি, আমার উপর থেকে তোমার রাগ এখনো পড়েনি।
    অনিকেত জবাব দিল না।
    রিমঝিম বলল, কি, আমার কথার উত্তর দেবে না,
    অনিকেত বলল, আমি সত্যিকার ভালোবেসে ছিলাম, আমি কাউকে ঠকাইনি। যে ভালোবাসা নিয়ে একদিন খেলেছিল, সে ঠকেছে।
    রঞ্জনা ওদের মিষ্টি ও কফি পরিবেশন করলো।
    বলল, ওর কাছে তোমার অনেক কথা শুনেছি, রিমঝিম।
    এ কথার কোন উত্তর দিল না রিমঝিম। মনে মনে অনুভব করল, সত্যিকারের ভালোবাসা থাকলে,
    একদিন সেই ভালোবাসার জন্য কাঁদতে হয়। সেদিনের জয়, আজ এত পরাজয়ের বার্তা এনে দেবে, রিমঝিম কোনো দিন সে কথা ভাবেনি।
    মিষ্টি কফি খাবার পর, পার্থ একটা সিগারেট ধরিয়ে
    শূন্যে ধোঁয়ার কুণ্ডলী তৈরি করছিল।
    একসময় ওরা বিদায় নিল। যাবার আগে, পার্থ অনিকেত আর রঞ্জনাকে ওদের লেকটাউনের বাড়িতে যাবার নেমন্তন্ন করেছিল।
    গভীর রাতে, রঞ্জনা বলল, রিমঝিমের জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে,
    অনিকেত বলল, একেবারে না। আমি তো তোমার কাছে কখনো কিছু গোপন করিনি।
    রঞ্জনা বলল, ভালোবাসা আর ঘৃণা পাশাপাশি থাকে, দেখলে, রিমঝিম তোমাকে দেখাবার জন্য কেমন পার্থকে নিয়ে ঢলাঢলি করছিল।
    অনিকেত বলল, যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে ভালোবাসা দেখাবার জন্য এমন আদিখ্যেতা দেখাতে হয়।
    রঞ্জনা বলল, ওদের বাড়ি লেক টাউনে একবার যাবে নাকি,
    অনিকেত বলল, কক্ষনো না। রিমঝিম শুধু আমার বিশ্বাস ভাঙ্গেনি, আমার ভালোবাসাকে নিয়ে খেলা করেছে,
    বিকেল বেলায় ওরা সমুদ্রের পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় মোহনার কাছে অনিকেত আর রঞ্জনা চলে এসেছিল।
    বিশ্রামের জন্য ওরা একটা দেবদারু গাছের নিচে
    দাঁড়ালো। রঞ্জনা দেখলো, ওদের পায়ের কাছে অনেক লাল কাঁকড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। লাল কাঁকড়া গুলো গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে, আবার গর্তে ফিরে যাচ্ছিল।
    তা দেখে অনিকেত বলল, সবাই ঘর খোঁজে, ভালো ঘর, ভালোবাসার ঘর খোঁজে কজন,
    রঞ্জনা বলল, যত বড়ই ঘর হোক, ভালোবাসা না থাকলে, সে আবার ঘর কিসের,
    সমুদ্রের উতরোল ঢেউ এসে, ওদের দুজনের পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিল।

  • কবিতা

    কবিতা- নিজেই নিজের খোঁজে

    নিজেই নিজের খোঁজে

    -অসীম দাস

     

     

    ফিরছি নিজের কাছে
    আমায় ছেড়ে নড়ছে নোঙর ইচ্ছে খেলো মাছে ।

    মাছ খেয়েছে স্মৃতি
    মাছের পেটে লুকিয়ে আছে নামের আগে ইতি ।

    কী যেন সেই নাম?
    ইতিই শুধু যাচ্ছে বোঝা, নাম গায়ে চুনকাম ।

    কোথায় যাবো এবার ?
    পরিচিতির প্রমাণ দেবার সাধ্য যে নেই আমার ।

    উৎস ফেরায় মুখ
    মাঝনদীতে কাটছি সাঁতার সাগর দেবে সুখ।

    সুখ পাওয়া কী সোজা?
    আগুন জলের সন্ধি তলায় প্রেম হারিয়ে খোঁজা ।

    খুঁজছি অন্ধকারে
    নিজের কাছে ফিরবো বলেও হারাই বারেবারে ।

  • কবিতা

    কবিতা- ঠোঁটকাটা

    ঠোঁটকাটা
    -সুবিনয় হালদার

    সব জিনিস দেখতে পাওয়া
    সব জিনিস শুনতে পাওয়া
    নিজেকে নিজে এক-বুক নদী কষ্টে হাবুডুবু খাওয়ার সামিল !
    সেই সঙ্গে শত্রুর সংখ্যা অহেতুক বৃদ্ধিতে জীবন্ত আত্মাকে চক্রবূহ্যে ঘেরাটোপে আবদ্ধ করে,
    নিজেকে কাঁটাতারে টুকরো-টুকরো ক্ষতবিক্ষত রক্তক্ষরণে ভাসানো !
    বিশেষ করে যদি আপনি সব কিছু বুঝতে পারেন-
    ধরে ফেলতে পারা- অনুভব করতে পারার বিলুপ্তপ্রায় শ্রেণীর অংশ হয়ে থাকেন,
    তাহলে আপনার কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই-
    এই বলে দিলুম ।
    এরপরও যদি আপনি ঠোঁটকাটা হন
    সবার সামনে সত্য বিবেককে মান্যতা দিয়ে অকপট ভাবে ভাব-ভালোবাসা দেখিয়ে কণ্ঠ চর্চা করেন-,
    তাহলে জানবেন আপনার মহাপ্রস্থানের দিন আগত !
    এর জন্য অবশ্যই আপনার জন্য একটা পুরস্কার জুটবে-
    তা হলো- তিরস্কার কিংবা উপহাস !
    সে আপনি মানুন আর নাই মানুন ।
    তাই আগ-বাড়িয়ে প্রতিকূলগামী না হয়ে অনুকূল-গামী হয়ে মচ্ছবে সামিল হোন আর কৃষ্ণ ভজন করুন ;
    দেখবেন মানসিক শান্তি পাবেন
    “যে তৃষা জাগিলে তোমারে হারাবো সে তৃষা আমার জাগায়না,
    যে ভালোবাসার তোমারে ভুলিবো সে ভালোবাসায় ভোলায়না “

  • কবিতা

    কবিতা- মাটির সুর

    মাটির সুর
    -সুমিত মোদক

     

     

    নতুন করে শুরু করাটা মোটেই সহজ নয় ;
    একটা একটা করে পুরানো সকল স্মৃতি মুছে ফেলে ,
    আল্পনা দেওয়া উঠান জুড়ে ;

    দিগভ্রান্ত পাখি আকাশ পথে উড়তে উড়তে
    নেমে আসে মাটির কাছাকাছি ;
    তার পর খুঁটে খুঁটে তুলে নেয় শস্য দানা ;
    মাদি ছাগলের পিঠে চড়ে কিছুক্ষণ রোদ্দুর
    মেখে নেয় সারা শরীরে ;

    আলপথে কৃষকের পদ চিহ্ন থেকে যায় ;
    সে পথেই এগিয়ে চলতে হবে সামনে ,
    দিগন্ত রেখার দিকে ;
    এক এক করে যখন সকলের ভুলে যাও চেনা মুখ ,
    ঠিক তখনই ভেঙে পড়া কাকতাড়ুয়া
    বড় বড় চোখ তুলে থাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে ;

    এই বুঝি কুয়াশা নেমে আসবে আবাদি জমি জুড়ে ;
    হৃদয়ের অলিন্দ জুড়ে ;
    তবুও তো কেউ কেউ এখনও মেঠো সুর তোলে ;
    শুনিয়ে যায় মাটির সুর ,
    আনন্দ উৎসব কথা ;

    ঘরে ঘরে নতুন চালের ঘ্রাণ ওঠে ;
    শিশুরা মুখস্থ করে ধারাপাত , নামতা …

    এ সকল ছেড়ে , সুতি খালের ওপারে গিয়ে
    পা ফেলাটা সহজ কাজ নয় ;
    ওপারে অনেকটা জায়গা জুড়ে সবুজ ঘাস ;
    সেখানেই ঘুড়ে বেড়ায় , উড়ে বেড়ায়
    সেই পাখিটা ;

You cannot copy content of this page