সম্পাদকীয়

  • সম্পাদকীয়

    উৎসর্গ

    উৎসর্গ
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    শিক্ষক দিবস- এমন একজন মহতীর জন্মদিন, যিনি নিজের জন্মদিন সকল শিক্ষকদের অবদান, মূল্যায়ন, সম্মানের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁর ইচ্ছানুসারে আমরা আজো শিক্ষক দিবস পালন করি, শ্রদ্ধায় ও সম্মানে তাঁর জন্মদিন স্মরণ করি- শ্রদ্ধেয় ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ।

    শিক্ষক- আমাদের শিক্ষা শুরু জন্ম লগ্ন থেকে, মায়ের স্পর্শ মমতার শিক্ষা দেয়। বাবার হাত দেয় ভরসার শিক্ষা, বন্ধু শেখায় সহমর্মিতা, প্রতিবেশী শেখায় সহবত, সাথী শেখায় একসাথে পথ চলা- জীবন বোধের নানান শিক্ষার পাঠ এইভাবেই আমরা শিখে যাই। আর ওই কালো কালো হরফের শিক্ষা- পুঁথিগত শিক্ষা, অধ্যয়ন-অধ্যাবসায়, জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ যাঁরা দেন সবাই আমাদের শিক্ষক, প্রণম্য। এঁদের অবদান আমাদের সবার জীবনে অনস্বীকার্য। শ্রদ্ধা, অন্তহীন কৃতজ্ঞতা জানাই সকল শিক্ষাগুরুকে।

    মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আজ কেন শিক্ষক দিবসের কথা? মাসটা তো শেষ হয় নি- তাই একটু সুযোগ নিলাম মনের কিছু কথা বলার। মনটা বরাবর বেয়াদপ- সবসময় উল্টো পথে হাঁটতে চায়।
    মন বললো- যাঁরা আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষ পদবাচ্য করে তোলে তাঁরা সবসময় নমস্য কিন্তু যারা আমাদের জীবন নানা পর্যায়ে নানাভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে- তারাও তো আমাদের শিক্ষক। অজান্তেই ফাঁদ পেতে রাখে বিপদে ফেলতে- আমরা ফাঁদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করি, তারাও তো শেখায় পরিবেশের প্রতিকূলতা জয় করতে। ভালোর মুখোশে অভিনয় করে যায়- যখন বুঝতে পারি তখন হয়তো দেরী হয়ে যায়.. কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি ও উত্তরণের প্রচেষ্টা সেই শিক্ষা তো আমারা সেই বিশেষ মানুষগুলোর থেকেই পাই, তবে তারা কেন আমাদের শিক্ষক নয়!

    চাঁদ সওদাগরের শিবপুজো না হয় না হলো- মনসা পুজোয় দোষ কোথায়? ডান হাতে না, বাম হাতে পুজো করি। যারা জীবনের অন্ধকার দিক চেনালো তাদের শ্রদ্ধার নৈবেদ্য না হলেও অন্তত একবার স্মরণ তো করতেই পারি- পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে যাবার জন্য। জীবন সায়াহ্নে স্মৃতির টুকরি থেকে এক টুকরো অনাদায়ী সুদের মূল্য উৎসর্গ করলাম অন্ধকারের শিক্ষকদের।

    কথাগুলো হয়তো অর্থহীন মনে হতেই পারে, তবুও হাতে গোনা দিনে- মনের ভার হাল্কা করতে কিছু কথা সবাইকেই বলে যেতে হয়, আমিও বলার চেষ্টা করলাম।

    আলাপী মন-এর সকল শুভানুধ্যায়ীদের অন্তহীন কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

  • সম্পাদকীয়

    তীব্র আঁধার

    তীব্র আঁধার
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    সময়টা কি এইরকম হতে পারে- দু’টো বাড়ি পরে ডাকাত পড়েছে, আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি? নাহ্, মনে হয়। তীব্র সঙ্কটের মুখে- সভ্যতা, সংস্কৃতি হয়তো বা অস্তিত্ব।
    আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও দেশের নাগরিকরা যেভাবে আজ বিপদের সম্মুখে বিপন্ন হয়ে পড়েছে, ভাবতেই ভয় লাগছে।
    সন্ত্রাস, আগ্ৰাসনের শিকার- এমন হবার কি কথা ছিল? কেন হলো? কিভাবে হলো?
    ইতিহাস-ভূগোলের ভূমিকা অনেক প্রশ্ন হয়তো আপেক্ষিক ভাবেই উঠে আসবে। পরিণাম জানা নেই.. আরো রক্ত, আরো কান্না, আরো হাহাকার.. তারপর? নাহ্, ভাবতে পারছি না.. সব কেমন ঝড়ের মতো লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মন, মস্তিষ্ক- বড়ো বেসামাল।
    যে কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মনে হয় আজ বড়ো অসহায়- শুধু অপেক্ষা পাপের আঁধার শেষে নতুন সূর্য উঠবে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ আবার হাসবে। নাহলে তো আমরাও অসুরক্ষিত- ভাবনার ঘরে ছিদ্র হয়ে গেছে- ভাবনাও অসংলগ্ন..
    ভালো থাকার উপায় জানা নেই- তবুও থাকতে হবে।
    আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    Be তার্কিক

    Be তার্কিক
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর” এই প্রবাদ বাক্য মনে করিয়ে তর্ক থেকে শত হস্ত দূরে থাকতে ছোটোবেলায় উপদেশ দিতেন গুরুজনেরা। শান্তিপ্রিয় মানুষ তর্ক এড়িয়ে চলে, যুক্তিবাদী মন অহেতুক তর্ক এড়িয়ে চলে- এ তো খুবই গতানুগতিক কথা, সবাই জানে। তবুও কখনো কখনো কমবেশী কথা বলতেই হয় যুক্তির নিরিখে- তাকে তর্ক না বলে আলোচনা বলাই শ্রেয়।

    কিন্তু সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে তর্ক বড়ো স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছে। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে তার্কিক আলোচনা বকলমে মাত্রাহীন সমালোচনার বহরে শিক্ষিতের পরিমাপ ও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠার অপপ্রচেষ্টা বেশ দুরন্ত গতিতে এগোচ্ছে বর্তমানে। শিক্ষা কথাটা বললাম না- কারণ এখন শিক্ষার থেকে শিক্ষিতের কদর বেশি। এই দু’টো শব্দ যে সমার্থক কখনোই নয়, এ বোধহয় কমবেশী আমরা সকলেই মানি। তবে স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্বের কথা আলাদা, এঁরা তর্কে একেবারে তক্ষশীলা.. এঁরা ঘরের কথা উঠোনে বলতে ভালোবাসেন- মন্তব্যের জোয়ার ভাটায় গা ভাসিয়ে জনপ্রিয় হবার সুযোগের সুতোয় মাঞ্জা দিতেই থাকেন। অনেক সময় নিজের মাঞ্জায় নিজের হাত কাটে, কখনো সুতো জড়িয়ে হাটে-বাজারে উলঙ্গ হচ্ছেন। যদিও সেই বোধে শান দেবার পাথর তাঁদের কাছে মনে হয় নেই। অতঃকিম!

    আর সংবাদ মাধ্যম? সে যেন এক বিভীষিকা- কি বলছেন, কেন বলছেন কোনো তোয়াক্কা নেই, যেভাবেই হোক জনপ্রিয়তা চাই- সে মায়ের চোখের জল বেচেই হোক বা নেতার ধুতিতে টান দিয়েই হোক.. জল ঘোলা করতেই হবে। এগোতে হবে, “সীমা না” ট্যাগ লাইনে, সুতরাং বিতর্কের বিতরণ চলবেই। ভাবখানা আমি হযবরল বলছি, তুমিও বলো, বাইরে বেরিয়ে বুড়ো আঙুল ঠেকিয়ে ভাব করে নেবো। পাবলিক খাচ্ছে তো ক্ষতি কি? ঘোলা জলে সাঁতরাও। আসল বিষয় থেকে মন ঘুরিয়ে দিন তো এগোচ্ছে ভালোই..তাই Be তার্কিক।


    হয়তো খানিক অহেতুক কথার চাষ- কিন্তু যা চোখে পড়ে, তাই খানিকটা মনে ধরে, বাকিটা কলমের ঘাড়ে।

    আগামী শুভ হোক, এই আশাটুকু থাক সবার প্রাণে।

    শুভেচ্ছা ও শুভকামনায় আলাপী মন।

  • সম্পাদকীয়

    ফাউ ষষ্ঠী

    ফাউ ষষ্ঠী
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    উৎসবমুখর বাঙালীর আজ আর এক উৎসব- জামাই ষষ্ঠী। কচি, বুড়ো, দামড়া, মেজাজী, বদমেজাজী, কুচ্চুকুরে যেমন জামাই হোক না কেন পঞ্চ ব্যঞ্জন সাজিয়ে মুখের সামনে ধরতে হবে। রীতি- নীতি মেনে বাজার দর হাঁকিয়ে, পকেট ফাটিয়ে খাতির করতে হবে। নাহলেই অসম্মান- শোনাও শ্বশুরের মেয়েকে দু’চার কথা, ও তে কোনো ট্যাক্স লাগে না।
    সকাল থেকে উপোস করে, ষষ্ঠীর পুজো করে, হেঁশেল সামলে, বাটা দিয়ে- কুলোর বাতাস মেরে জামাইকে তুষ্ট করে, ব্রতকথা শুনে একটু মিষ্টি-জল বা একবেলা নিরামীষ আহার মা-মেয়ের বা বাপের বাড়ি না যেতে পাওয়া বৌ’টির এই প্রাপ্য।
    অথ জামাইষষ্ঠী প্রচলিত কৃষ্টি কথা সমাপ্ত।
    কিন্তু এই ষষ্ঠী আজ বহুবছর ধরে জামাইরা ফাউ খেয়ে আসছে- আর মুখ্য উদ্দেশ্য ছেড়ে গৌণ বিষয়টাই বাহুল্যের বাহারে ক্রমশঃ বিকশিত হয়ে চলেছে।
    মুখ্য উদ্দেশ্য- সন্তান কামনায় ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় মা ষষ্ঠীর আরাধনা। সনাতনী প্রথায় কন্যা সন্তানের বিয়ের পর বাবা-মা কন্যার প্রথম সন্তানের জন্মের আগে তার শ্বশুরবাড়ি যেতেন না। তাই মেয়েকে দেখার জন্য ও সন্তান কামনায় মা ষষ্ঠীর আরাধনার জন্য মেয়েকে পিত্রালয়ে আসার আমন্ত্রণ করতেন। মেয়ের তো একলা আসার অনুমতি নেই, অতএব জামাইয়ের বাবা-মা’র কাছে করজোড়ে নিবেদন, মেয়ে-জামাইকে পাঠিয়ে দেবার।
    জামাই যখন, তখন তো তার সাড়ম্বর আপ্যায়ন করতেই হবে। জুড়ে গেল ষষ্ঠীর সাথে জামাইয়ের নাম। তান্ত্রিকতার এক চূড়ান্ত নিদর্শন।

    আলাপী মন-এর সকল জামাই, শ্বশুর লেখক ও মা-মেয়ে লেখিকাকে জামাইষষ্ঠীর আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

    সকল শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

  • সম্পাদকীয়

    চর্বন নেশায়

    চর্বন নেশায়
    রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    প্রতিবাদ হলো, প্রতিযোগিতা হলো- প্রতিবাদের প্রতিযোগিতা হলো। প্রতিপক্ষ তৈরী হলো প্রতিটি পক্ষ-কালের আগে, মাঝে,পরে। কতোটা ইতরতার ঘ্রাণ এলো, কতক উড়ে গেল। কিছু মনের কোণে থাকবে, কিছু ধূপের ধোঁয়ার মতো উড়ে যাবে। প্রশ্ন একটাই লাভ কি হলো? ক্ষতি? তার নথিই বা কবে নির্ভুল এসেছে! সবটাই ধোঁয়াশা।

    কায়েমী আসনে আপাতত ক্ষমতা সুরক্ষিত। পরিসংখ্যানে যুধ্যমান পক্ষ-বিপক্ষের শোণিতে মাটি ভিজে চললেও, আপাত দৃষ্টিতে শোরোগোল নেমে গেছে, যূথবদ্ধ জীবগুলো আবার জীবন-জীবিকার খোঁজে, উদর তো আর কোনো কথা শোনে না। তবে আবার হয়তো এর মধ্যেই দেখা হবে পচ্ছন্দের রঙীন পতাকার নিচে প্রয়োজনে- বিতর্কের বাগবিতণ্ডায়।

    আমরা বিতর্ক বড়ো ভালোবাসি, বলা ভালো বিতর্কের মাঝেই আমাদের বাস। তাই বিতর্কের বিতর্কিত পঞ্চ ব্যঞ্জনে আমরা গণতন্ত্রের পূজারী, গণতন্ত্রের দেবতাদের আরাধনায় ভীষণ আগ্ৰহী। সংখ্যা গণনার দিন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের মতো আমরাও ভুলে যাই পৃথিবী সর্বোপরি আমাদের জন্মভূমি জরা-ব্যাধিতে বড়ো ক্লান্ত। সেদিন সংবাদ মাধ্যমের সাথে আমদেরও জয়-পরাজয়ের সংখ্যা গুণতে গুণতে বেলা গড়িয়ে যায়- “আপনি কি মত!” বা “আপনি কি বলতে চান?” বিতর্ক উপভোগ করি। অতিমারীতে আক্রান্ত-মৃতের তথ্য সেদিন আর চোখের সামনে ‘ভাঙা খবরে’ ভাসে না বারবার সকাল থেকেই। সমর্থকদের উচ্ছাসে দেখি নিল্লর্জতার নিদর্শন- ফল? ডুবছে আরো ডুবছে জরা-সাগরে হাহাকার আর নিষ্ফল ক্রন্দনে। তাতে কি যায় আসে? সব তো সংখ্যা! তাই সাংবিধানিক- প্রশাসনিক পদমর্যদা জলাঞ্জলী দিয়ে শ্লীলতা-অশ্লীলতা বিসর্জন দিয়ে গণতন্ত্রের ধর্ষণ দেখি রোজ- যার পোষাকি নাম “ভোট শেষের হিংসা”। তর্ক.. তর্ক.. শুধুই বিতর্ক।

    ক্লান্ত মন একটা সময় একটু শান্তি খোঁজে। আলাপী মন চায় আলাপনের আল্পনা। সুযোগ ধরা দেয় বঙ্গবাসীর মনের উৎসব- কবিপক্ষে। একটি ছোট্ট প্রয়াস- সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন প্রিয় সাথীরা। সফল কতটুকু? সে নির্বাচনের দায়ভার থাকলো প্রিয়জনের হাতেই। আবার নির্বাচন! থাক, শুধুই ভালোবাসা আগামীর পাথেয় হোক আমাদের।

    শুভেচ্ছা, শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে সকলের জন্য।

  • সম্পাদকীয়

    কাঠপোকা..!

    কাঠপোকা..!
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    এতদিন শুনে এলাম- “পেট বড়ো বালাই” তার সাথে জুড়ে গেলো- ভোট বড়ো বালাই।
    অতিমারীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যেভাবে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে- একে অন্তত সংগ্ৰাম, বিদ্রোহ কোনো আখ্যাই দেওয়া যায় না। এর একটাই পরিভাষা ক্ষমতা দখলের নিল্লর্জ প্রর্দশনী। অহঙ্কার আর স্বার্থপরতা সর্বভুক হয়ে আগুন জ্বালিয়ে চলেছে। জানি না- এ কোন গণতন্ত্রের পুজো, এরা কেমন গণতন্ত্রের পূজারী।
    শুধু রঙ বদলের বেলাগাম খেলা- জনগণের কথা ভাবার সময় কোথায়! জনগণ তো এই গণতন্ত্রের খেলায় প্রয়োজনীয় আসবাব আর সংখ্যার সমীকরণ।

    পুরোনো বাড়িতে ঘরের কোণে বা চিলেকোঠার একপাশে ঠাঁই পাওয়া কিছু পুরোনো আসবাব থাকে- বিভিন্ন প্রজাতির কাঠপোকা বাসা বাঁধে ওদের মধ্যে সবার অলক্ষ্যে। যার যেমন জাত- তার তেমন মোচড়। টের পাওয়া যায়, কড়কড় শব্দের আওয়াজে বা হুড়মুড় করে খসে পড়ার শব্দে। অবহেলার ফাঁকে লুকোনো অহঙ্কারের গোড়ায় ওদের বাস। কালের নিয়মে ওরা সেই অহঙ্কারে আঘাত হানে।

    মিথ্যে অহং-এর বাস মনের মধ্যেও বাসা বাঁধে, আত্মতুষ্টির ছদ্মবেশে ক্ষমতার দম্ভে।
    মনের কাঠপোকাটা সাবধানী আওয়াজ দেয় বিবেকে, আওয়াজ দেয় অহঙ্কারের আসবাবে। কিন্তু ক্ষমতার দামামায় শোনার ইচ্ছে, সময় থাকে না। বিবেকটা তো কবেই মরে গেছে, তাই তো অহং-এর এতো দাপাদাপি।
    পোকাটা বাসা বাঁধে শিকড়ে- ছড়িয়ে যায়।
    তারপর দর্পচূর্ণ হবার পালা। মিথ্যা অহং-এর কড়কড়ানি থেমে যাবার পালা।

    তবুও আশার আলো জাগিয়ে রাখে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা নরম কিছু চোখ- মন বলে, ওরা পারবে, ওরা ঠিক পারবে। তাও যেন ভয়- স্বার্থপরতার দাবা খেলায় ওরা যেন বোরের এক পা- না হয়ে থাকে। ওরা যেন ওদের নরম চোখের সতেজ স্বপ্নগুলো সফল করে তুলতে পারে।
    সফলতার জয়গান ওদের পাথেয় হোক।
    সত্যিকারের গণতন্ত্রের পুজোয় সামিল হবো আবার সবাই। এখন অপেক্ষা.. অপেক্ষা..

    আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকলের জন্য আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    ভালোবাসার পৃথিবী

    ভালোবাসার পৃথিবী
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    একটু ছন্দপতন- রাত পেরিয়ে গেল, মনের কথা বলতে দেরী হয়ে গেল। কিছুটা ব্যস্ততা তার জেরেই ভুলে যাওয়া- ক্ষমাপ্রার্থী।

    সদ্য আলাপী মন- এর সাহিত্য আসরের আড্ডায় দেখতে পেলাম কিছু প্রিয় মুখ, মন ভরে গেল। দুঃখও থেকে গেল- কারণ বেশ কিছু প্রিয় মুখের অদর্শন। আশার সাথে- হতাশা হাত ধরলো। তবুও যাঁরা এসেছেন বিনি সুতোর মালার বন্ধনে- আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ‘মালা’ শব্দটার সাথে ফুলের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, ফুলের সাথে সৌরভের। আমাদের আঙিনা সুরভিত হয়েছে স্বজন সাথীদের আলাপে- কবিতায়- ভালোবাসার ফুলেল সৌরভে। সেই সুবাস মন বেশ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। মনে হচ্ছে, কেন শেষ হলো? অবুঝ মন বলছে- “আরো কিছুক্ষণ না হয় রহিতে কাছে..’ তবুও সময়ের সীমানা মেনে আমরা আবার নিজের নিজের ঠিকানায়‌। কিন্তু নিরুচ্চারে হয়তো অঙ্গীকার করেছি সবাই মনে মনে- “.. হাতে হাত রাখার উৎসবে। দেখা হবে আবার একদিন দেখা হবে,..”

    আলাপচারিতায় উঠে এসেছে অনেক কথা- পরবর্তীতে ভাবনার খাতায় তোলা থাকলো। নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরী করে ক্রমশঃ সবটুকু প্রকাশ্যে আনার ইচ্ছে থাকলো খুব শীঘ্রই।
    নির্দিষ্ট রূপরেখা, সর্বস্তরে যোগ্যতার মান, নিরপেক্ষতা এইটুকু যেন আগামীর পাথেয় হতে পারে। সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

    একটু অন্য প্রসঙ্গ- বড়ো হিংসার বীজ ছড়িয়ে গেছে, রক্ত দিয়ে সিঞ্চন হচ্ছে তার। চাই না, এই হিংসা-বৃক্ষ চাই না। উপড়ে ফেলতে হবে। ভালোবাসার বীজ বুনতে হবে। শুধু ভালোবাসা না, ভালোবাসায় বাঁচা- শিখতে হবে আমাদের। বর্তমানের ছবি বলছে আগামী বড়ো ভযঙ্কর, তাই বাঁচতে হলে ভালোবাসায় বাঁচতে হবে। এই ইচ্ছে ও প্রচেষ্টা হোক সম্মিলিত। যে যেখানেই থাকি বিনি সুতোর মালার সৌরভে চিনে নেবো ঠিক, আগামীর জন্য সঠিক পথের দিশা। এখন অঙ্গীকারের সময় বন্ধু- জানি শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন জ্যোর্তিময়। প্রয়োজন দৃঢ় অঙ্গীকারের। হাত বাড়ালাম- জানি সাথী আছে, থাকবে। আজকের বিশ্বাসের অঙ্কুর- কাল কিশলয়- ভবিষ্যতে মহীরুহ। যার ছায়া বাঁচিয়ে দেবে পৃথিবী, আমাদের ভালোবাসার পৃথিবী।

    অন্তহীন শুভেচ্ছা, শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে সকলের জন্য।

  • সম্পাদকীয়

    চেনা ছন্দে-অচনা আবহ

    চেনা ছন্দে-অচনা আবহ
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    জীবন অভিযানে চেনা, প্রিয় মুহূর্তরা আবার দোরগোড়ায়- ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়। স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে ব্যাকুল শৈশব-কৈশোর-যৌবন আর হ্যাঁ, অবশ্যই শেষ দিনগুলো প্রিয়জনের সঙ্গসুখের উষ্ণতায় সেঁকে নিতে জীবনের বার্ধক্য। ঘরবন্দী জীবন যেন বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে, ঋতুরাজের পদধ্বনিতে তাই উচাটন মন। ঋতুরাজের আগমন আর ভালোবাসা এক অমোঘ বন্ধনে আবদ্ধ। ক্যালেন্ডারের ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসা বিনিময় পর্বের সাথে সাথেই বসন্তের আলাপ শুরু। তারপরই সরস্বতী পুজো- কোনোরকমে প্রতিমার সামনে দু’টো গাঁদা ফুলের অঞ্জলী দিয়েই পরীক্ষার ফলাফলের একটা আকুতি জানিয়েই বছরের কাঙ্খিত প্রথম কুলটা মুখের ভেতর ফেলে দিয়েই মন উচাটন- কখন দেখা হবে? “দেখা হয়েছিল তোমাতে-আমাতে..” গানে গানে প্রাণে প্রাণে আলাপের ক্ষণ। ভালোবাসার রঙ হলুদ আজ- আজ সরস্বতী পূজা। দেবীর আরাধনায় সাজো সাজো রবের মাঝে বসন্ত যেন কানে কানে বলে, এসে গেছি দখিনা হাওয়ার সাথে রঙের সম্ভার নিয়ে।

    বিদ্যার দেবীর আরাধনায় সব আছে, শুধু মনে হয় বিদ্যে-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। চারপাশের বাস্তব তাই বলছে- নাহলে এতো কদর্য কথা ওড়ে কেন আশে পাশে? শালীনতা কোথায় যে বেড়াতে গেল! ফিরে আসবে তো? না কি পথ হারালো?
    সংস্কৃতি এখন বহুল প্রচলিত একটি কথা- ব্যানারে শোভা পায়।
    মানবিকতা- শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টা।
    বসন্ত এসে মনে দোলা দিলেও, দেবীর আরাধনা বিধিবদ্ধ দিনে ফুল-শাঁকালুতে সেজে উঠলেও চেতনা ঘরে তালাবন্ধ। ওটা না খুললে সব বৃথা। আশা থাকুক উত্তরসূরীরা উত্তর দেবে, চেতনার ধ্বজা উড়বে ওদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুষ্ঠিতে যা কেড়ে নেবার সাহস কোনো কালো হাতের থাকবে না। ..হোক শুরু আঠোরোর জয়ধ্বনি।

    বসন্ত পঞ্চমীর শুভেচ্ছা, আগামীর শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    সপক্ষে…

    সপক্ষে..

    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,

    জীবনের পথে চলতে চলতে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজে ভরে যায় ঝুলি- তার কিছু ধূলো ঢাকা, কিছু সজীব-টাটকা, কিছু বড়ো নাছোড়বান্দা- ভুলতে দেয় না সমাজ, পরিবেশ বা নামাঙ্কিত পরিবর্তন।

    নারী-পুরুষ অধিকার, সম-অধিকার, পুরুষের স্বার্থত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন ইত্যাদি প্রভৃতি নিয়ে মতামত-তর্ক চলে, এ তো নদীতে বহমান খড়কুটো- ভাসতেই থাকবে আজীবন। পুরুষ দিবস হোক বা পিতৃদিবস সেখানেও কলমে উঠে আসে নারীদের সাথে তুলনার প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ। দেখি আর ভাবি, কোন অধিকার? কিসের সমবেদনা প্রাপ্তির আকাঙ্খা? পৃথক করে! আজো তো আমাদের বাস পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পিতৃতান্ত্রিকতার বীজে। ‘নারীরা নারীদের শত্রু’ এই কথাটার বাস্তবতা, সত্যতা লুকিয়ে আছে পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার বীজে। হ্যাঁ, তর্ক আসবে জানি, বা বড়ো একঘেয়ে কথা মনে হবে- তবুও বলবো এটাই সত্যি। যতদিন না এটা মেনে নিতে পারবো মনের গভীরে ততদিন এই বিষবৃক্ষের বীজ থেকে যাবে সমাজের ইঁদারায়। কন্যা ভ্রুণ হত্যা থেকে, ধর্ষণ, সামাজিকতার শিকার এইসব ঘটনা তো সামনে আসে- বুদ্ধিজীবীদের কলম কাঁদে, কণ্ঠস্বর গর্জায়.. বিচার, বিচারের প্রহসন, শেষ বিচারের দিন আসে। 

    বিপক্ষ-পক্ষ অনেক কথা থেকে সপক্ষে কিছু কথা বলি- আজো পুজোর উপাচারে- আচারে পুরুষের ছোঁয়া, নারীর ছোঁয়ায় ভেদাভেদ সমাজ আগলে রেখেছে পরম যত্নে। পুরুষ ছুঁতে পারবে, কিন্তু নারী ছুঁলে হাজার বিধি, শত নিষেধ- শুচিতার মাপকাঠিও আলাদা। মাতৃগর্ভে দোষ নেই, কিন্তু মাতৃত্বের সামনে শুচিতার প্রশ্ন। কেন? বেশ কয়েক যুগ পিছিয়ে থাকা, বঞ্চিতাদের সাথে কিসের সমতুল্য? কোন সে সম-অধিকারের জন্য হাহাকার? নারীরাও তো মেনে নিয়েছে নিয়মের বেড়াজাল- এই পরাজয়। তাও..!

    মনে হয় নারীবাদের প্রয়োজন নেই। পুরুষ মানেই ধর্ষক নয়- কিন্তু পুরুষের সঙ্গে শাসক সমার্থক শব্দটার গিঁটটা খুলতে হবে। ওটাই প্রয়োজন.. বাকি সব নিষ্প্রয়োজন। কে জানে কবে মিটবে এই প্রয়োজন? ভাবনার আকাশে শ্রাবণে মেঘ…

    শুভকামনা, শুভেচ্ছা আলাপী মন- এর পক্ষ থেকে সতত।

  • সম্পাদকীয়

    অভিসন্ধির আড়ালে..!

    অভিসন্ধির আড়ালে..!
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,

    ‘বরণ আর পুর্তি’ এর মাঝেই আরো একটা বছর সমাপ্তির দোরে। ২০২০ ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে গেল চেতনায়। নতুন কয়েকটি শব্দ জীবনের অস্তিত্বের মাঝে স্থান জুড়ে নিয়েছে- যার সাথে পরিচয় ও পরিচিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন। সঙ্কটের আর এক নাম ২০২০- সহ্যের সীমানা পেরিয়ে চোখ রাঙানি প্রকৃতির। প্রকৃতির রোষানলে বিশ্ব জুড়ে একটাই শব্দ বড়ো প্রিয় সবার মনে- ‘রক্ষ মাম.. রক্ষ মাম..’ আরো একবার যেন মন্থন হলো বিশ্ব জুড়ে। হলাহল শুধু হলাহল সারাটা বছর জুড়ে, অমৃতের সন্ধান চলছে। অমৃত কলস (ভ্যাকসিন) হয়তো উঠেও আসছে ধীরে ধীরে। তবে এবারেও মন্থন শেষের অভিসন্ধি মেঘের আড়ালে। কিভাবে কার পাতে পড়বে.. সবটাই গুরুবর্গের অভিসন্ধির খেলা।

    একটি গ্ৰাম্যগল্পের উপসংহার- “ও ঠাওরমশাই আগে বলতি হয় তো..ছেরাদ্দ এদ্দুর গড়াবে জানলি আর এট্রু বেশি নিইক্যে রাখতুম..” সেও এক ভাগাভাগির গল্প। শাশুড়ি মা’র মুখে শোনা। গল্পটা অন্য একদিন- আপাতত বর্তমানে অমৃত বন্টন অভিসন্ধির শ্রাদ্ধ কতোদূর গড়াবে জানা নেই, তাই না নিকনোর আপশোষ মনে রেখেও লাভ নেই। অপেক্ষা থাকুক সবার পাতে পড়বে অমৃত। আরো একবার ত্রাসমুক্ত পৃথিবী দেখবো আমরা হাতে হাত দিয়ে- স্পর্শ বাঁচিয়ে নয়, বেড়াজাল ভেঙে স্পর্শের সম্পূর্ণ উষ্ণতা নিয়ে বাঁচবো আমরা।

    যাঁরা নিরলস সেবা দিয়ে গেলেন আমাদের এই অতি সঙ্কট সময়ে তাঁদের জন্য অন্তহীন কৃতজ্ঞতা।

    হেমন্তের হাত ধরেই শীতের হিমেল শুভেচ্ছা ও নববর্ষের আগাম শুভকামনা আলাপী মনের পক্ষ থেকে সবার জন্য।

You cannot copy content of this page