-
পরিচয়
পরিচয়
-অণুশ্রী দাসলাবণ্যর বিয়েটা প্রেম করেই, তবুও শর্ত ছিল গৃহবধূ হয়ে থাকার, শাশুড়ি এই গল্পের ভিলেন, আর তার পঙ্গপাল পাশের বাড়ির জ্ঞাতিরা। নিজের মেয়েকে মানুষ করার সুযোগে লাবণ্যর সব আত্মত্যাগের কষ্ট, নিঃশব্দে ভেঙে ধুলোয় মিশে গেছে সবার চোখের আড়ালে, ভিলেন যখন লাবণ্যর জীবনের ওপর থেকে কালো ছায়া কাটিয়ে চলে গেছে তখন চুলে রুপালি আঁচড়, আর মেয়ের বিয়ের একবছর হয়েছে, মুঠো ফোনের দৌলতে সময় কাটে সোস্যাল মিডিয়ায় পুরনো বন্ধু মহলে,
স্কুলের বেস্ট ফ্রেন্ড পিয়ালীকে সেই ছোট্ট বেলায় দেওয়া একটা কার্ডের ছবি পিয়ালী ফেসবুকে লাবণ্যকে ট্যাগ করে পোস্টে করে, সেই পুরনো স্মৃতির জলছাপে উপলব্ধি করে, নিজের পরিচয়টা এখন ভটচার্য্যি দার বউ না হলে আই.পি.এস অফিসার সৌরিণির মা,এদের মাঝে হারিয়ে গেছে, আমিত্বটা এখন অন্যের বেড়াজালেই আবদ্ধ।
নিজের ভালোলাগা স্বপ্ন, বা বলা যায় নেশাটা এত বছরের দায়িত্বের চাপে কখন জীবাশ্ম হয়ে গেছে বুঝতেও পারে নি।
পুরনো ধুলোয় গাঁথা ট্রাঙ্কটা বের করে নিজের এক একটি সৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখে যখন নিজেই অবাক হচ্ছে একটা ফোন এল, কথা বলা শেষ হল, গালের নরমে কতক্ষণ লাভা স্রোত তুলেছিল কে জানে !
-তুমি ধুলোর মধ্যে পুরনো ছবিগুলো নিয়ে কি ভাবছ হাঁ করে, ওঠো চা করে দাও
– পরশু থেকে চা টা ফ্লাস্কে থাকবে,নিজে নিয়ে নিও।
-কেন ? তুমি কোথায় যাবে?
-ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড কালারস্ থেকে আমাকে একটা প্রজেক্ট এর জন্য ওরা ইনভাইট করেছে। আর আমি জয়েন করব কথা দিয়েছি।– হ্যালো মা হ্যাপি ওইমেনস ডে। তোমার গিফটটা পছন্দ হয়েছে তো?
-কি গিফট আমি তো কিছু পায়নি।
-এই যে আজ তুমি তোমার পুরনো পৃথিবীতে নতুন করে শ্বাস নিতে যাচ্ছ সেই গিফট।
আসলে আমি পুরনো তোমার পেন্টিংসগুলো ওদের দেখাতেই ওরা তো….তখন চশমার ফাঁকে চিক চিক করছে দু’টো চোখের কোন, আজ এক নারীর মাতৃত্ব সার্থক। সব না-পাওয়া গুলো হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়ার আনন্দে পরিপূর্ণ, এখন শুধু লাবণ্যর নিজের পরিচয়ের সাদা কালো জীবাশ্ম হাজার রঙে রাঙানো বাকি ।।
-
প্রথম আলাপ
প্রথম আলাপ
-অণুশ্রী দাসখুব সুন্দর রোদ ঝলমলে একটা দিন ছিল সেদিন,
কলেজের সবুজ কার্পেটের গা বেয়ে দুপুর নামছে একটু করে,
ঘড়ির কাঁটার দৌরাত্বে থেমে এসেছিল সারাদিনের কোলাহল,
পাঁচটায় এক্সট্রা ক্লাস যখন শেষ হল,
বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম কৃষ্ণচূড়ার আভায়,
গোধূলি সোহাগে মেতেছে,
তখন রাধার অভিসারী মন কেমনের মতো
অজানা শূন্যতায় ভরেছিল আমার সারাটা বিকেল,
তখনও তোমার সাথে হয়নি আলাপ,আড়মোড়া ভেঙে যখন সকাল জাগছে,
কুয়াশার চাদরে উষ্ণতা ছুঁয়ে,
তখন আমার আঙুল মেতেছে,
সেতারের হিন্দোল আলাপনে,
সেই মুহূর্তের স্নিগ্ধতায় যখন আমি ভাসছি,
শুদ্ধ সোনার কনায়, সেই আমির সাথেও
তখনও হয়নি তোমার আলাপবাইরের ধূসর ঘনঘটা,
শহরজুড়ে যখন অরাজকতা চালাচ্ছে,
আমার মনের আকাশেও তখন তুমুল ধ্বংসের ঝড় উঠেছিল অহেতুক কলঙ্কের দাগে,
তার ঠিক পরই বসন্তের শেষ,
বিভৎস বাস্তবের চোখ রাঙানিতে
নিজেকে যখন গুটিয়ে নিচ্ছি,
আমার সব ভালোলাগা,নিজস্ব মতামতের দাবি বিকিয়ে দিয়েছি সময় স্রোতে
তখন সেই একাকী যন্ত্রণার শেষ মুহূর্তে তোমার সাথে প্রথম আলাপ শুভদৃষ্টির বিনিময়ে,দিন এগিয়েছে, প্রথম প্রথম হাত ধরার শিহরণ কাটিয়ে,
আজ আমি এক অন্য মানুষ, তোমার সন্তানের মা,আমার আমি নিঃশেষ হবার ঠিক আগেই,
আগলেছ তুমি ছন্নছাড়া এক শরীরকে,
নতুন করে অঙ্কুরোদ্গমের মতো,
আমার মনে প্রাণ সঞ্চার করেছে ,
তোমার খোলা মনের ছাদ,
আমাদের সেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে
মোহমায়ায় কাটানো প্রতিটি রাতের সাক্ষী আছে
জ্যোছনায় ঢাকা এক আকাশ তারা।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক,
হলুদ সুতোয় বাঁধা পরার অনেক পর,
বুঝেছি কতটা তুমি আমাকে ভালোবাসো,
কিন্তু, আজ বুঝতে পারছি সেই জ্যোছনা,
এক বাগান ফুলের সুভাষে আমাকে ভরিয়ে রাখা,
কিংবা আমার অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে সদা জাগ্রত সুরের মূর্ছনা,
যা কিনা আমি ফেলে এসেছিলাম বহু আগে ,
সেই সুরের জীবনেই আমাকে প্রতিষ্ঠা করা-
এগুলো তোমার সবই নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল মাত্র ,
যাতে আমি কষ্ট না পাই তোমার চলে যাওয়া নিয়ে
এসবের মাঝে ব্যস্ত থেকে যেন তোমাকে মনে করারই না সুযোগ পাই,,কিন্তু আজও মনের প্রতিটা স্কোয়ার ইঞ্চিতে তোমার অভ্যেসের ছাপ,
আমার কানের পাশে ফিসফিসিয়ে কারা যেন বলে চলে তোমার আমার পুরনো সংলাপ,
আজ তো শুধু ধুধু প্রান্তর,
তোমাকে ছুঁতে চাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে ,
গালের দুঃখে জমা ঠান্ডা উত্তাপ
জান,এখনও স্বপ্ন দেখে বাঁচি
আবার নতুন করে প্রেমে পড়বে
আমাদের সন্ধ্যে সাঁঝের ‘প্রথম আলাপ’…।। -
বহ্নি গর্ভ
বহ্নি গর্ভ গল্প
-অণুশ্রী দাসআজকে বাড়ি ফিরতে কত রাত হয়ে যাবে, সারাদিনের শেষে ট্রেনে জানলার ধারে হাওয়াটা খুব আপন মনে হয়, আবার একটা দিন শুরুর আগে এই হাওয়ার দলই যেন কানে কানে স্পৃহা জাগায়, ফোনটা কেপে উঠল জিন্সের পকেটে, রাহুলের ফোন -কোথায় আছো তপু? আর কতক্ষন লাগবে পৌঁছোতে?
– এখন বালি ছাড়ল… আধাঘন্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাব..বাড়ির দরজা খুলে ঢুকতেই গা টা গুলিয়ে উঠল তামাক পোড়ার ধোঁয়ায়… দূরে হালকা আলো জ্বেলে টেবিলে ঢুলছে প্রসূন,ও আমার অগ্নিস্বাক্ষী করা বর… যদিও আদতে বর্বর…
হাত পা ধুয়ে উঁকি মারলাম ছেলের ঘরে আয়া ওকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে তারপর বাড়ি যায় ৯টার পর। কত নিষ্পাপ ওর মুখটা দেখলেই মায়া হয়, প্রতিদিন আমার কাজে বেড়নোর আগে আমাকে আটকাবে হামাগুড়ি দিয়ে পা ধরে, খুব খারাপ লাগে মনটা মোচোড় দিয়ে ওঠে, তবুও ওকে ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে হয় সময় মতো.. টাকা ছাড়া কিছুই হয় না, বুঝেছি সেটা তাই ওর ভবিষ্যতটা ভালো করার আশায় সকালে বেড়িয়ে পড়ি..
-কি গো খেতে দেবে না আজ, রাত বিরেতে ছেলেকে নিয়ে আদিক্ষেতা করার সময় হয়েছে।
– আহ্ আস্তে… উঠে পড়বে তো রিবান…সত্যি তো আমি কতটুকু আর সময় দিই রিবানকে, আর মায়ের ভালোবাসা বোঝার কি ক্ষমতা আছে ওর বর্বরটার.. তাই আদিক্ষেতা মনে হয়, নিজের তো সংসার চালানোরই পয়সা জোটে না তারপর নাটকের দল নিয়ে মাতামাতি…
খেয়ে পিঠ পেতেছি ফোনে মেসেজ এল সুর করে… রাহুলের মেসেজ… ‘খেয়েছ? আজ রাতে ফোন করবে প্লিজ..’
রিপ্লাই করলাম..’কেন তোমার বউ আজ বাড়ি নেই..?’রাহুল আমার কলিগ, আমার থেকে সিনিয়র ওর পজিসন, ও বিবাহিত কিন্তু নিঃসন্তান। বিগ বাজারে সেলসে চাকরিটা পেতে ও আমাকে হেল্প করেছিল। তারপর থেকেই বন্ধু হয়ে যাই, এমনিতে ও গায়ে পড়া গোছের ছেলে । কিন্তু ওর কথাগুলো, ওর সঙ্গ, ওর আমায় এত কেয়ার করে সেটা আমার ভালোলাগে, এই ভালোলাগাটাই কখন ভালোবাসা আর আকাঙ্খা হয়েছে বুঝিনি!
যেমন গরমের দাপটে উষ্ম ফাঁকা স্থান দখল করতে ধেয়ে আসে জলীয়বাষ্প পূর্ণ ভারী বায়ু, তেমনই রুক্ষ, বিরক্তি আর দুশ্চিন্তায় ভরা শূন্য ভালোবাসার জীবনে রাহুল এনেছে আবেগ আর ভালোবাসার নিন্মচাপের বৃষ্টি…কেঁপে উঠল ফোন টা… ওপারে রাহুলের কাঁপা, আর জড়ানো গলায় আমাকে না পাওয়ার আক্ষেপ, টাল মাটাল কথায় রাত্রি গভীর হয়, ওপারে গলার স্বর বুজে আসে। পাশে সোয়া ছেলের মুখটায় তাকালে অসহায় মনে হয় নিজেকে। প্রসূন আমার সাথে ঘুমোয় না ওর নিজের জগৎ, নিজের ঘর আলাদা।যে মানুষটার শিল্পী সত্ত্বাকে ভালোবেসে পা বাড়িয়েছিলাম আজ সেটাই দূরে সরিয়েছে আমাদের। সংসারে বাড়ন্ত দশায় ছেলের দুধ কেনার পয়সা থাকে না কিন্তু মঞ্চ সজ্জার জন্য টাকা ওড়ানো যায়।
সকাল হলেই ছোটা শুরু …ট্রেনে জায়গা ধরার জন্য হুরোপাটি কখনো তর্কাতর্কি।
-কিরে তপস্যা কাল জমাইষষ্ঠীতে ছুটি নিচ্ছিস তো?
– না রে, আমার আর জামাইষষ্ঠীতে খেতে যাওয়া! প্রসূনেরই সময় নেই ..আর তাছাড়া ছুটি মানেই তো ৩৫০টাকা কাটা। লোককে তো আর বলা যায়না বাপের বাড়িতে আমার কোনো জায়গাই নেই, দাদা ভয় পায় আমি যদি সম্পত্তির ভাগ চাই তাই নানা অছিলায় আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেনা মাকেও রাখতে দেয় না..-ওই দেখ পরকীয়ার রাধা এসে গেছে।
অফিসে আমাকে ঢুকতে দেখেই কয়েকজন হাসাহাসি করতে শুরু করল…কাজের চাপ তার মধ্যেও এদের কানাকানি করার সময় আছে আমাকে আর রাহুলকে নিয়ে, সত্যি খুব বিরক্ত লাগে মনে হয় কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যাই! কিন্তু সে উপায় কি আছে..!
এসব ভাবছি রাহুল পেছন দিক থেকে পিঠে টোকা দিয়ে বলল, -হাই তপু, আজকে একটা গুড নিউজ আছে, আমি টিকিট বুক করেছি ৪টে ৭টা সো তে যাব সিনেমা দেখতে , আমি আর তুমি, আর তোমাকে চিন্তা করার দরকার নেই এদিকটা আমি মেনেজ করে নেব।সিনেমা হল থেকে আমি বেড়িয়ে এসেছি হাফ টাইম হবার আগেই, রাহুলের কামুক স্পর্শে আমার চোখের সামনে প্রসূনের মুখটাই ভেসে উঠছিল। আমি আমার নিজের বিবেকের কাছে আজ অনেক নীচে নেমে গেছি। নেশার ঘোরের মতো টলতে টলতে বাড়ি ফিরে বিছানায় উজার করেছি নিজের কষ্ট আর দংশনকে…
আমি নিজেই নিজের প্রশ্নের কাছে হতভম্ব একটু করে উপলব্ধি করেছি নিজের ভুলকে। আমি নিজেকে বিকিয়েছিলাম পয়সার জন্য, অর্থ কতটা বদলে দিয়েছিল আমাকে। আমি জানতাম বরাবর প্রসূনকে ওর উদাসীনতাকে কিন্তু তা সত্তেও আমি নিজের সুখ খুঁজতে গেছিলাম পর পুরুষের কাছে। আমাকে রাহুল জানিয়ে দিয়েছিল এই সম্পর্কের স্বীকৃতি সে দিতে পারবে না আমিও চাই নি নিতে …! তাহলে কি মোহে মজেছিলাম আমি… শুধুই অর্থ, আর পজিশন ? এ কোন তপস্যা.. ? আমার মনও আজ অচেনা স্বার্থের ধোঁয়া মাখা কোনো দামী সুগন্ধীতে ম ম করছে। কিন্তু আমি এটা চাই না আমি ঐ তামাকের পোড়া গন্ধকেই যে ভালোবেসেছিলাম…!ভোররাতে উঠে গিয়ে দাঁড়ালাম প্রসূনের ঘরে, সেই পুরনো আমার চিরচেনা প্রসূনকে যেন দেখতে পেলাম বহুবছর পর আমার মনের কোনে নিভৃতে ভালোবাসার মন্দিরে যে দেবতার সাধনা করেছি বাস্তবের হানাহানিতে লোভ কামনায় এ মন কি করে হতে পারল অপরের, অসময়ের দাবদাহে একসাথে পথ হাঁটার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমি সেই আমি কি করে বদলে গেলাম….!
সকাল হয়েছে ফুরফুরে রোদ্দুরে… প্রসুনের মাথায় হাত রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি একঝলক জানি না… একটা আলতো হাতের আলাপনে ঘুম ভেঙ্গে দেখি প্রসূন ঠিক আগের মতো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে ওর আঙ্গুল গুলো আমার চুলের ভাঁজে ভাঁজে কথা বলছে।তারপর ঝড় উঠেছিল দমকা.. এ ঝড় ক্ষয়ের নয়, আঘাতের নয়, নিঃস্ব করা মনখারাপের নয়… এ ঝড় স্তবকে স্তবকে জমা মান অভিমান উড়িয়ে নিয়ে গেছে তার বদলে দিয়ে গেছে ভালোবাসার নবাঙ্কুর, আর অতীতের তপস্যা প্রসূনের চিঠির গান..।
-
ইচ্ছেডানা
ইচ্ছেডানা
-অণুশ্রী দাস-তোমার আর কতক্ষণ গো…? ইশ্ এই শাড়িটা পড়বে বিচ্ছিরি সাদা মতো, দাঁড়াও এই, এই রেডটা পর তোমায় দারুণ মানাবে আর প্লিজ আমার স্যুটটা রেডি করে রাখো না…
বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল রুকু…
জীবনের প্রতিটা স্তবকে নিজের নয় অন্যের ইচ্ছা পূরণের দাবি দিয়ে সাজানো প্রত্যুশার…– প্রত্যুশা ম্যামকে আমরা অনুরোধ জানাব তৃতীয় বর্ষের বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের আগামী জীবনের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ দেওয়ার জন্য….
– ম্যাম কি দারুণ কথা বলেন তাই না.! যেন আমাদের মনের কথাগুলো ওনার সব জানা… আর কি দারুণ দেখতেও লাগছিল ওনাকে …
রোজই প্রত্যুশা কলেজ যায় গাড়িতে, ফেরেও গাড়িতে, কোথাও যেতে ইচ্ছা হয় না ওর, এছাড়া যাওয়ার হলেই ১০দিন আগে থেকে রুকুকে বলতে হবে…এটা যদিও নতুন নয়, বিয়ের আগেও এরকমই বন্দি জীবন ছিল, নিজের ইচ্ছাগুলোকে এড়িয়ে চলতে অভ্যস্ত ও অনেক ছোট থেকেই…
-আজ মনটায় কেমন একটা খারাপ লাগা ভর করেছে, হয়তো ওই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য, বিশেষ করে করবী বলে মেয়েটার জন্য… কি উৎফুল্লতা দিয়ে সাজানো ওর জীবন, মেয়েটা বড্ড আদুরে আর মাতিয়ে রাখে সকলকে, ….আজ ও আমাকে একটা কার্ড গিফট্ করেছে, বাড়িতে গিয়ে তবে ভেতরটা পড়তে বলেছে আবার.!সত্যি পাগল মেয়ে একটা..!
বাড়ি পৌঁছে মালতীদিকে চা দিতে বলে সোজা ঘরে গিয়ে কার্ডটা নিয়ে বসল প্রত্যুশা…
প্রত্যুশা বছর ২৮/ ২৯ এর মেয়ে মাত্র ২বছর বিয়ে হয়েছে এরমধ্যেই তার সব ইচ্ছা পুরোপুরি রুকুর দখলে হয়ে গেছে..
প্রত্যুশার জীবন অসীম জ্ঞানের ফুলেফুলে সাজানো, আর শান্ত গলায় অল্প শব্দে সবার মনে জায়গা করার দক্ষতা ছোট থেকেই, যদিও এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তার বাবা মায়ের জন্যই..
কার্ডের মধ্যে ছড়িয়ে আছে করবীর চোখে প্রত্যুশার গল্প, শেষে করবীর ইচ্ছা দ্বিতীয় প্রত্যুশা হওয়ার, সেটাও স্পষ্ট…
-পাগলী মেয়েটার শখ্ জীবনে আমার মতো হওয়ার…
ওরই বা কি দোষ..! মুখোশর আড়ালে অভিশপ্ত প্রত্যুশাকে কেউ চেনেনি, সবাই আমার বাহ্যিক অসংখ্য ডিগ্রী ও বিপুল শুষ্ক জ্ঞানে মোড়া ধারালো প্রত্যুশাকে চিনেছে..
কে বুঝতে চেয়েছে আমাকে! আমার ইচ্ছা,আমার সত্যিকারের ভালো থাকাকে?
সেই মেয়েবেলায় রান্নাবাটি, পুতুল, ধরাধরি,এক্কা দোক্কায় যখন অন্যরা মত্ত, আমি তখন থেকেই ব্যস্ত, মায়ের চোখ রাঙানিতে বইয়ের অক্ষর চিনতে, যখন একটু বড় হলাম মনটা ছট্-ফট্ করত কিছু আঁকার জন্য, দাদাুর দেওয়া রং পেনসিল কেড়ে ৪টে অংক দিয়ে খাতা ধরিয়েছিল মা তখন, আমার কোনো বন্ধুও ছিলনা দুু’ একজন ছাড়া… সবাই জন্মদিনে যখন অনেক খেলনা উপহার পেত, আমি পেতাম বিভিন্ন জ্ঞানের বই, আমি মেনে নিয়েছিলাম আমার মেয়েবেলার মধ্যে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের অধিকারকে, আমি এতটাই আজ বিজ্ঞ যে আমি একটা কাগজের নৌকাও ঠিক মতো বানাতে জানিনা..! আজ আমার কোনো বন্ধুও নেই, সোস্যাল মিডিয়ায় হাই হ্যালো ছাড়া…, সবাই ভাবে আমার হয়তো খুব ঘ্যাম, কিন্তু কি করে বোঝাই আমি যে মিশতে পারি না সবার সাথে,আমি ভুলে গেছি মিশতে,…
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরও ভেবে চললো নিজের মনেই,
-তারপর মনে আছে, আমার খুব ভাললাগতো হাওয়ায় ভাসা ঘুড়িদের দেখতে.. তাই পড়তে বসে যাতে আমার মন বিচ্যুত না হয় অন্যত্র, জানলাগুলোও বন্ধ হতে থাকল বিকেল হতেই, কোনোদিন আমি গলা ছেড়ে একটা চলতি হিন্দি গান গাইতে পারিনি ঠোঁট ফাঁক হলেই সেটা হওয়া চাই কিছু ঐত্যিহ্য সম্পন্ন গান বা কবিতা, প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলাম কয়েকবার, কিন্তু বাবার গম্ভীর স্বরে একটা আরশোলার মতো ভয়ানক কিছু আছে যেটার সামনে সবই ফিউজ্…
আমার সাফল্যে আমার থেকে বেশি খুশি হত আত্মীয়রা, আমার ঘর বোঝাই হতো পুরস্কারে আর আমি চোখের জলে নিজের ইচ্ছেদের ভাসিয়েছি…. আর আমার ইচ্ছেডানা খসে গেছে সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার যুদ্ধে… তাই আমার সব শিকলের বাঁধনকেই আমি ভালোবেসেছিলাম একে একে….
কিন্তু হয়তো সেজন্যই আজ আমি প্রতিষ্ঠিত নারী, অনেকের আইডল,বাবা মা এটাই তো চেয়েছিলেন, তাদের চাওয়ায় ভুল ছিল না কিছু, শুধু ভুল ছিল আমার জীবনে মেয়েবেলা বলে সেই সময়টা থাকাটা…
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এসেছে, ভিজছে ওর পায়ের পাতা, ভিজছে ওর মন…
-ওরে বোকা করবী, তুই আমার মতো হতে চাস..! কিন্তু আমি যে অন্যের ইচ্ছার দাসী, ছোট থেকে আজ অবধি। এটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি সত্যি… আর এটাও সত্যি আমি তোর মতো তোদের মতো,সাধারণ একটা ডানপিটে জীবন শুরু করতে চাই প্রথম থেকে..বসন্তের শেষে যেভাবে গাছের শেষ পাতাটা ঝরে তার সমস্ত পাপ নিকড়ে দেয় নতুনের আশায় তেমনই হয়তো নতুন প্রাণ সৃষ্টির খবর এলো প্রত্যুশাকে আনন্দে ঢেকে….
প্রত্যুশা মনে মনে ভাবে,
– এবার আমি আমার মতো করে শৈশব গড়বো, অন্যের পছন্দের লাল হলুদে নয় , আমার গর্ভের ছোট্ট প্রাণটার নিষ্পাপ ছোট্টবেলার ইচ্ছেডানার আবদারে, আমার নষ্ট মেয়েবেলার আপসোসের ভুল আর হতে দেব না, বরং আমি ওর হাত ধরে ছোটবেলার প্রতিটা অনুভূতির স্পর্শ মেখে, রাঙাবো আমার হারিয়ে যাওয়া নিজের মেয়েবেলাকে.. -
পাহাড়ী ঝরণা
পাহাড়ী ঝরণা
-অণুশ্রী দাসকৃষ্ণদ্বাদশীর মেঘ খবর পাঠিয়েছিল পাহাড়ের বুকে দুঃখ জমেছে হাজার কিলো… পাইন, ফার, ওক্ নানা মাপের সিপাহী নজরদারীর ভাঁজে আজীবন বন্দি এক পাহাড়… গ্রীষ্মের দাবদাহে ঝলসে যাচ্ছে বসন্তের শেষ ছাপ টুকু… পাহাড় আবারও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার অভিশপ্ত জীবনে বেঁচে থাকার শেষ প্রাণটুকুও…
অনেক যুগ আগেকার কথা,
হেসে খেলে বয়ে চলা উচ্ছ্বসিত ঝরনার সাথে পাহাড়ের আলাপ হয়েছিল যৌবনের প্রথম প্রহরে… রুক্ষ পাহাড়ের বুকে এক দুটো ফুল ফোটানোর অজুহাতে কখন না জানি বসন্তকে এনে ঝরণা পাহাড়কে সাজিয়ে ছিল হলুদ সবুজের রংবাহারে, রাত্রিবেলা সবার চোখ এড়িয়ে বসুন্ধরার রাজকুমারী ঝরণা পাহাড়ী অভিসারে বেড়তো… সর্বহারা রিক্ত গগন চুম্বী পাহাড়ারের বুকে ঝরনা পেয়েছিল আমিত্বের আস্বাদ, তার কলকল্লোলে সুরে সমৃদ্ধ পাহাড়ের বেসামাল ভালোবাসায় তারা হয়ে উঠেছিল একে অপরের পরিপূরক…. দিন থেকে রাত, ষড়ঋতুর আবর্তনে, পাহাড়ী ঝরণার নিখাদ প্রেমের সুরে চতুর্দিক যখন উদ্ভাসিত তখন রাজকন্যার প্রেমের দুর্নামে বসুন্ধরার ক্রোধের সামনে এই সোহাগী সম্পর্ক এক লহমায় বিনাশ হল… রুক্ষ পাহাড় বন্দি হল হাজার সিপাহীর মাঝে আর ঝরণা সেও নিজেকে মিশিয়ে দিল ধরিত্রীর গহ্বরে… এখন পাহাড়ের বুক চিরে তির তির করে বয়ে চলে একফালি জলের ধারা… ঐ মিষ্টি জলের রসদে প্রতি বসন্তে ঠিক আগের মতো ফুল ফোটে পাখি আসে…. মনে হয় অভিশপ্ত পাহাড়ের মনে আবার ঝরণা শুরু করেছে মিষ্টি প্রেমের মান অভিমানের অধ্যায়… পাহাড়ও দুহাতে জড়িয়ে ধরতে চায় ঝরণাকে… কত জীবনের শুষ্ক কন্ঠ একবার ভিজিয়ে নিতে চায় প্রেমের পরশে… কিন্তু ঐ তির তির বয়ে চলা জলধারা, যার পায়ে রিণিঝিনি সুরের নুপূর বাঁধা, ওটা কোনো সাধারণ জলের ধারা নাকি সেই পাহাড় আর হারিয়ে যাওয়া ঝরণার সোহাগের শেষ চিহ্ন তা জানি না.. -
অক্ষরের আলপনা
অক্ষরের আলপনা
-অনুশ্রী দাসছোট্ট রুমি যখন আমার কোল আলো করে এলো… সেই আলো সবার চোখে ছিল অন্ধকারের অমাবস্যা.. সবার মুখে কিছুটা বিরক্ত আর হতাশার কালো ছায়ায় মেয়েটাকে বুকে টেনে কান্না-হাসির দোটানায় মনে মনে বলেছিলাম ‘লক্ষ্মী এসেছে আমার ঘরে আমার আর চিন্তা কি..!?’
রুমির বাবার মিলের সামান্য আয়ে আমাদের সংসার চলতো কোনরকমে, নিজের না পাওয়া ইচ্ছেগুলোকে স্থির করে নিয়েছিলাম রুমির চোখেই দেখবো, আমার অচেনা অক্ষর জ্ঞানের জগতে রুমিকে বড় করেছি একটু করে.. কোনো শখ চর্চার ক্লাসে আমি রুমিকে পাঠাতে পারিনি কোনোদিন.. কিন্তু ও যে নরম গলা নিয়ে এসেছিল, সেই সুরে আমাদের ঘর ভরে থাকত… আমার চোখে জল আসত আনন্দে, পুজোর সময় পাড়ার স্টেজে ওর গলার গানে মুগ্ধ হয়ে যখন সবাইকে হাততালি দিতে দেখতাম…
আমার জ্ঞাতি জা,ননদদের দুধ ভাতে বেঁচে থাকা ছেলেদের চেয়ে রুমি যখন সাদা ডাল ভাত খেয়েও ওদের পেছনে রেখে সামনে এগিয়েছে তখন হিংসায় ওরা শুধু কন্যা দায়ের অর্থাভাবকে বড় করে দেখিয়ে রুমিকে আটকাতে চেয়েছে সমাজের বেড়ায়…আমাদের বাড়ন্ত সংসারের হাল, আমাদের পাশাপাশি রুমিও ধরেছিল ছোট্ট হাতে… ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের অ আ ক খ পড়িয়ে নিজের দরকারটা নিজেই মিটিয়েছে অনেক ছোট থেকেই…
এরকম হাজারও কাহিনী আছে ওর দু’চার পয়সার সৎ সংগ্রামের..আজ ছোট্ট রুমি অনেক বড় সরকারী অফিসার,অনেক বড় মানুষরাও সেলাম ঠোকে ওকে… আমাদের জামাই ও বড় অফিসে কাজ করে.. আর আমি আর রুমির বাবা এখন আর টালির ঘরে থাকি না…. আমাদের নিজেদের ফ্ল্যাট আজ শহরের বুকে…
– শুভ জন্মদিন মা… তোমার জন্য দেখ কি এনেছি..
কাগজের ভাঁজ খুলে দেখি ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’..আমার জীবনের সব আশা মিটে গেছে, আমাকে প্রয়োজনের অনেক বেশি সুখ দিয়েছে রুমি.. কিন্তু আমার অনেক অনেক বই পড়তে পারার সুপ্ত স্বপ্নে , সোনার কাঠি ছুঁইয়ে অক্ষরের আলপনায় রুমি আমার জীবন আনন্দে সাজিয়ে দিয়েছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা …
দূর আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বল জ্বল করছে,চারিদিকে শাঁখের আওয়াজে কোজাগরীর আরাধনা… শিউলির হালকা গন্ধে তখন যেন আমি, আমার রক্ত মাংসের লক্ষ্মীকে ছুঁয়ে দেখছি…
-
দশটা-সাতটা
দশটা-সাতটা
-অণুশ্রী দাসদশটা সাতটার জীবনে ক্লান্ত আমি,
ক্লান্ত তুমিও, কিন্তু সময়টা খুব দামি
হাতের ফাঁকে ওঠা ধোঁয়ার মিছিলে
ব্যর্থতার স্লোগান বাজে আবছায়া নীলেদশটা সাতটার জীবনে উদাসীন আমি
রাস্তা ক্রসিংএ হাত ধরা প্রেম কমদামি
ঠোঁটের ভাঁজে নিকোটিনের ছাপে
আমার মানসিক চাপ হিসেব মাপেদশটা সাতটার জীবনে অভ্যস্ত আমি
হারিয়ে গেছে রঙিন কিছু স্বপ্ন বেনামী
একঝলক ঠান্ডা হাওয়ার গভীর খাদে
তোমার গালের দুঃখ আমার মনে ঘর বাঁধেদশটা সাতটার জীবনে ভালো আছি আমি
দিনের শেষে তোমার চৌকাঠে এসে থামি
আঁচলের উষ্ণ আলিঙ্গনে নিশ্চিন্তের ঘুম
তোমায় ভালোবেসে চোখে রাত নামে নিঝুম…. -
বাঙালিয়ানা
বাঙালিয়ানা
-অণুশ্রী দাসআশ্বিনের হাওয়ায় শিউলির গন্ধ, পেট্রোল ডিজেলে উধাও
নতুন জামা, নতুন প্রেমের কৌতুহলে কিছু ভালোবাসা আছে তাও,পুজো পুজো আমেজের হাতছানি আজ মুঠো হাতের বুকে বন্দি
শারদীয়ার আহ্বানে মহালয়ার নানা গানের কলি বাঁধে ব্যবসার ফন্দি..যান্ত্রিকতার যুগে মহালয়ার সুর তো যেদিন খুশি সেদিন শোনা যাবে
তবুও মঙ্গল তিথিতে ছাতিমের মায়া জড়িয়ে, শিশিরের সারল্যে,
ভোরের ধোঁয়াশা মেখে, দেবীর বন্দনার স্তুতি মনে বাজে চিরচেনা গলারস্বরে
মায়াবী সেই মুহূ্র্তের ভালোলাগায়, বছরের একদিন তার অপেক্ষায় থাকে..বদলেছে সময় বদলেছে নব যুগের ধারণা
তবুও দোল লাগুক আধুনিকের অলিন্দে,
চির ঐতিহ্যের ছায়ায় আমরা বাঁচিয়ে রাখি নিজেদের…
ধার করা রংবাহারি জোয়ারের অনুভবে,
বেঁধে রাখি বাঙালিয়ানাকে মহালয়ার পুন্য পরশে -
বেপরোয়া স্মৃতি
বেপরোয়া স্মৃতি
-অণুশ্রী দাসচারিদিকে তোমার স্মৃতি আমাদের কত মুহূ্র্তের পালা গান বাঁধে,
বেপরোয়া বিকেলের নীলে একটা তারা অপেক্ষায় থাকে ছাদে।
উজাড় করা অভিমানে তোমার চোখের ভাষারা ধূসর তপ্ত ছাই,
হাজার আলোর গহীন অন্ধকারেই তোমায় নিজের করে পাই।শরীরি স্পর্শের অনুভবে অনেক দিনের ধূলো সংসার পাতে,
নীহারিকার সীমন্ত ছুঁয়ে আমার ঠিকানা তোমারই মুঠো হাতে।আমার ভোরের আকাশে স্নিগ্ধতা মেখে যদি একবার আসতে,
দুপুরের দগ্ধ ঘামে ভেজা কাপালে একবার যদি হাত রাখতে।
যদি না বলা ইচ্ছের মন পড়ে হঠাৎ হাজির হতে আমার কাছে,তাহলে জানতাম বাস্তবের কঠিন বুকে জীবনেরও হৃদয় আছে।
-
অবচেতন
অবচেতন
-অণুশ্রী দাসভাবতে খুব ভয় করে, শেষ রাতে দেখা দুঃস্বপ্নকে…
যদি সময়ের হাত ধরে এসে দাঁড়ায় সে কারোর জীবনেএকটা ছোট নদীর জল, হঠাৎ হয়ে যায় অল্প লাল..
তিরতির করে বইতে গিয়ে ক্ষণিক দাঁড়ায় বেসামাল,শেষ বারের মতো আলতা রাঙা পা দুটো সে ছুঁতে চায়
এলো চুলে পিঠ ঢেকে একটা মেয়ে ঠায় বসে রয়..পড়ন্ত বিকেল যেন তার সিঁদুরের রঙ শুষে,গোধূলি..
ঘাটের পাড়ে তার উদাস চোখ বেয়ে নেমে আসে কুহেলি..আবছা কিছু মুখ আর বুক ভাঙ্গা চিৎকার
সব শুনেও চুপ মেয়েটি,একপলকে নির্বিকারসন্ধ্যের নীলচে লাভায় পাখিরা যখন ঘরে ফেরে,
সাদা থান সাজায় তাকে শরীরের লালটি কেড়েকে সেই মেয়ে ? কি বা নাম ? কাকে হারালো সে
দিনের শেষে ভালোবাসার শূন্য গর্ভে মিশে..জানি না আমি..উত্তর নেই..চোখের জলে ভোর হয়েছে
এক অদ্ভুত ব্যথা মনের কোনে চিহ্ন রেখে গেছেভোলার চেষ্টা অনেক করেছি ভেবে ওসব মনের ভুল
সময় পেরোয় ব্যস্ত ফাঁকে,ঝরে যায় গাছের ফুলশুধু মাঝে মাঝে..
ক্লান্ত কান্নায় নিভে আসা সেই আলগা মুখ
খোলা চোখেও জেগে ওঠে কাঁপিয়ে দিয়ে বুক..