• কবিতা

    হৃদয়হীনা

    হৃদয়হীনা
    -দেবযানী গাঙ্গুলী

     

    বর্ষশুরুর আলাপনে
    মন মানে না ছন্দ বিনা,
    জুঁই কামিনী কুঞ্জ সাজায়
    বৈশাখী যে হৃদয়হীনা!

     

    হৃদয় জয়ের আয়োজনে
    পুষ্প পাতায় সজ্জিত —
    নতুন খাতার মাঙ্গলিকে
    লক্ষ্মী গণেশ বন্দিত ।

     

    মহুয়া পলাশ মাতাল হলেও
    গান ভোলেনি হাসনুহানা..
    চৈতী দুপুর ঘূর্ণি হাওয়ায়
    স্তব্ধ শুধু হৃদয়হীনা ।

     

    একলা কোকিল সুর শোনালো
    ফুল ঝরা কোন্ ডাল থেকে,
    সপ্তকে সুর হাওয়ায় কাঁপন
    আমমুকুলের ঘ্রাণ মেখে ।

     

    ফুল ফাগুনের বিদায়ী দিন
    বৈশাখী রোদ দেয় ঠিকানা,
    জুঁই মাধবী সুবাস মেখেও
    আনমনে চায় হৃদয়হীনা ।

     

    হৃদয় খুঁজে ক্লান্ত কবি
    গন্ধরাজও শ্রান্ত আজ,
    অমল আলোয় দিগঙ্গনা
    রক্তিমতায় ঢাকছে লাজ ।

     

    কালবোশেখির দামাল সুরে
    ওলটপালট সব নিশানা …
    বর্ষশেষের চোখ ইশারায়
    দেয় নি যে মন হৃদয়হীনা ।

     

    মহুয়া যখন শেষের সোহাগ
    তপ্ত হাওয়ার বঞ্চনা
    বর্ষশুরুর আলিঙ্গনে
    তুলবে কি মুখ হৃদয়হীনা!

     

    দহন দিনেও ফুটল কুসুম
    বৈশাখী আজ সুনন্দ,
    নতুন বছর আলিঙ্গনে
    হৃদয় জয়ের আনন্দ ।

  • কবিতা

    বসন্ত উৎসব

    বসন্ত উৎসব

    -দেবযানী গাঙ্গুলী

    আমায় দেখে উলসে উঠে কৃষ্ণচূড়ার ঢেউ

    বলল, “এসো, গল্প করি শুনতে না পায় কেউ!

    যেই না কথায় কান পেতেছি, চোখ রেখেছি চোখে –

    কোকিল শোনায় পঞ্চমে গান, সুরের সাথী দেখে ।

    তারই সাথে গলা মেলাই, আহ্লাদে গাই গান —

    পলাশ গেঁথে সাজাই খোঁপা, খুশির স্রোতে স্নান ।

    তাই না দেখে গাছে গাছে কিশলয়ের দল —

    বলল ,”এবার কাব্য হবে, ছন্দ শিখি চল্।

    গাছের কথায় উঠল হেসে পাড়ার ছেলে সব

    “কাব্য হবে! কাব্য হবে! জুড়ল কলরব ।

    যেই না মনের দ্বার খুলেছি, কথায় কথা গেঁথে,

    সাঁওতালি মেয়ে কুড়িয়ে কথা ছন্দে নিল বেঁধে ।

    মাদল সুরে সাঁওতালি নাচ, মন ভোলানো তাল —

    মাতাল এ মন ভাসিয়ে নিল, রইল না আবডাল ।

    মরচে ধরা প্রাণের তারে বাঁধন ছেঁড়া সুর –

    ফুলের সুখে, পাখির সুখে হাসল সমুদ্দুর ।

    বলল, সবাই গাঁথব মালা অশোক পলাশ ফুলে

    বসন্ত রাগ ছড়িয়ে দেব মৌমাছিদের কুলে ।

    কোকিল, ফিঙে,বনের টিয়াও আসবে দোলের দিন —

    নানা রঙের কাব্য হবে, বাজবে মাদল বীণ।

    কুঞ্জরাতে জ্বালবে আলো জোনাকিদের সুখ,

    ফুল পাখিদের সইছে না তর, আনন্দে উন্মুখ।

  • কবিতা

    রাধা -কৃষ্ণ সংবাদ

    রাধা -কৃষ্ণ সংবাদ

    -দেবযানী গাঙ্গুলী

     

    কৃষ্ণচূড়া ভালোবেসেছিল রাধাচূড়াকে —
    ছোট থেকে পাশাপাশি বেড়ে ওঠা, তবু
    যৌবনে যখন ফুলের গৌরব শাখায় শাখায়,
    মিলল পলকে পলক –রাধা হলুদ আবীর
    ছড়ালো আকাশে …কৃষ্ণের হৃদয়বীণায়
    বাজল ঝঙ্কার….এড়িয়ে যাওয়ার ছলনাতে
    রাধা যতই মান করুক, কৃষ্ণচূড়ার শিকড়ে
    দৃঢ় প্রত্যয় –একদিন ধরা সে দেবেই ।

    প্রহর কাটে পাশাপাশি, ঋতু বদল হয় —
    কিন্তু মনের কথা আর বলে ওঠা হয়না ।
    রাধার প্রতিবেশী -অভিভাবক শাল গাছটা
    মাঝেমাঝেই কটমট ক’রে তাকায় কৃষ্ণচূড়ার
    দিকে ,বাতাসে কানাকানি কৃষ্ণের মনের কথা
    ফিরছে নাকি মৌমাছিদের গানে গানে!
    সে কথা জেনেও রাধা মিষ্টি হাসির দুষ্টুমিতে
    প্রাণের সখীদের সাথেই মত্ত …
    শীতের রিক্ততার দিনে মনে মনে বিবর্ণ
    হয়ে ওঠে কৃষ্ণ –তার দীর্ঘশ্বাসে বাতাস
    ভারী হয়ে গুমরে ওঠে, মৌমাছি সে খবর
    জানিয়ে আসে রাধার মঞ্জরীতে ।

    ফাগুন আসে বনে …
    কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম প্রেম পুষ্পিত হয়
    শাখায় শাখায় — পরাগ মিলনোন্মুখ …
    তার ঝিরঝিরে পাতার শিরশিরানি সকলের
    অলক্ষ্যে রাধার কোমলতাকে স্পর্শ করে ।
    কানে কানে বলে –“মুখ তোলো, অবগুণ্ঠন খোলো!
    এবার আড়ালটুকু সরিয়ে রেখে এসো
    দুজনায় কুঞ্জ সাজাই ….”
    কিছু পাওয়ার চঞ্চলতায় রাধার সর্বাঙ্গে শিহরণ …
    বনের পাখি গেয়ে উঠে মৌমাছিদের বার্তা পাঠায় –
    “এসো, রাধিকার রূপ দেখে যাও –“

    ঢেউ ওঠে দুজনের পল্লবিত শাখায় —
    বসন্ত উৎসবের স্বপ্নে হৃদয় ভরে বনদেবীর ।

You cannot copy content of this page