এই নকল শহরে– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত এ শহরে আর ঘরবাড়ি নেই,আছে শুধু নুড়িঘরে ঘরে ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ছে কেবল বালিযারা পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছে ছুড়ি নয়–বুড়িসব পুরুষগুলো একটাও আসল নয় – জালি। ওরা সব স্বরচিত কুয়াশায় নিজেরে লুকায়নিরাময় খোঁজে কোনো সহৃদয় নারীর আঁচলেজৈবিক তাড়নায় মনুষ্যের সারিতে দাঁড়ায়ওদের স্বপ্নগুলো মুখ লুকায় ঝড়ে ও বাদলে। প্রচণ্ড উত্তপ্ত দিন, […]
অণুগল্প- গোড়ায় গলদ
গোড়ায় গলদ– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত বহুূদিন পর চন্দ্রাণীর সাথে ইন্দ্রাণীর দেখা। দু’জনেই একদা সহপাঠী এবং বর্তমানে শিক্ষিকা। ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যালয়ে এবং জেলায়।দু’জনই উচ্ছ্বসিত।: কেমন আছিস রে চন্দ্রাণী? কেমন শুকিয়ে গেছিস মনে হচ্ছে! কোনো অসুখ-বিসুখ?: না রে, আমার অসুখ-বিসুখ, জ্বরজারি বড় একটা হয় না। কিন্তু একসাথে সংসার আর চাকরির দাবি মেটাতে গিয়ে হাড়মাস কালি হয়ে গেল।: […]
কবিতা- রাখিকে
রাখিকে–– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত রাখি, তুমি আমাকে রাখি পরাবে? কিন্তু কেন?আমার তো শ্যাম রাখি, না, কুল রাখিভাবতে ভাবতেই কেটে যায় দিন।একা একা জীর্ণ ঘরে বিদীর্ণ অন্তরেস্বপ্নকে কোলবালিশ করে শুয়ে থাকি। অজানা জ্বরের মতো দিনে দিনে বাড়ে যে আবেগআমি তার হাতের পুতুল নইযদিও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেআমার হৃদয়ের নিজস্ব চত্বরেতোমাকে ধরে রাখি।আর তোমার সর্বাঙ্গ থেকেতিল তিল […]
কবিতা- সস্তার সিন্থেটিক শাড়ি
সস্তার সিন্থেটিক শাড়ি– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত কে যেন দাঁড়িয়ে আছে প্যাকাটির বেড়ার ওধারেহাতে শাঁখা-পলা, পরনে সস্তার সিন্থেটিক শাড়িসামান্য কৃষক রমণী; মোটেও অন্নপূর্ণা নয়বিষাদের দেশে তার বসবাস–জীর্ণ ঘরবাড়ি। বিকেলের ক্লান্ত সূর্য পশ্চিম বালিশে মাথা রেখেদুূদণ্ড আলাপ সারে নবীনা প্রেমিকার সাথেপ্রাক্ পূর্ণিমার চাঁদে খানিকটা বিষণ্ণতা থাকেযা অক্লেশে মুছে দিতে সক্ষম সূর্য নিজহাতে। সস্তা সিন্থেটিক শাড়ি নয় প্রাক্ […]
কবিতা- ইচ্ছা
ইচ্ছা-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত জানালায় জ্যোৎস্নার হাতছানি;আড়ালে থেকে আমার চোখেমুখে আলপনা আঁকেমেঝেতে জাফরি বিছিয়ে বলে:তোর কি রে একাকীত্ব নাকি দুদণ্ড দূরভাষেবকবকম প্রেমিক পায়রা হতে ভালোলাগে?নাকি অক্লান্ত ঝিঁঝিঁর মতো তারস্বরে ভাঙা ঢেউ-কেবল ছড়িয়ে পড়তে ইচ্ছা করে? আমি জানি যে জীবনে বেগ নেই,আবেগ নেই, স্থাণুসে জীবন পদেপদে মৃত্যুর কাছে নতজানু।তাই বলি,ওগো মমতাময়ী,খোলো দেখি একবার কনুইয়ের ভাঁজকী লুকিয়ে রেখেছো […]
কবিতা- কাব্যের খোঁজে
কাব্যের খোঁজে– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত অলীক এক সমুদ্রের তীরে বসেএকের পর এক ঢেউয়ের মৃত্যু ও পুনর্জন্ম দেখিমনে হয় হাতে হাত কাঁধে কাঁধ সহস্র উন্মাদদুশো বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজের খোঁজেডুবুরি সেজেছে।ওদের নীলচোখে মৃত্যু বুঝি ঘাপটি মেরে আছে। ওরা নাকি কাব্য খোঁজেযদিও বহুদিন কেটে গেছে শব্দসহবাসেবে-আব্রু শব্দেরা সব রূপজীবী গণিকার বেশেনিজেরে হারিয়ে খোঁজে।কালের ঢেউয়ে ঢেউয়ে মুছে […]
কবিতা- সাধু সাবধান
সাধু সাবধান-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত নদ-নদী মানুষের পাশে থেকে থেকেদিনে দিনে অবিবেচক অকৃতজ্ঞ হয়েছেততোধিক অকৃতজ্ঞ হবে একদিনপাতকুয়ো, নলকূপ, ইঁদারা সকল।সেদিনতৃষ্ণার জল পেতে রক্ত হবে জল। যেভাবে চলছে এখন জলের অপচয়সেদিন আর বেশি দূরে নয়যেদিন জীবনের সমস্ত সঙ্গীত সঞ্চারির পরেআচমকা থেমে যাবে অন্তরায়আমাদের অবস্থা হবে তৃষ্ণার্ত কাকটির মতোকুড়িয়ে বাড়িয়ে নুড়ি ফেলে ফেলেতুলে আনতে হবেধরণী-কলসের দূরতম তলেজমে থাকা […]
কবিতা- আমার ধারাপাত
আমার ধারাপাত– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত এক এক্কে একপৃথিবীটা কী সুন্দর! চক্ষু মেলে দেখ।দুই এক্কে দুইইচ্ছে করে আকাশটারে হাত বাড়িয়ে ছুঁই। দু’য়ে একে তিনচাঁদের অনেক সঙ্গী থাকে,সূর্য সঙ্গীহীন।তিনে একে চারনিজের তেজে পার হয় সে দুঃখ-পারাবার।চার একে পাঁচভোর হলেই দোর খুলে দেখি আলোর নাচ।পাঁচ একে ছয়লেখাপড়া শিখলে হয় সকল দুঃখ জয়।ছয় একে সাতবিদ্যাবলে করা যায় সকল কিস্তিমাত।সাত […]
কবিতা- এই অমানিশা
এই অমানিশা -নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত এই অমানিশা নাহয় নাহোক শেষ অবিরাম দুঃখশোকে নিমগ্ন এ মন ঘন অন্ধকারেই এখন থাকে বেশ মিয়োনো মুড়ির মতো নিরীহ জীবন। নির্জন দ্বীপে বসে নিজেরে কুড়োই নিজেকে খনন করে মাঝেমাঝে দেখি রাহুগ্রাসে যদ্যপি ক্রমশ ফুরোই তবু দেখি ব্যথাগুলো সত্য নাকি মেকি। ব্যস্ত রাজপথে নেই জেব্রাক্রসিং প্রতিমুহূর্তেই অপমৃত্যুর ভয় জীবনকে উপহাস করে রাত্রিদিন […]
কবিতা- যদিও আষাঢ় মাস
যদিও আষাঢ় মাস– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত এখন আষাঢ় মাস, বর্ষার পূর্বাভাসবৃষ্টি হয় থেমে থেমে, রোদ ওঠে না।ধারাসারে বৃষ্টি হলে প্রকৃতিও কথা বলেনইলে কবির মুখে ভাষা জোটেনা। বৃষ্টি পড়ে ধারাসারে বাঙালির ঘরে ঘরেরান্না আজ ভাজাপোড়া খিচুড়ি -ইলিশকবির টেবিলে খাতা, ব্যাঙেরা ধরেছে ছাতাএকপাশে আছে পাতা বিছানা- বালিশ। এখনো ভরেনি খাল, ফোলেনি ব্যাঙের গালঝিলেতে তোলেনি মাথা শাপলা-শালুকতবু এক […]