• কবিতা

    অনুরণন

    অনুরণন
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    চোখের জল কি এতো সস্তা!
    যখন খুশি হৃদয় নিঃসরিত হয়ে
    হোয়াংহো হয়ে বইতে দেবে!

    অনেক বুঝিয়েও পারিনি তোমায়,
    আমি ছিলাম,আছি, থাকবো।
    রাতের আঁধারে কান পেতে শুনেছি
    অন্তসলিলা লুনি’র নিস্তব্ধ বহমানতা।

    চাপা কষ্ট, আমায় চেয়েও, না পাবার তোমার আর্তি,
    হঠাৎ তবে কেনো পথ হারালো থমকে,
    নিজের ওপর ভরসা, বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে!
    আজও তোমার জন্য বটবৃক্ষ হয়ে বাঁচা!

    চাইনি তো এমন ভালোবাসা, স্বার্থপরতার বর্ণপরিচয়!
    যা মনকে তুমি-আমি সর্বস্ব, শেকল পড়ানো 
    চোরা কুঠুরিতে বদ্ধ করে!

    হোক ভালোবাসা শাশ্বত, শরীরী মোহময় বিহীন, 
    দূরত্ব, বন্ধুত্বের সেতু বন্ধনকারী জাগ্রত প্রহরী।
    বিশ্বাস, ভরসা, সততা, অনুপ্রেরণার শক্ত খুঁটির ওপর দাঁড়ানো ইমারত হয়ে।

  • কবিতা

    অভিমান

    অভিমান
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    বল না ওরে সই …
    আমার বাঁশের মাচার ভরসা,সঙ্গী
    ঠ্যাকনা ছিলিস তুই ।
    আজ যে হটাত সরিয়ে নিলি
    কেমন করে রই !
    আজকে গাছে ফুল এসেছে
    মৌমাছির দল ঝাঁকে ঝাঁকে,
    ভিড়ের মাঝে ,সকাল সাঁজে
    তোর পাচ্ছি আর দেখা কই !

    নিত্য আমি আঁধার রাতে ,
    নিদ্রাহীন অপেক্ষাতে
    ক্লান্ত ,রিক্ত অবসন্ন মনে
    আজও জেগে রই !

    তুই ও জানি আমার সনে
    বলিস কথা মনে মনে ,
    হটাত্ মিছে রাগ অভিমানে
    সরিয়ে নিজেকে আনমনে
    জেগেই কাটাস ভোর !

    বলনা ওরে সই ,
    আজকে ঠেলে অনেক দূরে
    বানিয়ে আমায় ভবঘুরে
    কি আনন্দ পাস তুই !

    জীবন মৃত্যুর দোলাচলে
    ঝড় আসে বৃক্ষ তলে ।
    আবার সব ঠিক হয়ে যায়
    পুব আকাশে সূর্য এলে ,
    উঁকি মেরে জাগিয়ে তোলে
    পুরণো জীবন নতুন ভাবে
    শুরু হয় “নতুন ভোর”।

    শোন রে ওরে সই ,
    আজো আমি অপেক্ষাতে
    এই বুঝি এসে আমার সাথে ,
    হাসবি , খেলবি ,করবি মজা
    এই আশাতেই পথটা চেয়ে রই।

  • কবিতা

    ক্যামন মরদ

    ক্যামন মরদ
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    ক্যামন বাপের বিটা রে তুই
    ক্যামন তুরা বাপ্-বিটায় !
    মেয়ে ট্যকে বিইয়া কইরা
    এমন কইরা কেহ পিটায়!!

    মেয়ে আমর কালো বোট্যে
    ডাগ্গর পানা চোখ ,
    কক্ষুনো মুখে রা কাটেক ল্যই,
    যা ক্যানে, যাকে পরোস শুধ্যখ।

    শহর হইতে বাবু সাইজ্যা
    পিরিতে মজাইলি ,
    বছর না ঘোরার আগেই
    দূইর কইরা তড়ালি !

    লে তুর পাওডার,সোনো,শ্যাম্পু
    লিয়ে যা তুর সব সাইজ l
    মাইয়া টা কে তড়াইয়া দিতে
    কুরলো না ত্যুর লাইজ !।

    আবার কিনা ফট ফটিতে ,
    বাবু সাইজ্যা ঘুরোস,
    নতুন মাইয়া ফাঁসানোর লেগে
    ট্যকা-পয়স্যা উড়োস ।।

    মাথার উপড় ঠাকুর আইছ্যা
    দেখে লিস হারামি ,
    রোগে ভ্যগে মরবি জইল্যা
    অভাগা তুই সোয়ামি ।।

    ফুলা ফুলা কথায় আমি
    মজ্যেছিলাম বোট্যে,
    মেয়েটোকে ভাস্যইছিলাম
    তুর মতো কুলাঙ্গার টার সাথে ।।

    এমন দুখ , কুথায় রাইখি
    বুক ফাটা মোর কাইন্যা,
    দেখলে তুকে রাগে দুখে
    লাগে খুউব ঘেইন্যা ।।

    মেয়ে আমার ভালো আইছে
    গা গতরে খাইট্যে,
    বাঁইচ্যা গেছে তোহর মইত্য
    ফান্টুস মরদ হইতে ।।

  • কবিতা

    ‘অসমাপ্ত ইমারত’

    ‘অসমাপ্ত ইমারত’
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    তোমার চোখে ইমারত বানাবো বলেই
    ইট,বালি,পাথর সঞ্চয় করেছি একটু একটু করে ,
    সিমেন্টের রকম ফেরে হতবাক হয়েও
    কেবল মনের কথা শুনেছি কান পেতে,
    সম্পর্কের ভিত মজবুত করার তাগিদে!

    ভালো রকম জমাট ,মজবুত হবে কিনা সে আশঙ্কা রেখেও কাক তাড়ুয়া হয়ে জমি আগলে আমি ,
    পাছে না সিন্ডিকেটের দামাল ছেলে কব্জা
    করতে এসে বিছায় অনভিপ্রেত কাঁটা !

    কলেজ পড়ার সেই পাল্লা ভারী আবেগের দিনে,
    জমির দখল আদৌ আমার কি না,সে পরীক্ষা না করেই,

    কুঁড়েঘর বানাতে যাবার একরাশ স্বপ্ন,

    তাসের ঘর হয়ে ভেঙ্গে গেছিলো আচমকা চোখের নোনা খাঁড়িতে!

    সে ঝুঁকি আর নেই ,তুমিই এসেছো আজ ,

    ফিরিয়ে দিতে আমার সেই নড়বড়ে বাড়ির কাঠামো সম্পূর্ণ করার অধিকার সমর্পণে।

    হাতবদল হওয়া জমি আজ আমার হাতে,
    সঙ্গে সম্মতির ভরসা দলিল ।
    কুঁড়ে ঘর আর নয়,পাকা দালানই তুলবো।
    লুক্কায়িত ভয়,আবার যদি জমি হাতছাড়া হয়ে নিরাশ্রয় করে তোলে আমার স্বপ্ন সন্ধানী স্বত্তা!

  • কবিতা

    সময় অসময় দুঃসময়

    সময় অসময় দুঃসময়
    – রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    সময় ,অসময় ,দুঃসময়ের পরতে পরতেবয়ে চলা জীবন,

    বাধার পাহাড় ঠেলে এগিয়ে চলে সু সময়ের অপেক্ষায় ।

    একবুক আকাঙ্খা,গগনচুম্বী প্রত্যাশা নয়,

    সামান্য ভালো থাকার একটু ইচ্ছের ঘ্রাণ নিয়ে ভাবুক ডানার – 

    হা হুতাশ ঝটপটানি ধাক্কা খেয়ে ফেরে নিঃশব্দে,

    গভীর রাতে ছায়া ঘেরা আবছায়া দূরের বাতিস্তম্ভে।
    কে আমি,কে তুমির আলোআঁধারি জিজ্ঞাসা আষ্টেপিস্টে জাল বোনে আধুনিকতার গ্লানি!

    এই আছি ,মরি বাঁচি ,তবু গা ঘেঁষাঘেঁষি ,
    ইট কাঠ জঙ্গলে বসবাসে ,কৃত্রিম হাসি খুশি!
    এটা কিনি,সেটা কিনি ,জীবন তো ছিনিমিনি।
    বেঁচে থাকা সস্তা ,পিচ্ছিল কাদা ভরা রাস্তা ,
    যান্ত্রিক মানবতয়ায় ভরে যায় দেশটা !

    তবু বলে ওঠে কেউ ,সমুদ্রের গোন ঢেউ ,
    ফিস ফিস করে মন ,চুপ চাপ কাজে মন ।
    সময়ের কথা শোন ,চারিদিকে আলোড়ন ।
    এটাই তো জাগরণ ,দুঃসময়ে এ ভুবন ।
    আকাঙ্খা ভাসবেই ,সুসময়ও আসবেই ।

    দুঃসময় কাটে ওই সুদিনের আলোতে ,
    মানুষের ভালোতে ,মনের ঝলমলেতে ।

  • কবিতা

    “বিলীনতা”

    “বিলীনতা”
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    কি সামান্য ফারাক দেখ জীবন মৃত্যুর,
    অশান্তি আর শান্তির কি নিবিড় আলিঙ্গন!
    শরীরী ক্যানভাসে অব্যক্ত যন্ত্রণা,
    এঁকে চলে কতো নিখুঁত তুলির আঁচড়!
    কি হয় কি হয়, চিন্তার ঠান্ডা স্রোত।

    শাঁখ বাজে, তুলসী মণ্ডপে গৃহস্থের উলু ধ্বনি!
    দিকে দিকে কবি প্রণামের মহড়া!
    যে মানুষটা সংসার বাঁশ মাচার ভরকেন্দ্র হয়ে জীবন বাজি রাখে,

    সেই আজ নিঃসঙ্গ কাচ ঘরে,প্রহরী নিয়ন আলোর শীতলতায়।

    মনে খেলে চলে সংশয়ের এক্কা দোক্কা।

    এই ভাবে আমিও শেষ হবো কোনো এক দুপুর

    শূন্যতায়, না বলা জমা কথার পাহাড় ভর করে!
    দূর আকাশে শঙ্খ চিলের আকাশ ছোঁয়ার অঙ্গিকার!
    কি যায় আসে তাতে!
    কতোটুকুই বা চেনা আমি !
    মানুষের ভীড়ে রবো এক বিলীনতা !

  • কবিতা

    দেহ বাড়ি

    দেহ বাড়ি
    -রানা চ্যাটার্জী

     

     

    দোতলা কাঠামো বিশিষ্ট এই মানব শরীর,
    রক্ত,মাংস, শিরা-উপশিরা অনুভবের পরতে
    পরতে গড়া আস্ত দেহ বাড়ি।
    এই পা সিড়ি,সোজা উঠে গেছে কোমর পর্যন্ত
    দোতলা ঘরের চৌকাঠে,
    বড়ো দামি আসবাবে ঠাসা দ্বিতল আমার,
    কি নেই এখানে!
    বৃক্ক লিভার স্টমাক লাঙস হাত পা ছড়িয়ে দক্ষ
    কর্মীর মতো কাজ করেই চলেছে।
    মধ্য মনি হয়ে অতি দামী হৃদযন্ত্রের ব্যলকনি।
    এবার গ্রীবার গ্রীল বারান্দা ধরে উঠে এসো,
    পাবে তিনতলার চিলেকোঠা ঘর,
    উজ্জ্বল দুই সার্চ লাইট চোখ, পর্যবেক্ষন অবিরত,
    সাউন্ডবক্সের মতো দৃপ্ত কন্ঠ ধ্বনিত হয় চারিপাশ!
    আমার ব্যস্ত বাড়িটি তে সদাই কর্মব্যস্ততা।
    একদিন সব থেমে, নিস্তব্ধতা খোলামকুচির মতো!
    এই দেহ বাড়ির পঞ্চ ভূতে বিলীনতা
    পড়ে থাকবে হয়তো ধূসর স্মৃতি, আগামী প্রজন্মে।

  • কবিতা

    জীবন যাপণ

    জীবন যাপণ
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    আড়াইশো গ্রাম ভালোবাসা,পাঁচশো স্নেহ,
    আর তিনশো বিশ্বাস কিনে সবগুলো মিশিয়ে,রোজ সকালে এক চামচ সেবন ।
    নইলে , টিকে থাকা বড়ো দায় এই কাঁচ ঘেরা রুদ্ধ
    দ্বার পৃথিবীর বৃত্তিয় ময়দানে !
    মনের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড প্রলেপ আঁচড়,
    স্বার্থপরতার পোস্টারে ছয়লাপ বাতিস্তম্ভ।
    আধুনিক শিক্ষায় উন্নত নাগরিক মন, তবুও কেবল নিজের জন্য ভাবনার গভীরে ডুব সাঁতার!
    একাকি রাত ডিগবাজি খায় গ্যাজেট ল্যাপিতে।
    রাস্তায় অসহায় মানুষের পাশ দিয়ে নাকে রুমাল চাপা অতিক্রম, বড়ো গা সওয়া এ শহরের ।
    কিডনি চক্রের ছায়া মানবের ফুটপাথ দাপাদাপি,
    তবু খাসা বাঁচা মুখোশ দুনিয়ায় কাঠপুতুল হয়ে ।

  • কবিতা

    সম্পর্ক

    সম্পর্ক
    – রানা চ্যাটার্জী

     

     

    সম্পর্ক কি সুইচ বোর্ডের অফ, অন বোতামের মতো,
    যখন খুশি অন করলাম, গিজারের গরম জল,
    পরক্ষণেই শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ঠান্ডা বাতাস!
    জীবন তো পানসি তরী,
    কখন কোন ঘাটে নোঙ্গর ফেলে!
    এ সত্য জেনেও তোমার অভিমান, রাগ
    পাখার রেগুলেটরের মতো বাড়ে, কমে।
    কখনো ফায়ার প্লেসের স্ফুলিঙ্গ হয়ে ছিটকে এসে
    আমার চোখে মুখে কম্পন ধরায়!
    গ্রিল কারখানার ঝালাইয়ে রত দক্ষ কর্মীর দৃঢ়তা,
    মন শক্ত রাখার সাহস যোগায় শিরা উপশিরায়।
    সব বুঝেও স্ফুলিঙ্গ রাগে জল ঢালার চেষ্টা
    থেকে বিরত রাখি নিজেকে,
    পাছে পুড়ে খাক হয়ে যায় ধিকি ধিকি আগুনে
    আমাদের সম্পর্কের সবুজ ক্ষেত!

  • প্রবন্ধ

    “রায় দান ও আমরা”

    “রায় দান ও আমরা”
    -রাণা চ্যাটার্জী

     

     

    মাঝে মাঝেই খুব রাগ হতো, যখন পেপারে দেখতাম কোনো বোম্ব ব্লাস্ট ,অপরাধ হবার পর দোষীকে ধরে ,তাকে দোষী জেনেও বাঁচিয়ে রাখা দেখে। তখন অবশ্য ছোট ছিলাম, আইনের ,বিচারব্যবস্থার এত কিছু নিয়ম জানতাম না। শুধু ভাবতাম বুদ্ধিদৃপ্ত পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী যখন তাদের তৎপরতায় ধরে ফেলেছেন, তারপরও বিচার ব্যবস্থায় বছরের পর তাদের বহাল তবিয়তে ঘেরা টোপে রেখে দেওয়া কেন! এক বহুল চর্চিত হিন্দি সিনেমায় নায়ক সানি দেওলের সেই বিখ্যাত ডায়লগ, সময়ের পর সময় নষ্ট করার কথা আম আদমির পুঞ্জীভূত ক্ষোভের নমুনা হওয়ায় বেশ হাততালি কুড়িয়েছিল সেই সিনেমার সিন।

    প্রতিনিয়ত দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে ইভটিজিং, না পেয়ে এসিড ছুঁড়ে মনোবল ভেঙে দেওয়া, ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, সর্বোপরি মিথ্যা কেচ্ছা রটিয়ে দেওয়া, ডাইনি সন্দেহ আরো কত কি ঘটনা রটনার ঘনঘটা। সব ঘটনা সুচারু ভাবে ঘটিয়ে ভালো মানুষ সেজে, বুক দর্পে ঘুরে বেড়ানোরও ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ প্রতিনিয়ত চোখের সামনে। অবশ্য এ আর নতুন কি, এই সব নিয়েই তো আমাদের অভ্যস্ত চেনা সমাজের দিন যাপনের এক্কা দোক্কা।

    এই কয়েক মাসে বিচার ব্যবস্থা বেশ শচীনের স্টাইলে ঝড়ো ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে আম আদমিকে আলোচনার টেবিলে, যুক্তি তর্কে বিভোর করে তুলেছে। এমনিতে চপ মুড়ি, কুচি কুচি আদা, লঙ্কা, পেঁয়াজ, চানাচুর মেখে বাঙালিকে যুক্তি তক্কে বসিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। এদিকে ২২দিনের মাথায় গ্যাস শেষ হবার খবর, শূলে র মতো বুকে বিঁধলো। সিলিন্ডার দিতে এসে ডেলিভারির ছেলেটি দেখি গত মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ টাকা বেশি বিল করলো ।

    আমার পরিচিত এক ভাই, কর্মঠ ছেলেটি পুঁজির অভাবে কিছু একটা করবে করবে করেও করতে পারছে না দেখে ওকে একটা সরকারি স্কিমের কথা বলে লোনের জন্য ব্যাঙ্ক পাঠালাম। কদিন চক্কর কেটে এসে দগ্ধ অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিল। ম্যানেজারের একটু সাক্ষাৎ পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে করে বিরক্ত সে দরজার ফাঁকের কাছে এসে দাঁড়াতেই কানে এলো ভেতরে প্রবেশকারী ক্ষমতাবান ভদ্রলোকটিকে ম্যানেজার উৎসাহ দিচ্ছেন রাইস মিল বসানোর জন্য। আর উনি এটা শুনে যতবার না করছেন,ম্যানেজার আশ্বস্ত করছেন এটা বলে যে, “চিন্তা কি, ব্যাঙ্কই ফান্ডের ব্যস্ততা করে দেবে।” কি আশ্চর্য্য তাই না, একটা বেকার ছেলে তাকে, সরকারি স্কিমে সামান্য লোন দিতে কত অনীহা রক্ত মাংসের ম্যানেজারের আর তিনিই তেলা মাথায় তেল দিতে সিদ্ধহস্ত।

    এই কিছুদিন আগে পেলাম সমকামিতা নিয়ে কিছু আলোচনা। ভীষণই প্রয়োজনীয় স্মার্ট বিষয় এটা।অবশ্যই তাদের সরিয়ে রেখে এই বিভাজন আধুনিক সমাজের পক্ষে ঠিক নয়। সমাজ ই তাদের ঘৃণা, তাচ্ছিল্য করে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। এই সমকামীদের মুক্ত বাতাসে স্বাধীন ভাবে শ্বাস নেবার অধিকার আছে এটা মানতে হবে। ছোট থেকে সন্তানের মধ্যে আমরাই আদতে, অনেক সময় এটা নয়, সেটা করো, হাত দিয়ো না, বাইরে বেড়িয়ো না, ছেলে না হওয়ার আক্ষেপে মেয়েকে ছেলের পোশাক পরিয়ে রাখার ইত্যাদি নানা রকম কান্ড করে রাখি। শিশু মনে এগুলোর গভীর ইম্প্যাক্ট যা ভবিষ্যতে তাকে সঠিক নিয়ম নীতির বিপরীতে পথ হাঁটতে শেখায় কখনো ।

    গতকাল পরকীয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় বয়ে গেল, আজও সমান তালে চলছে সে চর্চা। আচ্ছা রায় তো সুপ্রিম কোর্ট দিলেন ,দিতে পারার অধিকার আছে। কিন্তু এই রায় সঠিক ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা দেখাও কোর্টের দরকার। আজও যেখানে ভাই বোনে একসাথে পথ হাঁটলে ফিস ফাস গুঞ্জন, প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলে মেয়ে লুকিয়ে দেখা করলে মাতব্বররা, নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়। ভালোবাসার পবিত্রতা নয়, জাতপাত নিয়ম, শেকল আরো বেশি করে করে চেপে বসছে আমাদের ওপর।

    প্রচুর উদাহরণ আমাদের দেশে, আইনকে নিজেরা হাতে তুলে নিয়ে অদ্ভুত শাস্তি ঘোষণার।
    বীরভূমের লাভপুরের প্রেমিকা ও বিবাহিত প্রেমিককে জনসমক্ষে গাছে বেঁধে ১০হাজার করে টাকা চাওয়া হয়। ছেলেটির পরিবার কোনো রকমে দিতে পারলেও অভাবে মেয়েটির পরিবার না দিতে পারলে, তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ১৩ জন বলাৎকার করে জরিমানার টাকা উসুল করে। এমন বিধান আমরা কি পেলাম পরকীয়ার দায়ে মেয়েটির ওপর এমন নিষ্ঠুর অত্যাচারে! আজও মেয়েটি লজ্জায় বাড়ির বাইরে বেরুতে পারে না, কোনো কাজ পেতে কুন্ঠিত বোধ, বুকের মাঝে কাটার মতো খোঁচা খচ খচ করে বেঁধে বোবা কান্না।এমন লাখো উদাহরণ দগদগে ঘায়ের মতো মায়া, লক্ষী, রেহানাদের জীবন শেষ করে দিয়েছে, দিচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে।

    আর এক নজরকাড়া রায় দেখলাম। দক্ষিনের রাজ্য কেরলে শবরিমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০বছর বয়সী মহিলাদের নাকি প্রবেশ নিষেধ ছিল যা সুপ্রিম কোর্ট খণ্ডন করেছে। কি আশ্চর্য্য পুরুষের তৈরি নিয়ম কানুন না? ঋতুময়ী মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে নাকি বিগ্রহের কৌমার্য ব্রত ভেঙে যাবে এই কারণের ওপর ভিত্তি করে এত বড় নির্মমতা। শারীরিক ঋতু চক্রের ওই নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মেয়ে, মহিলারা নাকি অপবিত্র এই ধারণার বেড়ি এমন ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কৌশলে, যে মহিলারাও নিজেদের ওই সময়ে অপবিত্র তকমায় শুভ কাজ থেকে সরিয়ে নেন। আদতে কি তাই? আমাদের জটিল মনের মধ্যে সামান্য যদি পবিত্র অংশ থেকে থাকে কি বলে শুনি। মহিলাদের ওই ক’টা দিন নতুন কিছু সৃষ্টির বার্তা দেয়, প্রজন্ম গঠনের সূচক যেন, তাকে অপবিত্র বলি কি করে। এইভাবে মহিলাদের হেয় প্রতিপন্ন করার নানান পন্থা আমাদের সমাজে মজুত আছে।

    সমাজে, দেশে নানান সমস্যা আছে, থাকবে। আজও দু’ মুঠো ভাত প্রতিটা দেশবাসীর কাছে সুরক্ষিত নয়।এর বিনিময়ে কেবল আঙুল ছাপ, মনির ছাপ কেন সব কিছু দিয়ে দিতেও দরিদ্র পরিবারগুলি রাজি যদি নূন্যতম বাঁচার, খাবারের ছাড়পত্র সুপ্রিম কোর্ট সুনিশ্চিত করে। তা সত্ত্বেও এই যে প্রগতির দেশে সুপ্রিম কোর্টের স্মার্ট রায় তা স্বাগত।

You cannot copy content of this page