• কবিতা

    ভুলে ভরা ভুল

    ভুলে ভরা ভুল
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    সমাজের কাঠামোয় জমেছে অনেক ঝুল
    ছাড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভুলে ভরা ভুল!
    মানুষের মনে জন্মেছে ভুলের ভুল ধারণা
    নারীকে দাবিয়ে রাখার পরিকল্পনা!
    পাথরের মত নাকি পুরুষের ভুল
    জলে ডুবলে দেখা যায় না এক চুল
    জানো কিসের সঙ্গে তুলনা হয় নারীর ভুল?
    তা নাকি জলে ভেসে ওঠা ফুল!
    সমাজের চোখগুলো যা সহজেই দেখতে পায়!
    পাথর সে তো অতল জলে তলিয়ে যায়!
    একই ভুলের দৃশ্যত দুই রূপ
    নাকি সমাজের চিন্তাভাবনার স্বরূপ!
    সব ফুল যেমন পায় না একই কদর
    সব পাথরেরও হয় না তেমন আদর!
    তবে কেন ফুলদের দেওয়া হয় পিষে?
    পাথরকে জলে ফেলে দেওয়া হয় নিমেষে।
    পুরুষ করতে পারে ভুল বার বার
    সোনার আংটির সঙ্গে তুলনা হয় যার!
    একই ভুলে নারীর যত সব দোষ
    সমাজের মাথারা দেখায় তার প্ৰতি রোষ।
    ভুল করার অধিকার শুধু পুরুষের
    দোষ নয় কিছু তার ঔরসের!
    নারীর ভুলে সব নাকি যায় রসাতলে
    পুরুষের ভুল স্থান পায় অন্তরালে ।
    নারীর ক্ষুদ্র ভুলও হয়ে যায় বড়
    পুরুষের বড় ভুলকেও ছোট বলে ধর!
    ‘ভুল’যদি উভয়েই করে একসঙ্গে
    তবে কেন কলঙ্ক লাগে শুধু নারীর অঙ্গে?
    ক্ষমার অযোগ্য বিবেচনা হয় নারীর ভুল
    এর জন্য কেন তাকেই দিতে হয় মাশুল?

  • গল্প

    অন্যরকম ভালোবাসা

    অন্যরকম ভালোবাসা
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    রিনার গ্রাজুয়েশনের রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে,ভালোভাবে পাশও করেছে।রিনা খুব খুশি পাশ করার জন্য তার চেয়েও বেশী আনন্দিত হচ্ছে দুমাস পর বিয়ে করে পাকাপাকি ভাবে আকাশের সঙ্গে থাকতে পারবে ভেবে।দু বছর হলো আকাশের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।প্রতিদিন ফোনে কথা হয় কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ তেমন হয় না বললেই চলে। একবার ফ্যামিলি পিকনিক হয়েছিল তখন দেখা হয়েছিল। লজ্জায় রিনা বেশি কথা বলতে পারেনি তাছাড়া সুযোগও পায়নি! সবসময় গুরুজনরা কাছাকাছি ছিল। সেখানে আকাশের সহকর্মী ও বেস্টফ্রেন্ড জিৎ এর সঙ্গে পরিচয় হয়। জিৎ দেখতে যেমন হ্যান্ডসাম তেমনি মজার ছেলে। রিনার ওকে খুব পছন্দ হয়। প্রতিদিন আকাশের ফোনে আকাশের চেয়ে জিৎ এর সঙ্গে বেশি কথা হয়। রিনা ওর থেকেই আকাশের পছন্দ,অপছন্দের কথা জানতে পারে। ধীরে ধীরে রিনা ও জিৎ এর মধ্যেও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
    রিনা বিয়ের স্বপ্নে মশগুল হয়ে যায়। বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য একদিন আকাশের সঙ্গে বেরোনোর ইচ্ছে প্রকাশ করে কিন্তু আকাশ রাজি হয় না বলে মা এইসব পছন্দ করে না,যা হবে বিয়ের পর।রিনার একটু খারাপ লাগলো। অবশেষে বিয়েরদিন এলো ধুমধাম করে বিয়ে হলো। বাসর ঘরে রাত জাগার সময় সবাই কত হাসি ঠাট্টা করছে আকাশ,জিৎও ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে।জিৎ আকাশের অনেক খেয়াল রাখছিল তা দেখে রিনা খুব খুশিই হলো। বিয়ে ও বৌভাত দুটোই ভালোভাবে মিটে গেল।আত্মীয় স্বজনেরা বলতে লাগলো রিনার খুব ভাগ্য ভালো গায়ের রং চাপা তবুও রাজপুত্তুরের মত বর পেয়েছে। শ্বশুর বাড়ির আত্নীয় স্বজনরা বললো তোমার বাপের অনেক সৌভাগ্য যে আমাদের আকাশের মত ছেলেকে জামাই হিসেবে পেয়েছে। অবশেষে ফুলশয্যার সময় এলো। রিনা খাটের মধ্যে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আর কল্পনা করতে থাকে আকাশ এসে প্রথমে কি বলবে,সে কি করবে,ঘোমটা খুললেই কি ওকে জড়িয়ে ধরবে, তখন ও কি করবে! আকাশের বুকে মাথা রেখে জমানো অভিমানগুলোর কথা বলবে নাকি জড়িয়ে ধরে আদর করবে। এইসব ভাবতে ভাবতে রিনার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ হলো। খাটের দিকে এগিয়ে আসার পদধ্বনি শুনতে পেয়ে রিনার হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেল, ঘামতে শুরু করলো,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল! রিনা ঘোমটার ফাঁক দিয়ে দেখলো আকাশ খাটের উপর এক ধারে দাঁড়িয়ে আছে,উসখুস করছে,মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে। রিনা ভাবলো বিয়ের ধকলে হয়তো আকাশকে এমন দেখতে লাগছে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর রিনা স্থির থাকতে পারলো না। সে আকাশের উদ্যেশ্যে বলে উঠলো তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? আকাশ বলে না একটু ক্লান্ত লাগছে, তুমি খাটে শুয়ে পড় আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি। রিনা কিচ্ছু বলার আগেই আকাশ আলো নিভিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। রিনার খুব খারাপ লাগলো। এই রাতটা জীবনে একবারই আসে,তার জন্য ও কত স্বপ্ন দেখেছে!আকাশ ওর স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়ে শুয়ে পড়ল। চিন্তা করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো। যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখলো সোফায় আকাশ নেই। রিনা ভাবলো তাহলে অনেক বেলা হয়ে গেছে ঘড়ি না দেখেই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে গেল। তারপর বাইরে বেরিয়ে দেখছে বাইরেটা তখনও হালকা অন্ধকার। রিনা রুমে ফিরে এসে বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো আকাশ কোথায় গেল। নীচের তলায় অসুস্থ শ্বশুর শাশুড়ী আছে তাঁদের কাছে গেল নাকি! সাতপাঁচ ভাবতে থাকলো এমন সময় আকাশ ঘরে ঢুকলো। রিনাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বললো তুমি জেগে গেছো। সোফায় খুব গরম লাগছিলো তাই পাশের ঘরে শুতে গিয়েছিলাম।কথাটা বলে কোন পাল্টা প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফ্রেস হয়ে নীচে নেমে গেল। রিনাও পিছন পিছন নীচে নেমে এলো।শাশুড়ির ঘরে ঢুকে তাকে প্রণাম করলো। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখে জিৎ ও আকাশ পাশাপাশি বসে হাসাহাসি করছে। কালকের আকাশ আর আজকের আকাশের সঙ্গে কত পার্থক্য! জিৎ রিনার সঙ্গে কথা বলতে থাকে তখন জানতে পারে যে জিৎও এই বাড়িতে থাকে ওদের পাশের ঘরে। জিৎ ই জানায় দশ বছর ধরে ওদের বন্ধুত্ব। জিৎ মেদিনীপুরের ছেলে এখানে মেসে থাকতো আর আকাশের সঙ্গে একই অফিসে কাজ করতে থাকে। আকাশের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আট বছর আগে মেসে থাকা নিয়ে সমস্যা হয় তখন আকাশ ও তার মায়ের অনুরোধে সে এই বাড়িতে থাকতে শুরু করে। রিনা ভাবতে থাকে বিয়ের পাকাকথার সময় একবারও জিৎ এর থাকার বিষয়টি বলে নি! শুধুমাত্র অসুস্থ মা,বাবার কথা বলেছে।সারাদিন কেটে গেলো রাতের খাবার শেষ করে রিনা শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকলো। ঘড়িতে দেখলো রাত বারোটা বাজে তখন আকাশ আসছে না। ওর ঘুম ঘুম পেতে লাগলো এমন সময় দরজায় আওয়াজ হলো আকাশ ঘরে ঢুকলো। তারপর রিনার কাছে এলো ওর মাথায় হাত দিয়ে বললো সোনা ঘুমিয়ে পড়ো অফিসের অনেক কাজ জমে গেছে রাত জেগে করতে হবে তাই জিতের ঘরে যাচ্ছি। রিনা নম্র সুরে বললো ঠিকআছে আমি বসে আছি তুমি এখানে বসে কাজ করো। আকাশ শান্ত গলায় বলে না না জিৎ আর আমি দুজনে মিলে কাজটা করবো। তুমি লক্ষী মেয়ের মত ঘুমিয়ে পড়ো।বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। দিনের বেলায়ও রিনা লক্ষ্য করেছে আকাশ ওর সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে আর রাত্রেও বাহানা করে ওর সঙ্গে এক বিছানায় শোয় না! এভাবে মাসখানেক কেটে যায়।রিনার সঙ্গে আকাশের কোনো যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রিনা আর চুপ থাকতে পারে না লজ্জা ভুলে গিয়ে একদিন রাতে নিজের থেকেই আকাশকে জড়িয়ে ধরে। তখন এক ঝটকায় আকাশ রিনার বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তখন রিনা কাঁদতে থাকে আর বলে তোমার যখন আমাকে অপছন্দ তাহলে বিয়ে করতে গেলে কেন? আকাশ তখন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে বলে না না তেমন কিছু নয়।আসলে আমি চাই আমরা দুজন দুজনকে ভালো মতো জানি,মনের সম্পর্ক গড়ে উঠুক তারপর না হয়—।রিনা চুপ করে যায়। ভাবে কিসব ভুলভাল কথা সে চিন্তা করেছে এই একমাসে আর আকাশ ওর সম্পর্কে কত ভেবেছে। রিনা ভাবলো সত্যিই আকাশ কত ভালো ওর খেয়াল রাখে। ওর দিকটাও ভাবতে হবে! রিনার সঙ্গে জিৎএর বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়ে ওঠে। শপিং করা,ডাক্তার দেখানো,ঘুরতে যাওয়া সব জায়গায় তিন জনে মিলে যায়। দিনগুলো আনন্দেই কেটে যায় কিন্তু রাত হলেই মাঝে মাঝে রিনার যৌন ক্ষিধে পায় আর তখন প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হয়। এইভাবে আরো ছয় মাস কেটে যায়। জিৎ তিনদিনের জন্য মেদিনীপুরের বাড়িতে গেছে। সেইদিন রাতে একপ্রকার জোর করেই রিনা আকাশকে নিজের বিছানায় শোয়ায় ও আদর করতে শুরু করে। আকাশ লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে আর চিৎকার করে বলে আমার কাছ থেকে দূরে যাও! আমি এইসব একদম পছন্দ করি না। রিনাও চিৎকার করে তাহলে আমায় বিয়ে কেন করলে? অসুস্থ মা বাবা আর সমাজের জন্য,কথাটা বলে আকাশ চুপ করে থাকে।রিনার চোখে জল এসে গেল, তাকে সামলে নিয়ে বলল তার মানে আমি বুঝতে পারলাম না। তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো? আকাশ মৃদু গলায় বলল হ্যাঁ। রিনা বলে তাহলে তাকে বিয়ে করলে না কেন? কোথায় সমস্যা ছিল? আকাশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে সমস্যা অনেক আছে। আমি একজন পুরুষকে ভালোবাসি আর সমাজ পুরুষের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক মেনে নেয় না। বিয়ে না করে সারাজীবন দুজনে একসঙ্গে কাটিয়ে দেব ভেবেছিলাম। রিনার চোখে জলের ধারা বইছে,সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।আকাশও চুপ করে গেল। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলে,তোমাকে ঠকানো বা কষ্ট দেবার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। শুধুমাত্র অসুস্থ বাবা মায়ের ইচ্ছাপূরণ করার জন্য বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের বংশধরের মুখ দেখে ইহলোক ত্যাগ করার ইচ্ছা। প্রথমে ভেবেছিলাম বিয়ের পর হয়তো আমি তোমার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারবো কিন্তু আমি ব্যর্থ!তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছি কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক গড়তে পারছি না তার একমাত্র কারণ আমি আকৃষ্ট হতে পারছি না। আমি জানি না বাবা মার ইচ্ছে কিভাবে পূরণ হবে বলে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ওকে দেখে রিনা কিছুক্ষণের জন্য নিজের কষ্টের কথা ভুলে গেল। আকাশের জন্য কষ্ট হলো অতবড় মানুষটা নিজের চেপে রাখা কষ্ট,দুঃখ কাউকে বুঝতে দেয় নি,সারাক্ষণ হাসি মুখে আছে,কথাটি ভাবতে ভাবতে রিনার অজান্তে তার একটা হাত আকাশের মাথায় চলে যায়। রিনা আকাশকে শান্ত করে আর বলে এখন তুমি বলো আমি কি করবো? আকাশ বলে আমি জানি না! তারপর দুজনেই চুপচাপ হয়ে যায়। আকাশ বালিশে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে আর রিনা যেন তখন তার মায়ের ভূমিকা নিয়েছে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙে দরজায় করাঘাতের আওয়াজে। দরজা খুলে দেখে জিৎ দাঁড়িয়ে আছে ওর কৌতূহলী চোখ ঘরের ভিতরটায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় আকাশ তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো বললো ও তুই এসে গেছিস, তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে বলে জিতের হাত ধরে পাশের ঘরে নিয়ে গেল। রিনা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। ভাবতে থাকলো আকাশ যাকে ভালোবাসে সেকি তাহলে জিৎ!এই একমাসে সেরকম কোনো আচরণ তার চোখে পড়েনি ঠিকই তবে দুজনে একে অন্যের প্রতি যত্নশীল।রিনা ভাবতে ভাবতে জিৎ এর ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে আর শুনতে পায় আকাশ কাঁদছে আর বলছে আমি খুব খারাপ ছেলে সমাজে নিজের সন্মান আর বাবা মাকে খুশি করতে গিয়ে একটি মেয়েকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছি,এর থেকে মরে যাওয়াই ভালো। কথাটা শুনে রিনার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।তখন জিতের গলা শুনতে পায় আর কোনোদিন এমন কথা বলবি না,
    সব ঠিক হয়ে যাবে আমি রিনার সঙ্গে কথা বলবো। রিনা ওখান থেকে নিজের রুমে চলে যায়। এইভাবেই আরো কটা দিন চলে যায়। রিনা নিজের রুমের ভিতর কাঁদতে থাকে আর বাইরে সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করে। রিনা ঠিক করে উঠতে পারে না কি করবে! বাপের বাড়ি চলে গেলে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে পাগল হয়ে যাবে,এখানেও বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ি ব্যাপারটা জানতে পারলে হার্টফেল করে মারা যেতে পারে! এছাড়া ওর নিজের শরীরের একটা চাহিদা আছে সেটা পূরণ হবে কিভাবে! আর মাই বা হবে কিভাবে! যেখানে আকাশ ওর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।
    মাস খানেক পর একদিন রিনার শাশুড়ির খুব শরীর খারাপ হয়ে যায়। তখন তিনি রিনার হাত ধরে বলেন যে এই বছরই নাতি নাতনির মুখ দেখতে চান।
    রিনা কেঁদে ফেলে তারপর নিজের রুমে চলে যায়। হঠাৎ জিৎ সেখানে উপস্থিত হয়। রিনার হাত দুটো ধরে বলতে থাকে যে সে যেন আকাশকে ভুল না বোঝে। জিৎ এর হাতের ছোঁয়া পেয়ে রিনার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। যেন চাতক পাখির মুখে এক ফোঁটা জল পড়েছে।জিৎ আরো বলতে থাকে আকাশ বলেছে তুমি যদি চাও নিজের বাড়ি চলে যেতে পারো তবে একটা অনুরোধ ওর বাবা মা আর মাত্ৰ কয়েকমাস বাঁচবে,ওনারা মারা গেলে তারপর যেও। রিনার কানে যেন কোনো কথা ঢুকছে না। জিতের চোখের দিকে তাকিয়ে কোন মায়াবী স্বপ্নের দেশে চলে গেছে। রিনা সবভুলে জিৎকে জড়িয়ে ধরে আর আদর করতে থাকে। জিৎ কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রিনা হতভম্বের মত বসে থাকে। পরের দিন রিনা আকাশ ও জিতের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে। পরের দিন আকাশ জানায় যে এক সপ্তাহের জন্য সে অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে,জিতেরও যাবার কথা ছিল কিন্তু এখানে কাজের চাপে তার যাওয়া ক্যানসেল হয়েছে।রিনার মুখটা ঝলমল করে ওঠে।
    যথারীতি আকাশ চলে যায়। রাত্রে রিনা আবার কনের সাজে নিজেকে সজ্জিত করে বসে থাকে। আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাতে থাকে। ঘড়িতে যখন রাত একটা বাজে তখন সে হতাশ হয়ে ভাবতে থাকে জিৎ এত রাত কোনোদিন করেনি তবে এতরাত করছে কেন! তবে কি আজ ফিরবে না! এমন সময় দরজায় টোকা শুনে তার সম্বিৎ ফেরে। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে জিৎ হাতে এক গোছা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিনা আনন্দে এক ঝটকায় জিৎকে ঘরে ঢুকিয়েনেয়। হাতের গোলাপগুলোকে নিয়ে ফুলদানিতে রাখে আর কিছুটা গোলাপের পাপড়ি বিছানায় ছড়িয়ে দেয়। তারপর ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে পড়ে। জিৎ ঘোমটা তুলে বলে আমি তোমায় সঙ্গ দিতে পারবো কিন্তু অধিকার দাবি কোরো না কোনদিন কারণ আমি বলতে পারবো না।রিনা জিৎকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে কক্ষনো না,আমার স্বামীর প্রতিই অধিকার দাবি করিনি,তবে ওকে ভালোবাসি নাকি তা বুঝতে পারছি না যদিও জানি ও অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবাসে।জিৎ কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। রিনা আরও বলে তোমার বন্ধু ও তুমি দুজনই খুব ভালো মানুষ আর কিছু না হোক তোমরা আমার ভালো বন্ধু। কথা বলতে বলতে দুজনে সুখের সাগরে ডুবে যায়।
    কয়েক মাস পর রিনা একটা মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে আকাশের হাতে দেয়। রিপোর্টা দেখে আকাশ আনন্দে লাফিয়ে উঠে রিনাকে জড়িয়ে ধরে আর বলতে থাকে আমি আজ খুব খুশি তুমি আমায় বাবা হবার সৌভাগ্য দিয়েছ। রিনা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে এটা কি হলো সে তো অন্য কিছু প্রত্যাশা করেছিল। ভেবেছিলো রিপোর্ট হাতে পেয়ে আকাশ রেগে চিৎকার করবে ,অনেক ধরনের প্রশ্ন করবে অথবা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার কথা বলবে! রিনা তখন আকাশকে বলে তুমি জানতে চাইবে না এটা কার বাচ্ছা, কিভাবে ঘটলো? না না আমি কিছুই জানতে চাই না কারণ আমি সব জানি বলে আকাশ। আরও বলে তোমাকে আমি সব দিতে পেরেছি শুধুমাত্র একটা জিনিস ছাড়া আর তারজন্যই মাঝে মাঝে বাইরে চলে যাই। তুমি যেমন আমার সবকিছুকে নিজের করে নিয়েছো, আমায় বুঝে আমার ভালোবাসা,চাহিদাকে সন্মান দিয়েছ তেমনি আমিও তোমার চাহিদাকে সন্মান জানাই আর পূরণ করার ব্যবস্থা করি।আখেরে লাভ আমারই আমি বাবা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা মা র ইচ্ছে পূরণ করতে পারবো। রিনা আকাশের কথা শোনার পর ওর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দুটোই বেড়ে যায়। রিনা
    হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে পাশে ফুটফুটে যমজ সন্তান একটি মেয়ে অন্যটি ছেলে। বিকেলে শশুরবাড়ির ও বাপের বাড়ির আত্মীয় স্বজনেরা রিনা ও বাচ্চাদের দেখতে আসে। বাচ্চা দুটোকে দেখে সবাই বলতে থাকে কানগুলো বাবার মত, হাত পা গুলো মায়ের মত, চুলগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু দুজনেরই বড় বড় চোখগুলো কার মত হয়েছে আমাদের সবার চোখতো ছোট ছোট! কথাটা শোনার পর রিনা আড়চোখে একবার আকাশের দিকে একবার জিৎ এর দিকে তাকায়। তারপর মুচকি হাসি হেসে দুটো বাচ্চাকে আকাশ ও জিৎ কোলে তুলে নেয় ও আদর করে। রিনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আর দুচোখ ভরে ওদের দেখতে থাকে।

  • গল্প

    একটি অসহায় মেয়ের কাহিনী

    একটি অসহায় মেয়ের কাহিনী
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    প্রতিদিন ট্রেনে একটি দশ বছরের মেয়ে ওঠে ভিক্ষা চাইতে তার সঙ্গে বছর সাতেকের একটি মেয়ে। সবার থেকে টাকা চায় কখনো বলে আমার ক্ষিদে পেয়েছে পাঁচ টাকা দেবে আবার কখনো বলে আজ আমার বোনের কিছু খাওয়া হয়নি খেতে দেবে! কেউ কেউ কিছু টাকা দেয়,কেউ আবার দূর ছাই করে,কেউ বলে আবার বাড়িতে চল থাকবি কাজ করবি খেতে দেব। মেয়েটা সেখানে দাঁড়ায় না বোনের হাত ধরে চলে যায়,কোনো কথা না বলে। তখন সবাই হাসাহাসি করে। কেউ বলে ওদের ওটাই স্বভাব হাত পেতে চেয়ে খাবে,কাজ করবে কেন! প্রতিদিন এইসব শুনতে শুনতে ওর সহ্য হয়ে গিয়েছিল। কিইবা তার করার আছে চোখের জল ফেলা ছাড়া! হঠাৎ একদিন তার সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেল! সেদিন ও একাই ভিক্ষে করতে ট্রেনে উঠেছিল। সে উঠেই বলতে লাগলো আজ আমাকে একটু বেশি টাকা দেবে গো দিদিরা আমি আর আমার বোন দুদিন ধরে খাইনি,বোনের শরীর খারাপ ওকে ডাক্তার দেখাবো।তখন নিত্য যাত্রীদের কেউ কেউ বললো ওই জন্যই দুদিন দেখতে পায়নি। কেউ বললো নতুন বাহানা শিখেছে! ও শুধু চোখের জল ফেলে আর হাত বাড়িয়ে পয়সা নেয়। এমন সময় একজন বলে ওঠে এদেরকে টাকা দিবেন না,এসব এদের ব্যবসা। যতসব ছোটলোকের বাচ্চা! মা দেখো ঘরে শুয়ে আরাম করছে আর এদেরকে টাকা চাইতে পাঠিয়ে দেয়। তখন মেয়েটি জোরে চেঁচিয়ে রুখে দাঁড়ায়,আমাকে যত খুশি গালাগালি দাও কিন্তু খবরদার আমার মায়ের নামে একটাও কথা বলবে না। তোমরা ভালো দামী দামী জামা কাপড় পরে আছো তাই ভদ্রলোক! ঠিক বলেছ আমার মা ঘরে শুয়ে আছে তবে আরামের জন্য নয়, অসুখের জন্য! ডাক্তার বলেছে মাথায় রক্ত জমে আছে অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে।আমাদের এই অবস্থা তোমাদের মতো শিক্ষিত ভদ্র মানুষদের জন্য।আমার বাবা একজন বড়লোক ,তার অনেক টাকা।আমার মায়ের উপর অত্যাচার করতো আমি মেয়ে হয়েছি বলে! তিন বছর পর আমার বোন হলে তাকে মেরে ফেলতে চায়,মা বাধা দেয় তাই মাকে মেরেধরে বার করে দিয়েছে। মা আমাদের নিয়ে চলে আসে মামার বাড়ি কিন্তু সেখান থেকেও কিছুদিন পর বার করে দেয়।মামাদের সংসার আছে তাদের ছেলেমেয়েরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে তার খরচ,বাড়ি,গাড়ির লোন অনেক খরচ তাই বোনকে কেউ দেখতে পারবে না তখন মা আমাদের নিয়ে অনেক দূরে চলে আসে। এখানে একটি ডাক্তারের বাড়িতে থাকা খাওয়ার কাজ পায় ,বাড়ির সব কাজ করতে হবে বিনিময়ে থাকতে ও দুবেলা খেতে দেবে তাতেই মা রাজি হয় আমাদের মুখ চেয়ে। পাঁচ বছর ভালো চলছিল। আমরা পাশের সরকারি স্কুলে পড়তাম,মা সারাদিন কাজ করতো,সুখেই কাটছিল আমাদের জীবন। যেদিন থেকে ডাক্তার আন্টির ভাই বিদেশ থেকে এসেছে সেদিন থেকে দেখতাম মা কেমন ভয়ে ভয়ে থাকতো। একদিন দেখলাম স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছি ঘরের দরজা বন্ধ ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ আসছিল, জোরে দরজায় মেরে মা মা করে ডাক দিতেই দরজা খুলে গেল মা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর তখন দেখলাম ওই আঙ্কেল ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি মাােক জিজ্ঞাসা করেছিলাম,’ কি হয়েছে মা?’ কিছু বলেনি শুধু কাঁদছিলো আর আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। সেই দিন সন্ধ্যায় ডাক্তার আন্টি মাকে বকছিলো,তাড়িয়ে দেবে বলছিল। দুদিন পর হঠাৎ সকালে মাকে বাগানের মধ্যে পাওয়া যায় শাড়ি ছেঁড়া মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার আঙ্কেল ও আন্টি মিলে মাকে ঘরে নিয়ে এসে কাপড় বদলে মাথায় ব্যান্ডেজ করে চিকিৎসা করে। মায়ের জ্ঞান ফিরলেও শরীর নাড়াচাড়া করতে পারছিল না তখন হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেদিন থেকে ওই আন্টির ভাইকেও আর দেখা যাচ্ছিল না।কয়েকদিন পর হাসপাতাল থেকে মাকে ফিরিয়ে এনে একটি বস্তির ছোট ঘরে আমাদের ও মাকে রেখে যায় আর বলে যায় যে আমরা তোদের মায়ের জন্য আর খরচ করতে পারবো না,নিজেদের ব্যবস্থা নিজের করে নে। সেদিন আমি ছোটো থেকে বড় হয়ে গেলাম ভাবতে লাগলাম কিভাবে মার চিকিৎসা করবো আর দুমুঠো খাবার জোগাড় করবো। মা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে আর চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। আমি চায়ের দোকানে,হোটেলে বাসন মেজে ধুয়ে খাবার জোগাড় করতে থাকি। একদিন হোটেল বন্ধ ছিল হোটেলের মালিক টাকা দেবার নাম করে সেখানে ডাকে তারপর জোর করে আমার শরীর নিয়ে খেলতে থাকে সে যন্ত্রণার সময় মায়ের কষ্টও অনুভব করি, তারপর কিছু টাকা দিয়ে ছেড়ে দেয় বলে যে কাউকে যদি বলে দিই তাহলে বস্তি থেকে বার করে দেবে আর রোজ রাতে যদি আসি তাহলে টাকা দেবে। অনেক ব্যাথা নিয়ে ঘরে ফিরে আসি এসে দেখি বোনটা খুব কাঁদছে তাকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলে যে পাশের পাড়ার ক্লাবের কয়েকজন ছেলে তাকে ক্লাবে ঢুকিয়ে চকলেট,চিপস খেতে দেয় আর তার সঙ্গে কি করেছে ,পেচ্ছাব করতে গেলে জ্বালা করছে।সেদিন আমি মা আর বোনকে জড়িয়ে কেঁদেছিলাম, এছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না। তারপর থেকেই বোনকে কাছ ছাড়া করি না সঙ্গে করেই সারাদিন ট্রেনে ভিক্ষে করি । এখানে ভীড়ের মধ্যে ভয় লাগে না, জানি এতে গালাগালি খাবো, মনে কষ্ট হবে কিন্তু অসভ্য মানুষদের হাত থেকে রেহাই পাবো। এবার তোমরা বলো এতে আমাদের কি দোষ?আমার মায়ের ভুল কোথায়? আমরা মেয়ে হয়ে জন্মেছি এতে আমাদের দোষ কোথায়? জোরে জোরে সে প্রশ্নের বাণ যাত্রীদের উদ্যেশে ছুঁড়ে দেয়। সবাই নিশ্চুপ শ্রোতা!শেষ স্টেশন এলে মেয়েটি নেমে যায় আর প্লাটফর্মে দাঁড়ানো মানুষদের থেকে অভ্যাস মতো পয়সা চাইতে চাইতে চলে যায়।

  • গল্প

    প্রতিদান

    প্রতিদান

    -রেহানা দেবনাথ 

     

     

    জুঁই কালীঘাটের চত্বরে ঘুরে বেড়ায় পুজো দেবার জন্য নয়,খদ্দের ধরতে। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল সে এই দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়েছে। কাল সে মন্দিরে প্রদীপবাবুকে দেখেছে নতুন বউ নিয়ে পুজো দিতে এসেছিল। জুঁই এর একটু কষ্ট হলেও তা সহ্য করে নিলো। প্রায় চার বছর ধরে প্রদীপ জুঁইকে বিয়ে করার জন্য চেষ্টা চালায় কিন্তু জুঁই রাজী হয় না।কারণ তার বিশ্বাস ভালোবাসা দুটোই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।মাত্র ১৬ বছর বয়সে জুঁই অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে হয়ে গরীব রঞ্জনকে ভালোবেসে বিশ্বাস করে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। নদীর ধারে একটা হোটেলে তারা ওঠে। কিন্তু রাতে ফুলশয্যা হয় অন্য একজনের সাথে জোর করে,তার কাকুতি মিনতি সব ব্যর্থ করে লোকটি তার শরীর,মন পিষে দেয়। লোকটির কাছে জানতে পারে পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে রঞ্জন। লজ্জায় ঘৃণায় তার নিজেকে শেষ করে দেবার ইচ্ছে হলো কিন্তু পারলো না। বন্দিনী হয়ে রইল একমাসের মত। সবসময় কান্না ছাড়া আর কোনো কিছুই তার করার ছিল না। কেউ তাকে উদ্ধারের জন্যও এলো না। রাতে সেই লোকটিও অন্য আরো পুরুষ ঢুকিয়ে দিত তার ঘরে।তার উপর যত অত্যাচার হয়েছে ততই রঞ্জন ও পুরুষদের উপর ওর ঘৃণা জন্মেছে। তারপর হাত বদল হতে হতে সে এখন কালীঘাটে এসে পড়েছে বছর পাঁচেক আগে। সেই সময় প্রদীপবাবু একদিন ওই পল্লীতে আসে আর জুঁই এর সঙ্গে থাকে। তারপর থেকেই প্রদীপবাবু ওকে ভালোবেসে ফেলে, বিয়ে করতে চায়। জুঁই রাজি হতে পারেনি কারণ পুরুষ জাতির উপর থেকে তার বিশ্বাস উঠে গেছে!পুরুষের ভালোবাসা মানে নারীদেহ ভোগ করা এটাই সে মনে করে আর প্রতিটি পুরুষের মধ্যে সে রঞ্জন ও হোটেলের সেই লোকগুলোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। যারা তার ফুলের মত শরীরটায় কামনার থাবা বসিয়েছিল। তার জন্যই প্রদীপবাবুর প্রস্তাবে সে রাজি হতে পারেনি। জুঁই বুঝেছিল প্রদীপবাবু ভালো লোক কিন্তু সে তার এই জীবনের সঙ্গে ওকে আর জড়াতে চায় নি।
    জুঁই ডায়মন্ড হারবারের একটি নামী হোটেলের লনে দাঁড়িয়ে রাতে শান্ত নদীর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিল। সে এখানে আসতে রাজি হচ্ছিল না পুরানো পার্টি তাই বাধ্য হয়েছে। পার্টি মদ খেয়ে ঘুমাচ্ছে তাই সে এতরাত্রে বাইরে। হঠাৎ তার কানে একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ এলো পাশের রুম থেকে। সে কান খাড়া করে শুনতে লাগলো দরজার কাছে গিয়ে। ধস্তাধস্তির আওয়াজ হচ্ছে আর মেয়েটি বলছে দয়া করে আমায় ছেড়ে দাও! তোমার পায়ে পড়ছি। জুঁই আগেপিছে কিছু না ভেবে দরজায় দড়াম দড়াম করে মারতে থাকে। তারপর দরজাটা খুলে যায় একটি মধ্য বয়স্ক লোক মুখ বার করে কিছু বলার আগেই সে হুড়মুড়িয়ে রুমের ভিতর ঢুকে যায় সেখানে দেখে একটি অল্পবয়সী মেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর কাঁদছে। জুঁইকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলে দিদি আমাকে বাঁচাও। জুঁই মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আর পাঁচ বছর আগের জুঁইকে দেখতে পায়।লোকটি তখন আমতা আমতা করে বলে কে আপনি? এই হোটেলে পুলিশের উৎপাত নেই!বেশি করে টাকা দিয়েছিলাম। জুঁই গর্জে ওঠে চুপ করো। একটা ছোট্ট মেয়ের উপর অত্যাচার করছো, আবার কথা বলছো।এখান থেকে এখুনি বের হও না হলে লকাপে ঢুকিয়ে দেব।লোকটি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে, কি ভাবলো তারপর জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তখন জুঁই মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর জামাকাপড় পরিয়ে দেয়। এরপর মেয়েটিকে শান্ত করে তার পরিচয় ও কিভাবে এখানে এলো তা জানতে চায়। মেয়েটি জানায় তার নাম সুমিতা দাস,বাবা নেই,দাদা রঞ্জন দাস,মা শশীবালা দাস,গ্রাম নন্দনপুর,দক্ষিণ ২৪পরগনা। জুঁই চমকে ওঠে এটাতো তাদের গ্রামের ঠিকানা। সুমিতা তাহলে বিশ্বাসঘাতক রঞ্জনের বোন!সুমিতা বলতে থাকে চার বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় দাদার হাত দুটো বাদ হয়ে যায়। দাদার এক বন্ধু কাজ দেবার নাম করে আজ তাকে এই হোটেলে রেখে যায়। তারপর রাত্রি হলে,,,,বলতে বলতে সুমিতা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। জুঁই কি করবে,কি বলবে বুঝতে পারে না।যার দাদা ওকে এই নরকে ঠেলে দিয়েছে তাকে কি বাঁচাবে,নাকি টেনে নিয়ে যাবে ওই নরকে!  আর সে রঞ্জনকে এনে তার বোনের অবস্থা দেখাবে। হঠাৎ জুঁই নড়ে ওঠে!  এ কি সব ভাবছে,সুমিতা আর রঞ্জন আলাদা মানুষ। আর ও যে হাত দিয়ে আমাকে এই জীবনে ঠেলে দিয়েছিল সেই হাত দুটোই নেই। ওর কিছুটা শাস্তি হয়তো পেয়ে গেছে। সুমিতার তো কোনো দোষ নেই। পরেরদিন জুঁই বোরখা পরে সুমিতাকে নিয়ে নিজের গ্রামে ফেরে। গ্রামের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে দেখে চারপাশটা কত বদলে গেছে,অনেকগুলো মাটির বাড়ীর জায়গায় ইঁটের বাড়ি উঠেছে। ওদের বাড়ির সামনে আসতেই বুকটা কেঁপে উঠলো। ঘরগুলো ভেঙেচুরে গেছে,লতাপাতা,আগাছা ভর্তি হয়ে গেছে। জুঁই কাঁপা গলায় সুমিতাকে জিগ্যেস করে এই বাড়িটার অবস্থা এমন কেন? সুমিতা জানায় যে বছর পাঁচেক আগে এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে নিঁখোজ হয়ে যায়। সেই শোকে কাকু মারা যায়। তার বছর খানেকের মধ্যে কাকিমা মারা যায়।সেই থেকেই জায়গাটা পড়ে আছে। জুঁই কঁকিয়ে ওঠে, দুচোখে জলের ধারা নামতে থাকে।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না, দৌড়ে গিয়ে বাড়িটার ভাঙা দেওয়াল জড়িয়ে ধরে মা,,,,বাবা,,,,বলে কাঁদতে থাকে। প্রথমে সুমিতা ব্যাপারটা বুঝতে পারে না, ধাতস্থ হয়ে জুঁইএর কাছে গিয়ে বলে তুমিই জুঁই দিদি! জুঁই কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ে। সুমিতা জুঁইকে ধরে বলে তুমি কোথায় হারিয়ে গেছিলে? জুঁই চোখের জল মুছে সুমিতাকে নিয়ে ওদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। সুমিতার হাতে একটা টাকার ব্যাগ দেয় বলে যে সংসার চালানোর খরচ মাঝে মাঝে পাঠিয়ে দেবে আর ও যেন পড়াশোনা শেষ করে। তারপর ওর চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে।সুমিতা জোর করে ঘরের ভিতরে আসার জন্য কিন্তু জুঁই ঢোকেনি। এই ঘরের বউ হবার জন্য সে ঘর ছেড়েছিল এখন কি করে সে এই ঘরে ঢুকবে। জুঁই বিদায় নেবার সময় শুধু বলে গেল তোমার দাদা জানে আমার হারিয়ে যাবার কারণ। বলে জুঁই চোখের জল মুছতে মুছতে ধীরে ধীরে সুমিতার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল!

  • কবিতা

    বন্ধুত্ব

    বন্ধুত্ব
    -রেহানা দেবনাথ

    বন্ধু মানে হাজারো কষ্টে ঠোঁটে হাসি
    দুঃখে তার বেদনার সাগরে ভাসি।
    বন্ধুর আনন্দে উৎফুল্ল হয় মন
    সে হলো সবচেয়ে কাছের জন।
    বন্ধু মানে একটুতেই অভিমান
    বিনা দ্বিধায় দেওয়া যায় নিজের প্রাণ।
    বন্ধু মানে মাঝে মাঝে খুনসুটি
    সে হলো জীবনের এক খুঁটি।
    বন্ধু হলো ধর্ম বর্ণ জাতপাতের উপরে
    টক ঝাল মিষ্টি সম্পর্ক বন্ধুত্বের।
    বন্ধুর বিপদে দুর্ভেদ্য ঢাল হয় বন্ধু
    তার কারণে পার হওয়া যায় গঙ্গা কি সিন্ধু!
    বন্ধুর কারণে স্বর্গ নরক এক হয়ে যায়
    বন্ধু বিনা পৃথিবীতে বেঁচে থাকা দায়।
    হাসি মুখে বিদায় নিতে বন্ধুর কারণে
    খুঁজে পাই তার ভালো আমার মরণে!
    বন্ধু হলো খুশি থাকার চাবিকাঠি
    বৃদ্ধ বয়সে সঙ্গে হাঁটার লাঠি।
    বন্ধুর হলো গভীর হৃদয়ে বাস
    সব হারিয়ে নতুন করে পাবার আশ।
    বন্ধু মানে এক আকাশের তারা
    বহমান সমুদ্রে স্রোতের ধারা।
    বন্ধু হলো সোজা হয়ে দাঁড়ানোর অবলম্বন
    দুর্গম পথ এগিয়ে চলার আস্বাফলন!
    বন্ধু হলো কুপথের বাধা পর্বত সমান
    একসাথে পথ চলা বন্ধুত্বের টান।

    সব সময় বন্ধু যদি থাকে পাশে
    সেই প্রবাহিত হয় নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে ।
    কখনো আবার সে থাকে অন্তরালে
    অস্তিত্ব তার থেকে যায় তিনকালে!
    বন্ধু কখনো কখনো হয় শিশুর মতন
    সময়ে সময়ে করতে হয় তার যতন।
    তার উপস্থিতি যদি হয় স্নিগ্ধ শীতল
    সেই বন্ধু সুখে দুঃখে থাকে চিরকাল।
    ঝোড়ো বাতাসের মত বন্ধু হলে
    অভাবের সময় বন্ধু যায় চলে।

    বন্ধুরা থেকে যায় স্মৃতির অতলে
    চোখের কোনে রয়ে যায় অশ্রু জলে।
    থাকে না যখন বন্ধু আশেপাশে
    ছবি ভেসে ওঠে তখন মনের ক্যানভাসে।
    বন্ধু আনে জীবনের পূর্ন্যতা
    বন্ধু বিনা হৃদয় জুড়ে থাকে শূন্যতা

You cannot copy content of this page