-
কবিতা- পরমেশ্বর
পরমেশ্বর
– সঞ্জিত মণ্ডলপঞ্চভূতের পরীক্ষাতে শরীর বিলীন হয়
আত্মা অবিনশ্বরের কথা শাস্ত্রে বলা হয়।
ক্ষিতি অপ তেজ মরুত ব্যোম এই পঞ্চভূতে ক্ষয়
পরমেশ্বরের উপলব্ধিও পঞ্চ ভূতেই রয়।
ভ-তে ভূমি, গ-তে গগন, ব-তে বায়ু বয়
আ-তে আগুন, ন-তে নীর, পঞ্চভূতেই লয়।
জন্ম মৃত্যু বিবাহ বলা কারোর সাধ্য নয়
কখন কোথায় কার সাথে হয় সাথীর পরিচয়।
জন্ম দিলেন তিনি পিতা গর্ভ দিলেন মায়
মাতৃভাষা দিলেন মাতা জাতির পরিচয়।
এক অক্ষরে মা ডাকি দু’ অক্ষরে পিতা
নীতি জ্ঞানে পূজ্য তারাই ভবের ঈশ্বর ত্রাতা।
পরমেশ্বর জ্ঞানে পূজি মা আর বাবাকে
অতীন্দ্রিয় অনুভব থাকুক না শাস্ত্রে।।
শাস্ত্রবাক্য,
ভূমে গরীয়সী মাতা, স্বর্গাৎ উচ্চতর পিতা
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। -
কবিতা- ভালোবাসি
ভালোবাসি
-সঞ্জিত মন্ডলতুমি কি জেনেছ আমার পৃথিবী তুমি,
মন প্রাণ দিয়ে হৃদয় তোমাকে চায়,
তুমি যে আমার মুক্তির লীলাভূমি
তুমিই আমার বন্ধ মনের মলয় দখিনা বায়।
তোমাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি তাই,
ঝর্ণার গান তোমাতে শুনতে পাই।
আমার এ বুকে তোমারই তো বসবাস
না পাওয়ার ব্যাথা জানো কবে থেকে ঝরায় দীর্ঘশ্বাস।
জানি না কেন যে কাছে এসে তবু ধরা নাহি দিতে চাও,
ভালোবেসে যাব জনমে জনমে কাছে এসে ধরা দাও।
এ দেহে যে কটি শিরা উপশিরা আছে,
তোমার প্রবল আলিঙ্গনেতে সে সবে রক্ত নাচে।
যে মায়া জড়ানো তোমার হৃদয়ে আছে
রক্তে নাচন ব্যথা উপশম মাধুরি তোমারই সাজে।আশা করে তাই বসে থাকি এক শান্ত নদীর কাছে,
মন ভাসি হয় কুহু তান শুনে মলয় পবনে সাঁঝে।
বেলা পড়ে আসে আলো নিভু নিভু রবি ছুটি নেয় কাজে,
চমকিয়ে শুনি পরাণে তোমার নূপুরের ধ্বনি বাজে।
মনের খাতাটি খুলে বসে যাই আর সব কাজ ফেলে,
আকুল আহ্বানে ডেকে যাই কতো তুমি দেখা দেবে বলে।
তোমাকে ছাড়া যে বাঁচতে পারিনা একবার শুনে যাও,
গদ্যে পদ্যে ছন্দে গীতিতে কবিতায় ধরা দাও।
কবির অন্তরে হে কবিতা এসে দেখা দাও বার বার,
সরস্বতীর কৃপা লাভ করি জনমে মরণে প্রতি বার। -
কবিতা- ওয়েব থ্রি
ওয়েব থ্রি
-সঞ্জিত মণ্ডলচারিদিকে শুধু ছাঁটাই চলছে লোক দরকার নেই
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয় চলছে এ দুনিয়াতেই।
দরকার নেই শ্রমিক কৃষক মেশিনেই সব হবে,
মুনাফা লোটাই একটা লক্ষ্য মানুষ নিপাত যাবে।
অনেক বেশী লাভ চাই সেটা যেমন করেই হোক
না খেয়ে মানুষ মরুক তবুও মুনাফাটা চোখা হোক।
সাবেক কালের সাম্যবাদটা চুলোয় যায় তো যাক
দরদী নেতার দরকার নেই ধনতন্ত্রের হাঁক।সাড়া জাগিয়েই টুইটার আর ফেসবুক এসেছিলো
অতিমারির সেই করোনা কালেও ভাঁড়ার উপচে গেলো।
কদিনেই ধনকুবের হয়ে যে দুনিয়াকে কাঁপালো
বিশ্ব মন্দার দোহাই দিয়ে সে কর্মী ছাঁটাইয়ে গেলো!
সাবেক মুদ্রা অচল হবেই ক্রিপ্টো কারেন্সিতে ,
বাজার দরও বাড়ছেই রোজ বেলাগাম মুদ্রাস্ফীতিতে।
কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না ক্রিপ্টো সে অবাধ সে স্বাধীন
হ্যাকার রাও তল পায় নাকো মজবুত চাপ হীন।নয়া দুনিয়ার আত্মপ্রকাশ অভিশাপ নাকি সে আশীর্বাদ
রাষ্ট্র বিহীন ওয়েব থ্রি তে হবে কি মহোৎসব।
আগামী দিনে কি মুক্তি ঘটবে শাসন শোষণ থেকে
নয়া দুনিয়ার প্রকাশ ঘটবে নতুন ওয়েব থ্রি তে।।
সারা দুনিয়াতে একই মুদ্রা বাধা বন্ধন হীন
সারা দুনিয়াই এক হয়ে যাবে শাসকরা পরাধীন।
জানিনা এমন দিন কি আসবে সবাই সমান ফের
বন্ধন হীন মুক্ত সমাজ স্বপ্ন দেখেছি ঢের।। -
কবিতা- আমেজ
আমেজ
–সঞ্জিত মন্ডলশীতের আমেজ হালকা হাওয়া উত্তুরে বাতাস-
বিন্দাস হেমন্তের বিদায় বেলায় স্তিমিত দিবাকর,
পর্ণমোচী বৃক্ষরাজি পাতা ঝরিয়ে বলে বিদায়,
গ্রীষ্ম বর্ষা শরত বসন্ত বিদায় নিয়েছে কবে।
স্তিমিত সূর্য উঁকি দিয়ে তবু বলে-
আসি আসি বলে সত্যিই এলে চলে,
হাড়ের কাঁপন কাঁপিয়ে দেবে তা জানি,
দুফোঁটা বৃষ্টি ঝরিয়েই দেবে বেশী রাগ হয়ে গেলে।রাতের খিঁচুড়ি বেগুনি পাঁপড় ভাজা-
কতো রকমের সবজি দিই তা বলো,
আমি আসি বলে স্বাদ বদলাতে পারো,
নইলে পটল কুমড়োর ঘ্যাঁট খাও।
একঘেয়ে লাগে ঢেঁড়স পটল ঝিঙে
ফুলকপি বড়া হবে নাকি বলো চা-এ
শীতের বেগুনে পোড়া বেগুনের মজা,
পিঁয়াজ লঙ্কা টমাটোর সাথে মেখে
গরমাগরম যা কিছুই খাও অমৃত লাগে যেন
যতো রকমের সবজির মজা শীতে।
কতোদিন বলো নতুন আলুর দম ছিলোনাকো পাতে
খাওয়ার মজাটা শীত কাল এলে পাও,
খাওয়া আর ঘুমে আমেজ এনেছি বলো।
শীতের আমেজ কি আর কোনোকালে পাও?
বেড়াতে যাওয়াটা কতো সুন্দর বলো তাও-
ঘাম নাই তাই পথের ক্লান্তি বেলাগাম হয় নাই
শীতের আবছা কুয়াশা সকালে ধোঁয়া ওঠা কফি চাই।
খেঁজুরের রস পিঠে পায়েসের মজা কতো চাই বলো।
জয়নগরের মোয়া আর পাটালী
হরেক রকম পিঠেও মন মজালো
শীত কাল এলে বাঁচা ও মজা দুটোর জন্যে খাই
রসে আর বশে খেতে ও খাওয়াতে বাঙালির জুড়ি নাই।
সোয়েটার আছে মাফলার, টুপি হাতিয়ার
কড়াইশুঁটির সিঙাড়া কচুরি আমেজটা বদলায়
শীতের রাতের উষ্ণতা আজও মন চায়
শীত আসে বলে জীবনের এই ছন্দটা খুঁজে পাই।। -
কবিতা- পড়শী
পড়শী
-সঞ্জিত মন্ডলঘরের পাশে একলা শহর একলা দোকলা বাড়ি,
কেউ কারো খোঁজ রাখেনা সেথায় সবার সঙ্গে আড়ি।
এক বারান্দা দক্ষিণ খোলা হাওয়ায় স্বপ্ন গড়ি,
ভিজে কাঁথাগুলো রোদ্দুরে দিই শুকিয়ে নিয়েছি শাড়ী।
ঘুমটা কখন আসে জানো সেই অলস দুপুরবেলা,
কার স্বপ্নে যে বিভোর হয়েছি হারিয়ে যাবার পালা।
স্বপ্নেতে ভাসে রাজার কুমার মস্ত ঘোড়ার গাড়ি,
ঘুম ভাঙালো যে হুতুম পেঁচাটা তার সাথে দিই আড়ি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে তখন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালি,
আলপনা দিয়ে সদর সাজাই তার অপেক্ষা করি।
সদর জানেনা সামনেই গলি রাস্তা অনেক দূর,
মায়াতরুগুলো ঈশারায় ডাকে মনভাসি তার সুর।
উজান বুঝেছে নদী টার ভাষা ভাটায় কাঁদে পরাণ,
সাগর জানে সে আনন্দ গান উছলায় তার বান।
পদ্মা ভেসেছে মেঘনাও ভাসে ভেসেছে চাষির প্রাণ,
গঙ্গা ভেসেছে দামোদর ও ভাসে ভেসে যায় কতো গ্রাম।
ঘরের পাশেতে আরশি নগর পড়শীর কথা বলি,
সুজন সখা সে উদাস বাউল তার প্রেমে ভেসে চলি।
নদীর ঘাটেতে শ্যাওলা সিঁড়িতে নৌকা ভিড়ায় মাঝি,
একটা গল্প তৈরী হয়েছে ফুলেতে ভরেছে সাজি।
একলাই চলা একলাই বলা একলার এ জীবন,
আসা আর যাওয়া পথের মাঝেতে কেন ডাকে সে সুজন।
তার ডাকেতেই সংসার গড়ি তার ডাকে দিই পাড়ি।
তার ডাকেতেই ঘর বাঁধি আমি মায়ার বাঁধনে পড়ি।
সংসার সুখ ভাবি মনে জানি কেউ কারো নয় মন,
সবই অনিত্য জেনেও মায়ায় ভেসে যায় এ জীবন।। -
কবিতা- “কবি তুমি লেখো “
“কবি তুমি লেখো “
-সঞ্জিত মণ্ডললেখা আসে প্রেমে, লেখা আসে অভিমানে,
যখনই চেয়েছি অবয়বে,কেন জানি লেখা গেছে থেমে!
বিরহেও লেখা আসে তাই বুঝি দূরে ভাসে
প্রিয় সঙ্গিনী সব ওই দূরে তারার আকাশে
তাই বুঝি স্বপ্ন হয়ে আসে, কবির প্রেয়সী, মানে অভিমানে।
কবি লেখে আপনার মনে।
মাঝে মাঝে কবি বলে আপনার মনে, নাদিলে দিওনা ধরা,
আমি থাকি আত্মহারা জেনো আমি সর্বহারা হয়েছি তোমাতে।
সে কোন জনম হতে ধরা আমি পড়েছি তোমাতে।
তুমি কিছু দিলে বা নাই দিলে সাথে
একটা জিনিস শুধু নেবো হাত পেতে
আকন্ঠ অধর সুধা কবিতা লেখাতে।
তারপরে ভুলে যেও আর নয় ভুলে থেকো তুমি
লেখা লেখি এ কবির আসবে তখনই।সম্পর্ক যেমন আছে সে তেমনি থাক
আমি শুধু হয়ে থাকি তোমাতে অবাক,
যে রহস্যে আবৃত করেছ নিজেকে সে রহস্য থাক
আমি থাকি তোমাদের নয়নের জলে, প্রিয়তমা বলে
ডেকে যেন পাই কবিতা লিখতে চাই প্রিয়া বলে।
তুমি থাকো ওই দূরে তারাদের ভীড়ে
দূর থেকে যতটুকু দেখেছি তোমাকে সে দেখাতে বিস্ময় আছে
সেটা আমি ভুলবো না জেনো, সে কবিতা লিখিনি এখনও।
দেখা না দেখের ভিড়ে যদি কিছু স্বপ্ন ঘিরে আসে
সেটা হয় তোমার কবিতা তোমাকে পাবার আশালতা।মনে হয়েছিল কিসে কবিরাই কেন শুধু প্রেমাবেগে ভাসে
শুকনো মুখে, বোবা চাহনিতে,বুঝে নিতে কষ্ট নেই মোটে,
ঝোলা ব্যাগ কাঁধে কবি উস্কো চুলে,নির্ঘাত ডুবেছেই জলে,
যারা অতি ভালোবেসে মরে ডোবে তারা গভীর অতলে।
বলি তাই, লেখা যদি দেখতেই চাও অন্তহীন ভালোবাসা দাও।
প্রেয়সীকে ভালোবেসে লেখা আসে, জেনেছে সকলে।
বিশ্বপ্রেমে ভাসে কবিদল,কবিতার চাহিদাও হয়েছে প্রবল ।
সত্যি করে বলো আদি কবি বলো তুমি বিশ্বের রবি
প্রেমহীন কোনও কবি কোথাও কি ছিলো কোনো কালে? -
কবিতা- তোমাকে
“তোমাকে”
-সঞ্জিত মণ্ডলশোনো, আজ তোমাকেই বলি,
এই যে তোমাকে এতো ভালোবেসে কষ্ট পাই
সেটা তুমি জানো? তোমাকে তো দেখিনি কখনো
তবু আমি ভালোবাসি সেটা তুমি জানো
আপত্তিও করনি কখনো।
এও জানো, আজ অবধি বুকে ধরা দূরে থাক
ছুঁয়ে দেখা হয়নি কখনো।
তবু কেন ভালোবাসি তার হদিস পাইনি এখনো।হয়তো তোমার চোখে মায়া আছে
একবুক ভালোবাসা আছে
অতিশয় গাঢ় এক অমোঘ আকর্ষণ আছে,
মুখে বলা সম্ভব হলে, তোমাকে তো চিনতো সকলে।
কখন মেঘের পারে কখনো মনের ঘরে এমন লুকালে
কি করে তোমাকে পায় জানিনা না এ পৃথিবীর লোকে।
কেউ কেউ বলে, মায়াবীর কায়াহীন প্রেম
অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়ে ধরে থাকো যদি দয়া তার পাবে অনুভবে
মনে হবে এই যেন পাশাপাশি আছে,
মনে হবে মায়া, সেটা যদি ধরে রাখা যায়
শুদ্ধা ভক্তি আসে অন্তরে, ভালোবেসে দেখো তারে
ধরা না দিয়ে যাবে সে কোথায়, ধরা সে যে দেবে নিশ্চয়।আমি বলি, ভালোবেসে বসে আছি বলে
মনে হয় বসে আছি যেন কোন জনমের কূলে
আজও ভেসে চলেছি যে তাই, জীবনের একূলে ওকূলে।
উজানেও নয়, নয় কোনো মায়াবীর ভুলে
ভেসে যেন চলি সেই সাগরের জলে
সেই এক অনন্ত গহীনে, যেন কোন মায়াবীর টানে
সে টানেও সুখ আছে, আছে এক জ্যোতির্ময়ী দিশা
গ্রহ তারা ভরা সেই অনন্ত নক্ষত্র পথ
চলে গেছে বহুদূরে মহাকাশে মহা শূন্য পানে।
তাই তারে ভালোবাসি অতি সাবধানে,
কখনো উদাসী হই ঊর্ধ মুখে চেয়ে থাকি অন্তহীন গগনের পানে।
ওরা বলে, দূর থেকে কিছু না দেখে দেখে এতোখানি ভালোবাসা যায়!
এ যে দেখি অমোঘ বিস্ময়!আমি বলি, এ কিছু বিস্ময় নয়
যুগে যুগে জীবনে জীবনে এরকম-ই হয়,
কেউ তাকে ভালোবেসে ডাকে
কেউ তাকে বিনা ডাকে এমনি চলে যায়।
সে হাসে আড়ালে বসে, যাওয়া আর আসা সামলায়।
ফুল দিই শ্রী চরণে সেই ভরসায়।। -
কবিতা- উৎসব
উৎসব
-সঞ্জিত মন্ডলযদি বলি এত উৎসব কেন, কেন এতো মেলা চারপাশে!
মানুষ কি তবে শুধু উৎসব আর মেলাতেই ভাসে!
বাতাসেতে ব্যথা আর বেদনার হাহাকার মেশে,
তবু কারা কি করে যে মহানন্দে ভাসে!
আমি শুধু দেখি আর মনে মনে হাসি ভাবাবেশে।এভাবে কি ভুলে থাকা যায়?
এতো জ্বালা, এতো ক্লান্তি, এতো অনাহার এতো মৃত্যু সংসার ছারখার এতো বেকারী!
এতো হানাহানি আর দড়ি টানাটানি, এতো ক্লেশ এতো অশান্ত হামলা এই ক্ষুব্ধ দুনিয়ায়!
মেলা কি নেশার ঘুম! ঘুমিয়েই কাল কেটে যায়!
জাগবে আবার কবে, বলো, কে কাকে জাগায় !
কি এমন খেলে বলো যেটা খেলে সব ভোলা যায়,
এমনই নেশার ঘোরে ভেসে যাওয়া যায়!
উৎসব মেলা দিয়ে বাকি সব ভুলে গিয়ে
এমনই নেশার ঘুমে ঢলে পড়া যায়!কতো কার মেলা দেখি, আসে দেব গণপতি
আসে বিশ্বকর্মা স্তুতি, কতো মেলা শুরু হয়ে যায়,
একে একে দুর্গা আসে,সকলেরে নিয়ে সাথে
গরীবের দুর্গা কাঁদে নিত্য মরে উপবাসে, বিক্রি হয়ে যায়।
ধর্ষকের ভয়ে ত্রাসে লাশ হয়ে জলে ভাসে,
তার দিকে আর কেউ ফিরে না তাকায়!
লক্ষ্মী আসে, কালী আসে, জগদ্ধাত্রী আসে পাশে
ঘরে ঘরে লক্ষ্মী যারা কেঁদে মরে যায় তারা
অসুরেরা নিত্য হাসে ধর্ষিতা ধরায়!
কটা দিন মা মা ডেকে ঝড় তুলে দিকে দিকে বিসর্জন দিয়ে দেবে হেলায় ফেলায়।
যে মায়ে করলে পূজা, ঠেলে ফেলে দিয়ে তাকে সবাই পালায়!
মনে প্রশ্ন জাগে তাই সংসারের নিয়মই ভাই !
এই বুঝি হালচাল এই দুনিয়ায়!
যতটুকু প্রয়োজন দেখিয়েছি দয়া।
কটাদিন কাটিয়েছি তোফায় মজায়!মজা শেষ, তাই মাকে ঠেলে ফেলে দেওয়া!
জলে-জঙ্গলে, বৃদ্ধাবাসে, বানপ্রস্থে তাই অবহেলা।
প্রয়োজন ফুরিয়েছে, মিছে আর কতো পোষা যায়!
চমৎকার! এ না হলে আদরের সন্তান সে মা’র!
উপেক্ষার এই মেলাভার!
সহজ উপায় কতো ঝেড়ে ফেলবার।
পূজা-মেলা, খেলা-মেলা, কাপড়ের মেলা, খাদ্য মেলা, ইলিশের মেলা, পিঠে মেলা, বই মেলা,
আরো আছে অগণিত মেলা, কত কিছু আছে জানবার।দুঃখ -ব্যথা, বেকারীর জ্বালা, অর্ধাহার, অনাহার, অশিক্ষা, বিপ্লব,প্রেম,
অ-চিকিৎসা, না-চিকিৎসা, আরো কত জ্বালা সমস্যার।
এক ফুঁয়ে নিভে যায় এমনই যাদুর ঠেলা,
উৎসবে মেলার মজা কত বলি আর।
সাধে কি এ মন হাসে দেখে কর্মকান্ড নাশে
কতকিছু রসে বশে ঘটে চলে চারপাশে
খেলা খেলা মেলা ভাসে অলক্ষ্যেই বেলা বয়ে যায়।
হেলাফেলা সারাবেলা, কালবেলা সুমুখে দাঁড়ায়।
জন্মদাত্রী বিসর্জিতা মা একা একা পথে ভেসে যায় অবেলায়! -
কবিতা- টনক
টনক
-সঞ্জিত মণ্ডলহাওয়া বয় টনক নড়ে কাকতাড়ুয়া ঝড়ের মুখে পড়ে
মানুষ বুঝি এমনি করেই বাঁচতে শিখে যায়
হাওয়া বইলে মানুষ মানুষ হয়।
এমনি করেই দিন চলে যায় পার্বণ আসে যায়
যে যার জায়গা খোঁজার টনক নড়ে
মানুষ আরও মূক ও বধির হয়।
প্রতিদিনই জিনিসের দাম আগুন হয়ে যায়
মানুষের দাম আরও কমতে থাকে
হতাশ মানুষ নিঃশব্দে ধোঁকে।
প্রতিবাদের ভাষায় কারা বেধড়ক মার খায়
রাত দুপুরে কারা যেন গলা টিপে ধরে
মানুষ বলে থোড়াই কেয়ার করে।
কারা যেন দুচোখ বুঁজে উসকে দেওয়া বুলি আউড়ে যায়
আদালতে পাহাড় প্রমাণ মামলা জমে যায়
মানুষ থাকে বিচার প্রতীক্ষায়।
হয়তো বিচার হবে মানুষ জানে তবুও তার দুশ্চিন্তা ভয়
দুদিন পরে শাস্তি মকুব হলে কি যে হবে
কেউ কি আছে ভরসা যোগান দেবে।
এই মানুষই সংঘবদ্ধ হয়, সংঘটিত মানুষ জয়ী হয়
কাকতাড়ুয়া ঝড়ের মুখে পড়ে
এই মানুষ ই সবার টনক নড়ায়।
দমন পীড়ন নতুন কিছু নয় ক্ষমতা দখল রাখতে সবাই করে
ভেতরে ভেতরে মানুষই হিসেব করে
পাঁচ বছরের বেশি আয়ু নয়। -
কবিতা- মর্মব্যথা
মর্মব্যথা
-সঞ্জিত মণ্ডলছাত্রাবস্থায় লিখতে হতো ভাবের সম্প্রসারণ
আজকের দিনে লিখবো বসে ভাবের সঙ্কোচন।
আজকের দিনে মাগগিগণ্ডায় বিনা পয়সায় কি
বিনা পয়সায় উপদেশ মাগগিগণ্ডার ঘি।
চোখ থাকতে অন্ধ কারা বলতে পারো কি
আইন রক্ষক পুলিশ সেটা জানতে কি বাকী!
জোর যার মুলুক তারেও যায় না দমন করা
দমন করা যায় না জেনো দুর্নীতিবাজ যারা।
অতি কষ্টে লাভ করে কে বলতে পারো কি
ধারের টাকা অতি কষ্টে ফেরত পেয়েছি।
আগে ছিলো এখন আর নেই বলতে পারো কি?
পূর্বে ছিলো যে সততা আজকে নেই দেখি।
সর্বাপেক্ষা স্বাদু খবার বলো কি তা শুনি
ঘুষই হলো স্বাদু খাবার মুখরোচকও জানি।
অসম্ভবকে সম্ভব কে করে বলতে পারো?
হাজার গণ্ডা নিউজ চ্যানেল শোনো যত পারো।
কোন জিনিসের শেষ নেইকো বলতো কি দেখি?
বাংলা সিরিয়ালের ঘটা টিভিতে যা দেখি।
সর্বংসহা এক মাতাকেই জানতো ঋষি মুনি
এখনকারের সর্বংসহা জনগণই শুনি।
সব সময় যা বেড়ে চলে সেটা বয়স জানি
এখন যেটা রোজই বাড়ে দ্রব্যমূল্য দামী।
আগের কালে মিথ্যে বললে শাস্তি ছিলো বাঁধা
এখন শুধুই মিথ্যে বলে অসামাজিক নেতা।
আগের কালে অন্যায় হলে হতো প্রতিবাদ
এখন প্রতিবাদীর শিরে জোটে লাঠির আঘাত।
বলবো কতো দেখে শুনে ভুগি মর্মব্যথায়
ভেটকি পুটকি সবই গেল হবু রাজার দয়ায়।