• কবিতা

    কবিতা- অভিঘাত

    অভিঘাত
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    কাল রাতে মনে প্রমত্ত ঝড় উঠেছিলো-
    বিপর্যস্ত এলোমেলো সবকিছু লণ্ডভণ্ড হলো,
    বিপর্যস্ত সেই নিশিরাতে ডেকেছি তোমাকে-
    তুমি আসাতেই ঝড় থেমে গিয়েছিলো।
    প্রাণপণে বুকে ধরে জড়িয়েছি প্রিয়-
    ওষ্ঠাধারে অমৃত চুম্বনে মিটেছিল কি চাতকী তৃষ্ণা যতো,
    মেঘভাঙা সে প্রবল বৃষ্টি ধারায় স্নান সমাপন হলো-
    কামনার সে দীপ্ত আগুন দপ করে নিভেছিলো।

    ঝড় থেমে গেলে পরে, আরো কিছুক্ষণ রেশ তার থেকে গেলো –
    আছড়ে পড়েছে অভিঘাত সে নদীর তীরে সে ঝড়ের মতো সুতীব্র ভালোবাসা,
    উথাল পাথাল ঢেউ ওঠে নামে কতো,
    গভীর আবেশে মন শিহরিত হয়-
    ক্ষণিকের তরে আকাশের কোথা বিদ্যুৎ চমকায়-
    কেঁপে ওঠে শরীর, সে নদীর উদ্ভাসিত চর।
    বালু রাশি চিকচিক করে, ঝড় আবার থেমে গেলে পরে-
    দেহ মন ক্লান্ত শিথিল-
    স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি সে অমিয় নদী কূলে একা আনমনে,
    বসে থাকি নব আশে পুনরায় নব সন্তরণে।
    আরবার বেজে ওঠে মিলনের বাঁশি –
    সহস্র নাগিনী যেন লক্ষ ফণা তোলে,
    আরবার সে নদীতে স্নান সারি সে অমৃত লোকে-
    এ পৃথিবী তৃপ্ত হবে জানি তৃপ্ত হবে জগতের লোকে।
    প্রিয়া যবে তৃপ্তি এনে দেয়, চাঁদ ডুবে যায় আকাশের কোনে,
    সে চাঁদের মায়াময় টানে, পৃথিবীর নদী ফুলে ওঠে যেন জোয়ারের গানে।
    এমনি করেই ঝড় ওঠে প্রতিবার, আর ঝড় থেমে যায়-
    প্রকৃতির বিচিত্র লীলায়,
    দিন রাত পার হয়ে যায় মায়ার খেলায়
    চাওয়া আর পাওয়া হার মানে।
    আদিগন্ত খেলা চলে, জীবনের গানে, দোলা লাগে প্রাণে,
    দু ফোঁটা বৃষ্টিও নামে অভিযানে সৃষ্টির ধারা চলে জীবনের গানে।।

  • কবিতা

    কবিতা- আত্মত্যাগ

    আত্মত্যাগ
    -সঞ্জিত মন্ডল

     

     

    হাতটা বাড়িয়ে দে না রে বন্ধু তোর –
    ছাড়বো না হাত বলছি সত্যি করে,
    যে কথা দিয়েছি তিনটে সত্যি করে-
    তুই থাকলেই জগৎ করবো জয়।
    ভয় পাসনেকো বিরহ বেদনা নেই-
    আগলে রাখবো এই কথা দিলাম,
    ভুল বোঝাবুঝি সে তো হতেই পারে –
    দেখে নিস তুই রাখবো বুকের উপর।

     

    বিপদ বাধাকে করবো না আমি ভয়-
    চলে যেতে যদি চাস কোনো দিন ছেড়ে,
    বাধা দেবোনাকো ভালো থাকবিই বলে-
    ভালো না লাগলে ফিরে আসবি কি বল।
    বিশ্বাস আমি করি তোকে জান দিয়ে-
    ভাবিস না এটা শুধুই কথার ছল,
    যাকে ভালোবাসি এতো জান প্রাণ দিয়ে –
    তার ভালোলাগা হোক না কো সম্বল।।

  • কবিতা

    কবিতা- ঝড়

    ঝড়
    সঞ্জিত মণ্ডল

    নির্মেঘ আকাশে যদি ঝড় উঠেছিল —
    বাতিস্তম্ভের আলোগুলো নিভু নিভু হলো;
    কে যেন সদরে এসে মৃদু হেসে নতমুখে শান্ত তাকালো।
    আচম্বিতে শুরু হলো প্রলয়ের থরো থরো নিদারুণ ভয়
    অদ্ভুত ভালোবেসে, দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিয়েছি তোমায়।
    উন্মুক্ত করেছিলে বসন তোমার–
    সে বিপুল সৌন্দর্য তটে, অদ্ভুত ভালো লাগা চোখে ছিল গভীর বিস্ময়।
    অন্তর বাহির যেন আলোড়নে দুলে ওঠে বিপুল আশায়-
    ঝড়ের মাতন শুরু হয়, দেহ মন শিহরিত হয়।
    তোমার ধবল শঙ্খে বিপুল আহ্বান এক নিনাদিত হয় ;
    আকন্ঠ পূর্ণ করা উদ্দাম ঝড়ে সব বাঁধ ভেঙেচুরে যায়।
    ভালোবাসো, আরো বেশী ভালোবাসো, দুটি মন আরো কিছু চায়।
    উন্মুক্ত করেছো যবে যৌবন তোমার
    নির্মেঘ আকাশে কত উল্কা ঝরে যায়-
    বহু জনমের সাধে নির্নিমিখ মুগ্ধ চোখে, স্বপ্ন সম দেখেছি তোমায়।
    তুমি স্থির চোখে চেয়ে রও ধরণীর মোহন লীলায়।
    বাহিরে প্রমত্ত ঝড় অন্তরে সফেন উল্লাস;
    নেচে ওঠে কবেকার পুরানো হৃদয় এক স্নিগ্ধ মমতায়।
    দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে আহ্বান করি মৃত্তিকায়-
    প্রাণপণে বুকে টেনে বলি সঙ্গমে লিপ্ত হব হয়েছে সময়।
    সোনালী ধানের বীজ পুঁতে যাই বরষার শ্রাবণ ধারায়-
    উল্লসিত সঙ্গমে, নতুন জীবন যেন প্রস্ফুটিত হয়;
    বর্ষার আদরে সোহাগে নদী আরো ভরোভরো হয়
    প্রস্তুত সে ক্ষেতে বীজ বপন রোপণ হয়।
    ঝড় আসে ঝড় চলে যায়-
    প্রকৃতিও শান্ত হয়ে যায়।
    সোনালী ধানের আশা নিয়ে নদী চরে বসে আছি ভরা বরষায়।
    নদী নারী মিলেমিশে এক হয়ে যায়-
    শ্রাবণের পূর্ণিমায় ভরা নদী খরবেগে ধায় জোছনায়।।

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    গল্প
    – সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    আজ একটা গল্পের কথা বলি ।যদিও এটা গল্প নয়,আসলে কারো জীবনের কোনো ঘটনা যখন গল্প হয়ে যায় তখন সেটা আমাদের অনেক কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। যাই হোক, আজ আমার,

    গল্পের নাম!! “আমি,লতা ও য়্যালোভেরা”!! সঞ্জিত মণ্ডলের

    ছোট গল্প!! “আমি লতা ও য়্যালোভেরা”!!

    দক্ষিণ শহরতলির এই জায়গাটা আমার বেশ পছন্দ।আমার বিয়ের অনেক আগে এক আত্মীয়তার সূত্রে বেড়াতে এসে মনে মনে ঠিক করেছিলাম বাড়ি তৈরী করার মত যদি আর্থিক সঙ্গতি কখনো হয় তবে এমন জায়গাতেই বাড়ি করব। তা উপরওয়ালা বোধ হয় আমার মন বাসনা শুনেছিলেন।বিয়ের পর নানান জটিল পরিস্থিতিতে বাড়ি ছাড়া যখন একমাত্র ভবিতব্য হয়ে দাঁড়ায় তখন অদ্ভুত ভাবে এক যোগাযোগের মাধ্যমে এক টুকরো জমি পাওয়া যায়। বিস্তর ধার দেনা করে বাইপাসের ধারে সেই জায়গার উপরে মনের মত একটা ছোট্ট দোতালা বাড়ি করলাম। স্বামী স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে ছোট্ট সংসার।

    সদ্য রিটায়ার করেছি। সময় কাটানোর জন্যে ছাদের উপর ছোট্ট একটা বাগান করেছি– সবই টবের উপর।দু চারটে লঙ্কাচারা যেমন লাগিয়েছি তেমনি লাগিয়েছি বেগুন আর টমাটোর চারা। বেল ফুল আমার খুব পছন্দের সেটা লাগিয়েছি আর লাগিয়েছি রজনীগন্ধা।

    আমার বড়দিদি মীরার বাড়িতে পাথরকুচি গাছের ফুল দেখে অবাক হয়েছিলাম। সেটা লাগিয়েছি।আর লাগিয়েছি য়্যালোভেরা অর্থাৎ ঘৃতকুমারী।এই গাছগুলোর পিছনেই আমার সময় কেটে যায়।

    প্রথম প্রথম ৯টা বাজলেই মন কেমন উসখুস করত। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখতাম বাস ধরার জন্যে কত লোকের হুড়োহুড়ি। যেটা আমি কিছুদিন আগেও করতাম।আরো দেখি অটোর কতটা লম্বা লাইন। অফিস টাইমে চারজন না পাঁচজন নেবে তাই নিয়ে তর্কাতর্কি, খুচরো না থাকলে নেমে যান এর চোখ রাঙানি। রিটায়ার করে প্রথম প্রথম কষ্ট হোত। তবে এখন আত্মপ্রসাদ লাভ করি এই ভেবে,যে রিটায়ার করে সিনিয়র সিটিজেন হয়েছি। বাসের হুড়োহুড়ি অটোর ঝামেলার ঊর্দ্ধে উঠে গেছি। এখন বাগানের কাজেই সময় কাটাচ্ছি।

    সেদিন বেলা পর্যন্ত রোদ ওঠেনি।নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়া খুসে দিচ্ছি।ছাদের উপর টবের গাছগুলো খুবই অভিমানী। সামান্য যত্নের ত্রুটি বিচ্যুতিতে নিঃশব্দে দেহ রেখে দেয়।এক মনে তাই গাছের সেবা করছি।

    পাশের বাড়ির ছাদ থেকে কে যেন বলল, দাদু, ও দাদু,আমায় একটা য়্যালুভেরা দেবে?

    প্রথমটায় খুব একটা পাত্তা দিইনি। কে কাকে কি বলছে কে জানে।

    তা ছাড়া সদ্য সিনিয়র সিটিজেন হওয়া সত্বেও দাদু ডাকটার সঙ্গে ততটা পরিচিত হইনি।দাদু ডাকাটাও ততটা পছন্দ করিনা।

    কিন্তু আবার সেই ডাক ! এবার না তাকিয়ে পারলাম না।

    দেখি পাশের বাড়ির ছাদে বেশ জোয়ান বয়সের স্বাস্থ্যবতী একটা মেয়ে আমাকেই বলছে।

    দাদু ডাকটা যেহেতু আমার পছন্দের নয়, তাই মুখ ব্যাজার করে বলি,কি বললি?

    য়্যালোভেরা গো য়্যালোভেরা, মেয়েটি বলল, দাওনা একটা।

    বললাম, কি করবি?

    উত্তর এলো, কি করবো জানোনা? হেয়ার কন্ডিশনিং করবো, হেয়ার স্পা করবো, আরো কত কি।

    আমি বলি, এতো কিছু করবি তা তুই য়্যালোভেরা চিনিস?

    মেয়েটি বেমালুম পাথরকুচি গাছ দেখিয়ে বললো ওইতো য়্যালোভেরা।

    বললাম, তোর মাথা আর মুন্ডু!

    ওটা হচ্ছে পাথরকুচি।কবিরাজী নাম,পাষাণভেদী।

    তোকে আমি চিনিনা জানিনা তুই কে? হঠাৎ কোত্থেকে ওদের ছাদে উদয় হলি? কি করিস তুই?

    মেয়েটি বললো, ও হরি,তুমি আমায় চেনোনা?

    আমি তো রোজ তোমাকে দেখি,গাছের গোড়ায় কি খুটুর খুটুর করছো। আরে আমি হলাম গিয়ে লতা। মায়ের হয়ে এদের বাড়িতে প্রক্সি দিতে এসেছি।

    অবাক হলাম আমি। বলি, প্রক্সি দিতে!

    লতা বললো হ্যাঁগো, মায়ের শরীরটা ভালো নয়,খুব দুর্বল, মাথা ঘোরে সব সময়।সে কথা আবার এদের বাড়িতে বলে দিওনা যেন,অসুস্থ শুনলে হটাৎ করে চাকরীটা নট হয়ে যেতে পারে। তাই যেদিন মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা, সেদিন এসে মায়ের কাজ গুলো করে দিই।

    বললাম, মা কে সাহায্য করিস, সেতো খুবই ভালো কথা। তা কি কি করিস?

    লতা বললো, কেন কাপড় কাচি,বাসন মাজি,ঘর ঝাট দিই,মুছি।আর টুকটাক ফাই ফরমাস খাটি।

    বললাম, তা ভালো ই তো কাজ করিস।তবে তুই যেটা চাইছিলিস,আর যেটা দেখালি ওগুলোর কি কি কাজ জানিস?

    লতা বললো, য়্যালোভেরা মাথায় লাগালে চুল ভালো হয় জানি, তবে আর কিছু জানিনা।

    বললাম, শোন, যেটা ব্যবহার করবি,তার গুণাগুণ ভালো করে জেনে তবে ব্যবহার করবি।

    শোন তবে,য়্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী হলো, তিক্ত- মধুর রসযুক্ত,ভেদক,পুষ্টিকারক রসায়ন।চক্ষুর হিতকারক,বলকারক,শুক্রবর্ধক। বিষ দোষনাশক, জ্বর,প্লীহা,রক্তপিত্ত ও চর্মরোগ নাশক।পোড়া জায়গায় লাগালেও খুব উপকার পাওয়া যায়।ঘৃতকুমারির রস থেকে তৈরি মুসব্বর মধু মিশিয়ে খেলে কফে খুবই উপকার পাওয়া যায়।

    লতা বললো, তবে যে বলে, য়্যালোভেরা চুলের গোড়া শক্ত করে, খুব ভালো কন্ডিশনারের কাজ করে?

    বললাম,য়্যালোভেরার অনেক গুণ।ওর গুনের অন্ত নেই।

    লতা বললো, আর পাথরকুচি না কি বললে?

    বললাম,পাথরকুচির আর এক নাম পাষাণভেদী। গাছটি পাথর ভেদ করেও নাকি উঠতে পারে।গুণা গুণ,রক্তপিত্ত এ পাথরকুচির রস সকাল বিকাল দু চামচ করে খেলে রক্তপিত্ত আরোগ্য হয়।সর্দি হলে,মৃগিরোগে,প্রস্রাব না হলে, শিশুদের পেটব্যথায় পাথিরকুচি পাতার রস খুবই উপকারি।

    লতা হাঁ করে সব শুনছিল, আর ওর পায়ের কাছে লুটোপুটি খাওয়া ছোট্ট সাদা স্প্যানিয়াল কুকুরটিকে কাতুকুতু দিছিল। কাতুকুতু খেয়ে ওটা পালাচ্ছিল আবার কাতুকুতু খাবার লোভে ফিরে ফিরে আসছিল।ওটা লতার খুবই অনুরক্ত। মায়ের হয়ে প্রক্সি দিতে আসলে,আগে ওকে আদর করলে তবে ঘরে ঢোকার ছাড়পত্র মিলবে। লতা তার কাজের ফাঁকে ছাদে কাপড় মেলতে এসে দিব্বি আমার সাথে গল্প জুড়েছে।

    আমার পায়েও একজন লুটোপুটি খাচ্ছে। তবে সে স্পানিয়াল নয় বেড়াল। আমার খুব নেওটা।সাদায় কালোয় মেনি। সব সময় পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করে। লতাকে বললাম বেড়ালের কথা। বেড়ালের গল্পে লতা হেসে লুটোপুটি।কেন অত হাসলো ওই জানে।হাসির দমক থামলে বলল, বেড়াল তো মা ষষ্টির বাহন। তোমাদের বাড়িতে অনেক ছেলেপুলে হবে দেখো। বলেই হঠাৎ হাসি থামিয়ে গম্ভীর হয়ে গেলো, বললো,কালো বেড়াল কিন্তু ভালো নয়।কেন ভালো নয় জিজ্ঞাসা করতে বললো,কালো বেড়াল ডিঙোতে নেই,কালো বেড়াল খুব অশুভ হয়।

    আমার খুব রাগ হয়ে গেল শুনে।।বললাম, শুধুমাত্র কালো হবার সুবাদে ও অশুভ! লতাকে কোনো আঘাত করার ইচ্ছাই ছিল না।তবুও মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো, তোরও তো গায়ের রঙ কালো, তাহলে তুইও কি অশুভ?

    লতা বোবা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো, ওর মুখটা থমথমে হয়ে উঠেছে দেখে কথা ঘোরালাম, বললাম,বেড়ালরা যদি পরস্পর বলাবলি করে যে শুধু কালো মানুষ কেন কোনো মানুষ কেই বিশ্বাস কোর না, কখন যে ধাঁই করে ঢিল ছুড়ে মারবে তার ঠিক নেই।খুব সাবধান।কালো বলে তাচ্ছিল্য করিস না।

    লতা থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে বললো, সুপারষ্টিশন, সুপারষ্টিশন।

    চমকে উঠলাম।বললাম,লতা,তুই সুপারষ্টিশন জানিস? লতা ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিলো যে সে শুধু জানে তাই নয় সে ও সব কিছুর ঘোরতর বিরোধী।বললাম, তুইকি একটু আধটু লেখাপড়া জানিস? লতা বললো, আমিতো স্টুডেন্ট।

    তাচ্ছিল্য করেই বললাম,হ্যাঁ, তুই আবার স্টুডেন্ট! তা কোন কেলাশের ইস্টুডেন্ট?

    লতা বললো,বিএ,ফিলজপিতে অনার্স, ফাইনাল ইয়ার।

    এবার চমকাবার পালা আমার। আমি বোবা হয়ে শুনছি।ও বলে চলেছে,আজ কলেজ যাবো না তাই তোমার সাথে গল্প করছি।

    আমি বলি, তুইতো আমাকে অবাক করলি, তুই বিএ অনার্স পড়ছিস,ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী! অথচ মায়ের প্রক্সি দিতে এসে বাসন মাজছিস।

    তা তোর বয়েস কতো?

    এই চব্বিশে পড়েছিগো দাদু।

    মনে মনে বলি, দুত্তেরি,আবার সেই দাদু!

    লতা আবার শুরু করল,জানতো দাদু,আমার দুটো বছর একদম নষ্ট হয়ে গেল। না হলে বি,এ, র গণ্ডীটা কবেই পেরিয়ে যেতাম।

    তারপর খানিক উদাসী হয়ে বললো,জানতো দাদু, সব বাড়িতে প্রক্সি দিতে ইচ্ছা করেনা। এমন ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে যে ভীষণ অস্বস্তি হয়।দেখছো তো আমার কেমন ডেভেলপড ফিগার।

    বললাম, হ্যাঁ, তাতো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু দাদু হয়ে গেলেও আমিও তো পুরুষ মানুষ।তোর সঙ্গে গল্প করছি, এতো কথা বলছি– তোর অস্বস্তি হচ্ছে না?

    লতা বলল, ধুর, অস্বস্তি হবে কেন? তুমিতো আমার বন্ধু হয়ে গেছ।।তোমার কাছে অকপটে সব বলা যায়।

    আমি অন্যমনস্ক হলাম,মনে মনে আমার এই চিন্তা হল যে,এইতো মাত্র ক মিনিটের পরিচয়।এরই মধ্যে লতা আমাকে এত বিশ্বাস করল যে আমাকে একেবারে বন্ধু বানিয়ে ফেললো!

    লতা বোধহয় আমার মনের কথা পড়তে পারলো। বললো,তুমি কি ভাবছো বুঝতে পারছি। শুধু এইটুকু জেনে রেখো,আমরা,মেয়েরা,সে সুশ্রী হই আর কুশ্রী হই, পুরুষ মানুষের দৃষ্টি দেখলেই বুঝতে পারি সে দৃষ্টির মর্মার্থ কি। তুমি যখন আমার দিকে তাকাও, সে দৃষ্টিতে কোনো অশ্লীলতা খুঁজে পাইনি। তোমার হয়তো মনে নেই তুমি আর একদিন আমায় বকেছিলে। বলেছিলে,এএই মেয়ে, কে রে তুই,ছাদে অমন করে হুটোপাটি করছিস? আমি কিন্তু রাগ করিনি। স্পানিয়ালকে নিয়ে আস্তে আস্তে নেমে গেছিলাম। ভেবে দেখেছিলাম,আমার দাদু বেঁচে থাকলে হয়তো ছাদে হুটোপাটি করার জন্যে অমন করেই বকা দিত।তোমার কথায় বা চোখের চাহনিতে খারাপ কিছু থাকলে তোমার কাছে য়্যলোভেরা চাইতামইনা।

    বললাম,সে তুই ওদের বাড়ি থেকে আমার সম্বন্ধে শুনেছিস,তাই আমাকে ভালো চোখে দেখিস।অথবা এমন হতে পারে যে তোর দিকে যাতে খারাপ চোখে না তাকাই তার জন্যে আগাম সুরক্ষা নিয়ে রাখলি।

    লতা এবার সত্যি আহত হোল।আবার মুখ ভার হয়ে উঠলো। প্রমাদ গুনলাম। কথা ঘোরালাম ,বললাম,লতা,তুই আজকে কলেজে যাবিনা?

    কলেজের কথায় লতার মুখের থমথমে ভাবটা আস্তে আস্তে কাটল,মুখটা ওর ধীরেধীরে উজ্বল হয়ে উঠলো। আমার মনে ভরসা এলো। বললাম, হ্যাঁরে,তা বি,এ,পাসের পর কি করবি?

    লতা মুচকি হেসে বললো, বিয়ে করে ফেলবো।

    বললাম,এতো কনফিডেন্টলি যখন বলছিস,তোর পাত্র নিশয়ই ঠিক করা আছে।

    আছেইতো,লতা বললো,আমার বয়ফ্রেন্ড। একটু থেমে বললো,ওর জন্যেই তো আমার দুদুটো বছর নষ্ট হোলো। এতদিনে এম,এ,টা আমার হয়ে যেত।

    বললাম, সে কিরে,ও কি তোকে পরীক্ষায় বসতে দেয়নি?

    লতা কেমন হেঁয়ালি করে বললো, ধরো একরকম তাই। একটু থেমে আবার বললো,ও এত জেদী যে বার বার পিল খেতে বলে।

    দু দুবার কিউরেট করাতে হলো।

    লতার বয়ফ্রেন্ডের কথা আর শোনা হয়নি।কেবল পড়া হয়েছিল,তাও আমার য়্যালোভেরা গাছের নীচে দলাপাকানো একটুকরো কাগজে। কদিন ছাদে ওঠা হয়নি। বন্ধুর আমন্ত্রণ পেয়ে গেছিলাম অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে।

    ফিরে এসেইসেই ছাদে ছুটলাম,গাছগুলোর নিশ্চয়ই দফারফা হয়েছে।

    য়্যালোভেরা গাছের তলায় দলাপাকানো কাগজের টুকরোটা পেলাম।

    কাগজের টুকরো ,দলা পাকানো , এখানে থাকার কথা নয়।কৌতুহলী হয়েই ভাঁজ খুলে দেখি লতার চিঠি।লতা চিঠি লিখছে, দাদু নয়,বন্ধু সম্বোধন করে।।খুশী হলাম।পড়তে শুরু করলাম।

    ও লিখেছে,তোমার নম্বরটা অনেক চেষ্টা করেও পেলাম না। তোমার য়্যালোভেরা আর নেওয়া হল না।তুমি আমাকে ছাদে আসতে বলে নিজেই আসতে ভুলে গেলে। আমি আবার মা হতে চলেছি। দেখো, তুমি পুষলে বিড়াল,আর মা ষষ্টি কৃপা করল আমাকে।মনে পড়লো, বিড়ালের কথা শুনে কেন লতা হেসে কুটিপাটি হয়েছিল।

    লতা লিখেছে আগের দুটোকে রাখতে পারিনি। আমার বয়ফ্রেন্ড দায়ীত্ব নিতে অস্বীকার করেছে।

    লতার কথা প্রকাশ্যে আনার পরে,
    লতার পরিণতির জন্যে তো বটেই অনেকেই লতার পরিণতির কথা ভেবে বিচলিত হয়েছেন, অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন,কিন্তু আমরা জানি শহরে কাজ করতে এসে, বা মায়ের কাজের বাড়িতে প্রক্সি দিতে আসা লতারা কেউ হারিয়ে যায়,অন্ধকার অমানিশায়, কেউ বিক্রী হয়ে যায় কোনো ধনীর গুহায়, কেউ বিদেশে পাচার হয়ে যায়।
    কেউ কেউ কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে থাকে, ধ্বসে যাওয়া, পচে যাওয়া,গলে যাওয়া সমাজের নর্দমার ধারে, নামহীন,গোত্রহীন, রক্তহীন,বর্ণ গন্ধহীন সংসারে রুগ্ন শিশু পয়দা করতে করতে অপুষ্টি আর অনাহারে নিঃশেষে জীবন দান করে আঁস্তাকুঁড়ের ধারে। কেউ বা লোকের বাড়িতে কাজ করে উদ্বৃত্ত উচ্ছিষ্ট খেয়ে কোনো মতে জ্বেলে রাখে জীবনের আলো।
    তারপর,তারপর হারিয়ে যায়,অস্থির সমাজের বলি হয়ে, শহরে,শহরতলীর বস্তিতে, গ্রামে গঞ্জে, ধান ক্ষেতে,পাটক্ষেতের ধারে, কাদায় মধ্যে মুখ গুঁজে মেরে শুইয়ে রাখা হয়, ধর্ষণের পরে গলা টিপে অথবা ফাঁস লাগিয়ে মুখ বিকৃত করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, প্রমাণ লোপাট করার জন্য আগুন লাগিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয় । এমন শত সহস্র লতারা সমাজের বুক থেকে স্রেফ হারিয়ে যায়। দু চার দিন লেখালেখি হয়, কেউ কেউ নড়ে চড়ে বসে, তারপর সব থিতিয়ে যায়। সমাজ সংসার দেশ আবার নিরুত্তাপ উদাসীনতায় এগিয়ে চলে। আবার রাত্রি নামে, আবার অন্যায় অত্যাচার ব্যাভিচার ধর্ষণ হয়, কেউ ধরা পড়ে বেশীর ভাগ প্রমাণাভাবে পার পেয়ে যায়, বিচার দীর্ঘায়িত হয়, এই ভাবেই লতাদের ভাগ্য আবর্তিত হয় সমাজের পঙ্কিলতায়।
    লতার চিঠিটা পড়তে পড়তে,বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে খান খান হয়ে ভেঙে পড়ছিল।

    কষ্ট কত গভীর হতে পারে,ভালোবাসা কত হৃদয় বিদারক হতে পারে,আত্মত্যাগ কত মর্মস্পর্শী হতে পারে,একদিকে তার যেমন পরিচয় পাচ্ছিলাম ওর চিঠিটার ছত্রে ছত্রে সেই সঙ্গে পরিচয় পাচ্ছিলাম ওর মানসিক দৃঢ়তার। গঙ্গাদেবীর মতো সন্তান বিসর্জন দিয়ে নয় বরং সেই সন্তানের জন্যে ওর আত্মত্যাগের অঙ্গীকার ভেতরে ভেতরে ওর ইস্পাৎ কঠিন লড়াইয়ের মানসিকতায় ধন্য মনে করেছি নিজেকে এই ভেবে, যে, ক্ষণিকের জন্যে হলেও লতার মত একজন বন্ধু আমি পেয়েছি।
    ও লিখেছে আমার বয়ফ্রেন্ডের নাম কানাই। ওকে ভালোবেসেছিলাম অন্ধের মতো। ওর দাবীকেই প্রশ্রয় দিয়ে ওর সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি।প্রথম যখন আমার শরীরে আর একজনের অস্তিত্ত্ব টের পেলাম, ভয় পেয়েছিলাম প্রচন্ড।
    লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। মনের ব্যথা মনে চাপতে গিয়ে ততদিনে নিজের সর্বনাশ করে ফেলেছি।ছুটে গিয়েছি ওর কাছে। যেন কিছুই হয়নি মুখ করে ও আমায় নিয়ে গেল ডায়মন্ড হারবারের এক ক্লিনিকে। গর্ভ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেলাম।
    তারপর ওর সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।কিন্তু,বড়লোকের বখাটে ছেলে,নানা আছিলায়, লোভ দেখিয়ে,ভয় দেখিয়ে আবারও আমার গর্ভে বীজ পুতে দিলো। আবার একই কায়দায় আমাকে মুক্তও করল।
    কিন্তু বুঝতে পারলাম যে চেষ্টা করেও অজগরের গ্রাস হতে আমি মুক্ত হতে পারবো না। যে বাঘ একবার নারী রক্তের স্বাদ পেয়েছে,সে বারবার হানা দেবেই।আমার প্রতিরোধ যখন তৃতীয় বারে ভয়ঙ্কর হয়েছিল,ও আমার মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।আমাকে বেচে দেবার কথা বলে।

    আমরা শহরে এসে মায় বেটিতে কোনোরকমে অন্নসংস্থান করে থাকি।ও সারাক্ষণ ছায়ার মতো পেছনে লেগে থাকে।আমরা অসহায়ের মতো ওই অজগরের গ্রাসেই পড়ি।
    তবে এই শেষ বার।ওর নামে অবৈধ সহবাসের নালিশ করেছি থানায়।ওর হুমকির কথা জানিয়ে আইনি সাহায্য চেয়েছি।ইতিমধ্যেই ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা পড়েছি বিপদে।আমাদের বস্তি দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।সেই বড়লোকের বেটা কানাই পয়সা ছড়িয়ে, নেশার জিনিস বিলিয়ে বস্তির ছেলেদের হাত করে রেখেছে।এখানে আর থাকতে পারবোনা।
    আমি অজ্ঞাত বাসে চললাম বন্ধু। সেই অজ্ঞাত বাসে আমার সন্তানকে আমি বজ্র দিয়ে গড়ে তুলবো। গাণ্ডীব তুলে দেব ওর হাতে। যারা সর্বনাশ করবে বলে নারীমাংস খুবলে খায়,যারা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই মেরে ফেলতে চায়,যারা ধর্ষকামী,যারা নারীদের নিয়ে ব্যবসা করে,তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মন্ত্রে আমার সন্তানকে আমি দীক্ষিত করবো।
    দাদু বা বন্ধু, তোমাকে যে নামেই আমি ডেকে থাকিনা কেনো আমার মতো দুঃখিনী মেয়েদের কথা তুমি লিখে রেখো। বিদায় বন্ধু। যাবার সময়ে তোমাকে প্রণাম করে যাব ভেবেছিলাম।সেটা আর হোলো না।শুধু দূর থেকে তোমার আশীর্বাদ চাইবো। যাবার বেলায় শুধু এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে যাই,যে এ জীবনে অন্তত একজন মানুষ আমি পেয়েছি,যার চোখে কোনো লোভ দেখিনি।আসি বন্ধু।
    লতার চিঠি শেষ।হৃদয়ের অন্ত:স্থল থেকে উপচে আসা অশ্রুবারি চশমাকে ঝাপসা করে তুলেছে।
    য়্যালোভেরা গাছটার দিকে স্তব্ধ হয়ে ঝাপসা চোখেই তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। মনে মনে বিড় বিড় করলাম, অহল্যা,দৌপদী,কুন্তী, তারা, মন্দোদরী স্তথা। পঞ্চকন্যা স্মরেনিত্যং মহাপাতক নাশনম।ষষ্ঠ কন্যার নাম আমি যোগ করলাম, তার নাম হলো লতা।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- “ছেঁড়া তমসুক”

    ।।  অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার আমার।। 

    ছেঁড়া তমসুক
    – সঞ্জিত মণ্ডল

    মনের গহন কোনে সুক্ষ্ম এক তীক্ষ্ণ অনুভূতি সূচ ফোটায়,
    বুকের মাঝখানে ঠিক মনের কাছটায়।
    দিনরাত কত রক্ত ঝরায়-,
    শুধু কত রক্ত ঝরায়!
    বারে বার মনে পড়ে যায়,
    কখন কোথায় কবে, বিলোল বক্ষে কার
    চন্দনের পত্রলেখা নিমেষের তরে তবু করেছি আবিষ্কার!
    কখন কোথায় কার প্রদীপ্ত চোখের সেই নীলাভ তারায়,
    হারিয়ে গিয়েছি কত মায়াবী সন্ধ্যায়।
    কখন কোথায় কার বঙ্কিম গ্রীবায়
    চুম্বনের ব্যাপ্ত শিহরণে নিশীথ মায়ায়
    হারিয়েছি তবু সেই আমার আমিকে আপন ইচ্ছায়।
    জানিনা কোথায় আছো কার আঙিনায়।
    তথাপি খুঁজেছি কত নিশীথে সন্ধ্যায়
    কখনো পদ্মাপারে, কভু মেঘনায়;
    ধরণীর বুকের ভীতরে, কভু মেঘে, কভু দূরে,
    কভু নীল সাগরের তীরে
    আকাশের ভেসে যাওয়া মেঘে কভু নীল নিলীমায়-
    গাঙচিল সারসের প্রমত্ত ডানায়—-
    কখনো বা দোয়েলের কোকিলের গুপ্ত ঠিকানায়।
    আক্ষেপ থেকে যায়, খুঁজে আমি পাইনি তোমায়।

    জানিনাতো আজ তুমি আছোটা কোথায়!
    হয়তো কোন সুদূর পল্লীবাংলায়,
    নিদাঘ দুপুরে,গৃহস্থের বধু সেজে কলসী কাঁখে জল আনতে যাও।
    হয়তো দুপুর শেষে, সানের ঘাটেতে বসে অতীতের স্মৃতি দিয়ে মেখে
    পা ছাড়িয়ে বসে তুমি কাঁচা আম লবণে জরাও।
    হয়তো উদাস দিনে আপন আঙিনা কোনে শালিকের ঝগড়া শুনে বাঁশের বেড়ার কোনে, আপনার মনে কভু আনমনা হও।
    নয় কোনো কোন ঘুঘু ডাকা উদাসী দুপুরে
    আপনার জিভের উপরে,
    জামের রঙীন দাগ মুছে ফেলে দিতে তুমি আয়না তুলে নাও ।
    জিভ দেখে, চকিতে কী ভেবে তুমি আয়না ফেলে দাও—-।

    এখানে তখনি জেনো এ বুকের কোনে
    আয়নার ভাঙা কাঁচ তীব্র ফুটে যায়।
    এই দূরে,রূপনারাণের তীরে,
    আমার অজান্তে বুকে তীব্র ব্যথা হয়।
    গোধুলীর রাঙা মেঘ হৃদয়ের আনাচে কানাচে নীরবে নিভৃতে কতো রক্ত ঝরায়,
    জানিনাতো তোমারও হৃদয়ে বুঝি আমারই মতোই কোনো একদিন সেথা রক্ত নদী বয়—-।
    মনে হয় তুমি বুঝি ভোলোনি আমায়।
    তাই আজও ব্যথাটা কমে না কিছুতেই;
    ছেঁড়া তমসুক খানা, কবে যেন আরো ছিঁড়ে যায়,
    ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ভাঙা চোরা দিন গুণে একা একা নদী তীরে আজো বসে তব প্রতীক্ষায়
    ছেঁড়া তমসুক খানি নদীজলে ভেসে চলে যায়।

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- করুণা

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    করুণা
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    এ কোনো মনগড়া অলীক কাহিনী নয়,বরং এ হল করুণার জীবন সংগ্রামের এক টুকরো করুণ চালচিত্র।
    করুণাকে চিনতাম সেই প্রথম যৌবনের প্রারম্ভে, যখন বাবা-মা,দাদা-দিদি,ভাই-বোন,ঠাকুমা-পিসীমাদের থেকেও আরো অন্য কাউকে ভাল লাগার অনুভূতিটা আস্তে আস্তে শরীরে একটা শিহরণ তুলছে।একটা নতুন ধরণের লজ্জা মিশ্রিত আবেগ মনটাকে ক্ষণে ক্ষণে দুলিয়ে দিচ্ছে। অনাস্বাদিত ঞ্জান বৃক্ষের ফলের স্বাদ ভক্ষণের ইচ্ছা করছে। একটা নতুন ধরণের শালীনতা বোধের সংগে উচিত অনুচিত এর চাবুকটাও আড়াল থেকে চোখ রাঙাচ্ছে। সেই সেদিনের স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলেজে ঢোকার প্রথম পর্বের প্রথম গোঁফ গজানোর লজ্জা মিশ্রিত বড় হয়ে যাওয়ার দেমাকের দিনে হঠাৎই একদিন করুণাকে সামনা সামনি দেখে চমকে উঠেছিলাম।
    চমকে উঠেছিলাম কেননা আমাদের এই অজ পাড়াগাঁয়ে এমন ডাগর চোখের ফুটফুটে সুন্দরীও আছে! কই আগে তো দেখিনি! নাকি আমারই দেখার কোনো অবসর ছিল না, নিজের ভবিষ্যৎ তৈরী করার তাড়নায়।
    করুণা সেদিন দীঘির পাড়ের সেই ছোট বটতলায় ঢলে পড়া সূর্যের পড়ন্ত বেলায়, নিরালা নির্জনে প্রমত্ত খেলায় অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল আমার সদ্য গজানো গোঁফ ছুঁয়ে দেখার বাসনায়। আমি সেই নিরালা নির্জনে ওর সেই নরম হাতের পেলব ছোঁয়ায় কেমন বিবশ হয়ে গেছিলাম।প্রথম যৌবনের সেই অবুঝ বেলায় ভালো লাগার এক অনাস্বাদিত মূহুর্তে হঠাৎ সম্বিত ফিরেছিল।
    আমাদের এই অজ গাঁয়ের নাম রাঙাবেলিয়া। সেই যে বৈষ্ণব কানন,বংশীবদন, শাসন ছাড়িয়ে কীর্তনখোলা, তারপরে কৃষ্ণমোহন। আর কৃষ্ণমোহনের বুক চিরে যে মেঠো পথটা চলে গেছে দুপাশের ধানক্ষেত চিরে গাছ গাছালীর মধ্য দিয়ে, আকাশ যেখানে মাটিকে ছুঁই ছুঁই করছে, ওটাই রাঙাবেলিয়া। এখানে যেমন ধু ধু ধান ক্ষেত আছে, তেমনি আছে আম-জাম,তেঁতুল-নারকেল, বাবলা- বকুল আর কয়েত বেলের গাছ। আর আছে বেলে- মৌরলা,সরপুঁটি- ট্যাংরা,কই- মাগুর আর রুই- কাতলার অনেক পুকুর।
    একটা ভাঙা শিবমন্দির আর একটা চন্ডীমন্ডপ ও আছে। আমাদের গাঁয়ের লোকের হাতে কাঁচা পয়সা বেশী নেই বটে তবে ঝালে- ঝোলে- অম্বলে আর ক্ষেতের ফসলে খাওয়ার কষ্ট প্রায় কারোরই নেই। সন্ধে বেলায় চণ্ডীমন্ডপে কীর্তনের আসর বসে।বড়রা বলে নদীয়া থেকে নদের চাঁদ নিমাই নাকি পুরাণো গঙ্গা বেয়ে এই পথেই এসেছিলেন নাম মাহাত্ম প্রচারে। তাই এ অঞ্চলের বেশীর ভাগ নাম বৈষ্ণব প্রধান, আর মানুষগুলোও বেশীর ভাগই বৈষ্ণবপ্রাণ।
    গাঁয়ে আমাদের কলেজ নেই, তাই স্কুলের গন্ডী ছাড়িয়েই গ্রাম ছেড়েছি।শহরের হোষ্টেলে থেকে পড়াশোনা তারপর সরকারী চাকরী জুটিয়ে শহরেই বাসা- বাড়িতে থেকে দিব্যি আছি। কচ্চিৎ কদাচিৎ গাঁয়ের বাড়িতে যাই বটে কিন্তু সে অতিথির মতো। গুরুতর প্রয়োজন ছাড়া গ্রামে আর ফেরাই হয় না। বুঝতে পারি গ্রামের সাথে নাড়ীর টানটা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে।
    এমনি এক ক্ষীয়মান টানেও অতি জরুরী প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে রাঙাবেলিয়ায়। অফিস থেকে বেরুতে একটু দেরীই হয়েছে।শীতের বিকেল। কখন যে টুপ করে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়েছে টেরই পাইনি ট্রেনের মধ্যে। কৃষ্ণমোহনে যখন নামলাম তখন রাত আটটা বাজে।চারিদিক ঘুট ঘুট্টি অন্ধকার।কেবল ষ্টেশন মাষ্টারের ঘরে টিম টিম করে একটা ক্ষীণ আলো জ্বলছে। প্রচন্ড জোরে ঝড় উঠেছে। শন শনে হাওয়ার সাথে সাথে শুরু হল মুষল ধারে বৃষ্টি।ষ্টেশনে দু চার জন লোক ছুটোছুটি করে মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করছে।আমিও জবুথবু হয়ে একপাশে সরে দাঁড়িয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছি।
    একটু ওধার থেকেই শুনলাম যেন কার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ।ভয়ের চোটে আমার অজান্তেই গলা থেকে রাম রাম ধ্বনি বেরিয়ে এল।তবুও ভালো করে ঠাহর করার চেষ্টা করলাম।আবছা অন্ধকারে কিছুই প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় না। তার মধ্যেও ছায়া ছায়া কাকে যেন নড়াচড়া করতে দেখলাম। গা ছম ছম করে উঠল। ভয়ের একটা হিমেল স্রোত শিরদাঁড়া কাঁপিয়ে দিল।মরিয়া হয়ে চেঁচিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললাম, ক্কে ওখানে ক্কে। উত্তরের পরিবর্তে ফুঁপিয়ে কান্নাটা আরো প্রবল হল। মনে আমার এটুকু প্রত্যয় দৃঢ হল যে আর যাই হোক অন্তত পক্ষে ভূত- পেত্নী বা কোনো অশরীরী আত্মা নয়।এটা অবধারিত ভাবেই মানুষের বা বলা ভালো কনো মহিলার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ।
    সেই ছেলে বেলা থেকেই কারো কান্না আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারিনা।বুকের ভেতরটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে ওঠে।আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ঝোড়ো হাওয়া আর অকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এগিয়ে গেলাম।
    আবছা অন্ধকারে ষ্টেশনের কোনার দেওয়ালে হেলান দিয়ে মলিন বসনের একটি মেয়ে অঝোরে কাঁদছে।
    আমার জিঞ্জাসার উত্তরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মেয়েটি অতিকষ্টে যা জানাল তা হচ্ছে, কপাল দোষে আজ তাকে বাজারে বোঝা বেচে সংসার চালাতে হচ্ছে।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতেই বলল, কত কষ্টকরে পয়সা জোগাড় করে হাট থেকে মাল গস্ত করেছে। মালগুলো বস্তায় বেঁধে একধারে রেখে আড়তদারকে কড়ায় গন্ডায় পয়সা মিটিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে দেখে বস্তাসুদ্ধু মাল উধাও।চোখের জল মুছতে মুছতে সে আরো বলল,এই কেনা- বেচা,বোঝা- বেচার কাজে নতুন এসেছিগো দাদা,আড়তদারের হিসেব মেটাতে গিয়ে একটু আনমনা হয়েছিলাম এরই মধ্যে আমার এত কষ্টের পয়সায় কেনা মালগুলো কে নিয়ে পালিয়ে গেল! কাল কি করে যে ওদের মুখে দুমুঠো তুলে দেব সেই চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
    মেয়েটি অঝোরে কাঁদতে লাগল। চকিতে অন্ধকারের বুক চিরে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠল, সশব্দে বাজ পড়ল কাছাকাছি কোথাও।আমি চমকে উঠলাম, বিদ্যুতের চকিত আলোয় এ আমি কার মুখ দেখলাম! আমার নবীন বয়সের সেই সুচির বাঞ্ছিতা! এ যে করুণা! কী হয়েছে ওর? অমন ডাগর চোখের সুন্দরী মেয়েকে আজ বাজারে বোঝা বেচে অন্নসংস্থান করতে হচ্ছে!
    এই অন্ধকারে দুর্যোগের রাতে ও আমাকে চিনতে পারেনি।সেই নবীন যৌবনের অবুঝ বয়সেও আমি ওকে যতটা চিনতে পেরেছিলাম তাতে এটুকু আমার বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে এ মেয়ে হাজার দু:খে বুক ফাটলেও মুখ ফুটে কিছু বলবেনা।
    মনটা খারাপ হয়ে গেল- বড্ড বিষণ্ণ বোধ করলাম।সেই নবীন বয়সে সামান্য একটু অনুরাগের ছোঁয়ায় পুলকিত হতে না হতেই গ্রামের সঙ্গে আমার চির বিচ্ছেদ ঘটে যায়। বিচ্ছেদ ঘটে করুণার সঙ্গেও। করুণা হারিয়েই গেছিল, আমার জীবন থেকেই শুধু নয় আমার সমগ্র বিবেক এবং অনুভূতি থেকেও।সেদিনের ওর সেই নরম হাতের পেলব স্পর্শ, আমার মুখের উপর ওর গরম নিশ্বাস, ওর সেই মধুর সান্নিধ্য, আর আমার হাত ক্রমশই অবাধ্য হতেই ওর সেই ছুটে পালিয়ে যাওয়া—- কেমন যেন এক ঝটকায় আমাকে সেই পিছনের দিন গুলতে আছড়ে নিয়ে ফেলল।
    যথা সময়ে করুণার বিয়ে হয়েছিল এক সম্ভ্রান্ত পরিবারেই। স্কুলের গন্ডী ছাড়ানোর ঠিক পরেপরেই।তখনও আমি বেকার, পড়াশোনা শেষ হয়নি, ভবিষ্যতও গড়া হয়নি।করুণার বিয়ের খবর আমি পাইনি।কেউ আমাকে ওর বিয়ের খবর দেবার প্রয়োজন বোধ করেনি।আমার সাথে করুণার সামান্য স্পর্শ দোষ সেদিনের প্রদোষের আধো অন্ধকারে কিছু ঘটে যাওয়ার পূর্ব মূহুর্তেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে খবর কারোর জানার কথা নয়, আমারও বলার কথা নয়।
    কিন্তু করুণা অন্ততপক্ষে বিয়ের আগে মুখ ফুটে সাহস করে বলতেই পারতো। তাছাড়া গ্রামের সঙ্গে আমার যে চির বিচ্ছেদ হতে যাচ্ছে সে খবর আর কেউ না জানুক করুণা জানতই।ও কিছু প্রকাশ করলে আমারও অস্বীকার করার উপায় থাকতোনা।নিতান্তই কাঁচা বয়সের কৌতুহল বশেই ও আমার সদ্য গজানো নরম গোঁফ স্পর্শ করতে চেয়েছিল।কিন্তু আমিতো জানি যে আমি ওর দিকে লোভের হাত বাড়িয়েছিলাম।
    আজ এই দুর্যোগের রাতে করুণাকে কিছুতেই মুখ ফুটে আমার পরিচয় দিতে পারলাম না।কিন্তু ওর অত সম্ভ্রান্ত বংশে বিয়ের পরে কী করে এত বড় দুর্যোগ নেমে আসল ওর জীবনে সেটা জানার ভীষণ ইচ্ছাটাকে জোর করে চুপ করিয়ে রাখলাম।মুখ ফুটে শুধু বলতে পারলাম কত টাকার মাল কিনেছিলে?
    করুণা এখনও ফোঁপাচ্ছে। ওই অবস্থাতেই বলল, তা শ- পাঁচেক টাকার হবে।
    ভাবলাম বলি তুমি এই শ-পাঁচেক টাকা রাখো এই দুর্যোগের রাতে আর কেঁদনা বাড়ি ফিরে চলো।বলতে পারলাম না।করুণাকে যতদূর চিনি আমার অযাচিত দান সে গ্রহণ করবেনা। তাই বললাম,তুমি আমার সঙ্গে যাবে, আমি আড়তদারের সঙ্গে কথা বলবো।আমার মনে হচ্ছে, তুমি যখন মাল রেখে পিছন ফিরে দাম মেটাচ্ছিলে, সে সময়ে কে তোমার মালটা সরিয়ে নিল সেটা আড়তদার নিশ্চয় দেখেছে।
    বৃষ্টিতো কমে গেছে,তুমি যাবে আমার সঙ্গে?
    এখন গেলে আড়তদারের দেখা পাব তাই,করুণা বলল,মাল বেচা কেনা হয়ে গেলে সে ঝাঁপ ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে যায়।
    বললাম, একবার গিয়ে দেখলে কি হয়?
    আমার কথায় এমন কিছু ছিল যে করুণা রাজী হয়ে গেল।অথবা এমন হতে পারে যে আমি যেমনটা ভাবছি যে আড়তদারই তার লোককে ঈশারা করে মালটা সরিয়ে দিয়েছে করুণাও সেই একই কথা ভেবে আমার সঙ্গী হতে রাজী হল।
    আড়তদারের কাছে যাওয়ার পথে আমার জিঞ্জাসার উত্তরে করুণা বলল তার স্বামীর অদ্ভূত ব্যামোর কথা। সে খায় দায় আর দিনরাত্তির শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়। ঘুম ভাঙিয়ে কাজের কথা বলতে গেলেই তেড়ে মারতে আসে।কাঁপতে কাঁপতে দড়াম করে পড়ে যায়।গোঁ গোঁ করতে থাকে। ধরা ধরি করে শুইয়ে দিলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ডাক্তার রোগটার নাম দিয়েছে স্কিৎজোফ্রেনিয়া।
    চমকে উঠলাম।করুণা লেখা পড়া জানা মেয়ে।ডাক্তারের বলে দেওয়া অসুখটার নাম সঠিক উচ্চারণে বলেছে।করুণা বলে চলেছে এখন শুধু ঘুম থেকে ডেকে তুলে খাইয়ে দিতে হয় আর ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হয়।কপাল আমার এতো খারাপ যে একমাত্র ছেলেটাও নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেনা।পাঁচ বছর বয়েস হল তাকে কোলে করে করে এখানে ওখানে নিয়ে যেতে হয়।ডাক্তার বলেছে পোলিও। ওর কডলিভার অয়েল আর ক্যালসিয়াম দরকার।
    ষ্টেশন থেকে বেশী দূরে নয়।এখানে হাট-বাজার-আড়ত সব একসঙ্গে একাকার।পরিবহনের সুবিধার জন্যে এখানে এভাবেই গড়ে ওঠে কেনাবেচার জায়গা।দুর্যোগ থেমে গেছে।আড়ত এখনও বন্ধ হয়নি। সেই আড়তদার সেখানেই বসে আছে। আরো অবাক কান্ড করুণার গস্ত করা মাল সমেত পুরো বস্তাটাই রয়েছে আড়তদারের সামনে।
    করুণা দেখামাত্রই চিনতে পেরে চেঁচিয়ে উঠে বলল, এইতো আমার মাল।আড়তদারকে ডেকে বলল, কিগো দাদা, আমার মালের বস্তা কোৎথেকে এল?
    আড়তদার আমতা আমতা করছে।একলা মেয়েমানুষ যে এই ঝড় বাদলের রাতে হারানো মালের খোঁজে আবার ফিরে আসতে পারে তা সে ভাবতেই পারেনি।
    করুণার সঙ্গে আমাকে দেখে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল, যে নিয়েছিল তার বোধহয় হজম হয়নি, তাই ফেলে রেখে পালিয়েছে।
    আমি থাকতেনা পেরে বললাম, তোমারই সামনে কেউ ওর মালটা সরিয়ে নিয়ে গেল আর ও চলে গেলে মালটা তোমার কাছেই ফেরৎ আনল, সে তোমার চেনা লোক নিশ্চয়ই? তেমনই দাঁত বের করে আড়তদার বলল,আমি চিনতে পারলে তার পিঠের চামড়া ছাড়িয়ে নিতাম না।
    যা বোঝার আমি বুঝে গেলাম।করুণাও বোধকরি বুঝতে পারল যে আড়তদারই যোগসাযোগ করে তাকে আতান্তরে ফেলেছিল।
    আমি করুণার দিকে ফিরে বললাম,এত মাল একা নিয়ে যাবে কি করে?
    করুণা আমার দিকে না ফিরে বস্তাটা সাইজ করতে করতে বলল, আপনি একটু দাঁড়ান, আমি একটা ভ্যান ডেকে আনছি।
    করুণা একটা ভ্যানরিক্সা ডেকে মালগুলো ভ্যানে তোলাল, তারপর সেই ভ্যানে চড়েই অন্ধকার গ্রামের পথে ছায়ার মতোই মিলিয়ে গেল।
    আমার মনে হলো, আজো যেন করুণা সেই সেদিনের মতোই অন্ধকারে ছুটে পালিয়ে গেল।অবাক হলাম,একবারের জন্যেও করুণা আমার নাম বা পরিচয় জানতে চায়নি। আমি চিনলেও করুণা কি আমাকে চিনতে পারেনি। নাকি ও আমাকে চিনতে চায়নি! তবে কি করুণা আমাকে করুণা করেই তাড়াতাড়ি অন্ধকারের পথে হারিয়ে গেল! ঠিক সেই সেদিনের মতো।

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- সুরভী

    অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    সুরভী
    – সঞ্জিত মণ্ডল

    সন্দীপের অফিসে কদিন থেকে খুবই ধকল যাচ্ছে। একটা মেধাবী মেয়ে নাম মানসী, তার রহস্যজনক ভাবে লোপাট হওয়ার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সন্দীপ সি আই ডি অফিসার, বিভিন্ন ধরণের তদন্তের কাজে দিন রাত ব্যস্ত থাকতে হয়। কখনো কখনো দিন রাত অফিসেই কেটে যায়, বাড়িতে আসার অবসর হয় না। সেদিন ও তাই হয়েছে, রাত এগারোটা বেজে গেলে সন্দীপ ভাবলো তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী সোনালী কে একটা ফোন করে নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানায় আর দু চারটে সোহাগের বাণী বলে তাকে খানিকটা সান্ত্বনা দেয়।
    সেই মতে সন্দীপ ফোন করে সোনালী কে, বলে, তোমার সুরভী নিয়ে একটু যে ঘুমাবো তার উপায় নেই। সোহাগের ছলে বলা কথাগুলো শোনা মাত্র সোনালী ঝাঁঝিয়ে ওঠে। অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে কর্কশ গলায় বলে, দেখো, তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আমার সামনে তুমি সুরভীর নাম মুখে আনবে না। সুরভী তোমার যত পেয়ারের লোক হোক না কেন, তাকে আমি চিনিনা, চিনবো না, চিনতে চাই না। সব পুরুষ মানুষ গুলো এক সমান। বউ যত সুন্দরী হোক না কেন তাকে মনে ধরে না, অন্য মাগী একটু ফুটফুটে হলেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে বাধে না। একজনের কাছে মন বাঁধা দিয়ে বিয়ে মারাতে গেছিলে কেন লজ্জা করে না? তাইতো বলি, আমার দিকে নজর নেই, খালি বাজে অজুহাত দিয়ে বাইরে বাইরে রাত কাটানো, জানোয়ার কোথাকার।
    সন্দীপ নির্বাক বিস্ময়ে স্ত্রীর কথা গুলো শুনতে শুনতে ভাবতে লাগলো সে ঠিক কি বলেছে যার জন্যে সোনালী এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপরে। সে তো শুধু বলেছিল, তোমার সুরভী নিয়ে একটু যে ঘুমাবো তার উপায় নেই। সুরভী নাম শুনেই সোনালী এমন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো কেন। সে নিজেও তো সুরভী নামে কাউকে চেনে না। কে এই সুরভী? কিন্তু সুরভীর চিন্তা মন থেকে জোর করে সরিয়ে দিতে হয়, কেননা যে মেধাবী মেয়েটি নিখোঁজ হয়েছে তার নাম মানসী। এফ আই আরের ফাইলটা গভীর মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকে। পড়তে পড়তে কয়েকটা শব্দের নীচে লাল কালির দাগ দেয়। একটা কথা বিদ্যুৎ চমকের মতো মাথায় খেলে যায়। দুজন সহকারীকে ডেকে নেয়, রাত তখন দুটো। নিজে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে তাদেরও প্রস্তুত হয়ে নিতে বলে, ড্রাইভারকে গাড়ি রেডি রাখতে বলে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওরা বেরিয়ে পড়ে কৃষ্ণ নগরের দিকে।
    ভোরের আলো ফোটার আগেই ওরা কোতোয়ালি থানায় পৌঁছে যায়, ডিউটি অফিসারকে অতিক্রম করেই ওরা ওসির ঘরে ঢুকে পড়ে। ওসি অরুণাভকে নিজের পরিচয় পত্র দেখায়। ওসি গুড মর্নিং স্যার বলে স্যালুট জানিয়ে সুদীপ্ত কে বসতে অনুরোধ করে। সুদীপ্ত সংক্ষেপে কি করতে হবে কেন করতে হবে সেটা বলে, আটজন আর্মড ফোর্স নিয়ে তাকে সঙ্গে সঙ্গে একটা বিশেষ ঠিকানায় রেড করতে বলে।
    দুটো গাড়িতে ওরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যে বাড়িতে হানা দিল সেটা সুদীপ্তর শ্বশুর বাড়ি। সুদীপ্ত তিন চার জন বন্দুক ধারি কে নিয়ে বাড়ির চারিদিকে নজর রাখে, অরুণাভ কে বলে রাখে বাড়িতে মহিলা বা পুরুষ যেই থাকুক না কেন, তাকেই যেন গাড়িতে তোলে। এটা যে তার নিজের শ্বশুর বাড়ি সেকথা ঘুণাক্ষরেও কাউকেই জানায় না।
    ওসি অরুণাভ ভিতরে ঢোকার পর আধঘন্টা কেটেছে, পর পর দুবার গুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। সুদীপ্তর উৎকন্ঠা যখন চরম সীমানায় তখনই দুটো লোককে হিড়হিড় করে টানতে টানতে গাড়িতে তোলে।
    সুদীপ্ত খুব কঠিন গলায় বলে, তুমি নিজে বলবে অথবা থার্ড ডিগ্রি চাইছ। সুদীপ্তর মেজশালা বাদল চোখ লাল করে বলে, ও তুমি ই তাহলে আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছ। তাই বলি, এই না হলে জামাই। সুদীপ্ত অরুণাভ কে ঈশারা করা মাত্রই অরুণাভর কনুই টা বাদলের মোক্ষম জায়গায় আঘাত করে, বাদল রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যেতে রাজি হয়ে যায়। বলে, বেথুয়া ডহরির মৃগদাবর দিকে যেতে হবে। অরুণাভ কঠোর গলায় বলে, বেচাল দেখলে ওইখানে তোকে পুঁতে দেবো। গাড়ি ছুটতে থাকে বাংলাদেশ বর্ডার বরাবর। এক সময় ওরা বেথুয়া ডহরির বিভূতি ভূষণ অভয়ারণ্যে পৌঁছে যায়। ঢুকেই ডান হাতে একটা রাস্তা সরাসরি ইছামতীর দিকে এগিয়ে গেছে, ঘাটের পাশেই একটা কাঠের গুদাম। বাইরে থেকে চাবি বন্ধ করা আছে। দুটো লোক বাইরে বসে খৈনি বানাচ্ছিল, পুলিশ দেখেই দৌড়ে নদীর ঘাটের দিকে পালানোর চেষ্টা করলো। বন্দুক ধারি সেপাইরা হল্ট হল্ট করতে করতে পিছনে ছুটে গিয়ে বললো, রুক যাও, নেহিতো গোলি মার দুঙ্গা। লোক দুটো তোয়াক্কা না করে নদীতে ঝাঁপ দিল। নদীতে প্রচুর কচুরিপানার মধ্যে আত্মগোপন করার চেষ্টা করলো। একটু দূরে কয়েক জন মাঝি নৌকা নিয়ে মাছ ধরছিল, পুরো ব্যাপার টা দেখে আর পুলিশের কথা শুনে লোক দুটো কে বললো, ভালোয় ভালোয় উঠে এসো, নাহলে লগির খোঁচায় এখানেই তলিয়ে যাবে। লোক দুটো ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে নৌকায় উঠতেই হঠাৎ ভুটভুটি নৌকা ইঞ্জিন চালু করে লোক দুটোকে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে গেলো। এপার থেকে গুলি চালিয়ে ও ওদের নাগাল পাওয়া গেল না।
    এদিকে তালা বন্ধ দরজা ভেঙ্গে মুখ বাঁধা অবস্থায় মানসীকে পাওয়া গেলো সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন অবস্থায়। চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে কোনোমতে জ্ঞান ফিরিয়ে এনে ওরা কলকাতার দিকে রওনা দেয়। মানসীকে অত্যন্ত কড়া পাহারায় হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েই পার্ক স্ট্রীটে নিজের কোয়ার্টারে মহিলা আর্মড ফোর্স নিয়ে হাজির হয়। তার স্ত্রী সোনালী দরজা খোলা মাত্র সে ইশারা করে, সোনালী এ্যরেষ্ট হয়ে যায়। সুদীপ্ত অফিসে ফিরে অবসন্ন হয়ে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দেয়।
    মূহুর্তে মানসী উদ্ধারের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এও রটে যায় সি আই ডি অফিসার সুদীপ্তর নিকট আত্মীয় এমনকি তার স্ত্রী ও এ্যরেষ্ট হয়েছে। শুধু সাংবাদিকরা নয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও জানতে চায় সুদীপ্ত এই রহস্য উন্মোচন করলো কিভাবে।
    সুদীপ্ত বললো সুরভী শব্দটা এই রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করেছে । আর সাহায্য করেছে আমার নিজের বিবাহিত স্ত্রী। সে যদি সুরভী এই সামান্য কথায় সাংঘাতিক রেগে গালিগালাজ না করতো তবে আমার পক্ষে এ রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হতো না। ওর কাছে বিনাকারণে অসহ্য গালি খেয়ে মানসীর ফাইল ঘাঁটতে শুরু করি, ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখি মানসীর ডাক নাম সুরভী। ব্যাপার টা আমার কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। আমার স্ত্রী ই তার সঙ্গে পুরানো বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে মানসীকে কৃষ্ণ নগরে দাদাদের হাতে তুলে দেয়, দাদারা তাদের ব্যবসায় মন্দার কারনে মানসীকে বাংলাদেশে বিক্রি করে দেবার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলে।
    একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করে, কিন্তু কেন আপনার স্ত্রী তার নিজের বন্ধুর এমন সর্বনাশ করতে উদ্যত হলো?
    সুদীপ্ত বলে আদিম ঈর্ষা! আমার ফুলশয্যার রাতে মানসী নাকি একটু বেশী উৎসাহ দেখিয়ে ফেলেছিল, সেটা আমার স্ত্রীর ভালো লাগেনি। তার জন্যেই এই চরম পদক্ষেপ। আমি বড়ো ক্লান্ত, এবার আমাকে ক্ষমা করুন, আপনারা আমাকে একটু একা থাকতে দিন।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- মেয়েদের মন

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

     

    মেয়েদের মন
    – সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    মেয়েদের কতো জ্বালা আছে সেটা জানো-
    ঘর- সংসার সামলানো বড়ো দায়,
    স্বামী ছেলে মেয়ে শাশুড়ি ননদী আছে-
    আয়ান ঘোষরা কম জ্বালাতুনে নয়।
    সংসার তাকে টেনে রাখে চারিদিকে –
    ঘুমাতে গেলেও বাঁশি যেন কে বাজায়,
    নিদ্রা দেবীও মোটেই সদয় নয়-
    বাঁশি কানে এলে কি করে ঘুমাবে বলো।

    মনের খোরাক তারও তো একটু চাই-
    পুরানো স্মৃতিরা হারানো গল্প খোঁজে,
    ইস্কুল আর কলেজের যত স্মৃতি –
    গোলাপ ফুলের সৌরভ দিয়ে যায়।
    ভালোবাসি কেউ কানে কানে বলেছিলো-
    সে মধুর স্মৃতি আজও ব্যথা হয়ে ঝরে,
    ভরা সংসারে স্বামী ও স্বজন আছে-
    রিণরিণে ব্যথা হৃদয়ে হুল ফোটায়।

    এখনও কি আসে মনের দুয়ারে কেউ –
    কপাট বন্ধ করে দেয় কতো নারী,
    তবু যদি কেউ এসে কড়া নাড়া দেয়-
    বসন্ত বায়ে কেঁপে যায় তার হৃদয়।
    লজ্জা ও প্রেম জড়াজড়ি করে থাকে-
    ক্লান্ত মনেতে ঝলক দখিনা বায়,
    ইচ্ছেগুলো কে ধরে কে রাখতে পারে-
    এমনি করেই প্রেম ভালোবাসা হয়।

    বিকেলে ভোরের ফুল ফুটে গেলে পরে-
    অনিশ্চয়তা পদে পদে বাধা দেয়,
    আশ্রয় টা যে পাখির বাসার মতো –
    বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়।
    সমাজের ভয়, ভবিষ্যতের ও ভয়-
    কুলটা বলবে শ্রী রাধাকে বলে কেহ,
    কৃষ্ণ কালা যে কদম তলায় থাকে-
    যখন তখন বাঁশি টা বাজায় প্রিয়।।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- রুখে দাঁড়া

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা।। 

     

    রুখে দাঁড়া
    – সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    সঞ্জিতের কবিতা রুখে দাঁড়া
    ওরে মেয়ে রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর,
    দশহাতে নয় দু-হাত দিয়েই অসুর নিধন কর।
    তোর চোখের ওই অগ্নিবাণে ভস্ম কর তুই ধর্ষক জনে,
    পরমা শক্তি অশেষ গুণে দুর্গামূর্তি ধর।
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

    দেখবে যারা কুদৃষ্টিতে চোখদুটো তার গালতে হবে,
    মা,বোন, কন্যা, প্রেমিকারও শক্তি ভয়ংকর,
    সংহার কর শক্তি দিয়েই রুদ্রমূর্তি ধর,
    ও মেয়ে তুই অমানিশায় কালীমূর্তি ধর।
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

    পথে ঘাটে বনের ধারে পুকুরে নয় খালের পারে,
    পচাগলা দেহ ফেলে ওই অসুরের দল।
    পাটের ক্ষেতে আখের ক্ষেতে চুপিসাড়ে জাপটে ধরে,
    এবার হাতে অস্ত্র ধরে চণ্ডীমূর্তি ধর।
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

    চামুণ্ডার ওই ভীষণ তেজে অসুর মুণ্ড পড়বে খসে,
    অগ্নিবাণে ঘুচাস মেয়ে সব অসুরের ছল।
    জানিস নাকি অসুর যারা মায়ে খেদানো ছেলে তারা,
    ছল করে তুই ঘোল খাওয়াবি অমৃত গরল।
    ওরে মেয়ে এবারে তুই লক্ষ্মীমূর্তি ধর।
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

    জানিস নাকি অসুর যারা কোনো শিক্ষা পায়নি তারা,
    সব কাজে তাই অসভ্যেরা করে অত্যাচার।
    মা বোনেদের দেখলে পরে ওদের জিভে লালা ঝরে,
    ধর্ষণ খুন করলে এবার ওদেরই বধ কর।
    ও মেয়ে তুই শিক্ষা দিতে বিদ্যামূর্তি ধর।
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

    দিনের শেষে রোদের তাপে কর্মক্লান্ত কাজের চাপে,
    সংসারে তুই দশভুজা সংহার মূর্তি ধর।
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া অসুর যারা ছাড়ুক পাড়া,
    ওরে মেয়ে এবারে তুই অসুর দলন কর,
    ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

  • কবিতা

    কবিতা- সোনার হরিণ

    সোনার হরিণ
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    সোনার হরিণ চাই যে আমি চাই যে ধরে নিতে,
    খাই বা না খাই ছুটে বেড়াই ধরতে পারি না যে।
    যে যা বলিস, যা খুশি তাই,শুনতে চাই না যে,
    সীতার পতি রাম জানে না সোনার হরিণ মিছে!
    তবুও ছোটে তার পিছনে প্রিয়ার সে আবদারে,
    হোঁচট খেয়ে ভাই লক্ষ্মণ পাহারা দেয় তারে!
    উদ্দেশ্যটা নয়তো ভালো দাদার অবর্তমানে,
    ত্রেতা যুগেও এমন কথা ভাবা যায় না মনে!!
    কানটা কালা হয়নি তবু বৌদির কথা শুনে,
    গুণে গুণে গণ্ডি কাটে বৌদিরই কল্যাণে।
    নতুন বউয়ের মেজাজ ভারী হোক না বনবাসী,
    সন্দেহটা যায় না মনে দারুণ অবিশ্বাসী।
    দীন ভিখারি সাধু এলো ফিরিয়ে দেবে তারে?-
    লক ডাউনের গণ্ডি কাটা কি করে বিচারে?
    কে কার কথা শোনে বন্ধু, কে করেছে মানা,
    সেই ভুলটার প্রায়শ্চিত্ত সবার আছে জানা।
    আগুনে ঢুকে তাকে যেমন পরীক্ষা দিতে হয়,
    পতির পতি এক ভগবান আবার বনে পাঠায়!!
    অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতে বনে পাঠায় স্বামী!
    রাম রাজত্ব বলে লোকে অবাক হয়ে মানি!
    শাস্ত্র চর্চার অপরাধে শিরোচ্ছেদটা হয়
    বিনা অপরাধে বালির গলা কাটা যায়!!
    ত্রেতা যুগ না ঘোর কলিকাল অবাক হয়ে মানি,
    সোনার হরিণ লোভের ফাঁদ সেটা সবাই জানি।
    তবুও লোকে আজও ছোটে সোনার হরিণ চাই,
    পাই বা না পাই ছুটে বেড়াই ন্যায় অন্যায় নাই।
    গণ্ডি কাটা চলছে এখন ত্রেতা যুগের রেশ,
    ভাগ্যহীনের কলিকালটা লক ডাউনেই শেষ।।

You cannot copy content of this page