-
কবিতা- মাঝারী মাপের
মাঝারী মাপের
– অযান্ত্রিকঅবিবেচক খোরপোষে রেখেছি নিজেকে, সমান্তরাল শ্রেণী,
বাজারের ব্যাগেই প্রতিনিয়ত টাকার দামের হেরফের।
হলদেটে কলারের দাগ, ক্লান্তি, যে বালিশ পেরোতে পারেনি,
সেই কলেজের দরজায় ফেলে এসেছে যে ছবি, সেটা চে’র।বৃষ্টিতে ফুটো নাগরিক ছাতা, নিরোধক ছবিতে অবিকল,
ভিজে চুপসানো জুতো, ভেসে যাওয়া বলতে পারে নাবিকই।
ঘরে আয়নায় নিজের মুখ চিনি শুধু, বাকি সব চরিত্রই খল।
আমি মানে মাঝারি মাপের মানুষ, বেঁচে আছি জন্মাতে শিখিনি।বাতাসের উল্টো দিকে নিবাস আফিমের বাংলা মানে ধর্ম,
ক্যাডার বলতে বড় কমে আসা আলো, কান্নার অন্য নাম ঘর্ম।
রেল ব্রীজের কিছুটা নীচেই গতি, গন্তব্যের দাম দিলেই পৌঁছানো,
আমি মানে মাঝারী মাপের মানুষ, তুমি মানে বিদ্যজনই জানো।নির্বিবাদী শোষণে শোষিত শোণিত, ছাল বাকলে ফর্সা হওয়ার লোভ
পিছনে ফেলে সাধারন গলিঘুঁজি, মিছিল শেষ উগরে ফেলি ক্ষোভ।
হাত বাড়িয়েও ছুঁইনা কোনো কোমর, ভদ্রতা ভয়ে কাঁপেই সম্মানে,
আমি মানে মাঝারী মাপের মানুষ, বাড়ি ফেরত টিফিন বাক্সও জানে। -
কবিতা- পুরোনো নম্বর
পুরোনো নম্বর
-অযান্ত্রিকআপনি যে নম্বর খুঁজছেন, তার কোনো অস্তিত্ব নেই,
দুরহ অমোঘ শব্দের সেতুর ওপারে, আসে না আজকে কেউ।
দায়ের ভেজা পালক ফেলে, যোগাযোগ বদলে ফেলেছে সেই,
যার দীর্ঘ না কথার সাগরে ওপারে শুস্ক বালি চর,
সবুজ বোতাম তুলেছে না ঢেউ।তবুও ঈশান কোণে পরিচিত মেঘে উড়ে যায়, সন্ধ্যা সারস,
কখনো সাড়া আসে অপরিচিত স্বর বলে ওঠে রং নাম্বার,
মাঝে মাঝে রিং হয়ে হয়ে ফিরে আসে নীরবতা
বন্ধু না জানিয়ে বদলে ফেলেছে বন্দর,জাহাজি ঠিকানা।মাঝে মাঝে রুমাল নেড়ে কেউ সাড়া দেয় পরিচিত ডাকে,
কুয়াশার টুকরোয় দ্বন্দ্ব পার করে কথারা, পার করে মুহূর্ত,
সেতারের , তারে ছুঁয়ে গেলে শব্দ আঙুল ,মুখরিত হয়,
“আপনি যাকে খুঁজছেন আমি সে নই”
বোঝা হয় না,সম্পর্কের কোনো নম্বর হয় কিনা
অথবা নতুন নম্বরের সাথে সেই সম্পর্কটা,
ফিরে পাওয়া যাবে কি? -
কবিতা- সান্তনা পুরস্কার
সান্তনা পুরস্কার
-অযান্ত্রিক
যে দেখেছে হাজার শবের সারি,
বুক ফাঁটা কান্নার রোল,
টাটকা বিচ্ছেদে তার আর কিছু যায় আসে না ,নিলোফার।
মৃতের শিয়রে থমথমে মুখ,
পাল হীন নৌকার মতো দিশেহারা দৃষ্টি নিয়ে,
এরা বিশ্বাস করে না কোনো দিন,মৃত্যুই সত্যি
এদের কে যদি বলো, প্রতিদিন ২৫০টা মৃত্যু হয়,
অথচ সদ্যোজাত কেঁদে ওঠে মাত্র ১০৫
এরা কোনো জবাব দেবে না।মানুষ মুঠো করে ফেলে মাটি ,কফিনে, কবরের বুকে,
লালচে দূরের কোনো গ্রামে তখন সূর্যের ঘোর অসুখ,
গুনীনের চাল পড়া ,কলা পড়ায় , বাণে তিতিবিরক্ত প্রাণ।
অথচ নির্দ্বিধায় ছড়িয়ে যায় খই,একাত্ম শবানুগামী,
তাদের ,তাদেরকেই বোঝাও জন্ম মৃত্যুর হার,
ওরাই বুঝবে ,ওদের সান্তনা শুধু একটাই,
কোথাও তো গোনা হবে তাদের মাথা ,
কোথাও তো ওদের দিয়েই হবে পরিসংখ্যান। -
কবিতা- শুধু শব্দেরা
শুধু শব্দেরা
-অযান্ত্রিক
তুমি ডাকছো আমায় অথচ আমি শুনতে পাচ্ছি না,
আমি ডাকছি তোমায় কিন্তু তুমি শুনতে পাচ্ছোনা।
শুধু শব্দেরা, শব্দের মতো ভালোবাসা শুনে যাচ্ছে।তুমি আমাকে কবিতা শোনাও,আমি শুনছি না,
আমি তোমাকে রক্তপাত দেখাই, তুমি দেখছো না।
অথচ শব্দেরা,শব্দেরই তালে তালে নেচে যাচ্ছে।তুমি নাম কেটে দাও যেখানে শুধু কবিতা পড়ে লোক,
আমি উদ্বোধনের আড়াল থেকে তুলে আনি শব্দ শাবক।
অথচ শব্দেরা,শব্দেরই কানে বলে আছে অসমাপ্ত কাজ,তুমি হাতে হাত রাখো বলে যাও ,তুমিও শব্দ কাঙাল,
আমি ভেজা রুমাল তুলে দেখাই শব্দ রক্তে ভিজে লাল।
শুধু কলমের দায়বদ্ধতা কথা বলে যাচ্ছে একলাই আজ। -
কবিতা- কুমারী মা
কুমারী মা
-অযান্ত্রিক
আমি তখন তদারকিতে ,আমি তখন সবুজ,
নীল রঙের ওই পাহাড় থেকে ঝর্ণা ধারায় বাঁধ।
মেঘের দেশের ও মেয়ে তুই ,কেন যে দিলি ছুঁয়ে,
কেন যে তুই মরবি বলে, খাদে বাড়ালি হাত।নিবাস জানি পাদ্রী পাড়ায়, ঝর্না ডাক নামে,
আসতে যেতে পরিচয় হয়,বাঁধ গড়ার ওই গ্রামে।
এক বিকালে হঠাৎ কোনো ঝড়ের নির্দেশে,
আঁধার মুখে উড়তে চাইলি খাদের ধারে এসে।পিছলে গেলে মেয়েবেলা ওই, নষ্ট হয়ে যায়,
ভালোবাসার সাক্ষী যে আজ প্রকাশ পেতে চায়।
হাত ছেড়েছে ওপার মানুষ,মানতে গেলে কস্ট,
প্রেমের নামে ঠকে গিয়ে তুই করবি জীবন নষ্ট।আমি তখন তদারকিতে,আমি তখন সবুজ,
নারাজ তোকে মরতে দিতে ,এক্কে বারে অবুঝ।
জাপ্টে ধরে পথ কেটেছি ,আটকে ধরে নদী,
রাখবো তোকে নিজের কাছে,হাতটা ধরিস যদি।কি যায় আসে,করলে শুরু আবার প্রথম থেকে,
সহজ সরল পথটা নাহয় একটু গেল বেঁকে।
জন্ম দিবি আকশ নাহয়,জন্ম দিবি মেঘ,
পাহাড় বুকেই ঝর্ণা নামে একটু দেখে শেখ।আমি নাহয় পিতা হলাম ,রক্তে না হোক পালক,
মুখ ঢাকা ওই অন্ধকারে হলাম নাহয় আলোক।
আমি নাহয় পাহাড় হলাম তুই হলি ঝর্ণা,
মা যে বড় পবিত্র রে, মেরীও কুমারী মা। -
কবিতা- গরিব সিরাজ,নিঃস্ব বেগম
গরিব সিরাজ,নিঃস্ব বেগম
-অযান্ত্রিককে প্রথম দেখছিলো, আমি ,আমি দু’জনেই বলে উঠলাম একযোগে,
কবে? যতদূর মনে পড়ে, ছেদি বামনির ছাগলটা যবে বিয়োল মরা ছানা।
আর তেড়ে এলো বৃষ্টি,রেল বাঁধে ভরে উঠলো ভেড়া ছাগল গরু আর লোকে।
মনে পড়ে না?শুধু জল আর জল চারিদিক ভরা কোনদিকে পাইনা কো তল,
তুলে ধরে চার হাত ছিনে নিলাম চিঁড়ে গুড় আর কিছু অন্নভোগ,
পেটে নিয়ে মন্ত্রী চোখ দেখে গেল রাষ্ট্রীয় বিমানের দল
মনে পড়ে না?প্রহরের পর গুনে নিয়ে ভেজা হায় আর ফুলে ওঠা চেনা শবদেহে,
বুঝিনি কে প্রথম ঠোঁটের পরে রেখে ঠোঁট গড়েছিল অবরোধ
ওপাড়ার বুড়ির সাথে হয় গেল গাঁট ছড়া এপাড়ার বাবুর সস্নেহে।
মনে পড়ে না?আর সেই থেকে বৃষ্টি পড়লেই বুকে, ছাতের পরে শব্দে ঝমাঝম,
স্বচ্ছ জলের সুর বলে দেয়, আমি তোর সিরাজ,তুই আমার বেগম। -
কবিতা- ছাগল ছানা এবং ঈশ্বর
ছাগল ছানা এবং ঈশ্বর
-অযান্ত্রিকসেদিন যখন ওপাড়ার হাসিমুখ মেঘ কালো করে ছুটে এসে,
এপাড়ার বংশী মুদির দোকানের সামনে মারলো বোমা,
কানাই জমাদারের ছেলে নাকি বিন্তি পিসির মেয়েকে নিয়ে
শুঁড়ে পাড়ার পিছনের রাস্তায় ফষ্টিনষ্টি করছিলো।
বৃষ্টির মতো পড়ছিলো ইঁট বোতল কেরোসিন আগুন,
তখন সে ঘুমাচ্ছিলো, নিশ্চিন্তে মাটির বিছানায়
আমার ছোট্টো নাদুস নুদুস ঈশ্বর।
তারপর, টহল পুলিশ, র্যাফ, ভারী গাড়ি, বন্দুক জলপাই পোশাক
টলমল পায়ে রাস্তায় উঠে এসেছিলো আমার তিন বছরের ঈশ্বর,
বন্দুক হাতে কাকুটার দিকে তাকিয়ে ছুঁড়ে দিয়েছিল দুই দাঁতের হাসি,
সে মানুষের পাড়ার মানুষের ভয় ভাঙাতে আসেনি,
সে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আসেনি।
সে এসেছিলো শুধু তার ছোট্টো ছাগল ছানাটার জন্য,
আমার ছোট্টো নাদুস নুদুস ঈশ্বর।
যে তার ছোট্টো ছাগল ছানা টাকে বুকে নিয়ে, বলেছিলো,
এদ্দম দুত্তুমী কয়ে না, কাকাই রা বকবে,
সেদিন বুঝেছিলাম, ভালোবাসা শুধু এরাই বোঝে,
আমার ছোট্টো নাদুস নুদুস ঈশ্বর,আর ছোট্ট ছাগল ছানা। -
কবিতা -বাড়িটার মতো
বাড়িটার মতো
-অযান্ত্রিকঅনেক গুলো অপমৃত্যু হারিয়ে যায় ইতিহাসে,
অনেক গুলো ঠিকানা,
গুমসেনি হাওয়ায় শুধু দাবী মেনে নেয়া হলে,
বাড়ি ফিরে যায় সময়।
ভাবনার বয়স বাড়ে, সবুজ ঘাস হলুদ হয়ে যায়,
বাড়িটা শুধু দেখে,
বারান্দায় স্মৃতির পায়ের ছাপ,কোনো ভাইয়ের মতো ছোটো,
কোনটা ,দিদার মতো ভালো,
মায়ের মতো নরম, দিদির মতো প্রাণ খোলা।
কোষ প্রতি নিউক্লিয়াস বরাদ্দ করে রাখে,
যতটা আরাম জল,
চিকচিক করে ওঠে জাফরী পেরোনো,
ভুলোমনা রোদ্দুর,
জানলা খুলতে গেলে শব্দ হয়,
যেন খোকা এলি? ডাক,
সিঁড়িতে ধুলোর চাদর গায়ে ঘুমায় অস্তিত্ব,
তোলা যায় না হাজার ডেকেও।
দেয়ালে দেয়ালে পরজীবী গ্রন্থনা,
ছাদের পরিধীতে ক্লান্তি সাময়িক,
চুলের পাকের সাথে বুকের কোণে ওড়ে পায়রা,
পুরোনো বাড়ি,
পিছন পিছন আসতে আসতে মানুষেরই ছায়া,
হয়ে যায় ঘর্ষণ জনিত তাপে দগ্ধ ,প্রাবন্ধিক,
সাদা মনের কাগজে, একটা অদৃশ্য কাঁটা জানায়,
সময় চলে যাচ্ছে,
টিক টিক টিক, টিক টিক টিক। -
কবিতা- নিশিদিন শেষ
নিশিদিন শেষ
-অযান্ত্রিক
বুকের উপর ভাসছিল মেঘ,পাখি,
মাথার উপরে যাপনের কিছু তারা।
আমার চলা সাঙ্গ হলো যেই,থামলো একতারা।মাটিরও উর্ধ সীমা রেখেছি কেটে,
বকেয়া শব্দের ভাগিরথে,মাঝী একা।
ভাঙা নৌকায় সাধ্যের ঢুকছে জল ,পারলে ঠেকা।কান্না গুলো রেখেছি বয়ামে ভরে,
হাসির কিছু চাদর এখনো এলোমেলো,
নাড়ির ভিতরে রক্তের টান বলে,
ফিরে চলো ফিরে চলো।বারান্দাতে দাঁড়িয়ে দেখো তুমি শহর মেখেছে মেঘরং,
যখনই তোমার কান্না পেতে থাকে তখনই মৃত্যুশোক,
জরাজীর্ন প্রাসাদের কোণে ডাকে চাতক,
এবার বৃষ্টি হোক এবার বৃষ্টি হোক। -
কবিতা- যেও নির্জনতার সন্ধানে
যেও নির্জনতার সন্ধানে
-অযান্ত্রিক
চোখ খুলে দেখছি আকাশখানা একা,
একলা বালি হাঁস,
বুকের মাঝে পাঁজরের বন্ধ আলমারি,
একলা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।
চোখ বুঁজে ভাবলে ভালোবাসা ছুঁয়ে যাচ্ছে হৃদয়,
তবুও ভয়,
এগোলেও বিজোড়ের কারুকাজ,
পিছলে সেই সংশয়।পাতার পর পাতা শুধু,
ছেড়ে যাওয়া পায়ের দাগ,ভীত সজাগ,
সঙ্গিনী বোঝেনা,
চত্বর জুড়ে নোনা জলে বন্ধ্যা শাঁখ, তবু থাক।
একের পর এক ভেঙে পরা সফেদ তরল দেয়ালে,শুধু বলে,
নির্জনতাও খুঁজে পাওয়া যায়,
খোঁজার চেষ্টা নাহলে।