-
কবিতা- “প্রয়োজনে প্রিয়জন”
“প্রয়োজনে প্রিয়জন”
– উজ্জ্বল সামন্তপৃথিবীটা কেমন স্বার্থপর হচ্ছে ব্যস্ত সময়ের ঘেরাটোপে
আধুনিক জীবন বড় ব্যস্ত প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে
চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই নিত্যদিন প্রয়োজন অভ্যাসে বাড়ে
নিজ চিন্তায় মগ্ন হয়ে অন্যের জন্য ভাবার সময় কই, নিষ্প্রয়োজনেসুখী থাকতে প্রয়োজন অর্থ, সম্মান, সম্পর্ক, প্রিয়জন
বলা ভালো নিজের স্বার্থের তাগিদে কোন কিছুর অন্বেষণ
প্রয়োজন তো খিদে তারতম্যের পার্থক্যে শরীরের বা মনের
সুখ দুঃখের উষ্ণতার অনুভব কি ধরা পড়ে থার্মোমিটারেসংসার সুখী হয় রমনীর গুনে কথনে পুরুষে নয় কেন
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী কি চিরকাল থাকবে অবহেলিত
অস্তিত্ব ত্যাগে শাঁখা সিঁদুরে অবলম্বনের প্রয়োজনে
নিঃস্বার্থে জীবনপাত স্বামী পুত্র সংসার জীবনে।সময়ের সঙ্গে প্রয়োজন বদলে যায় অজান্তে কখন
প্রিয়জন কখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে স্বার্থে আঘাত যখন
প্রয়োজনেই কি প্রিয়জন হতে হয় দেখেছেন ভেবে
সম্পর্ক কি আর স্বার্থ নিয়ে আজীবন পরিচয়ে বাঁচেপ্রয়োজন তো একদিন ফুরাবেই তখন কি হবে
প্রিয়জনকে প্রয়োজন কি ছেড়ে চলে যাবে অদূরে? -
কবিতা- “সীমা
“সীমা”
-উজ্জ্বল সামন্তসীমানায় হানা দাও অচকিতে বিনা প্ররোচনাতেই
কখনো কি ভেবেছো দেশের গন্ডি পেরিয়ে মনুষ্যত্বের বিচারে,
সীমানা, কাঁটাতার শুধুই আলাদা করে নিজের পরিচয়ে
প্রাণ ধ্বংসে দেশের পরিধি বাড়িয়ে লাভ কি কিছু হবে?তুমিও দেশের সৈনিক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ওপারে
সীমানার এপারে তারাও সৈনিক তোমারি মত দেশ সেবাতে
তবে কেন প্রহসন অন্যায় আবদারের ছলচাতুরিতে
রাতদিন গুলিবর্ষণ বোমা নিক্ষেপ সীমান্তের কাঁটাতারেসাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াও কাশ্মীরের নিরীহ জনগণকে ক্ষেপিয়ে
কখনো আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ছাওনী, সেনা কনভয়ে
কাশ্মীর কিংবা লাদাখ ভূখন্ডে উত্তেজনা ছড়িয়ে
সহ্যশক্তির একটা সীমা আছে কেন যাও ভুলে?আমার দেশের নদীর জলে তুমি আছো বেঁচে
শস্য শ্যামলা ভূখণ্ডে কেন হিংসার বিষ লুকিয়ে
তোমার আবিষ্কার মহামারীতে পৃথিবী ত্রস্ত লক্ষাধিক প্রাণ ধ্বংসে
প্রকৃতি, মানুষ কি ক্ষমা করবে চিরদিন তোমার ক্ষমতার আস্ফালনকে? -
গল্প- “শয্যাসঙ্গিনী”
“শয্যাসঙ্গিনী”
-উজ্জ্বল সামন্তপ্রকৃত প্রেম বা ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে, স্বার্থত্যাগ, নিজের সুখ বিসর্জনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ভালোবাসার সাথী কখনো শয্যাসঙ্গিনী হয়, কখনো পাশে থেকেও যোজন দূরে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয় সন্দেহ ভুল-বোঝাবুঝি মান অভিমানে। আবার কখনো দূরে থেকেও ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ের স্পর্শ অনুভব করা যায়।
অর্নবের স্কুলের প্রেমিকা রিয়া যথেষ্ট সুন্দরী কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাদের প্রেমটা জমে ওঠে না। অর্ণব অনেক চেষ্টা করেও বিফল হয়। মেডিকেল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে অগত্যা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়। ওইখানে বিদেশের হাসপাতালে কর্মরত মহিলা ডাক্তার সুস্মিতার সাথে প্রেম,পরিণয় এর সম্পর্কে পৌঁছায়। ওরা গাঁটছড়া বাঁধে। অর্ণব ও সুস্মিতা খুব সুখে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করে। বছর ঘুরতেই একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। সুস্মিতা কলকাতার মেয়ে অর্ণবের শিলিগুড়িতে বাড়ি।
বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অর্ণব দেশে ফিরে আসে। হঠাৎ দেখা হয় তার স্কুলের প্রেমিকা রিয়ার সাথে একাকী মধ্যরাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। পুরনো প্রেমকে চিনতে কোন অসুবিধা হয় না গাড়ির হেডলাইটেরর আলোতে। গাড়ি থামিয়ে অর্ণব নেমে জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছো রিয়া? রিয়া কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। উত্তর দেয়, মোটামুটি আছি।
-কেন কি হয়েছে? রিয়া উত্তর দেয় তার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অর্ণব বাড়ি ছেড়ে দিতে চায়, রিয়া কিছুটা ইতস্তত করে পরে রাজি হয়। জনমানব শূন্য অন্ধকার গলিতে গাড়ি থামে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে অর্ণব বলে, এখন চলি তাহলে। রিয়া বলে, এক কাপ কফি খাবে না? বাড়িতে কেউ নেই, ফাঁকা। অর্ণব ইতঃস্তত বোধ করে। কিন্তু রিয়ার অনুরোধে ঘরের ভিতরে আসে।রিয়ার একমাত্র ছেলে বোর্ডিংয়ে থাকে। বিগত দু-তিন বছর ধরে স্বামী অসুস্থ চিকিৎসায় অনেক খরচা হয়ে গেছে, এখনোও হচ্ছে। জমানো টাকা প্রায় শেষ। আত্মীয়-স্বজন প্রথম প্রথম আর্থিক সাহায্য করলেও এখন আর কেউ এগিয়ে আসে না। বাধ্য হয়ে রিয়া এসকর্ট সার্ভিস দেয় লোকচক্ষুর অজান্তে। মোবাইলে মেসেজ আসে রিয়ার, নির্দিষ্ট সময় ও জায়গায় পৌঁছে যায় গভীর রাত্রে। এরপর চলে তার উন্মুক্ত যৌবনের উপর সাইক্লোন, টর্নেডোর মত ঝড়। নির্জনতার অন্ধকারে এখন এসব তার গা সওয়া হয়ে গেছে । নিজের দুঃখ বুকে চেপে রাখে বোবা কান্নায়।
বৃষ্টিতে আদ্যোপান্ত ভিজে গেছে রিয়া। চটজলদি অর্ণবের জন্য এক কাপ কফি করে আনে। মোমবাতির আলোয় রিয়াকে লক্ষ্য করে অর্ণব।
রিয়া ভিজে শাড়িটা পাল্টানোর জন্য পাশের ঘরে যায়। রিয়ার হাতের কফি চুমুক দিতে দিতে পুরনো কিছু স্মৃতি তার মনে পড়ে। কিছুক্ষণ পর রিয়া ফিরে আসে। গাড়িতে আসতে আসতে তার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করে রিয়াকে। রিয়া কিছু জবাব দেয়। অর্ণব বাড়ি ফিরতে উদ্যত হলে রিয়া ঝরঝর করে কেঁদে অর্ণবকে আলিঙ্গন করে। শয্যাসঙ্গিনী হতে চায় সেই রাতের। নিজেকে সামলে নেয় অর্ণব। রিয়ার মুখ থেকে ওর জীবনের করুণ কাহিনী শুনে ওর অ্যাকাউন্ট নাম্বার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে দিতে বলে, চলে চায়। একদিন পরেই অর্ণব আবার বিদেশে ফেরে। রিয়ার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। এত টাকা? বুঝতে অসুবিধা হয় না অর্ণব পাঠিয়েছে। এসএমএসটা ছিল ইয়োর অ্যাকাউন্ট হ্যাজবিন ক্রেডিটেড অফ রুপিস ফিফটি ল্যাক্স। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার সঙ্গীকে নতুন জীবন দিতে ও তার ভালোবাসা রিয়ার স্বামীর জীবন ফিরে পেতে অর্নবের এই সাহায্য, রিয়া আমৃত্যু মনে রাখে শ্রদ্ধার সাথে…. -
অণুগল্প- “ভালোবাসা ডট কম”
“ভালোবাসা ডট কম”
– উজ্জ্বল সামন্তসদ্য কলেজে পাস করা আবিরের উড়ু উড়ু ভাব। কলেজের সোস্যালে মন জয় করে নেয় তার শিল্পকলায়, গানে। গান গেয়ে তার অনেক ফ্যান হয়েছে। আবির ব্যস্ত থাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, অ্যপে। ইউটিউব চ্যানেলে তার অনেক ফ্যান ফলোয়ার্স। ফেসবুকে ও তার বন্ধুর সংখ্যাও বাড়ছে।
বাবার দৌলতে একটি সরকারি চাকরি জুটে যায় আর্ট কলেজে। কিছু মাস পর আবিরের বিবাহ হয়। বিবাহ এক বছর অতিক্রান্ত। অবসর সময়ে বাড়িতে থাকাকালীন আবির ফোন, চ্যাট এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্ত্রীর বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে এক সময়। স্ত্রী’র (প্রিয়া) মনে হয় স্বামীর কাছে সে কি পুরনো হয়ে গেছে? কিন্তু কিছু মুখে বলে না।
ফেসবুকের মেসেঞ্জারে একদিন একটি ছোট্ট বার্তা আসে। কেমন আছো? চিনতে পারছো? প্রোফাইলে ডিপি নেই। আবির রেসপন্স করে না। দিনের-পর-দিন মেসেজটি আসতে থাকে। এবার সত্যিই আবির চিন্তায় পড়ে, কে? প্রোফাইলে নাম লেখা প্রেয়সী ! এই নামে তো কাউকে চেনে না আবির। এবার একদিন মেসেঞ্জার কল, আবির রিসিভ করে দু’একটি কথা বলে, কিন্তু গলাটা?
চেনা চেনা লাগছে না। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার আদান-প্রদান হয় নি। প্রেয়সী মাঝে মাঝে মেসেঞ্জার কল করে, ছয় মাস অতিক্রান্ত হতে চললো আবির বহুবার জিজ্ঞেস করে মেয়েটি তার আসল নাম ঠিকানা জানায় নি। প্রেমালাপে আবির আস্তে আস্তে মেয়েটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আবার প্রেম হয় নাকি? আবির বিবাহিত, মনে মনে হাসতে থাকে। মেসেঞ্জারে হঠাৎ নিজের খেয়ালে প্রেম নিবেদন করে। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চায়। মেয়েটি তখন বাইরে তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। একদিন সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে আবির অপেক্ষা করে। স্ত্রীকে ফোনে বলে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে আছে, দেরি হবে বাড়ি ফিরতে।
সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে, দু’কাপ কফি অর্ডার করে খেয়ে ফেলেছে একা আবির। হরেক রঙের গোলাপের তোড়াটা পাশে রাখা। কিন্তু প্রেয়সীর দেখা নেই। হঠাৎ পিছন থেকে হাত দিয়ে আবিরকে কেউ যেন চোখ ঢাকে। স্পর্শে চকিত হয়ে, আবির জিজ্ঞেস করে প্রেয়সী? তখন মেয়েটি হাসে। এই হাসি যেন তার চেনা। আবির দেখে টেবিলে তার স্ত্রী বসে আছে…
-
কবিতা- “সাংবাদিক”
“সাংবাদিক”
– উজ্জ্বল সামন্তঅস্ত্র নয় কলমধারী সত্য প্রকাশে উদগ্রীব
খবরের ঘটনায় জড়িত সত্য সংশ্লেষী
সত্য বিচারে ন্যায়নিষ্ঠ খবর প্রকাশে নির্ভীক
বুড়ো আঙ্গুল চোখ রাঙানির প্রতিবন্ধকতার জয়ীখবর সংগ্রহ নয় বাস্তব উদঘাটনে তৎপর সদা
অদম্য সাহসী জীবনকে বাজি রেখে একা এগিয়ে চলা
হাতের বুম পেনের কলমে বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে দেখা
খবর তৈরীতে নয় বাস্তবকে সমাজের সামনে রাখা
কখনো কখনো অপমানিত লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা
রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে হেরে না যাওয়া ইচ্ছা
সহ্য করে বিনা বাধায় দায়িত্বজ্ঞানের প্রাধান্য দেওয়া
আবেগ নিয়ন্ত্রণে চাটুকারিতা বর্জনে ক্ষুরধার ভাষা
শব্দ ভাষা প্রচ্ছদে খবর বর্ণনায় কলমকে হাতিয়ার
খবরের শিরোনাম সংবাদপত্রের পাতায়, টিভির পর্দায়
অবশেষে রিপোর্ট সামাজিক দায়বদ্ধতার অনন্য প্রকাশ
তুমি সাংবাদিক সত্যের পূজারী সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায়… -
কবিতা- ছাই
ছাই
– উজ্জ্বল সামন্তসিগারেটের ধোঁয়ায় গাঢ় আগুনটা তীব্র দহনে
আনমনা সুখ টানে পুড়তে পুড়তে ছাই জমেছে
ঠোঁটের সঙ্গে সম্পর্ক বহুদিনের আনন্দে দুঃখে
নিজেও পুড়েছে ওড়াচ্ছে ধোঁয়া দহন ফুসফুসেতিন ইঞ্চির মোড়কে সঙ্গী ক্যান্সারের আহ্বানে
ছাই হয়ে উড়েছে জীবনের অনুভূতি অতৃপ্ত আবেগে
ভালোবাসা যেন তীব্র দহনে ছাই হয়ে ঝরে পড়ছে
অনুভূতি নিমেষেই মিশছে ওই মায়াবী নীলাম্বরী চোখেছাই কি কখনো প্রিয় হতে পারে তোমার শরীরে
অত্যাচারীর জ্বলন্ত সিগারেট যখন দেহ স্পর্শ করে
অবলা অসহায় অত্যাচার কখনো সহ্য করে মুখ বুজে
বিষাক্ত স্মৃতির পাতায় চিহ্ন রেখে যায় ওই কালো দাগেআগুনের লেলিহান শিখায় ক্ষমা নেইকারো কখনো
সব আগুন কি নেভানো যায় অজান্তে চলে দহন
সুন্দর শরীর দু’ মুঠো ছাই শ্মশানের চিতায় ভস্মীভূত
ছাই উড়িয়ে অমূল্য রতন কি পাওয়া যায় জাগে মনে প্রশ্ন ! -
কবিতা- ভাষাহীন
“ভাষাহীন”
-উজ্জ্বল সামন্তকথা সব হয়নি তো বলা
কিছু কথা রয়ে গেছে বাকি
অক্ষরশিল্পী হারিয়েছে শব্দ
ভাষাহীন শব্দ গুলো মনে আঁকিতোমাকে জীবনের গল্পে সাজিয়ে
না বলা কথাগুলো সযত্নে রেখেছি
অনুভূতি আবেগ অলিখিত সম্পর্কে
ভাষাহীন শব্দের জালে মুখ ঢেকেছিঅনুভূতিগুলো কি সত্যিই কৃত্রিমতায় হারিয়েছে?
বোবা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে চোখের জল?
মুহূর্ত থমকে যায় নিশুতি রাতের স্মৃতি রোমন্থনে
আয়নায় প্রতিচ্ছবি অচেনা অন্য অবয়বেআমি অক্ষরহীন তুমি ভাষাহীন কেন?
সম্পর্কের বাঁধনে বৃষ্টির বারিধারা নামে
দুজন দুজনের কাছে অপরিচিতের মত
ভাবলেশহীন অনুভূতিগুলো কখন ইতি টানে? -
অণুগল্প- সোয়াপিং
“সোয়াপিং “
– উজ্জ্বল সামন্তসোয়াপিং শব্দটার প্রায় সকলেই পরিচিত। Swapping (verb) যার বাংলা মানে দাঁড়ায় বদলা বদলি করা। অদল বদল /বিনিময় অনেক কিছুর হয়ে থাকে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে যেকোনো পণ্য কেনাবেচা মূল্যের বিনিময়ে । কিন্তু সম্পর্কের বিনিময়, তাই আবার হয় নাকি ! এটা ভাবলে ভুল হবে না আধুনিক সমাজে। এরকমই এক বাস্তব গল্পের শুরু হয়-
ওরা দুজন স্কুলের বন্ধু । স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে একজন কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রি নিয়ে কর্পোরেটে উচ্চপদে আসীন। মোটা মাস মাইনে সমাজের এলিট সম্প্রদায়ের একজন হয়ে উঠেছে অতীশ। দ্বিতীয় বন্ধু শিল্পী মানুষ। শিল্পই নেশা ও পেশা সোহমের।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়াতে কারোর মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। দুজনে আলাদা কলেজে পড়তো। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় অফিসের গাড়িতে সোহমের ধাক্কা লাগে। বন্ধুকে নিয়ে হসপিটালে ছুটে যায় সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সোহমকে বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে অনিশা দরজা খুললে স্বামীকে আহত অবস্থায় দেখে উদ্বিগ্ন হয়। অনিশা আধুনিকা পরমাসুন্দরী, ভাগ্যবশত ওর এক্স ফ্রেন্ড। ওর পীড়াপীড়িতে এক কাপ চা খেয়ে বাড়ি ফেরে। রাত্রে অনীশাকে মনে করে অতীশ । পরদিন ফোনে বন্ধুর খবর নেয় ও নিজের বিবাহ সংবাদ জানায়। সোহম ও স্ত্রীকে নিয়ে অতীশের বিয়েতে আসে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতে। প্রায়ই যাতায়াত লেগেই থাকে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়।
কিছু মাস পর অতীশ প্রস্তাব দেয় সোহমকে যে ওয়াইফ সোয়াপিং এর। প্রথমে সোহম হেসে উড়িয়ে দেয়, অতীশের কথা সিরিয়াসলি নেয় না। অনীশার প্রতি আকর্ষণে বারবার প্রস্তাব দেয় অতীশ। সোহম অনীষাকে ব্যাপারটা জানায়। অনিশা কোন উত্তর দেয় না। হঠাৎই অনীশার একমাত্র ছেলের হার্ট ব্লক নিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়। বিপুুল অর্থ ব্যয়়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য সোহমের নেই।
অদৃষ্ট বা নিয়তির পরিহাসে আত্মীয় স্বজনের কাছে সাহায্য না পেয়ে কোটিপতি বন্ধুর কাছে ধার নিয়ে ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরে।দুই বন্ধু কিছু মাস পর বেড়াতে যায় পাহাড়ে নিজের পরিবার নিয়ে। হোটেলের ঘরে বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লে, চার বন্ধুর মদের ঠেকে আবার সেই কথা ওঠে। নেশার ঘোরে উভয় পক্ষ রাজি হয়ে গেলে ওয়াইফ সোয়াপিং এর কল্পনা বাস্তব রূপ নেয় । পরদিন সকালে সোহম আর অনীশা অতীশ ও তার স্ত্রী মলিনাকে না জানিয়ে স্টেশন থেকে তৎকাল টিকিট করে বাড়ি ফেরে।
কিছু মাস কেউ কারো সঙ্গে দেখা হয় না। মধ্যবিত্ত পরিবারে মদ্যপান কে বিলাসিতা ভাবা হয় সেখানে সোহম…! আত্মগ্লানিতে ভুগে মনে মনে দোষারোপ করতে থাকে নিজেকে । কেন সে রাজী হল, এই অসম্মান লজ্জাজনক ব্যাপারটায় !
-
কবিতা- নজরুল
“নজরুল”
– উজ্জ্বল সামন্ততুমি বিদ্রোহী তুমি কবি তুমি দুখু মিয়া পরিচয়ে
চুরুলিয়ার অখ্যাত মাটি ধন্য তোমার আগমনে
দুঃখ কষ্টকে সঙ্গী করে জীবনের পথ চলেছিলে
হিন্দু মুসলমান দুটি ফুল একই বৃন্তে ফুটিয়েছিলেতোমার কাব্য তোমার গীতালেখ্য শ্যামা সংগীতে
ধর্মের বর্ম ছিন্ন করেছ নিজের অনন্য লেখনীতে
মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার নাড়া দিয়েছিল তোমাকে
বারংবার পরিলক্ষিত অন্যায়ের প্রতিবাদে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চারেকান্ডারী হুঁশিয়ার দেশবাসীকে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধকরণে
কারার ঐ লৌহ কপাট ভাঙার বিপ্লবের আহবানে
তোমার প্রাণ কেঁদেছে মানুষের জন্য বিবেকের দ্বারে
জাতিভেদ প্রথা ভুলে একই রক্ত- প্রাণে সাম্যের গানেতোমার বাঁশির সুরের মূর্ছনায় মনের দুঃখ ছুঁয়েছে
জীবনের শেষ মুহূর্তে স্মৃতিরাও পর হয়ে গেছে মুছেবাংলাদেশের জাতীয় কবি মর্যাদায় ভূষিত গর্বের সাথে
সংগীতস্রষ্টা সাহিত্যিক দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। -
অণুগল্প- পরম্পরা
পরম্পরা
– উজ্জ্বল সামন্তএমন এক কাহিনী সমাজের চোখে প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া হয়তো কঠিন ।
দেশের কোন এক সীমান্তের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা ও কন্যা তিন জনের সংসার। কন্যা একটু বড় হলে তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য দূরে পাঠানো হয়। বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ খুব কম কোনো এক অজানা কারণে। বাবা-মা তার সঙ্গে যোগাযোগ কম রাখেন। মাসে হয়তো একবার খবর আসে বাড়ি থেকে। মাসের প্রথম সপ্তাহে তার খরচের টাকা পৌছে যায়। সোহানা কারণ জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর পায় না, কেন সে বাড়ি প্রায়ই যেতে পারবে না।
মেয়েটি সতীত্ব রেখেছে। কোন পুরুষের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক হয়নি। সে মানতেও পারেনা পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক, বিবাহের আগে। সোহানা স্বপ্ন দেখে স্বপ্নের পুরুষের। মনে মনে তার একটা চিত্র কল্পনা করে । ইতিমধ্যে বাড়ি থেকে চিঠি আসে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। সোহানা বাড়ি ফেরে।
পাত্রপক্ষ দেখতেও আসে। কন্যা যেন পণ্য সামগ্রী। তার রঙ ,রূপ, চেহারার যেন খোলাবাজারে নিলাম। অবশেষে মোটা পণে পাত্রপক্ষ রাজি হয়ে যায়। কোন মতে ধারদেনা করে করে বিবাহ নির্বিঘ্নে হয়। স্বপ্নের রাত্রে সোহানা ফুলশয্যার খাটে বসে অপেক্ষারত। আড়চোখে দেখে স্বামীর পরিবর্তে অন্য কেউ তার ঘোমটা নামিয়েছে।
তারস্বরে চিৎকার করে ওঠে।সোহানা প্রশ্ন করে: কে আপনি? এই ঘরে কেন এসেছেন?
উত্তরে পুরোহিত জানায়: তোমার স্বামীর অনুরোধে বংশ পরম্পরা রক্ষার্থে আমি এই ঘরে এই মুহূর্তে।
সোহানা তার স্বামীকে ডাকে। তখন তার স্বামী ঘরে আসে।
সোহন: উত্তর দেয়, কুলো পুরোহিত সোহানার আজ রাতের সঙ্গী হয়েই কাটাবে। এটাই এই বংশের পরম্পরা। কূল পুরোহিত প্রথম ভোগের নৈবেদ্য গ্রহণ করেন। বহু বছর ধরে এই পরম্পরা নাকি চলে আসছে।লজ্জা, ঘৃণা, অপমানে সোহানার চোখ রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে।
তখন সোহানা প্রশ্ন করে: যদি তাদের পরিবারের কোন বিবাহিত নারীর স্বামী মারা যায়, তার জন্য কোন পরম্পরা আছে?
সোহন: (তার স্বামী) চুপ করে থাকে। সোহানা প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।সোহানা দেয়ালে টাঙানো ছুরি বের করে পুরোহিত ও স্বামীকে আঘাত করে। রক্তে লাল হয়ে যায় ঘরের বারান্দা। নিজেকে আইনের হাতে তুলে দেয়। এভাবেই হয়তো একটা পরিবারের পরম্পরা শেষ করে নিজের আত্ম বলিদানে।
সোহানা: পরম্পরা বংশের গর্বের হওয়া উচিত বলে তার মনে হয়, লজ্জা বা অপমানের নয়…