• কবিতা

    কবিতা- ঘুম না আসা রাতে –

    ঘুম না আসা রাতে
    – ঋতুপর্ণা পতি কর

     

     

    সাদা কালো কিছু শব্দ সিলিং জুড়ে ভাসে,
    অপেক্ষায় ক্লান্ত চোখের পাতা, না জানি কখন ঘুম আসে!
    রাতের নিস্তব্ধতায় এলোমেলো সব ভাবনারা দানা বাঁধে,
    ভয় হয়, ভালো মন্দের আপেক্ষিকতা, ভাবনায় না বাধ সাধে!
    মনের সাদা ক্যানভাসেতে করি আঁকিবুঁকি যত,
    নানান রঙে ভরিয়ে তুলি ইচ্ছে খুশি মতো।
    শব্দগুলো গান হয়ে যায় হাওয়ার সাথে মিশে,
    ইচ্ছেগুলো মেলে ডানা যায় হারিয়ে রূপকথার দেশে।
    পেতে চায় প্রাণ ভালোবাসা, যন্ত্রময় জীবনের অবকাশে,
    দেখা দিক রামধনু ‌‌বাস্তবের কঠোর কালো আকাশে।
    মাঝে মাঝে বেশ লাগে আকাশ কুসুম কল্পনায় ডুব দিতে,
    তুমি না হয় হয়ো মোর কাণ্ডারি এই ঘুম না আসা রাতে।
    এক সাথে দেবো পাড়ি সুদূর কোনো নাম না জানা দ্বীপে,
    আর না হয় হবো অমর‌, ভালোবাসার সলিল সমাধিতে।

  • কবিতা

    কবিতা- আজ বিকেলে

    আজ বিকেলে
    – ঋতুপর্ণা পতি কর

     

     

    আজ খানিক অবসরে, বিকেলবেলা,
    ভাবলাম, কাটাবো না হয় কিছুটা সময় নিজের সাথে একলা।
    বসলাম এক কাপ কফি হাতে নিয়ে,
    জানালার পাশে আয়েস করে কুশনে হেলান দিয়ে।
    চায়ের বদলে আজ কফি কেন?
    খাই, কোনো ভালোলাগার মুহূর্তে কখনো কখনো।
    তোমার দেওয়া কফি মগটা সেই একই আছে,
    শুধু সময়ের সাথে ভালোবাসাটা আরো গভীর হয়েছে।
    বাইরে অঝোরে ঝরা বর্ষার গান,
    ঘরের মধ্যে উইণ্ডচাইমের সুরেলা তান,
    এই যুগলবন্দী সৃষ্টি করেছে কি অপরূপ সঙ্গীত,
    ভুলে গিয়ে বর্তমান, ভবিষ্যত,অতীত,
    মন চায় শুধু এই ক্ষণটুকু উপভোগ করতে,
    ভালোলাগার রেশটুকু দু’হাতে আগলে রাখতে।
    সঙ্গী হোক কবিতার বই এমন মধুর পরিবেশে,
    কিছুটা সময় যাই হারিয়ে আজ কবিতার দেশে।
    অনুভূতিরা পেয়েছে ভাষা কবির লেখনীতে,
    সিক্ত হলো মন সেই বারিধারাতে।
    এই ভালোলাগা শুধু অনুভবের, প্রকাশের নয়,
    এক আকাশ মুগ্ধতা আজ বিকেলের সঞ্চয়।

  • কবিতা

    কবিতা- আমি ভাবিনি

    আমি ভাবিনি
    – ঋতুপর্ণা পতি কর

     

     

    আমি ভাবিনি তোমার সাথে দেখা হবে এতদিন পরে,
    চেয়েছিলাম ভুলে যেতে, তুমি তো রয়ে গেছে মনের গভীরে।
    সময়ের ধুলোয় শুধু চাপা পড়েছিল স্মৃতিগুলো,
    দেখে তোমায় সব কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে এলোমেলো।

    চারিপাশের সবকিছুই গেছে যেন থমকে,
    তুমিও কি দেখলে আমায় যাবে খানিক চমকে?
    ব্যস্ত ছিলে, না দেখতে পাওনি তুমি,
    কিন্তু জানিনা কি করে এত ভিড়েও ঠিক দেখতে পেলাম আমি।

    মনে জমা ছিল কত দুঃখ-যন্ত্রণা-অপমান,
    ভেবেছিলাম দেখা হলে করব ঝগড়া-অভিমান।
    কিন্তু পারছি কই কিছু বলতে,
    চাইছে মন তোমার কাছে যেতে,
    সরছেনা পা, দূর থেকে শুধুই দেখছি তোমায় দাঁড়িয়ে,
    হঠাৎ যেন অনুভূতিগুলো যাচ্ছে কেমন হারিয়ে।

    শুধু চেহারাটাই কি বদলেছে?
    নাকি মানুষটাও একই আছে?
    এখনো কি “তুমি” রয়েছো সেই “তুমি” ,
    যে “তুমি”কে ভালোবেসে ছিলাম আমি?

    দেখে তো লাগছে সব ভুলে তুমি আছো ভালোই বেশ,
    তোমার নতুন জীবনে নেই তো পুরনো ভালোবাসার রেশ।
    উথাল পাথাল মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে হাজার,
    স্মৃতিগুলো ভাসে মনের সামনে ঝাপসা দৃষ্টি আমার।

    হঠাৎ ভাঙলো চমক মেয়ের ডাকে,
    পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কোন ফাঁকে,
    চোখের জল মুছে নিয়ে,
    মেয়েকে নিয়ে যায় এগিয়ে।
    অতীতটাকে সঙ্গে করে,
    বর্তমানে এলাম ফিরে ,
    স্মৃতিগুলো থাক সযত্নে,
    মনের কোনো গোপন স্থানে।

  • কবিতা

    কবিতা- যন্ত্রের মতো জীবন

    যন্ত্রের মতো জীবন
    – ঋতুপর্ণা পতি কর

     

     

    যন্ত্রের মতো জীবন, দম বন্ধ হয়ে আসা কংক্রীটের শহর,
    অস্তিত্ত্বের লড়াইয়ে বিপন্ন আমি, একাকিত্বই এখন আমার দোসর।

    সম্পর্কগুলো আজ ভালোবাসাহীন, দায়িত্বভারে বড্ড ক্লান্ত,
    রোজনামচায় হারিয়ে যাওয়া “আমি”কে বৃথাই খুঁজে হই পরিশ্রান্ত।

    ভালোবাসার অভিনয়ে দক্ষ সবাই, আসল চেহারা লুকানো মুখোশের আড়ালে,
    বাইরে থেকে বোঝা দায়,কত রাত জাগা অশ্রুরা রয়েছে মেকি হাসির অন্তরালে।

    স্বপ্ন উড়ান ছুঁতে চাওয়া মন‌ আজ বন্দি সোনার খাঁচায়,
    ইচ্ছেরা আজ আর মেলে না ডানা, মাঝ পথেই পথ হারায়।

    তমশাচ্ছন্ন জীবনে সুখের কিরণ খোঁজার ভাবনা, গর্হিত অপরাধ এই বিবর্তনের ধারায়,
    আমার প্রাপ্তি সবই তোমার দয়া মাত্র, তোমার নিজেকে আদর্শ প্রমাণের চেষ্টায়।

    সমাজ সংসার কুলমান সব মেয়েদেরই তো রক্ষার দায়,
    সবার স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকারে আমার “আমি”ই আজ তাই বিলুপ্তপ্রায়।।

  • গল্প

    গল্প- অহং.. ভালোবাসার ইতি..

    অহং…ভালোবাসার ইতি…
    ঋতুপর্ণা পতি কর

     

     

    অনির্বাণ ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং শেষ করে ক্যাফের বাইরে এসে ওর জুনিয়ার কুণালকে ফোন করে বলল মিস্টার বোসের ফাইলটা রেডি রাখতে। দশ মিনিটের মধ্যেই অফিসে আসছে। তখনই হঠাৎ ওর নজর পড়লো অটো থেকে নামা অদ্রিজার ওপর। রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিলো অনির্বাণ। অদ্রিজা অটো থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করল “দাদা কতো হলো ?”অটোওয়ালা ৫২ টাকা বলায় অদ্রিজা ওকে ৬০ টাকা দিল । অটোওয়ালা খুচরো নেই বলায় অদ্রিজা হেসে বলল “আমার কাছেও তো নেই। ঠিক আছে দাদা আপনি রাখুন, চা খেয়ে নেবেন।” অটোওয়ালাকে হাসি মুখে বিদায় দিয়ে পার্স হ্যান্ডব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে ক্যাফের দিকে আসতেই দেখলো সামনে দাঁড়িয়ে অনির্বাণ। চোখাচোখি হলো দু’জনের। দু’জনই অপ্রস্তুত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ। কথা শুরু করলো অনির্বাণ।

    অনির্বাণ – হাই, কেমন আছো?
    অদ্রিজা- ভালো। আর তুমি?
    অনির্বাণ- ভালো, এদিকে…. কোনো কাজে এসেছিলে বুঝি? ‌‌
    অদ্রিজা- হ্যাঁ, বুটিকের এক ক্লায়েন্টের সাথে ড্রেসের ডিজাইন ফাইনাল করার ছিলো।
    অনির্বাণ- কফি?
    অদ্রিজা- না, থ্যাংকস। আসলে আমার একটু তাড়া আছে। ৫.৩০ এ ক্লায়েন্ট আসবে। তাই……
    অনির্বাণ- ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে বলল, এখনো আধঘন্টা বাকি। তুমি চাইলে কফি খাওয়া যেতেই পারে।
    অদ্রিজা- ওকে, তুমি যখন এতো জোর করছো, চলো।

    অনেকদিনপর পর আবার দু’জনে ‌মুখোমুখি বসলো। অর্ডার নিতে আসা ছেলেটিকে অনির্বাণ বলল “ম্যাডামের জন্য একটা কফি আর আমার জন্য একটা স্পেশাল চা,”

    অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলল “তুমি কি কিছু খাবে?”
    অদ্রিজা- না, থ্যাংকস। (ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ) আমার জন্যও চা।
    অনির্বাণ- তুমি চা? তুমি তো চা খেতে না?/
    অদ্রিজা- না, খেতাম না। কিন্তু এখন খাই।
    অনির্বাণ- জানো, এখানকার স্পেশাল চা খুব ফেমাস। খেয়ে দেখো তোমার ভালো লাগবে। (ছেলেটিকে) তাহলে দু’টো স্পেশাল চা…আদা দেওয়া।

    ছেলেটি চলে গেল। দু’জনেই চুপ। মাঝে মাঝে তাকাচ্ছিল একে অপরের দিকে ।চোখাচোখি হলেই দু’জনে চোখ সরিয়ে নিচ্ছিল। একটা সময় ছিল যখন ওদের কথা শেষ‌ই হতো না। আর আজ…. কোনো কথাই যেন খুঁজে পাচ্ছে না। অথবা এতো কথা জমে আছে যে কোথা থেকে শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছিল না ওরা।

    অদ্রিজা- (মনে মনে) তোমার এখনও আমার পছন্দগুলো মনে আছে!
    অনির্বাণ- (মনে মনে) তোমার সবকিছুই মনে আছে আমার। কোনো কিছুই ভুলিনি আমি। এর মধ্যে ওদের চা চলে আসে।
    অদ্রিজা- (চায়ে চুমুক দিয়ে) সত্যিই চা-টা দারুন।
    অনির্বাণ- থ্যাংকস। তারপর তোমার বুটিকের কাজ কেমন চলছে?
    অদ্রিজা- ভালো…বেশ ভালো।
    অনির্বাণ- বাহ্, আমি খুব খুশি। (মনে মনে) জানো, আজকাল আমি রোজ সকালে অ্যালার্ম বাজার আগেই উঠে পড়ি। আর এখন রোজ পূজো করে অফিসে বেরোই। ঠিক যেমনটা তুমি করতে।
    অদ্রিজা- তুমি কিন্তু বেশ রোগা হয়ে গেছো আগের থেকে। জিম?
    অনির্বাণ- আরে না না, বাবা রামদেব। যোগা জয়েন করেছি। ১১ কেজি কমিয়েছি। (মনে মনে) আজকাল রাতে আমি আর নাক ডাকি না। জানো, তুমি ঠিকই বলতে, যোগা সত্যিই খুব উপকারী।
    অদ্রিজা- তোমায় বেশ ফিট লাগছে ( মনে মনে) তুমি খেয়াল করেছো অনির্বাণ আমি শাড়ি পরেছি। তুমি বলতে শাড়ি পরলে আমায় বেশী সুন্দর লাগে। আজকাল আমি বেশি শাড়িই পরি।
    অনির্বাণ- খুব সুন্দর।
    অদ্রিজা- কি?
    অনির্বাণ- তোমার শাড়ি। খুব মানিয়েছে তোমায় । শাড়ি পরলে তোমায় আরো সুন্দর লাগে।
    অদ্রিজা- থ্যাংকস। তোমার প্রমোশন হয়ে গেছে?
    অনির্বাণ- হ্যাঁ, অনেক দিন। নতুন অফিসে শিফট হয়ে গেছি। এখান থেকে দশ মিনিট। ফ্ল্যাটের ই.এম.আই দেওয়া কমপ্লিট হয়ে গেছে।
    অদ্রিজা- বাহ্।(ফোনটা বেজে উঠলো) সরি, জরুরী ফোন। রিসিভ করতে হবে।
    অনির্বাণ- হ্যাঁ, হ্যাঁ…. নিশ্চয়ই।
    অদ্রিজা- হ্যালো,বলছি…

    অনির্বাণ- (মনে মনে) আমি পুরো পাল্টে গেছি। ভেজা টাওয়েল এখন‌ বিছানায় ‌নয়, ব্যালকনিতে শুকোতে দিই। নোংরা জামাকাপড় যেখানে সেখানে নয়, লন্ড্রি ব্যাগে রাখি। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে মোজা জুতোয়, আর জুতো সাজিয়ে রাখি। তুমি যেখানে যা যেভাবে রাখতে আমিও ঠিক সেভাবেই রাখি এখন।
    অদ্রিজা- সরি..সরি, আসলে জরুরি ছিল তাই …..
    অনির্বাণ- আরে না না, ঠিক আছে। আচ্ছা আকাশ কেমন আছে?
    অদ্রিজা- আকাশ?
    অনির্বাণ-আসলে এক বছর আগে তোমার বান্ধবী মৌমিতার সাথে দেখা হয়েছিল এক কনফারেন্সে। ওই বলছিল। তোমাদের তো এনগেজমেন্টও হয়েগেছিল।
    অদ্রিজা- হুমম্, কিন্তু রিলেশনশিপটা আর এগোলো না।

    দু’জনেই চুপ । হঠাৎই যেন মনে পড়ে চা খাওয়ার কথা। চায়ের কাপে চুমুক দেয় দু’জনে।
    অদ্রিজা-(মনে মনে)বাবা-মায়ের অনুরোধে চেষ্টা করেছিলাম জীবনে এগোতে, নতুন করে শুরু করতে। কিন্তু কি করি বলো আমি যে তোমার থেকে বেরোতেই পারিনি কখনো। তুমি যে আমার সবটুকু জুড়ে রয়েছো এখনো। মনে আছে তোমার, তুমি বলতে আমি খুব মুডি, রুড। এখন আমি পুরো পাল্টে গেছি। সবার সাথে মিশি, হাসি মুখে কথা বলি, সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করি। আফশোসটা কোথায় জানো শুধু তোমায় ভালো রাখতে পারলাম না।
    অনির্বাণ-(মনে মনে) আজকাল রান্না করতে গিয়ে আমিও কখনো কখনো লবন বেশি দিয়ে‌ ফেলি, মশলাটা পুড়িয়ে ফেলি। আমার রান্নাও মাঝে মাঝে মুখে দেওয়া যায় না। তখন না বুঝে আমি তোমায় মেজাজ দেখাতাম। রাগ করতাম তোমার ওপর। তোমার নতুন বুটিক, সাথে সংসার সামলানো। আমার, বাড়ির, সমস্ত কিছুর খেয়াল রাখা। এখন বুঝতে পারি কতটা টাফ। আমি পুরোপুরি ভুল ছিলাম।

    ওরা বারে বারে হারিয়ে যাচ্ছিলো অতীতে। নিজেদের ভুলগুলো নতুন করে বুঝতে পারছিল দু’জনে। আর চেষ্টা করেছিলো কঠোর বাস্তবে ফেরার।

    অদ্রিজা- তুমি কি এখনে প্রায়ই আসো?
    অনির্বাণ- হ্যাঁ, ক্লায়েন্ট মিটিংয়ের জন্য। (মনে মনে) তুমি চলে আসার পর আমি প্রতিমুহূর্তে অনুভব করি তুমি ছাড়া আমাদের বাড়িটা অসম্পূর্ণ, চার দেয়ালের একটা ঠিকানা মাত্র।
    অদ্রিজা- (মনে মনে) আমি আমাদের বাড়িটা খুব মিস করি। আমাদের ড্রয়িংরুম….. একসাথে চা খাওয়া, টিভি দেখা, নানা টপিকে আলোচনা। আমাদের ব্যালকনি….. দু’জনের পছন্দের কিছু ফুলের টব, তোমার দেওয়া উইন্ডচাইম, আমার ভীষণ প্রিয়-দোলনা। চোখ বন্ধ করে দোলনায় বসে কফিমগ হাতে জগজিৎ সিং এর গজলে হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যেগুলো। আমাদের কিচেন…….ছুটির দিনে নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করা। আমাদের বেডরুম…… খুনসুটি, মান-অভিমান, ঝগড়া, ঝগড়া শেষে তোমার ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়া, আদরে, সোহাগে সমস্ত অভিমানের অবসানে তোমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুম। মিস করি…… খুব খুব মিস করি…….. আমি ফিরতে চাই। তোমার কাছে ফিরতে চাই। আমাদের বাড়িতে ফিরতে চাই।

    দু’জনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে হঠাৎই অদ্রিজা উঠে দাঁড়ায়। “থ্যাংকস, বাই “বলে ঘুরে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে পা বাড়ায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব অনির্বাণ দেখলো অদ্রিজা চলে যাচ্ছে।

    অদ্রিজা- (মনে মনে) প্লিজ আমাকে আটকাও। আজ অন্তত যেতে দিও না। আমি ফিরতে চাই তোমার কাছে। তোমার সাথে বাঁচতে চাই। আমার সব ভুলের ক্ষমা চেয়ে নতুন করে শুরু করতে চাই।
    অনির্বাণ- (মনে মনে) প্লিজ একবার ফিরে তাকাও। তোমার কাছে সব কিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবো। তোমার সমস্ত অভিযোগ মিটিয়ে দেবো। শুধু একবার ফিরে এসো।
    অদ্রিজা- (মনে মনে) প্লিজ একবার আমায় ডাকো। একবার বলো ফিরে যেতে। তোমার জন্য আমি নিজেকে বদলে ফেলেছি, ঠিক তুমি যেমনটা চাইতে। তুমি কি বুঝতে পারছো না আমি তোমায় এখনও খুব ভালবাসি।
    অনির্বাণ- (মনে মনে) প্লিজ একবার তো পেছনে ফিরে তাকাও। আগে যেমনটা তাকাতে পেছনে ফিরে, যাওয়ার আগে আমায় দেখার জন্য। আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই নতুন করে সমস্ত কিছু ভুলে।
    অদ্রিজা- (মনে মনে) শুধু একবার ডাকারই তো ছিল। বিশ্বাস করো একবার ডাকলেই আমি ফিরে যেতাম। আমি ভীষণ ভাবে চাইছিলাম তোমার কাছে ফিরতে। কিন্তু তুমি কেন আমায় আটকাবে বলো? তাহলে তো তোমর পৌরুষত্ব আমার কাছে ছোটো‌ হয়ে যাবে। আঘাত লাগবে তোমার মিথ্যে অহং এ।
    অনির্বাণ- শুধু একবার পেছনে ফিরে তাকানোরই তো ছিলো কিন্তু তুমি কেন ফিরে তাকাবে বলো! তাহলে যে তুমি ছোটো হয়ে যাবে আমার কাছে। আঘাত লাগতো তোমার অহং এ…….. তোমার সেই মিথ্যে তথাকথিত মিথ্যে অহং এ।

    ক্যাফে থেকে ঠিক বেরিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে একবার ক্ষণিকের জন্য দাঁড়ালো অদ্রিজা। পরমুহূর্তেই বেরিয়ে গেলো ক্যাফে থেকে। আর তার সাথেই অদ্রিজার মনের আকাশে জেগে ওঠা এক চিলতে আশার কিরণ চিরতরে ঢেকে গেলো অন্ধকারে। বাঁধ ভাঙা অবাধ্য চোখের জলে অদ্রিজার‌ চারিপাশের সবকিছুই তখন অস্পষ্ট। আর অনির্বাণ …….. অদ্রিজার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো আর একবার তাদের ভালোবাসার পরাজয়। ভালোবাসার পরাজয় মিথ্যে অহং এর কাছে।

    কিছু কিছু কথা অব্যক্তই রয়ে যায়,
    কিছু অনুভূতিরা মনের মাঝেই থেকে যায়,
    কিছু স্মৃতি সারাজীবন নিরবে কাঁদিয়ে যায়,
    কিছু ভালোবাসা মিথ্যে অহং এর কাছে হেরে যায়।

You cannot copy content of this page