-
কবিতা- মনের কথা
মনের কথা
– জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীচলেই যদি যাবে তবে যেও ই না হয় চলে,
আরো কিছুক্ষণ কিছু মন্দ কথা বলে।
কথার পৃষ্ঠে কথারা সব না হয় লেগেই থাক
তোমার যত মনের কথা মনই বলে যাক।
মনের মতো কথা হলে, শুনতে লাগে বেশ
মনের মতো না হলেই, অপছন্দের রেশ।
নিন্দে মন্দ সমালোচনা যতোই তুমি করো
আসলে যা সত্যি, তা তো মনের মাঝেই ধরো।
তা বলে কি মনের কথা সবটা বলা যায়?
মন খুলে সব সত্যি মিথ্যা মেলে ধরা যায়…
যায় না যে তা তুমি আমি সবাই ভালোই জানি
তবু কেন মনের কথাই ‘সার’ বলে মানি…..
মন যদি সব সত্যি বলে, মন যদি সব জানে,
তবে কেনো কেউ বোঝে না, মনের কথার মানে।
আমার মন যে কখন কি চায়, আমিই কি ছাই জানি
মনের কোনো গোপন শলা, মনে মনেই মানি।
আমার গোপন চাওয়া পাওয়া মন ই আমার জানে।
মন থেকে যা চেয়েছিলাম, জানে সে তার মানে।
যাবার বেলায় একটি কথাই শুনে তুমি যেও
বলার সময় কোনো কথা, হিসাব করে নিও।
বেহিসেবী কথারা সব মনের মাঝেই থাকে।
ভুল কি ঠিক সব কিছুরই সঠিক হিসাব রাখে।
মনের কথা বলতে গেলে মনই বাঁধা দেয়
মনের মতো মানুষ পেলে, তবেই বলা যায়। -
কিছু না বলা কথা
কিছু না বলা কথা
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীআমি…
তোমায় একটা গোলাপ দিয়েছিলাম
তুমি কাঁটায় ভয় পেয়ে ফিরিয়ে দিলে—!!দিয়েছিলাম এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা
সাদা রং তোমার অপছন্দ,
বলেছিলে, দূর কেমন বিধবা বিধবা লাগে।দিলাম নীল অপরাজিতাও…
বললে, ওর নীলে তো বিষ..!আমি দিয়েছিলাম ঝিনুক সহিত মুক্তো
কিন্তু তোমার তো হীরে পছন্দ…
যার দ্যুতিতে চোখ ঝলসে যায়।আমি দিয়েছিলাম তোমায় ‘মন’ও
বলেছিলে, ও তো দেখা যায় না দিলে বা না দিলে, কি যায় আসে-
চেয়েছিলে আরো অনেক অনেক কিছু…আজ তোমার সব আছে…
গোলাপে আজ আর তোমার ভয় নেই…
কারণ-এখন প্রতিরাতেই তোমার কণ্টক শয্যা।।আজ তুমি বুঝেছ সাদা শুধু বৈধব্যের নয় শান্তির ও রঙ।
তোমার পৃথিবী আজ এতো বেশী রঙীন, যে শ্বেত রজনীগন্ধার মাঝে, তোমার অশান্ত রঙীন মন শান্তির আশ্রয় খুঁজে মরে…..আজ অপরাজিতা তোমার প্রিয় খুবই….
জীবনের সমস্ত গরল পান করে
তুমি আজ নীলকন্ঠ।।সেই হারিয়ে যাওয়া ঝিনুক তুমি অনেক খুঁজেছ… যার মাঝে মুক্ত ছিলো।
না, আজ আর তা তোমার নেই–
এখন হীরের চোখ ঝলসানো আগুনে ছটায় সর্বক্ষণ তোমার হৃদয় ঝলসে আধপোড়া।।আর ‘মন’..!
যাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না,
দেওয়া নেওয়ায় কিছু আসে যায় না…
সেই অলীক বস্তুটির স্পর্শ লাভের আশায় কেনই বা এতো হাহুতাশ…!! -
Happy Women’s Day
Happy Women’s Day
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীসন্ধ্যে বেলা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিজের কফিটা নিয়ে ঘরে এসে আরাম করে বসে নন্দিনী। গরম কফিতে একটা সিপ করেই…. আহঃ,, বড্ড আরাম। এই নিজস্ব সময়টুকু তার বড়ই প্রিয়। মালতি কফিটা বানায়ও চমৎকার। আর কারোর হাতের, এমনকি নিজের হাতের বানানো কফিও এতোটা ভালোলাগে না। অবশ্য এ কথা সর্ব সমক্ষে স্বীকার্য নয় মোটেই।
মালতি অনেক কিছুতেই, বলতে গেলে সংসারের সমস্ত খুঁটিনাটিতেই নন্দিনীর চেয়ে অনেক বেশী পোক্ত। সে রান্নাই হোক বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, কিংবা ঘর পরিষ্কারই হোক অথবা বাচ্চার দেখভাল। সব কিছুতেই অত্যন্ত দক্ষ। একা হাতে নন্দিনীর সংসারের সমস্ত কিছু সামলায় মালতি। অদ্ভুত মেয়ে বটে, কোনো কাজেই কখনো না নেই। আর পারিনা, বলে তো কিছুই নেই মালতির ডিক্সনারীতে। অবশ্যই ঘরকন্যার কাজ। আর কিছু নয় তা বলে। হ্যাঁ, বাজার দোকানও বেশ ভালোই করে। ওই সব্জি আর মাছের বাজার। পুজোর বাজারও, কিচ্ছুটি তাকিয়ে দেখতে হয় না। গুছিয়ে সব নিয়ে আসে। এদিক দিয়ে নন্দিনী নিশ্চিন্ত একদম। মালতির ওপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে, এমন কি মেয়ের দেখা শোনাও। এমন ভাবে করে, মাঝে মাঝে ভ্রম হয়, মেয়েটা নন্দিনী’র তো? বেশ রাগও হয় শাশুড়ি আর নিজের মেয়ের ওপর, মালতিকে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখে। যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চান মা, মালতি ওর চেয়ে কতো যোগ্য সংসারী। কতো নিখুঁত মাতৃত্ব তার। আর নন্দিনী যে রোজ এতো কষ্ট করে ভিড় বাস ঠেঙিয়ে অফিস যাচ্ছে। মাসের শেষে মুঠো মুঠো টাকা রোজগার করে নিয়ে আসছে। সেটা কিছুই নয়? মালতি পারবে কোনোদিন এই ভাবে এতো টাকা রোজগার করে আনতে..!সংসার টংসার করা, এসব ওই মালতিদেরই পোষায়। ও বাবা এতো কিছু পারবে না। বাইরে এতো খেটে খুটে এসে আবার কি রান্না ঘরে ঢোকা যায়? কখনোই না, আর সে জন্যই তো এতোগুলো করে টাকা মালতিকে দেওয়া। এমনি না কি?
অবশ্য শাশুড়ির কোনোদিনই ইচ্ছা ছিলো না নন্দিনী চাকরি করে৷ তেনার এমন নিরীহ গৃহকর্ম নিপুণা নিপাট গৃহবধূই পছন্দ ছিলো। কিন্তু কি করবেন, ছেলের পছন্দ, বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হয়েছে।
নন্দিনী কিন্তু বিয়ের আগেই অলকেশকে বলে দিয়েছিলো, চাকরি ও ছাড়বে না। অলকেশ তখন এক কথায় রাজী হলেও, তিন্নি হবার পর কিন্তু মত পাল্টে ছিলো। সেই সময় বাড়ীর কারুরই ইচ্ছা ছিলো না নন্দিনী আবার চাকরিতে জয়েন করে। কিন্তু নন্দিনীও ছাড়ার পাত্রী নয়৷ এতো কষ্ট করে, পরিশ্রম করে পাওয়া বিদেশী ব্যাংকের চাকরি, এতো সহজে ছেড়ে দেবে? এতো সহজ সরল বাধ্য মেয়ে, নন্দিনী নয়। তখন ওর অসম্ভব জেদের কাছে বাড়ীর সবাই বাধ্য হয়ে হার মেনেছিলো। তিন্নি হবার তিন মাস পরেই ও জয়েন করেছিলো নিয়ম মেনে। আর তখন থেকেই তিন্নির দেখাশোনার দায়িত্ব পুরোপুরিই মালতির। সারাদিন তো বটেই, সেই সময় প্রায় দিন মালতিকে রাতেও থেকে যেতে হতো। কারণ সারাদিন এতো পরিশ্রম করে বাড়ী ফিরে, তিন্নির দেখাশোনা আর করতেই পারতো না নন্দিনী। প্রায়ই দিন রাতে স্বামী স্ত্রীর অশান্তি লাগতো, মেয়েকে দেখা নিয়ে। আর রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে না পারলে নন্দিনীর পরের দিন অফিসে গিয়ে ভীষণ অসুবিধা হতো। সেই সময় মালতিই ভরসা। সত্যি, মালতি প্রচুর করেছে সেই সময়। নিজের ছেলে মেয়ে, সংসার সব ছেড়ে তিন্নির জন্য রাতেও থেকে যেতো। বলতে গেলে, ওই বড় করেছে তিন্নিকে।
তবে সে সব কি আর এমনি করেছে না কি? তার জন্য আলাদা করে প্রচুর টাকা দেয় নি মাইনে ছাড়া? টাকা নিয়েছে, কাজ করেছে, ব্যাস। এ আর নতুন কথা কি? মালতির জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও করতো। যত্তসব বাড়াবাড়ি- মা বাবার মালতিকে নিয়ে। অলকেশও কিছু কম যায় না। অবশ্য নন্দিনীর সামনে তেমন কিছু বলতে সাহস পায় না কেউই। আর মালতিকে তো ও মাঝে মাঝেই কারণে অকারণে তার নিজের পজিশনটা দেখিয়ে, বুঝিয়েই দেয়। না হলে তো মাথায় চড়ে বসবে। কাজের লোকেদের কখনো মাথায় তুলতে আছে?‘মাম্মাম, ও মাম্মাম..!’ কচি গলায় ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে তিন্নি। এতোক্ষণ দাদুর ঘরে হোম ওয়ার্ক করছিলো মনে হয়, কিংবা কার্টুন দেখছিলো। মোট কথা বাড়ী ঢুকে তিন্নিকে দেখতে পায় নি নন্দিনী এর আগে। অবশ্য খোঁজ ও করেনি। জানেই তো আছে দাদু ঠাম্মার কাছে — নিশ্চিন্ত।
-‘ও মাম্মাম, উমেনদে মানে কি? বলো না মাম্মাম…’
চমকে তাকায় নন্দিনী মেয়ের দিকে। কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে তাকায়- ‘কি ‘দে’ বললে তিন্নি সোনা?’
‘উমেনদে, উমেনদে মাম্মাম, ছেতা কি?’ তিন্নি ছটফটিয়ে বলে ওঠে।
‘উমেনদে?’ কয়েক সেকেন্ড ভেবেই হো হো করে হেসে ওঠে নন্দিনী। ‘ও, উইমেন্স ডে..! তাই বলো—‘
‘ছেতা কি মাম্মাম?’‘তিন্নি…বলছি বলছি, তার আগে বলো, তোমায় কে বলছে উইমেন্স ডে’র কথা?’
‘ম্যাম বলেছে মাম্মাম। সুমন ম্যাম বলেছে কাল উমেনদে।’
‘আচ্ছা আচ্ছা’.. নন্দিনী দু’হাত বাড়িয়ে মেয়েকে তুলে নিয়ে কোলে বসায়। ‘উইমেন্স ডে মানে হলো নারী দিবস।’
‘নালী দিবছ?’
আবার হেসে ফেলে নন্দিনী, ‘হ্যাঁ নারী দিবস। নারী মানে হলো মহিলা। যেমন আমি, তোমার ঠাম্মি, দিম্মু- আমরা সবাই নারী তো, এমন কি তুমিও এর মধ্যে পড়ো সোনা।’
‘আমিও নালী..?’ চোখ বড় বড় করে বলে তিন্নি…
‘হ্যাঁ তো, তুমিও..’
‘আল মাতি আন্তি? ( মালতি আন্টি) ও নালী নয়?’
মুখটা গম্ভীর হয় নিন্দিনীর, ‘বলে, হুম মালতি ও… কিন্তু কেন বলতো তিন্নি, কাল কি তোমাদের স্কুলে কিছু প্রোগ্রাম হবে এই জন্য? কি বলেছে সুমন ম্যাম? উৎসুক হয় নিন্দিনী।’
তিন্নি বলতে থাকে, উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চোখ মুখ-‘ ম্যাম বলেছে, যে উমেন আমাল কাছে ইছপেছাল, আমি যাকে ছবচে বেছি ভালবাছি, তাকে কাল একটা লেদ লোজ আর তকলেত দিতে।’
‘লোজ দিতে..? মানে?’ নন্দিনী আবার চিন্তায় পড়ে যায়, ‘লোজটা কি?’
-‘আলে বাবা, লোজ লোজ, জানো না, লোজ ফ্লাবার…’
-‘ও! রোজ’ – তাই বলো। আবার হেসে ওঠে নন্দিনী। ‘তা তিন্নি সোনা, কাকে দেবে তুমি লোজ, কালকে?’
-‘ছে বলা যাবে না..’.
-‘সারপ্রাইজ বুঝি?’
-‘হুম, ও মাম্মাম, পাপ্পা কখন আছবে? কে এনে দেবে আমায় লেদ লোজ?’
-‘কোনো চিন্তা নেই তিন্নি সোনা, আমি তোমার পাপ্পাকে এক্ষুনি ফোন করে বলে দিচ্ছি। বাড়ী ফেরার পথে তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা রেড রোজ নিয়েই বাড়ী ঢুকবে, ঠিক আছে?’ হাসি মুখে বলে নন্দিনী।
এক গাল হেসে তিন্নি মাথা দোলায়, ‘ঠিক আছে’। সেল ফোনটা হাতে নেয় নন্দিনী, তারপর অলকেশকে যা বলার বুঝিয়ে বলে দেয়। তারপর আরো বেশ কিছুক্ষণ চলতে থাকে মা মেয়ের আদর আহ্লাদ। আর তার সাথে মেয়ের স্কুলের খবরাখবর, পড়াশোনা এবং মেয়ের বন্ধুদের খবরও। অবশ্য এগুলো খুব একটা নিজের ইচ্ছাতে করে না নন্দিনী। বাধ্য হয়েই করে। ওর মায়েরই পরামর্শে। না হলে, না কি মেয়ের বন্ধু হয়ে ওঠা হবে না ওর। আসলে ওর মা গতবার এসে বেশ কয়েকদিন ছিলেন এখানে। তখনই মালতির সাথে তিন্নির কেমিষ্ট্রি দেখে ভীষণ অবাক হয়ে এবং ততোধিক রেগে বলেছিলেন, ‘মেয়েটা কার নন্দু? তোর, না মালতির? দু’দিন পর মেয়েতো মালতিকেই মা বলবে, আর তোমায় আন্টি—‘
ভীষণ গায়ে লেগেছিলো নন্দিনীর। একি কথা? ন মাস যাকে পেটে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে, তারপর ওই সিজার এর যন্ত্রনা, কি কষ্টটাই না করেছে। এতো কষ্ট সয়ে মেয়ের জন্ম দিয়ে শেষে কিনা মেয়ে মালতিকে মা….
অসম্ভব…. তারপর থেকেই মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী এই কৃত্রিম আদর আহ্লাদ আর তার সাথে প্রচুর দামী দামী লোভনীয় গিফট মাঝে মাঝেই। এভাবেই মেয়ের মন পাবার চেষ্টা, মেয়েকে বশ করার চেষ্টা চলে আসছে। অলকেশের অবশ্য আপত্তিই ছিলো এতো দামী দামী জিনিস দিয়ে মেয়ের স্বভাব নষ্ট করায়, কিন্তু নন্দিনী বুঝিয়েছে, ‘বোঝো না কেন? এটা আমার ক্ষতিপূরণ। আমি তো ওকে সময় দিতে পারিনা তেমন, তাই এইভাবেই….’ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেছে অলকেশ নন্দিনীর মুখের দিকে, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে গেছে। তারপর থেকেই এই চলে আসছে, তা প্রায় মাস ছয়েক হবে। বেশ ভালো ফলও পেয়েছে বলে মনে করে নন্দিনী। এখন আর অফিস থেকে ফিরে মেয়েকে দেখার জন্য ডাকতে হয় না। ও ফ্রেশ হয়ে কফি নিয়ে ঘরে এসে বসার একটু পরেই মেয়েও এসে হাজির হয়, নিজে থেকেই। হুঁ হুঁ বাবা, ওর মায়ের মূল্যবান পরামর্শ, ভুল হতেই পারে না। অবশ্য মা আরো একটা পরামর্শও দিয়েছিলো, “ভালোবাসো, একটু মেয়েকে মন থেকে ভালোবাসো, তবে তো ওর-ও তোর প্রতি টান জন্মাবে।” কিন্তু সেটা আর……
থাকগে, এতো ছোটো বাচ্চা, ‘ভালোবাসা’ আর ‘ভান’ এর কি আর তফাত করতে পারে?
আর তাছাড়া ভালোবাসেনা না কি? নিজের মেয়ে বই তো নয়, ভালোতো নন্দিনী বাসেই।
ঘন্টা খানেক পর অলকেশ একটা সুন্দর লাল গোলাপ,পাতা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো— দেখতে সত্যিই খুব সুন্দর, নিয়ে ঘরে ঢোকে। মেয়ে ততক্ষণে মালতীর কাছে খেতে চলে গেছে।
অলকেশ জিজ্ঞাসা করে, ‘মেয়ের হঠাৎ রেড রোজ চাই কেন গো?’
-‘আরে কাল উইমেনস ডে না? ওর স্কুলের সুমন ম্যাম বলেছে, যাকে ও সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে, যে ওর কাছে সবচেয়ে স্পেশাল তাকেই ওই রোজ দিতে হবে।’
-‘ও! তাই বলো। তা কাকে দেবে ও রোজটা? কি মনে হয় নন্দিনী?’ অলকেশ জিিজ্ঞাস-কি জানি, মিটি মিটি হাসতে থাকে নন্দিনী।-‘পাপ্পা পাপ্পা লোজ এনেছ?’ তিন্নি ঘরে ঢোকে লাফাতে লাফাতে।
-‘হ্যাঁ তিন্নি সোনা, তুমি বলেছ আর আমি আনবো না? হয় কখনো?’
হাসি মুখে কোলে তুলে নেয় মেয়েকে, তারপর দুই গাল আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কাল কাকে দেবে তুমি রোজটা? কাকে তুমি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসো?’
মেয়ে কানের কাছে মুখ এনে, ফিসফিসায়, ‘ছেতা ছিক্লেত পাপ্পা..!’
হা হা করে হাসিতে ফেটে পড়ে অলকেশ। আর মনে মনে ভাবে, মা রে, তোর জন্যই, শুধু তোর জন্যই আমার দিনের শেষে ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করে। এতো ক্লান্ত হয়ে বাড়ী এসেও শুধু তোকে ছুঁয়েই আমার সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।নন্দিনী জিজ্ঞাসা কিরে, ‘বাপ বেটিতে কি ফিসফিসানি চলছে শুনি?’
-‘সে কথা বলা যাবে না, ছিক্লেত..’বলে আবার হাসতে থাকে অলকেশ।
হেসে ফেলে নন্দিনীও। বলে যাও তিন্নি, শুয়ে পড়ো এবার। কাল ভোরে উঠতে হবে তো। কাল তো স্কুলে যেতেই হবে, তাই না?জামা বদলে, জল খেয়ে বাধ্য মেয়ের মতো বিছানায় উঠে পড়ে তিন্নি।
আজ মাস ছয়েক হলো তিন্নি এই ঘরে বাবা মায়ের সাথে এক বিছানায় শোবার সুযোগ পাচ্ছে। তার আগে দাদুন আর ঠাম্মুর সাথেই শুতো। আর তারও আগে, যখন ও অনেক ছোটো, তখন তো মালতির কাছেই.…
কিছুক্ষণ শুয়ে থেকেই আবার ঝট করে উঠে বসে তিন্নি, ‘মাম্মাম, একতা তকলেত ও তাই তো….’
নন্দিনী অলকেশ দু’জনেই ফিরে চায়…. ‘কি জন্য তিন্নি?’
-‘ও মা… থুদু লোজই দেবো না কি? একতা তকলেত দেবো না?’
-‘আচ্ছা আচ্ছা, ফ্রিজে তো রাখাই আছে তোমার অনেক চকলেট। তার থেকেই একটা দিয়ে দিও। এবার ঘুমাও….’
হাসি মুখে মাথা দোলায় তিন্নি, নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
অধিক রাত্রে, নন্দিনী আর অলকেশ এর ফিসফিস..’আচ্ছা কাকে দেবে বলোতো কাল ওতো সুন্দর গোলাপটা?’
নন্দিনী হাসি মুখে- ‘কি জানি কাকে। সুমন ম্যামকে তো নয় মনে হয়, কারণ খুব ভয় পায়, তাই ভালোবাসার প্রশ্নই নেই। সেক্ষেত্রে বাঁচছে একজনই…’
অলকেশ- ‘কে?’
Obviously আমি, আর কে? নন্দিনীর সহাস্য উত্তর।
অলকেশ খানিক থমকায়, ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ভেতরে চেপে যেন বলে, হুম, সেই…. দেখা যাক, হালকা হেসে পাশ ফিরে শোয়।-‘ও তিন্নি, তিন্নি, ওঠো বাবু। সাড়ে ছ’টা বেজে গেছে। এর পর দেরি হয়ে যাবে। বাস এসে যাবে সোনা। উঠে পড়ো। তারপর আজ তো তোমায় ‘লোজ’ ও দিতে হবে তাই না?’
তিন্নি তার ‘লোজ’ এর কথা কানে যেতেই লাফিয়ে ওঠে। বিছানা থেকে নেবেই সোজা বাথরুমে ঢুকে যায়। আজ আর কিছু বলতে হয় না। কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে ব্রাশ করতে করতে বেরিয়ে, সামনে ঠাম্মুকে ঠাকুর ঘরে যেতে দেখেই চটজলদি পেস্ট এর ফেনা থুঃ করে উঁচু হয়ে বেসিনে ফেলে জিজ্ঞাসা করে, ‘ঠাম্মু, মাতি আন্তি কখন আছবে?’ তিন্নি মালতিকে ছোটো থেকে মাতিই বলে, মালতি বলতে পারতো না তখন, তার থেকেই অভ্যাস। আর এখন তো নন্দিনী সাথে আন্টি বলতে শিখিয়েছে।
ঠাম্মু বলেন, ‘মালতি? আসবে তো, ওর তো আসার সময় হয়েই গেছে, এলো বলে। তুমি মুখ ধুয়ে নাও ততোক্ষণে তোমার মাতি এসে তোমায় স্কুল এর জন্য তৈরী করে দেবে।’
তিন্নি আবার মুখ ধোয়ায় মন দেয়। বেশ অনেকদিন ধরেই ওর মা ওকে নিজের সব কাজ নিজে করতে শিখিয়েছে। অবশ্য মালতি থাকলে, লুকিয়ে সেই সব করিয়ে দেয় এখনো। এখন সে নেই, তাই তিন্নি নিজেই মুখ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে নেয়।
এমন সময় বেল বাজে-
ঠাম্মু সবে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছেন। বেরতে পারেন না সঙ্গে সঙ্গে। আবার বেল, দু’বার বাজতেই, ঘর থেকে হাউস কোটটা জড়াতে জড়াতে নন্দিনী বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। দরজা খোলে, ‘বলে এতো তাড়া কিসের তোমার মালতি? বেল বাজিয়েছ একবার, কেউ না কেউ এসে খুলবে। একটু অপেক্ষা করতে হয়,…. বার বার বেল কেন দাও?’ ততোক্ষণে তিন্নির ঠাম্মু বেরিয়ে এসেছেন ঠাকুর ঘর থেকে। তাকে দেখে রাগে বিরক্তিতে তাকেও দু’টো কথা শুনিয়ে দেয় নন্দিনী।
‘আপনি তো এখানেই ছিলেন মা, দরজাটা খুলে দিতে পারলেন না? সেই আমাকেই আসতে হলো দরজা খুলতে? ডিসগাস্টিং…..’ বলে হন হন করে চলে গেলো। তিন্নির ঠাম্মু আর মালতি দু’জনেই চুপচাপ সব শোনে, ঠাম্মু আবার ঠাকুর ঘরের দিকে চলে যান আর মালতি রান্না ঘরে।
এই সময় তিন্নি ঘরে ঢোকে, ‘পাপ্পা, আমাল লোজ?’
-‘ওই যে, টেবিলে দেখো, মাম্মাম কাপের মধ্যে জলে ডুবিয়ে রেখেছে।’
আচ্ছা, বলে তিন্নি গোলাপটা তুলে নেয় কাপ থেকে, তারপর বলে, ‘আল তকলেত? পাপ্পা, ফ্লিজ থেজে একটা তকলেট বাল কলে দাও না..’
অলকেশ ফ্রিজ খুলে চকলেট বার করে মেয়ের হাতে তুলে দেন। খুশি মনে মেয়ে গোলাপ আর চকলেট নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। অলকেশ পেছন পেছন যায় দেখতে মেয়ে কি করে ওগুলো নিয়ে।
নন্দিনী তখন বাইরে টেবিলে কিছু করছিলো। মেয়েকে গোলাপ আর চকলেট নিয়ে ঘর থেকে আসতে দেখে খুব খুশী হয়ে যায়, ভাবে তাকেই দেবে মেয়ে গোলাপটা। আর আজকের এই স্পেশাল দিনে প্রথম উইশটা তার পুঁচকি মেয়েই তাকে করবে।তিন্নি ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায় মাকে পেরিয়ে– রান্না ঘরের দিকে এগোতে থাকে, যেখানে তার ‘মাতি আন্তি’ তারই জন্য টিফিন বানাতে ব্যাস্ত, দুধ গরম করে ঠান্ডা করতে ব্যাস্ত তাকে খাওয়াবে বলে। এই সময় ঠাম্মু ও কিছু কাজে ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
তিন্নি রান্না ঘরে ঢুকেই বলে, ‘মাতি আন্তি…!’ মালতি পেছন ফিরে তাকায়, ‘কি হয়েছে তিন্নি সোনা? আমি এক্ষুণি তোমার জন্য….. কথা শেষ করতে পারেনা মালতি, তার আগেই তিন্নি গোলাপটা আর চকলেটটা মালতির হাতে দিয়ে বলে,—-‘হ্যাপি উমেনদে মাতি আন্তি…’ -
তুমি চাইলে
তুমি চাইলে
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য্য ত্রিবেদীতুমি চাইলে আমি ফাগুন হতে পারি,
পলাশের রঙে রেঙে অথবা কৃষ্ণচূড়ার আগুন বুকে নিয়ে অপেক্ষায়..
হতে পারি শ্রাবণের ধারাপাত, সমস্ত সংশয় আর সমস্ত ব্যথা ধুয়ে মুছে দেবো।
হয়ত বা শরৎ এর শিউলি, অঞ্জলী ভরে দিও তুমি মায়ের পায়ে,
অথবা পৌষ এর কুয়াশা মাখা ভোরের আকাশ।
ভীষণ শীত এ নরম লেপের ওম গায়ে জড়িয়ে-সূর্যের অলস ভীরু উঁকি ঝুঁকি দেখো তুমি।
কিংবা গ্রীষ্মে র দুপুর, হ্যাঁ তাও, তাও পারি হতে
বৈশাখ এর আম কাঁঠাল পাকা ভীষণ গরমে
বাগানে আম গাছের তলায় শীতল পাটি বিছিয়ে বসো তুমি।
বোসদের ওই বিশাল পুকুর তখন শুকিয়ে প্রায় আধখানা। কিন্তু তারই ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ বাতাস হয়ে ঘাম জুড়াবো….
অথবা হেমন্ত রাতের ঝকঝকে এক খন্ড আকাশ।
তাও তো পারি হতে
শিশির ভেজা ঘাসের ডগা, কিংবা,কিংবা ওষ এর চাদরে মোরা আউশ ধানের মাঠ….
হতে পারি , হতে পারি আমি এসব কিছুই
শুধু তুমি চাইলে। হ্যাঁ, শুধু মাত্র তুমি চাইলেই…কিন্তু চাও নি কিছু ই তুমি।
শুধু নিয়েই গেছো। না চেয়েই সবটা, সবটুকু…
অথচ, আজ আমার কিছু হতে না পারার
দায় সবটুকুই আমার
আমারই অক্ষমতা ধরে নিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত।
কিন্তু আমি তো আজ ও পারি এক বটগাছ সহিষ্ণুতা নিয়ে তোমার সব অহঙ্কার আবদার কিংবা অত্যাচার সহ্য করতে, দিনের পর দিন
হ্যাঁ পারি তো…
করিও….তুমি জানো না, জানতে চাও না।
আসলে হয় তো ভাবো এ সব ই প্রাপ্য তোমার। নিশ্চিত প্রাপ্য….
কিন্তু তাই কি হয়?
প্রাপ্য যে আমার ও কিছু,
না না বিনিময় নয়, শুধু ভালোলাগার জন্য
ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপকরণ
হয় না কি আমার পাওনা..!
ভাবো তো, একবার অন্তত… -
কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো
কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীকথা কতোই বলি আমি সকাল এবং সাঁঝে
কিছু কথা বুকের মাঝে রিনরিনিয়ে বাজে।কিছু কথা খোলা আকাশ, স্বাধীনতার সুখ
কিছু কথা গুমরে ওঠে পাঁজর ভাঙা দুখ।কিছু কথা এমনও হয় শরমে মুখ ঢাকে,
কিছু কথা বলার পরেও, অনেক বলার থাকে।কিছু কথা রাগেতে লাল উচ্চস্বরে বলা,
কিছু কথা বিনয় ভরে ভীষণ নম্র গলা।কিছু কথা বলতে পেরে জুড়ায় মনের ভাপ,
কিছু কথা বলে ফেলেই ভীষণ অনুতাপ।কিছু কথা বুকের মাঝে গুড়গুড়িয়ে ওঠে
বলবো বলবো করেও মুখে বাক্য নাহি ফোটে।কিছু কথা অহংকারী বড়োই কর্কশ,
কিছু কথার প্রতিশোধ স্পৃহা ভীষন আক্রোশ।অনেক কথাই বলতে গেলে গর্বেতে বুক ভরে,
লজ্জাজনক কিছু কথা যত্নে লুকাই তারে।সন্মানীয় কিছু কথা বুকের মাঝে রাখি
তার মধ্যেও কিছু থাকে অসন্মানের ফাঁকি।কিছু কথা মন জোগানো চাপলুষি তৎপর,
কিছু কথা হাটের মাঝে ভাঙ্গবে ‘তাসের ঘর’।কথার পৃষ্ঠে বলা কথা ঝগড়া কিংবা যুক্তি,
সঠিক ভাবে বলতে পারলে তবেই সমস্যার মুক্তি।“কথায় কথা বাড়ে” এও যেমন সত্য
নিশ্চুপে, ভুল বোঝা বাড়ে এটাও চিরসত্য।ভালোবাসা যত্ন ছাড়া যেমন গতিহীন,
সত্যি কথাও প্রচার ছাড়া তেমনই অর্থহীন।এমনি করে কতো কথাই বলছি অনুক্ষণ
তবু কিছু কথা থাকে,বুকের গভীরে গোপন।সে সব কথা যায় না বলা কখনোও ‘কাহাকে
অনেক কিছু বলার মাঝেও মুখ লুকিয়ে থাকে।সে সব কথা ভীষণ আপন ভীষন প্রিয় মনের
কিছু কথা গভীর সুখের, কিছু দুঃখের জাল বোনে।কথা ফোটার সময় থেকেই বলেছি যত কথা,
না বলা কথা ও আছে যত, নয় সে অল্প তা….কত কথাই বলছি তো রোজ মন্দ এবং ভালো
তাও, কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো… -
প্রেমের কবিতা…!!
প্রেমের কবিতা…!!
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীভেবেছিলুম একটা প্রেমের কবিতা লিখব
বেশ জমকালো, রসালো, মনোগ্রাহী কবিতা।
যে কবিতা পড়ে তোমার আমাকে মনে হবে — আহা, কি রোম্যান্টিক
কতো রসিক, না জানি কতো জন্মের বিরহী পিপাসার্তা হৃদয় আমার–
হয়তো ক্ষণেকের তরে আমার প্রতি মনটা তোমার বিগলিত,
বিহ্বল হবে প্রেমে কিংবা করুণায়–
হয়তো বা ভালোবাসায় ভরবে তোমার হৃদয়….
কিন্তু নাহ, হলো না তেমন কিছুই
পারিনি আজও তেমন কোনো নির্মম প্রেমের কবিতা লিখতে..
আসলে হৃদয়ে যার প্রেম নেই,
কর্কশ, কণ্টক ময় যার চলার পথ, জীবনে যে পায় নি এক রত্তি আসল প্রেম,
সত্যিকারের এক ফোঁটা ভালোবাসা —
তার কলম কি পারে নির্ভেজাল সুন্দর প্রেমের কথকতা রচনা করতে..
কল্পনা আর কতো সাহায্য করবে..
আসলে কল্পনাও তো আসে নির্মম বাস্তবের হাত ধরে,
কখনো বা বাস্তবের ই প্রতিনিধি স্বরূপ….! -
সাচচা আদমি রাম খিলাবন
সাচচা আদমি রাম খিলাবন ..
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীমাই বাপ গলতি হো গেইলন
ইস বার কি তরহা মাফ কর দেই….
কথাটা বলে দু’হাত জোড়ে দাঁড়ায় এসে রামখিলাবন
এক পোয়া দুধে এক পোয়া জল মেশানোই যার কাজের ধরন ……
12 টা বাজে….দুধ দিতে রোজ দেরির কারণ কি ?
জবাব এর সাথে হলদে দাঁতের উদার হাসি ফ্রী ….
হেসে বলে মালকিন জল এলো আজ দেরিতে …
তাই তো দেরি দুধ নিয়ে আজ আসতে তোমার বাড়ীতে
দুধ জলের সমীকরণ জানে সর্বজন ….
তাই নতুন কোন বিশ্লেষণ এর নাই কো প্রয়োজন ….
খালি একটা প্রশ্ন রোজই আমার মাথায় ঘোরে তাই,
সাহস করে সেদিন তারে বিনয়ে শুধাই ….
ও রামু ভাই ….জলে দুধ …না দুধে জল ….
কোনটা মেশাও বলো …..
রামু আবার দু’হাত জোড়ে বত্রিশ দেখাল …
বললো হেসে “মাইজি আমি সাচচা আদমি আছি …..
ঝুঠ কভি বলবো না এহি কসম খাচ্ছি …..
রোজ সবেরে কোলের জোল ( কলের জল )
আধা বালতি ভরি …..
দো লোটা ( দু’ ঘটি ) দুধ আমি তাতে উপুড় করি ….
জলে দুধ …..না দুধে জল ….জানা হলো ..আর
দেরি কেনো ..পাতলা কেনো …সব হলো পরিস্কার,
সচচা আদমি রামখিলাবন ….বলার কিছুই নাই ..
দুধের দামে জল কিনে আজ খুশি আমি তাই …. -
অনেক ভালো একটু খারাপ
অনেক ভালো একটু খারাপ
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীবলতে পারো পূব গগনে সূয্যি কেন ওঠে.?
রাত শিশিরের ছোঁয়া পেয়েই শিউলি কেন ফোটে..!
থালার মতো মাঝ গগনে পূর্ণিমার ওই চাঁদ,
অমাবস্যা আসলেই সে গুনবেই প্রমাদ।।রঙ বেরঙের প্রজাপতি ফুলের রেণু মেখে
এ ফুল ও ফুল উড়ে বেড়ায় মধু চেখে চেখে
তার কারণেই গাছেরা সব গর্ভবতী হলো,
ফুলে ফলে ভরে গেলো, বৃক্ষেরা মা হলো।।আয় বৃষ্টি আয় বৃষ্টি, গ্রীষ্মে সবাই ডাকে
ভীষন গরম, হাহুতাশ, তাই বরণ করি তাকে।
ভর শ্রাবণেই ছিঁচকাঁদুনে বৃষ্টিটা যেই নামে,
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, ব্যাঘাত সর্ব কামে।।শীত সকালের হালকা রোদ লাগে বড়ই মিঠে
রোদ পোয়াতো ঠানদি আমার লাগিয়ে রোদ পিঠে।
শীত কালের ওই নতুন গুড় আর পাটিসাপ্টা পুলি,
জিভের জল সামলানো দায়, সকল বিষাদ ভুলি।।বসন্ত তো আসবেই সে রঙের ডালি ভরে
রঙ বেরঙের ফুল আর খুশির হাতটি ধরে।
প্রকৃতি রানী সাজবে তখন নববধূর সাজে,
ফুলের বনে মধূপ অলি ব্যাস্ত নিজে কাজে।
রঙীন ফাগ উড়িয়ে, মেখে, রঙের খেলায় মাতি
দোল পূর্ণিমায় বসন্তোৎসব ঘুচবে আঁধার রাতি।।বসন্ত তো রঙের রাজা৷ রোগের রাজাও বটে–
এতো রঙ আর খুশীর মাঝেও ‘বসন্ত’ রোগ ঘটে।
সব কিছুরই ভালোর সাথে মন্দটাও থাকে,
মন্দ ভালো মিলে মিশেই রঙীন খুশী আঁকে।। -
মানুষ হতে চাই
মানুষ হতে চাই
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীআমি একটি বৃক্ষ হতে চাই
পত্রে পুষ্পে ফুলে ফলে ভরভরন্ত,
সবুজের সমাহার যার সর্ব অঙ্গে-
প্রতিটি শাখায় যার পাখীর কূজন,
অসংখ্য, অগণিত পক্ষীশাবকের আশ্রয়।
যার মিষ্টি ছায়ায় রৌদ্রদগ্ধ ক্লান্ত পথিকের নিবিড় শান্তি।
নিজের সমস্ত কিছু উজাড় করে জীব কূলের পেট ভরায়, মন ভরায়, আশ্রয় দেয়-
তেমনই এক ‘বৃক্ষ’ হতে চাই।।আমি একটি নদী হতে চাই-
সুদূর পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে এসে সশব্দে আছড়ে পড়বো সমতলে–
শহরের পর শহর, গ্রাম কে গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে বয়ে চলবো-
আমার দু’ ধারে গড়ে উঠবে জনবসতি
আমার স্পর্শে আশেপাশের সমস্ত মাঠ ভরে উঠবে ফসলে ।
প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে, আমার সুশীতল জল তৃষ্ণা মেটাবে হাজারো জীবের- আমার
কুলুকুলু রবে, বয়ে চলার মূর্ছনায় বিভোর হবে কবিকূল..
আমি তাই নদী হতে চাই।।আমি এক আকাশ হতে চাই-
বিশাল, সুনীল, গভীর, গম্ভীর এক আকাশ।
যার কাছে জাতি, ধর্ম, নারী, পুরুষ, গরীব, আমীর কোনো কিছুই আলাদা নয়।
সবাই সমান, সব ই সমান।
সবাইকেই সে তার নিচে আশ্রয় দেয়-
হাজারো, লক্ষ্য কোটি নক্ষত্রের আস্তানা-
সূর্যকেও যে বুকে ধরে, আবার চাঁদকেও যে ফেলে দেয় না।
ঝলমলে দিন অথবা অন্ধকার রাত, দুই সমান যার –
আমি সেই আকাশ হতে চাই।।আমি এক বিশাল পর্বত হতে চাই-
সীমাহীন ঔদ্ধত্যে, অসীম উচ্চতায়, ধীর, শান্ত, গম্ভীর স্থিতধী যে ধ্যানরত তপস্বীর মতো-
যার খাঁজে খাঁজে অসংখ্য জীব জানোয়ার মানুষ পায় আশ্রয়, খাদ্য।
যাকে দেখে দূর থেকে শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ায় সবাই–
আমি তেমনই এক পর্বত হতে চাই।।আমি ধরিত্রী হতে চাই-
সর্বংসহা মাতৃরূপা ধরিত্রী-
শস্যশ্যামলা, সুজলা সুফলা –
সন্তানের দেওয়া হাজারো অবহেলা অনাদরেও অমলিন-
ক্ষমাশীল অন্তরে সমস্ত অন্যায় সয়ে যাওয়া,
এবং তারপরেও সমস্ত জীব জগত কে হাসিমুখে ধারন করা…
তুলনাহীন যে ধরিত্রী –
আমি সেই ধরিত্রী হতে চাই।।আমি জ্বলন্ত এক সূর্য হতে চাই-
প্রতিনিয়ত নিজেকে নিঃশেষে জ্বালিয়ে,
অনবরত নিজেরই তাপে দগ্ধ হতে হতে সমগ্র পৃথিবীকে আলো ও উষ্ণতায় ভরিয়ে রাখে যে-
যার অভাবে পৃথিবী অন্ধকার, সমগ্র জীব জগত প্রাণহীন, সেই সূর্য, জ্বলন্ত- প্রজ্বলিত-
যে না থাকলে এই ধরা নিষ্প্রাণ মরুভূমি, যার অভাবে জমি ফসল ফলাবে না, যে না থাকলে পাখী গাইতে ভুলে যাবে, যার অভাবে বৃষ্টি ঝরবে না, মেঘেরা জমাট বেঁধে আকাশেই ঝুলে থাকবে।
আমি তেমন ই সূর্য এক হতে চাই।।আমি এক মানুষ হতে চাই
বৃক্ষের মতো, অনেকের আশ্রয় স্থল, ক্লান্তির অবসান, ভুখা পেটের রসদ-
নদীর মতো তৃষ্ণার শান্তি, ভূমিকে শষ্য শ্যামলা বানানোর মদতগার-
আকাশের মতো উদার, বিশাল, চিন্তা ভাবনায়, বিচার বুদ্ধিতে- পর্বতের মতো সুউচ্চ, স্থির, ধৈর্যশীল, ধরিত্রীর মতো সর্বংসহা, ক্ষমাশীল-
সূর্যের মতো জ্বলন্ত, যা কিছুকেই পোড়ায় না, নষ্টও করে না শুধু সৃষ্টিতে সাহায্য করে –
আমি তেমন ই এক মানুষ হতে চাই-
এক সত্যিকারের মা- নু- ষ….।। -
আমার আজ, কাল এবং প্রতিদিন
আমার আজ, কাল এবং প্রতিদিন
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীআজ … আবার সকাল হলো
লালচে কমলা সূর্য্য টা প্রতিদিনের মতই সেই কোন ভোরে
ঝিলের ওপার থেকে টুক করে আকাশে উঠে পড়েছে …..
পাখি ডাকল ….মোরগ ও তার সুতীক্ষ্ণ চিত্কারে
সূর্যোদয়ের কথা জানাতে ভুললো না ….
রহিম চাচা মাঠে গেলো ….বুধোন গয়লাও
দুধ দিতে বাড়ি বাড়ি …..
শুধু আমার ই সকাল ….
সে রাতের চেয়েও অন্ধকার ….
শেষ না হওয়া এক অনন্ত অমানিশা ,
দুরূহ, সীমাহীন অজানা এক পথে
হেঁটে চলেছি একাকী ….
যার শুরু, শেষ কোনটাই আর দৃষ্টি গোচর নয় …
শুধু ছুটে চলা …অন্তহীন গতিপথ সময়ের
থামার উপায় নেই …শুধুই চলা …
বিরাম হীন বিশ্রাম হীন ..ছুটে চলা …
উদ্দ্যেশ্য, গন্তব্য কোনটাই স্থির নয়…
শুধু পথ চলা ..শুধুই চলা ..
শুধুই …….ll