-
কবিতা- ভরসা রাখি
ভরসা রাখি
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীআমার যত মন খারাপের বিকালগুলো
সাজিয়ে রাখি একটা দুটো চিঠির ভাঁজে,
সন্ধ্যে নামে ক্লান্ত দেহ বিবর্ণ মেঘ,
ব্যস্ত থাকি ঘরের কোনে মিথ্যে কাজে।বাইরে তখন কোথাও তো নেই প্রাণের আবেশ,
দখিন বায়ুর সঙ্গে তখন বিষাক্ত শ্বাস,
কেমন যেন বসন্ত বায় বাহার ছাড়া,
তোমার সাথে একলা হবার নেই অবকাশ।কেবল যেন মনের মাঝে দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব,
কেবল একটা অনিশ্চিতে নিত্য যাত্রা,
আমার যারা কাছের মানুষ তারাও দূরে,
এই অসময় জীবন যাপন অন্য মাত্রা।বিষ মিশেছে মানব জাতির মনের মধ্যে,
বিষ মিশেছে এই পৃথিবীর শিরায় শিরায়,
বিষের ছোঁয়ায় বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু মিছিল,
দিনের শেষে হিসাব কষা মরা- বাঁচায়।তবুও আমি ভরসা রাখি এ কালবেলায়,
নূতন দিনের স্বপ্ন লিখি এই অবেলায়,
চিঠির ভাঁজে যত্নে রাখি স্বপ্নগুলো,
অসূর বধে আজও জানি দূর্গা সহায়।বুকের মাঝে আজও আছে ভরসা প্রবল,
দূর্দিন সব পেরিয়ে আাবে নূতন সকাল,
সেই সকালে এই পৃথিবী গাইবে নূতন,
বিশ্ব জোড়া থাকবে এই মানব প্রেম ঠিক অবিকল।। -
কবিতা- গোধূলি মেঘ
গোধূলি মেঘ
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীআমার একটা বিকেল ছিল
হালকা রঙের,
বিকেলের পিঠের ওপর হালকা চাদর
ঠিক পৌষের।
পৌষের বাতাস ঘিরে গন্ধ ছিল
পাকা আমন,
বাতাসের গন্ধে ছিল কেমন যেন
মন কেমন।
মন কেমনের ওড়না খানা খয়েরী রঙের
বিষাদ সুর,
পাশেই ছিলিস তবুও যেন
অনেক দূর।
পুকুড় পাড়ের সূর্য তখন আবীর রঙে
নেশা ছড়ায়,
তোরই কাছে ছুট্টে যাবার ইচ্ছে তখন
তাড়িয়ে বেড়ায়।
কেমন যেন মোচর দিয়ে
উঠত বুক,
বন্ধ চোখেও স্পষ্ট দেখি
তোরই মুখ।সেসব ছিল কিশোর বেলার
অবুঝ আবেগ,
অবুঝ নদী উথাল পাথাল
ঢেউএর বেগ।
তারপরে তো সময় বেয়ে
গ্রীষ্ম শীত বসন্ত
অবুঝ নদী বয়ে চলে
নীরব এবং শান্ত।
আজও ঠিক বিকাল আসে
ধূসর রঙে,
ছেলে মেয়ে পরছে প্রেমে
আজব ঢঙে।
বিকালের সূর্য ডোবে
রঙ ছাড়া,
বাতাসের গন্ধ কেমন
সুর হারা।
আমারও মাথার উপর একটা দু’টো
পক্ক কেশ,
তুইও স্বামী সন্তান সুখে
আছিস বেশ।
দু’জনের ছোট্ট কিছু
ভুলের সাজা,
মেলেনি এলজেবরা বৃথাই শুধু
সূত্র খোঁজা।যাক্ তবু তো ভালোই আছি
স্বপ্নে বাঁচা,
স্বপ্নে ইচ্ছে মতন খুলতে পারি
বুকের খাঁচা।
যে খাঁচায় স্বপ্ন আছে
নেই শিকল,
স্বপ্নের জানলা পাশে স্তরে স্তরে
রঙীন বিকেল।
বিকেলের সমস্ত গায় প্রজাপতি
রঙ ছড়ায়,
গোধূলীর রঙের ভেলায়
নেশা লাগায়।
আকাশের আঁধার বুকে
তারায় ভরা,
তবুও প্রশ্ন ছুঁয়ে
সাতটি তারা।
কি বলছিস? কেন এমন
প্রশ্ন সাজাই?
ঠিকই তো এখন কি আর
এসব মানায়!
এখন তো আমরা দু’জন
নদীর দু’ তীর,
মাঝে এক পাহাড় সমান
স্মৃতির প্রাচীর।
স্মৃতিদের স্তরে স্তরে
রঙচটা,
অনেক চেনা তানপুরাটার
তারকাটা।
যে তারে হয়নি সেদিন
সুর গাঁথা,
আজ সব সুরের দেশে
বীরুৎলতা।
কিভাবে ফিরাব আজ আমার সকল
মনের আবেগ,
বেশ, তাহলে এর নামই হোক
গোধূলী মেঘ। -
কবিতা- স্বপ্নের অলিন্দ বেয়ে
স্বপ্নের অলিন্দ বেয়ে
-দীপ্তিমান ভাণ্ডারীস্বপ্নের অলিন্দ বেয়ে নেমে আসে
শুধু শুষ্ক বালুরাশি।এখানে থমকে দাঁড়িয়েছে ব্যস্ত জীবন।
এখানে ম্লান মুখে ফিরে যায় ধ্রুবতারা।
শুধু হাহাকার, শুধু কান্না
ডেটলের, বরিকের,ভাঙা অ্যাম্পুলেরব
তীব্র বিষ বাষ্পে অসহ্য লাগে এখনও।
অন্ধকারকে মনে হয় বড় সুজন।গভীর রাতে লুকিয়ে চুম্বনের ইচ্ছা হলে
জলছবি ভেসে ওঠে —-
তোমার হাসিমুখ,
বেঁচে থাকার আকাঙ্খায় উদ্ভাষিত।
বড় অসহায় বোধ হয়।
দুহাতে মুখ ঢেকে বাঁচি।অসীম বিশ্বের মাঝে
দু’দন্ড শান্তিতে কাটিয়ে যাবার
ফুরসৎ নেই আমার তোমার কোনোখানে।
মুখোমুখি মৃত্যুদূত – নিষ্পলক।আজ একাকী মনে হয়
কবে কার গেয়ে যাওয়া পুরাতনী সুরগুলি
বড় বিষাদ – করুণ।স্বপ্নে দেখারও সাহস হয়না তোমাকে।।
-
কবিতা- শীত যাপন
শীত যাপন
-দীপ্তিমান ভাণ্ডারীকতদিন হয়ে গেল
তোমার সাথে বিকেল দেখিনি
সূর্যডোবা নদীর পাড়ে।চলো, আজ সন্ধ্যের কুয়াশা মাখি
বড় রাস্তার মোড়ে – হ্যাঁ, দুজনেই।
তারপর ভাগাভাগি করে নিই
একখন্ড চাদরের উষ্ণতা।
তুমি আমার ঝাঁকরা চুলে
বিলি কাটতে কাটতে বলবে
পলাশের কথা, শিমূলের কথা,
আর আমার শিরা রক্তে
জেগে উঠবে ভালোবাসার দূরন্ত আগুন।চলো, আজ রাত্রির অন্ধকারে
গুনগুন কবিতা শোনাই তোমাকে।
সৃষ্টির উন্মাদনায় কেঁপে কেঁপে উঠুক
তোমার সদ্য যুবতী হৃদয়।
ভালোবাসার দূরন্ত আবেগে
ঝরে পড়ুক অসংখ্য টুপটাপ হিম।
তুমি বসো আমারআগা ঘেঁষে গভীর হয়ে,
যেভাবে পাখিরা পালকের ভিতরে
খুঁজে পেতে চায় শারীরিক উষ্ণতা।
কেটে যাক দূর্দান্ত সেই শীতের রাত।চলো, এভাবেই চলুক আমাদের শীত যাপন।
-
কবিতা- কিভাবে ফিরিয়ে দেবো আজ
কিভাবে ফিরিয়ে দেবো আজ
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীশীত এলে বড় একাকীত্বতা
পেয়ে বসে আমাকে।
শেষ বিকালের একটা
মন কেমন করা আলো
সোনালী ধানের উপর
বিছিয়ে দেয় তার আলতো পরশ।শিরশিরে হাওয়ায় ভেসে আসে
ভাটিয়ালী সূর – কুয়াশায় মাখামাখি।
মাঝি মল্লার নৌকার ঘর
জলে ভেসে যায় সন্ধ্যা তারাটির দিকে,
যেখানে বসে আছে তার সঙ্গীনী
অপেক্ষার প্রহর গুনে।ধেনো মদ খেয়ে আাজ ওরা
সন্ধ্যার চাঁদ মেখে শুয়ে থাকবে
ভীষণ জড়াজড়ি করে
উঠানের মাঝখানে,
যেভাবে জ্যোৎস্নায় কুয়াশায়
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।শীত এলে মন খারাপগুলো
পেয়ে বসে আমাকে।
দিনের আলোয় দূরে রাস্তায়
ডানায় শিশির মেখে
বুঁদ হয়ে বসে আছে শালিখের দল।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে
সোনালী রোদ্দুর এলে মেঠোপথে
ব্যস্ততা নেমে আসে
এই পৃথিনীর বুকে;
কবেকার ভুলে যাওয়া কবিতার পঙতিতে
ফিরে যায় মন
অভিমানী স্মৃতির অতলে;
কিভাবে ফিরিয়ে দেবো তাকে বলো আজ! -
কবিতা- দেখে আসি একবার
দেখে আসি একবার
-দীপ্তিমান ভাণ্ডারীহিংস্র নেকড়ের সংখ্যা
বড় বেড়ে গেছে এখানে,
লোভী হায়না আর ধূর্ত শিয়ালও তো
কম যায়না খুব একটা!সকলেই সকলকে দেখে আড়চোখে।
সকলেই কাঁচা মাংসের প্রত্যাশী।
উদ্ধত দাঁত নখ থেকে মাঝে মাঝেই
ঠিকরে ওঠে চোখ ঝলসানো আলো।
বাঁকা চাঁদ বাঁকা চোখে
দেখে যায় সব নিশ্চুপে।তবুও এখোনো কোথাও দূরে
মাদলের সূর জেগে ওঠে
এই শাল মহুয়ার জঙ্গলে।কালো যুবকটি কি তবে
পিড়িতি গান শোনাবে
তার সাঁওতাল মেয়েটিকে এক্ষুনি?
খোঁপায় তার আগুন পলাশটি
আছে কি গোঁজা!
আর হাতে তার একখানি বর্ষা?দেখে আসি একবার।।
-
কবিতা- আগামী
আগামী
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীআমি অফুরান বিষ বাষ্পের মাঝে
মেলে ধরেছি ডানা।
পালকে পালকে আজ মৃত্যুর হাতছানি।
যে হতে পারত আমার স্বপ্ন উড়ান,
সেই স্বপ্নই আজ বড় কুহেলিকাময়।তবুও কোথাও এখনও
স্মৃতির অতলে জোনাকীরা জাগে,
জাগে প্রাণের অনুভূতি।
জানিনা এই কি আমার
না দেখা পূর্ণিমা রাত?
যেখানে চাঁদের রাতে
মাদলের সূরে স্বপ্নেরা বাঁচে!আজ আমার নীল শরীরে
কেবল গ্রন্থি বিহীন, ঠিকানা বিহীন
কয়েকটি মায়াবী দুপুর ঘোরাফেরা করে।ক্রমাগত শব্দের ভীড়ে
তলিয়ে যাচ্ছি আমি।
শব্দের মিছিলে একলহমায়
উঠে আসে আমার অতীত – বর্তমান…
কারা ঐ ডাকছে,আমায়।আমার আর সময় নেই
এইবার আমি পার করে যাব
এই অলীক স্বপ্নের মায়া পৃথিবী।আমি একান্ত ভালোবাসা ভরে
কাছে টেনে নিচ্ছি নীল গরল পাত্র।ক্রমাগত কর্ষণে এই উৎসভূমির
যত পাপ উঠে আসুক;
আমি তাদের সঙ্গে নিয়ে যাব।
কেননা আমি আজ এই পৃথিবীর কাছে
অনেক বেশী ঋণে ডুবে গেছি।
সেই পাপস্খালনের পূণ্য আয়োজনে
আমিই হব অশ্বমেধের ঘোড়া।তবে তার আগে
আমার অদেখা স্বপ্নের অপেক্ষা,
মুঠো ভরা একটুকরো
প্রজাপতি ঝলমলে রোদ,
টুকরো শিশিরবিন্দু,
শিশুর নিষ্পাপ হাসিমুখ,
যাকিছু আজ বড় দূর্লভ,
সেই সব কিছু আমি
তোমাকে দিলাম— আগামী। -
কবিতা- সুর
সুর
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীমাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়
ছিন্ন একতারার করুণ সূরে।
একটিও সূর আর বসানো যাচ্ছেনা
ঠিক ঠিক তাল -লয়-সূরের সহজ সূত্রে।যখন ঝরের রাত্রে
দুহাত আড়াল রেখে বাঁচিয়ে দিয়েছিল
মোমবাতির দরিদ্র শিখাটাকে
দূরন্ত দামালের দল,
তখনও ঠিকই ছিল
অবিকল একতারার সূর।কিন্তু সে ছিল অন্য প্রেক্ষিত;
সে সূরের মূর্ছনা ছিল
হৃদয়ের বড় কাছাকাছি;
সে মৃদু আলোয় ছিল
একখন্ড বাঁচার রসদ।আজ নিয়নের তীব্র আলো।
আলোর অন্ধকারে ডুবতে ডুবতে
শুনশান দিকচক্রবালে আজ বোধহয়
আয়ুর শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি,
বিকলাঙ্গ একতারার সূরের মতো।এইবার ঝরে যাব যে কোনো দিন,
মাঝরাতে শুকনো পাতার মতো নিঃশব্দে।
তবু দেখো, সুরটুকু যেন বেঁচে থাকে
এই পৃথিবীর বুকে। -
অণু কবিতা- বোধ
বোধ
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীগনগনে সূর্যের দুপুরে
একখন্ড অবসাদ ঢুকে পেরে
মনের অলিন্দে।
কেবলই ছায়ার সাথে নিষ্ফল বোঝাপড়া।মুঠো খুলে আজ উড়িয়ে দিতে হবে
সেইসব স্নিগ্ধতা-শিশির কণা-ভালোবাসা;
কিন্তু হায়, মুঠো খুলে দেখি
পরে আছে ফাঁকা বিলকুল।ঠিক তখনই চোখের কোণায়
দু-এক ফোঁটা চিকচিকে নোনা জল।
একি তবে
নিজের জন্য নিজের সহানুভূতি! -
কবিতা- বর্ষার রূপ
বর্ষার রূপ
-দীপ্তিমান ভাণ্ডারী
জলের কথা আসলো যখন।
আস্ত একটা নদী,
ছলাৎ ছলাৎ জল থৈ থৈ
শব্দ নিরবধি।নদীর শব্দে, হাওয়ার শব্দে
আসছে ছুটে মেঘ,
মেঘের বুকে ঠিক তখনই
বৃষ্টি ঝরার বেগ।আকাশ এখন গোধূলী মেঘ
বর্ষা রঙে ঢাকা,
দূর দিগম্তে গ্রামের ছবি
জল রঙেতেই আঁকা।নদীর পাশে সেই যে বাড়ী
সুখের সুতোয় বোনা,
সেটাই ছিল মেঘ বৃষ্টির
বর্ষা ঠিকানা।বর্ষা মেঘেরনকাজল চোখে
নেশা লাগার সুর,
বৃষ্টি কেবল ঝরার নেশায়
আনন্দে ভরপুর।এমনি করে মেঘ বৃষ্টির
নিরন্তরের খেলা,
দেখতে দেখতে উদাস মনে
কাটিয়ে দিচ্ছি বেলা।নদীর বামে আদিগন্ত
সবুজ রঙের ছোঁয়া,
কেবল বৃষ্টি, কেবল বৃষ্টি
আবছায়া সব ধোঁয়া।গ্রাম ভিজছে, পথ ভিজছে
নদীও ভিজছে একা,
ভেজা ভেজা শীতল গন্ধে
বাঙলার রূপ দেখা।।