• কবিতা

    কবিতা- সাগরনামা ঈশ্বর

    সাগরনামা ঈশ্বর
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    সব সাগরকেই আমার বড় ভয়।
    শুধু এক সাগরের বর্ণপরিচয়
    সমগ্র সত্তাকে ছুঁয়ে জাগায় আমাকে,
    সূর্যমুখী চেতনার অমেয় আলোকে।

    আমি তো কোনো সাগরেই দিই না ডুব
    শুধু জ্ঞান সাগরের নিস্তরঙ্গ রূপ
    আমাকে প্রবল হাতছানি দিয়ে ডাকে।
    সাড়াদিতে ব্যর্থ হলে মাছ ঢাকি শাকে।

    বিজ্ঞানচেতনায় আমি তো জানতাম
    প্রবঞ্চনা ঈশ্বরের অন্য এক নাম।
    আমার ঈশ্বর তো সেই ঈশ্বর নন
    তাঁকে চন্দ্র ভেবে ধর্মপসারিগণ
    শকুনের দৃষ্টি নিয়ে কালো মেঘে ঢাকে
    তবু বহু সাগরের নামে চিনি তাঁকে।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- ভরসা

    ভরসা
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

    যাদের মাথায় একদম ছাতা নেই
    একমাত্র পাখিওড়া ছায়াটুকু ছাড়া,
    ওদের কি কোনো হিসেবের খাতা নেই?
    তোমাদের ডাকে ওরা কেন দেবে সাড়া?

    ওদের বাইরে রেখে বন্ধ ক’রে ঘর
    এখন দেখছো চোখে ধু-ধু বালুচর।

    ওরা ডেকেছিলো, তুমিই দাওনি সাড়া
    তাই সব নদীনালা শুকিয়ে সাহারা।

    তোমাদের ছেড়ে গেছে অভিমানে তারা
    অন্ধের ভরসায় পথ হাঁটে কি কানারা?

  • কবিতা

    কবিতা- হাটে অক্লেশে

    হাটে অক্লেশে
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    আমি এখন দাঁড়িয়ে হাটের কিনারে,
    ভেতরে ঢোকার সাধ্য নেই একেবারে।

    পরিযায়ী পাখি যায় শীত অভিসারে
    যেখানে হৃদয়ও বিক্রয় হয় ধারে।

    ধারে বন্দি থাকা সব ধারালো হৃদয়
    কে জানে কখন যেন ভোঁতা হয়ে যায়।

    ভুল ভালোবেসে যে মগ্ন হয়ে থাকে
    ভালো বাসা নয়, ফুটপাতে দেখি তাকে।

    আমি তাই দাঁড়িয়েছি হাটের কিনারে
    পরিযায়ী পাখি নই। বাঁধা কাটাতারে।

    দিন যদি অন্ধকারে মেশে অবশেষে
    মেলে দেবো এ হৃদয় হাটে অক্লেশে।

  • কবিতা

    কবিতা- কবিতা শ্রমিক

    কবিতা শ্রমিক
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    শব্দরা গন্ধবহ।ঘোরে ফেরে ঘরের বাতাসে।
    সময়ের জ্ঞান নেই।সময় তো অচিন অতিথি।
    তার দিনক্ষণ নেই,শুভাশুভ নেই।মানেনা সে
    কোনো ধর্মবর্ণভেদ। বিজ্ঞানে অমেয় প্রতীতি।

    তার কাছে নিতিনিতি হাতপাতি কবিতার আশে।
    কবিতা সোনার ধান।না’য়ে করে নিতে হয় তাকে।
    রবি ঠাকুরের তরি ভরা ছিল সোনালি ফসলে
    দিনমজুর তাই ফসলের ভাগ দেয় না আমাকে।

    অঘ্রানের হাওয়ায় ধান পাকে।ঝরে যায় ধান।
    মানুষও পাকে। জীর্ণ ফুসফুসে উত্তুরে বাতাসে।

    আমারও শরীরে,ফুসফুসে কি লেগেছে অঘ্রান,
    আমিও কি ঝরে যাবো পৌষে-মাঘে শীতসন্ত্রাসে?

    কবিতার কী হবে তবে?কবির শ্রমের ফসল!
    প্রকাশক নেই তার।কবির তো নেই অর্থবল?

  • কবিতা

    কবিতা- শীতচিন্তা

    শীতচিন্তা
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    আর কতো পারি বলো
    কুয়াশার জটারা দিনেদিনে দিগন্ত জড়ালো।

    এই অঘ্রানের দিনে
    অন্ধ কুয়াশাগুলি ধরিত্রীকে বেঁধে রাখে ঋণে।

    ঋণ দিনদিন বাড়ে
    ছায়া ফেলে রেখে যায় শ্রীমতীর জলের কিনারে।

    সেই সাথে চোখে পড়ে
    মুখে মধুবর্ষী বিষ কাদের জমেছে অন্তরে।

    বিশ্বাসে দেয় নাড়া
    মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আড়ালে ছুরি শানায় যারা।

    বনভোজনের মাসে
    ক্ষণে ক্ষণে ডিজে বাজে হৃদ্দেশে শ্রবণী সন্ত্রাসে।

    সে যে করে দিশেহারা
    অঘ্রানে ঘোড়ায় জিন। নির্মম পৌষে মাতোয়ারা।

  • কবিতা

    কবিতা- রাতের ট্রেন

    রাতের ট্রেন
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

    ওয়েটিং রুমে বসে আছি
    ট্রেন আসার চার ঘণ্টা দেরি।

    জানি চার ঘণ্টা দেরি
    তবু কেন যেন মনে হয়
    প্লাটফর্মে হুড়মুড় করে ঢুকে গেছে প্রায়।

    এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াই
    চশমা চটি ট্রলি জলের বোতল
    ট্রেনে খাবো বলে কেনা ব্যাগ ভর্তি ফল
    গুছিয়ে গাছিয়ে নিতে নিতেই
    হুস্ করে ট্রেন চলে যায়।

    আমিও হুঁশে ফিরি–
    এ ট্রেন আমার নয়
    এ ট্রেন থামার নয়
    দুরন্ত এ ট্রেন দাঁড়ায় না এসব স্টেশনে।

    আমার ট্রেন চার ঘণ্টা লেট
    স্টেশনে এসে শুনেছিলাম–ঠিক আছে মনে।
    তবু কেন যে আমি প্রায়শই
    খরস্রোতা রাত্রির অন্ধকারে
    ধাবিত ট্রেনের শব্দ পাই!

    শব্দহীন অন্ধকারে ছুটে চলে রাত্রির ট্রেন
    দূর হতে আমি তার শুনি আর্তনাদ
    আর আমার বুকের রক্তে,ধমনী-শিরায়
    ঢেউ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ।
    (শব্দজয়)

  • কবিতা

    কবিতা- আর কতো হাঁটি, বলো

    আর কতো হাঁটি, বলো
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    আর কতো হাঁটি, বলো!হাঁটি-হাঁটি পা।

    দশক তো পেরোলাম গণ্ডা দুয়েক
    বটের ঝুরির মতো অনেকানেক
    অভিজ্ঞতা জমে গেলো।হে,স্বাধীনতা!

    আর কতো হাঁটি, বলো?হাঁটি -হাঁটি পা!

    ঘুঘু চড়াবে যারা তোমার ভিটায়
    তাদের কাঁধে দেশ বহনের দায়
    এমনটা হলে দেশ এগোবে ক’পা?

    আর কতো হাঁটি, বলো? হাঁটি -হাঁটি পা!

    সবাই সবাইকে করছে পরখ
    কার ধারালো দাঁত, কার তীক্ষ্ণ নখ
    এই নির্বাচনে কার ভরবে খাতা।

    আর কতো হাঁটি, বলো? হাঁটি -হাঁটি পা!

    সমস্ত বুভুক্ষু মুখ অন্যরকম
    ইশারায় সাড়া দেয় যদি দুর্দম
    মস্তকে তোমার কে ধরবে ছাতা?

    আর কতো হাঁটি, বলো?হাঁটি -হাঁটি পা!

  • কবিতা

    কবিতা- আমি অনন্তে মিশে যাই

    আমি অনন্তে মিশে যাই
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    অতিক্রান্ত দীপাবলি
    নিভে গেছে অবশিষ্ট ক্লান্ত দীপশিখা
    দিগম্বরীর কোলের কাঁথায়
    ঘুমিয়ে পড়েছে রাকা চাঁদ
    শুধু একা একা রাত জাগে ছলছল চোখে
    বিষণ্ণ শুকতারা।

    একা বসে বাতায়ন পাশে
    আমি শুনি কার সতর্ক পদধ্বনি
    কী কথা যেন সে বলে বাতাসের কানে
    বাতাস অচঞ্চল, স্তব্ধ একেবারে।

    বদ্ধ ঘরে শ্বাস টেনে
    কোনোক্রমে বেঁচেবর্তে থাকা
    মাঝেমধ্যে তাও কষ্টসাধ্য অতিশয়
    তখন মনে হয়
    পরমায়ু নয় তো কারুর অমেয়-অক্ষয়
    অতএব এত কষ্ট সওয়া কেন?
    দেহ পড়ে থাক পঞ্চভূতে
    আমি অনন্তে মিশে যাই।

  • কবিতা

    কবিতা- এক শ্বাসক্লিষ্ট কবিকে–

    এক শ্বাসক্লিষ্ট কবিকে
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

     

    কবি,আমিই সেই মেয়ে যে দাঁড়িয়েছিল ট্রাম-স্টপেজে।
    বসন্তের ব্যাকুল বাতাসে
    এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল তোমার
    ‘শুধু স্মৃতিটুকু-থাক-মার্কা’ দরিদ্র চুল।
    তবে ধনী চকচকে টাকখানি তেমনি নির্বিকার।

    আমার ছেঁড়া ফ্রকে দারিদ্রচিহ্ন
    মলিন দু’হাতে ছিল ফুল।
    ঠিকই ধরেছো কবি, কবরখানা থেকে তুলে আনা
    জীবনের কিছু অনিবার্য ভুল।

    আমার হাতে গোলাপ
    তোমার দেহে শিহরণ
    ফুল কেনার অছিলায় আমার আলতো গালে
    হাত বুলোবার দুর্দম বাসনা।

    কিন্তু তুমি তো পর্যটক নও, কবি।
    কী এমন ক্ষতি হতো দু’দণ্ড দাঁড়ালে?

    তুমি চলে গেলে একটাও ফুল না কিনে
    তুমি জানোনা গো, কিনলে কতটা উপকার হতো
    আমার রুগ্ন বাবা-মা সেদিন অভুক্ত থাকতো না।
    আমার তো বেচার কিছু নেই, ফুলছাড়া!
    তাহলে খাবোটা কী?
    আর যা আছে–শরীরী বৈভব
    সেতো বেচার না ,কবি সোনা!

  • কবিতা

    কবিতা- অনৈশ্বরিক

    অনৈশ্বরিক
    – নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

     

    মানব-সন্তানের কাঁধে ভর দিয়ে
    ঈশ্বরী ফিরে গেছেন ঐশ্বরিক পুত্রকন্যাসহ।

    ভক্তদের বিধ্বস্ত শরীর আর স্বপ্নভাঙা চোখে
    শুধু ধুলোবালিভরা ধোঁয়াশার জাল
    কখনোবা আতঙ্ক ভাসে বারুদের ত্রাসে।

    অথচ দু’দিন আগেও
    জীবন্ত ছিলো সব শিরা-উপশিরা
    ঝড় হয়ে এসেছিলো
    সকলের মধুময় সেই ছেলেবেলা
    সব এলোমেলে করে দিয়ে
    দিনগুলো হেসেছিলো খিল্ খিল্ করে।

    এখন আবার শুরু রাজনীতির সমস্ত মণ্ডপে
    বানানো কথার জাদুমন্ত্রে জেগে ওঠা
    মনখেকো অনৈশ্বরিক প্রেম;
    এখন কারোকারো ঠোঁট যেন আসঙ্গলিপ্সায়
    অস্থির হয়ে ওঠে
    ছুঁতে চায় হৃদয়ের সমস্ত বন্দর।

You cannot copy content of this page