-
অণুকবিতা- কাব্যহারা
কাব্যহারা
-বৃষ্টি (পলি ঘোষ)আলগোছা স্মৃতির তাড়নায়,
বাক্য আজ দিশেহারা সুতোর আলগায়,
আবেগ ছেড়ে লুটিয়ে পড়বে স্বপ্নের কোলে।মৃদু হাওয়া, শীতের ওম, আর গরম আবহাওয়া।
ঘন ঘন গগনের কোলে
ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘ রয়েছে ভেসে,ভাবনার সাগরে তলিয়ে গেছে কবিতা।
হারানো ভাবনা ফিরবে নতুন করে।
হারাব দিগন্ত মাঝে হাওয়ার পরশে।সেদিনও থাকবো বাকরুদ্ধ,
আঘাতের বুক চিরে দেবে কেউ হানা।পৃথিবী শুধুই তার সাক্ষী।
-
কবিতা- বৈশাখ
বৈশাখ
-পলি ঘোষ (বৃষ্টি)বৈশাখ তুমি নতুনের আগমনী বার্তা।
বৈশাখ তুমি পুরাতনের শেষে নূতন সূচনার বার্তা বাহক।
বৈশাখ তুমি তোমার তীব্র তাপে,
পুরানোকে দগ্ধ করে সকল জীর্ণতাকে জ্বালাও।
বৈশাখ তুমি ফুলের মতো পড়বে ঝরে
সত্য, শান্তি, সাম্যবাদের পটভূমিতে।
বৈশাখ তুমি ভস্ম স্তুপ থেকে সংগৃহীত হবে নতুন বৃক্ষে।
বৈশাখ তুমি অন্যায়, অত্যাচার, অমানবিকতার চেতনার উন্মাদনা।
বৈশাখ তুমি নিয়ে আসো নতুনের আহ্বান বার্তা।
বৈশাখ তুমি খোলো নতুন দুয়ার পুরানোকে বিসর্জনের তান্ডব লীলা।
বৈশাখ তুমি পারো ঝোড়ো তান্ডব নীলায় ধূলার আস্তরণ উড়িয়ে দিতে।
বৈশাখ তুমি পারো নতুন মানবের মধ্যে উন্মোচনের জাগরণ জাগাতে।বৈশাখ তুমি দিতে পারো স্নেহ মমতা ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে।
বৈশাখ তুমি পুণ্যলোকে উদ্ভাসিত রবি ঠাকুর হয়ে থাকো মহামানবের অন্তরে অন্তরে।
বৈশাখ তুমি জ্বলে উঠো নতুন রবির আলোয়।
বৈশাখ তুমি জ্বালিয়ে তুলে ধরো নতুন মশাল।
বৈশাখ তুমি কটু গন্ধ থেকে মুক্ত করো
মানুষের বিবেক মনুষ্যত্বকে।
বৈশাখ তুমি ধ্বনিতে ধ্বনিতে উদ্ভাসিত হও
নব আনন্দের জয়গানের প্রতিধ্বনিতে। -
অণু কবিতা- সৌন্দর্য তুমি এলে –
সৌন্দর্য তুমি এলে
– বৃষ্টি (পলি ঘোষ)তুমি এলে এক মেঠো পথে এক মুঠো রোদ্দুর হাতে,
কন্ঠে গাঁথা পলাশ শিমুল ফুলের মালা।
চোখের কোনে জমে ছিলো এক আকাশ অভিমান….
বুকে ঝরে পরুক মনের আবেগে এক পশলা বৃষ্টি।
ঠোঁটের কোণে থাকুক তোমার এক মিষ্টি মধুর স্মৃতি।
আমার স্বপনের পথে বন্ধু হয়ে চিরদিন।
শিরা উপশিরায় হৃদয়ে স্পন্দনে,
তুমি এলে অনন্ত সুখের সময়।
তুমি এলে.. -
কবিতা- অসমাপ্ত আত্মকাহিনী
অসমাপ্ত আত্মকাহিনী
– পলি ঘোষ (বৃষ্টি)জলটুকু ঘিরে যেটুকু রহস্য ছিল,
তপ্ত বালির ওপর মরীচিকা হয়ে,
ভাসছে তার ছাপ।দুর থেকে দেখছি
ভাঙনের পর ক্রমশ শহর
গড়তে গড়তে আবার
আরেক মুঠো অথৈই আকাশ।
কাব্য প্রকাশের পর আর কলম থামে নি।
ক্লান্ত হয়ে নড়ে গাঁথনির ইঁট।
চলেছি বিশাল পথ।
প্রতিবার এক দীর্ঘ নিশ্বাস
যেন ও আর কিছু পথ,
অনন্ত ঈশ্বরের দিকে
এ যে বড়ই কঠিন,
তবু যে মানবজন্ম।
দগ্ধাতে দগ্ধাতে সংঘর্ষ চলে
জীবন পথে অবিরাম,
দাবানলে পরিণত হয় চলার পথ।
পাহাড় দেয় বিষধর
বাগানে দেখি নীলকান্তমণি
হাওয়ায় কেঁপে ওঠে দরজাটা,
চারদেওয়ালে জমে থাকা ধুলো,
কালো হয়ে আসে। -
কবিতা- ভগবানের দাস মারা গেছে
ভগবানের দাস মারা গেছে
-পলি ঘোষ (বৃষ্টি)কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে বিশ্ববাসী
কাঁদছে সমগ্র জাতির মানুষ।
কাঁদছে গোপনে বিরহে
ঘর, বারান্দা, উঠোন তৃণলতা, পশু, পাখি, মাঠ ঘাট, পাহাড় নদ নদী।
বাতায়নে ভাসছে বিরহের কবিতা।
কাঁদছে গোপনে সবাই একাকী নির্জনে।
নিশি রাতের অন্ধকারে মৃত্যুতে ঢলে পড়েছে ভগবানের দাস।
কি আশ্চর্য অনুভূতি আকুলতা অনুভব,
মৃত্যুর পর’ও সে হেঁটে চলেছে একা পথে
সুগন্ধি শয্যায়।
প্রেমের টানে আটকে গেছে তার লেখা মিষ্টি শব্দ।
চারিদিক থেকে বাতাসে লাশের গন্ধ ভেসে আসছে আমার আঙিনায়।
উঠছে হরিধ্বনি
বলো হরি হরি বোল
সুপ্রভাত সন্দেশ পড়ে আঁতকে উঠবে স্বজন পরিবার।
ভগবানের দাসের মৃত্যু সংবাদ দেখে। -
কবিতা- সবাই ভুলে যাবে
সবাই ভুলে যাবে
– পলি ঘোষ (বৃষ্টি)কবিতার ভাষায়
খুঁজে পেয়েছি অন্তরে,
সেটি তুমি ভুলে যাবে কি করে?
সবার মাঝে স্থান পাবো না জানি।
পাবো না স্থান তোমার মনে কোন দিন।
তাই বলে কি,
চলে যাবে কি দূরে বহুদূরে?
যেখানে খুঁজে পাবো না তোমাকে,
তুমি কি ভুলে যাবে সব স্মৃতি…
কি লিখলে বলো…
তুমি অত্যাধুনিক কবিতা হবে,
কী ঢং এ লিখলে সবাইকার
হাততালি পাওয়া যাবে।
কী ধরনের ছন্দ হলে
নতুন কবিতার ধারা তৈরি হবে।
একদিন দুইদিন এমনি করেই,
দিন কেটে যাবে,
তুমি ক্রমশই ভুলে যাবে আমাকে,
আর মনেও পড়বে না
তারপর হঠাৎ একদিন… -
কবিতা- এক টুকরো মুক্তো
এক টুকরো মুক্তো
– পলি ঘোষএই মখমলে শুভ সন্ধ্যায়
গায়ে মাখছি হিমেল বাতাস।
মুখে ফুটছে এক মেশানো বিবর্ণ হাসি।
মনের আয়নায়
তোর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে কলমের ডগার আঘাতে কবিতার সন্ধিপথে দেখেছি,
নতুন রূপে এক বসন্ত এসেছে
আমার জীর্ণ কুটিরে।
অলীক অনুভবে তোর মিষ্টি
কন্ঠস্বরের প্রেমের যমুনা সেতু বন্ধন করেছি দিবারাত্রি।
ঘুম আচ্ছন্ন চোখে জমে আছে
তোর চুম্বনের একরাশ মিষ্টতা।
তুই হলি আজ আমার জীবনে বর্ণালী রূপে
সাজানো সৈকত থেকে উঠে আসা,
এক টুকরো মুক্তো। -
কবিতা- ব্যথাহীন এক নারী
ব্যথাহীন এক নারী
– পলি ঘোষব্যথার বারান্দায় বসে আছি,
তালি দেওয়া আমারি পর্ণ কুটিরে,
মাটির দেওয়ালে দেখি এক নির্বাক প্রেমের গন্ধ।
সামনে নিকোনো আঙিনা,
কাঠের উনুন আর মাটির হাঁড়িতে,
ধোঁয়া ধোঁয়া গন্ধ ওড়েনি কত যে প্রহর রাতে,
আজ সামান্য ভাতের উৎসবে মাতেনি শূন্য আঙিনা।
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত এলাকায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে,
অলক্ষ্যে উদ্ভাসিত ব্যথার অনুভূতি মিশে একাকার এক নির্বাক শ্রোতা এক নারী,
শুকনো পাতার ধূসর শূন্যতায় নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকা। -
কবিতা- মৌনতা
মৌনতা
– পলি ঘোষচেনা ঠোঁটের নির্লিপ্ত হাসি
বীতশোক মুখে সময়ের বৈভব
ভেসে এল মুহুর্তে
দু’চোখের জল
দু’চোখের কথা
এ মনের ব্যথা
এই যে আমার বসে থাকা
সারাটা দিন একলা একা,
জানলা ধারে বাঁশের ঝাড়ে
শন -শন-শন শব্দ করে
কালের বিবর্তনে সাক্ষী আজ
অবোধ সময়
পলে পলে বয়।
নীল কোটরে থামে
নষ্ট সময়…
আবার আমি ফিরে এসে
অথৈ জলে ভেসে
ভাঙলো আমার বুকের পাঁজর
হতাশ অভিসারে
বলে অস্বীকার, মেঘ করে মনে,
গাঢ় অন্ধকার চুপিসারে
হয়তো অধিকার, ছিলো প্রয়োজন,
কারো এমনি চাওয়া, মাতাল হাওয়া ।
মৌনতা বলে গেল কানে কানে
এই তো সেদিন উঠলো যখন ঝড়,
আঁকড়ে তোমায় বাঁচিয়ে নিলাম ঘর। -
কবিতা- জলছবি
জলছবি
-পলি ঘোষ (বৃষ্টি)হাজার মোমবাতি মাঝে একটা জ্বালিয়ে রেখেছি,
কেন জানো?
ভালোবাসার শব্দের গর্জনে কলমের ডগায় ঝরবে নতুন নতুন শব্দ।
আর লেখা হবে অজস্র কবিতা।
আকাশ আজ তোমার সাথে হারিয়ে যেতে চাই শহরের দুর অজানায়,
যেখানে নীলাকাশ মিশেছে সাগরের ঢেউয়ে।
এ কি বন্ধনে আবদ্ধ করলে তুমি,
কি এক অদ্ভুত অনুভূতি মিশে একাকার হয়ে,
তোমার সাথে প্রথম আলাপ অনেক জমা গল্প ছিল আমার সাথে।
তাতেও ছিলো মিষ্টি পরশ।
তুমি থাকো হাজার মাইল দূরে।
তবু ও কেন মনে হয় আছো তুমি আমার হৃদয়ে জুড়ে।
দুর থেকেও তোমার গন্ধে মাতি দিন প্রতিদিন।
রোজ সকালে কুয়াশা ঘেরা প্রকৃত ভালবাসা ভোরে মনে হয়হেঁটে চলা ফেরারী মনের ক্যানভাসে আঁকা বাঁকা ছবি ভরিয়ে।
পাখির কলতান মৃদু বাতাস বইছে খুশির তালে তালে।
কল্পনার সাগরে ভেসে জলছবি দেখো আজ সত্যি এক আলোর দিশারী পথে-ক্যানভাসে ঝরছে বৃষ্টি ভেজা এক মুঠো নীল স্বপ্ন।