• কবিতা

    কবিতা- দুঃখ যাপন

    দুঃখ যাপন
    পায়েল সাহু

    গজদাঁতের হাসিটা বুঝি
    আর ভালো লাগেনা?
    বলার আগেই বুঝে যাওয়া
    গল্পগুলোও সাজেনা?

    কবে এতো পর হলি বাতাস
    তো কই বললো না!
    তোর বুকের ওমের পরশে
    সূর্যও বুঝি উঠলো না।

    সেই যে সেদিন ভোররাতে,
    ডাকলি আমায় ইশারাতে,
    চুপি চুপি তোর দীঘিতে
    উষ্ণ হলাম তোর ছোঁয়াতে।

    ওই যে রে তোর ঠোঁটের ছোঁয়ায়
    কি যে জাদু আজও ভাবায়,
    দুর্গম ভীষন সে উপত্যকায়
    তীব্র প্রেম স্পর্শ কামনায়।

    মনে আছে সেই রাতের কথা?
    রেখে ছিলাম তোর কোলে মাথা,
    কতো না জানি গল্প কথা
    আদরে সোহাগে ভোলায় ব্যথা।

    হারিয়ে যদি গেছিস এখন
    কেনো তবে অহর্নিশ স্মৃতিচারণ
    কেনোই বা তবে মনের মরন
    দিবানিশি দুঃখ যাপন!

  • কবিতা

    গল্প- ট্র্যাজেডি রিটার্নস

    ট্র্যাজেডি রিটার্নস
    -পায়েল সাহু

    ভারত বিখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রদীপ্ত সান্যাল একসময় দেশে বিদেশে ছুটে বেরিয়েছেন ইতিহাসের রসদ যোগানের সন্ধানে। জুওলজিক্যাল সার্ভের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন নিয়মিত। তাঁর লেখা বই আজ বিভিন্ন স্কুলের পাঠ্যপুস্তক। যদিও তা নিয়ে তাঁর তেমন গর্ব নেই, একেবারেই মাটির মানুষ এই প্রদীপ্ত সান্যাল।
    তবে এখন বয়স হয়ে গেছে, নানারকম রোগে জর্জরিত থাকেন তাই তাঁর স্ত্রী কিছুতেই তাঁকে আর একা কোথাও ছাড়েন না। প্রদীপ্তবাবুও মেনে নিয়েছেন তবে ঘরে বসেই পড়ে চলেন বিভিন্ন জার্নাল।

    কিছুদিন যাবৎ পুরোনো কলকাতার ইতিহাস নিয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে এমন এমন তথ্য পেয়েছেন তাতে তিনি কিছুতেই নিজেকে আর ঘরে বন্দী করে রাখতে পারছেন না। রাতের ঘুম উড়ে গেছে পুরোনো অভ্যাসে। মনে মনে প্ল্যান করে চলেছেন কি বলে বাড়ি থেকে বেরোবেন কারণ সত্যি কথা বললে তিনি কখনোই অনুমতি পাবেন না।

    অবশেষে ডাক্তারের appointment এর নাম করে বেরিয়েই পড়লেন একদিন।
    উদ্দেশ্য ফোর্ট উইলিয়াম সংলগ্ন অঞ্চল তবে এখনকার জনবহুল অঞ্চলে তিনি কতটা আবিষ্কার করতে পারবেন তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা তাঁর।
    কিছুটা ঘোরাঘুরির পর প্রয়োজনীয় তথ্য তেমন না পেয়ে অবশেষে ঢুকে পড়লেন পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে, তখন প্রায় বিকেল।
    এখানেই তার শেষ আশা, যদি কিছু প্রমাণ পান।
    সিমেট্রি এমনিতে ফাঁকাই তবে এই শেষ বিকেলে কেমন যেন গা ছমছমে। দিনের আলো এখনও রয়েছে তবু কিছুটা অস্বস্তির অনুভূতি নিয়ে এগিয়ে চললেন ভেতরের দিকে।
    আচমকাই চোখে পড়ে এক অতি বৃদ্ধ জরাজীর্ণ মানুষ বসে আছে একটি সমাধির সামনে। মানুষটির পোশাক একদম ইংরেজ সাহেবদের মতো, প্রদীপ্ত বাবুর মনে হলো ইনি বোধহয় কোনো ব্যান্ড পার্টির লোক, আর সেই uniform-এ চলে এসেছেন প্রিয়জনকে শ্রদ্ধা জানাতে। মানুষটির সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছায় প্রদীপ্ত বাবু এগিয়ে যান তার দিকে।
    “এই যে শুনছেন? আপনি কি ব্যান্ডপার্টির বাজনাদার? একমাত্র ওই ব্যান্ডপার্টিগুলোই এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে ইংরেজ আমলের এই পোশাক” সহাস‍্য মুখে কথাগুলো বলতেই কবরের ওপরে বসে থাকা ঘোলাটে দৃষ্টির মানুষটি বলতে থাকেন “১৫ই জুন, ১৭৫৬ ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নবাব সিরাজের সৈন্য। টানা পাঁচ দিন যুদ্ধের পর অধিকাংশ ইংরেজ সৈন্য পালিয়ে যায় আর বাকিরা আত্মসমর্পণ করি, আমাদের সকলকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ২০শে জুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ভিতর ১৫ ফুট বাই ১৮ ফুটের একটি ঘরে একসাথে আটকে রাখা হয়। পরদিন ২১শে জুন নবাবের আদেশে যখন কয়েদঘরের দরজা খোলা হয় তখন ১৪৩ জনের মধ্যে মাত্র ২৩ জন বেঁচে ফিরেছিলাম, বাকিরা শোচনীয়ভাবে মারা গেছিলো দমবন্ধ হয়ে, মানুষের ভারে, ঘাম, বমি আর মলমূত্রের গন্ধে নরক হয়ে ওঠা পরিবেশে। সেই ঘর থেকে বেঁচে ফিরেছিলাম, লিখে গেছিলাম সেই কুখ্যাত ‘ব্ল্যাকহোল ট্রাজেডি’।
    অবাক হয়ে শুনে প্রদীপ্ত সান্যাল বুঝতে পারেন লোকটির মাথার গন্ডগোল আছে কারণ তিনশো বছরের বেশি সময় আগের কথা বলছেন, তিনি যদি সেই লোক হন তাহলে তো তাঁর বেঁচে থাকাই উচিৎ নয়, কিছু না বলে আস্তে আস্তে উঠে পিছন ফিরে চলে আসতে গিয়ে হঠাৎ কি মনে হতে কবরের ওপরের নামের ফলকটা দেখতে যেতেই দেখেন জ্বলজ্বল করছে Jhon Hallowell এর নাম, যেন এই মাত্র বসানো হয়েছে ফলকটা।
    বেশ ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি পা চালাতেই হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যান মাটিতে, আর সঙ্গে সঙ্গেই অনুভব করেন তার ওপর যেন প্রচুর মানুষের শরীর, বহু চেষ্টা করেও কিছুতেই যেন সরাতে পারেননা, চারপাশে যেন প্রচুর ভিড়, দুর্গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ, ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে তাঁর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শরীরটার ওপর।

    শুধু কোনোমতে ঘাড় কাত করে দেখতে পান সামনে দাঁড়ানো সেই বৃদ্ধ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
    সমস্ত শক্তি দিয়ে তার ওপর ভর দিয়ে থাকা ছায়াশরীরগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষ করতে করতে একসময় নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে প্রদীপ্ত বাবুর দেহ।

    পরদিন সকালে সারা শহর চমকে ওঠে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রদীপ্ত সান্যালের মৃত্যুর খবরে।

    “ইতিহাসবিদ প্রদীপ্ত সান্যালের অস্বাভাবিক মৃত্যু। পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রির কাছে তাঁর মৃতদেহটি পাওয়া যায়, তাঁর মৃত্যু হয়েছে দমবন্ধ হয়ে। শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও তাঁর পাঁজর, কোমর এবং পায়ের হাড় ভাঙা ছিলো।”

    (ঐতিহাসিক ঘটনার দিন তারিখগুলি সংগৃহীত)

  • কবিতা

    কবিতা- মনের মৃত্যু

    মনের মৃত্যু
    পায়েল সাহু

    নিস্তব্ধতার আড়ালে জমছে এক আকাশ অভিমান,
    না বলা কথাদের সারি অভিযোগ বুনতে বুনতে আজ বাকরুদ্ধ।
    আশাহত হতে হতে ভালবাসারা আজ মৃত্যুমুখী।
    একটা মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে নির্বিকারে,
    বিনা রক্তক্ষরণে।
    ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা মিষ্টি হাসির নাম মন দিয়েছে “কৌতুক”।
    মনের আয়নায় আজ আর দাগ পড়ে না প্রেমিকের আদুরে আঁচড়ের,
    শরীরি সম্ভোগে সম্পর্ক বজায় রাখা আজ খেলাচ্ছলে।

    প্রতিবারের সঙ্গমে বদলা নেওয়া মৃত্যু পূর্ববর্তী প্রতিটি মুহূর্তের।
    চূড়ান্তভাবে ঠকে যাওয়ার বদলায় রক্ত ঝরে আদরের স্পর্শে,
    তবু ভাবলেশহীন মন তার অপঘাতে মৃত্যুর ঘৃণায় হাহাকার করে ওঠে প্রেমিকের অবুঝ আত্মার অস্তিত্বে।
    বুকের বোঝা নামাতে চাওয়ার তীব্র চাহিদায় মৃত্যু এসে দ্রুত কড়া নাড়ে ঘুণ ধরা ক্ষয়াটে মনের দরজায়।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- মৃত্যু উপত্যকা

    মৃত্যু উপত্যকা
    পায়েল সাহু

    রক্তাল্পতায় ভোগা মনের শরীর
    জীর্ণ শীর্ণ সুচারু মেকি হাসিতে,
    নিস্তব্ধতা খোঁজে একলা ভীষণ
    মৃত্যু উপত্যকা শ্রেণীতে।

    ভাঙছে জীবন স্লো পয়জেনে
    তবু দৃশ্যমানতায় শুভ্র তাজ
    গোপনাঙ্গে লুকোনো প্রেমের দাগে
    সুর সাধে স্মৃতির মন্তাজ।

  • গল্প

    কবিতা- স্পর্শের বিনিময়

    স্পর্শের বিনিময়
    -পায়েল সাহু

    শীতের কুয়াশার মতো মেঘ জমেছে শরীরে;
    বহুকাল অব্যবহৃত চাদরের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে মনে,
    দৃষ্টিহীন হওয়ার বাসনায় রাজপথে নেমেছে আজ অনুভূতিরা,
    মেঘলা আকাশের উত্তাপ ছুঁয়ে নিজেকে সেঁকতে প্রস্তুত বাসনা।

    অতৃপ্ত সুখের খোঁজে কর্দমাক্ত অজুহাতের শরীর
    নিষ্পাপ নিস্পন্দ দৃষ্টি ফেলে এগিয়ে যায় সম্মুখে,
    কয়লাখনি থেকে প্রাপ্ত কাঁচা হীরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েও,
    আবারও খুঁজে চলে মরা রৌদ্রের আঁচে নিজেকে উত্তপ্ত করতে।

    শত শত রঙিন ভাবনারা পা মুছে নেয় নোংরা চাদরে,
    তবু ঘরের এক কোণে পড়ে থাকে ভালোবাসাহীন স্পর্শের বিনিময়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- বন্দে দেবী

    বন্দে দেবী
    -পায়েল সাহু

    জাগো মা তুমি চিন্ময়ী রূপে,
    ছড়াও জ্ঞানের আলো,
    দশ দিক উদ্ভাসিত হোক,
    মুছে সব কালো।

    অনাহার মাগো সভ্যতার ভীষণ
    শ্রবণে অসভ্যতার ভাষণ,
    অসম্মান আর লাঞ্ছনায় নারীরা,
    বীভৎসতায় শিরোনামের কারণ।

    মোক্ষ দাও মা লুটেরাদের
    পিপাসা করো শান্ত,
    অনাহারে অত্যাচারে জীবন কাঁদে
    আগ্রাসনের লোভে মত্ত।

    রুদ্ররূপ ধারণ করো মা
    গ্লানির হোক বলি,
    প্রখর তেজে শুদ্ধ হোক
    ভাবনার অলি গলি।

    বরাভয় দাও মা পৃথ্বীরে
    দূর হোক জরা,
    অমর হোক শান্তি কেবল
    নির্ভয় হোক ধরা।

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- অভি

    অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    অভি
    -পায়েল সাহু

    রক্তিম, অভিনন্দা, অমৃতা, নীতা আর মৌলি কলেজ থেকেই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। যেখানে থাকে সেখানেই একসঙ্গে, যা করে একসাথে পরামর্শ করেই।
    রক্তিম আর নীতা একই অফিসে চাকরি করে এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে পরবর্তীকালে। মৌলি কলেজে পড়ায়, অমৃতা গৃহবধূ আর অভি মানে অভিনন্দার পেশা ফটোগ্রাফি।

    অভি নিজেকে ছেলে হিসেবেই ভাবতে ভালোবাসে, তার সাজপোশাক চেহারা সবটুকুই ছেলেদের মতো, এমনকি গলার স্বর অব্দি। তাই অচেনা কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে সে নিজের “অভি” নামটা বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। শুধু মনে নয়, কলেজে পড়ার সময় থেকেই সে বেশ বুঝতে পারে আর পাঁচটা মেয়ের মতো মানসিকতা তার নয়, ছেলেদের প্রতি সে কোনো আকর্ষণ বোধ করেনা বরং মেয়েদের তার ভালো লাগে বেশি, মেয়েলি শরীরের খাঁজ-ভাজ তাকে টানে, অসম্ভব আকর্ষণ বোধ করে, যদিও মনে মনে এসব ভাবলেও নিজের বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে কখনোই বলে উঠতে পারেনি, কিছুটা লজ্জায়, কিছুটা নিজের অস্তিত্ব সংকটে সমস্যায়।

    ফোটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পর আচমকাই মডেল হিসেবে তার কাছে উপস্থিত হয় রিয়া , নিজের পোর্টফোলিও বানানোর উদ্দেশ্যে। রূপসী রিয়াকে দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলে অভি (অভিনন্দা)। দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গায় ফোটোশুট করতে করতে অদ্ভুত একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয় দুজনের। প্রেমিক থাকলেও অভির আবেদন, অভির আন্তরিক ব্যবহার মুগ্ধ করে রিয়াকে। অভি ভীষণ ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে রিয়ার কাছে।

    ফটোশুট চলাকালীন পোশাক পরিবর্তনের সময় হঠাৎই নিজেকে উন্মুক্ত করে অভির কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরুপে মেলে ধরে রিয়া। কোনোরকম ক্ষতির সম্ভবনা না থাকায় দিনের পর দিন রিয়া শারীরিক ভাবে মিলিত হতে থাকে অভির সঙ্গে। আর অভিও ভেসে যায় আনন্দের সাগরে।
    ধীরে ধীরে অভির চেষ্টায় রিয়া একজন নামকরা মডেল হয়ে ওঠে। কিন্তু এসবের মাঝে প্রায় বছরখানেক অভি সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল নিজের প্রাণের বান্ধবীদের কাছ থেকে। যদিও এই সম্পর্ক, অভিনন্দার নিজের নতুন পরিচয় তার মা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি, সম্পূর্ণ রুপে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তার সঙ্গে।
    এই সময় হঠাৎ একদিন অমৃতার ছেলের অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণ পায় অভি। অনুষ্ঠানের দিন সে পৌঁছে যায় তার আদরের রিয়াকে সঙ্গে নিয়েই। যথারীতি বন্ধুরা সকলে অবাক হলেও সকলে হাসিমুখে মেনে নেয় তাদের অভির প্ৰিয় মানুষটিকে। বন্ধুদের সঙ্গে আবার নতুন করে যোগাযোগে সবার দিনগুলো হৈহৈ করে কাটতে থাকে।
    কিন্তু জীবন রং পাল্টায় প্রতি মুহূর্তে। সোজা সরল ভাবে সে চলতে শেখেনি। রক্তিম আর নীতার বৈবাহিক কলহ ভীষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে বন্ধুদের মধ্যে এবং ধীরে ধীরে সেটা এগোতে থাকে বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে। নিজের সন্তানের কথাও আর ভাবতে চায়না রক্তিম।

    অভি ভীষণ ভাবে চেষ্টা করে ওদের সম্পর্কটা জোড়া দিতে কিন্তু রক্তিম ট্রান্সফার নিয়ে নেয় অন্য রাজ্যে এবং সবার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই সময়গুলোতে অভি তার এককালের প্ৰিয় বান্ধবীকে যথাসম্ভব সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করে, খুশী রাখার চেষ্টা করে।

    ঠিক এই সময় রিয়া ধীরে ধীরে প্রফেশনাল ব্যস্ততা দেখিয়ে দূরত্ব বাড়াতে থাকে অভির সঙ্গে এবং তাকে দেখা যেতে থাকে মডেলিং এর বিভিন্ন আসরে তার পুরোনো প্রেমিকের সঙ্গে। দিশাহারা অভির ফোনটুকুও তোলার সময় হয়না রিয়ার, বরং ঘটা করে ফেসবুকে পোস্ট হয় রিয়া এবং তার প্রেমিকের বিয়ের এনগেজমেন্টের খবর। দুই দিশাহারা, হতাশাগ্রস্ত বান্ধবী নীতা এবং অভি (অভিনন্দা) আঁকড়ে ধরে নিজেদের। একজন স্বামীহারা, আর একজন? সঠিক সংজ্ঞা হয়তো নেই, ছিলোনা কোনোদিনই, তবে এই কথাটুকু স্পষ্ট হয়ে যায় রিয়া নিজের শরীর দিয়ে অভির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে জীবনে।

    পাঁচ বছর কেটে গেছে। রক্তিম আর ফিরে আসেনি, কোনো যোগাযোগ রাখেনি নীতার সঙ্গে, বদলে অভি বুক দিয়ে আগলে রেখেছে নীতা এবং তার সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে মিলিকে। হ্যাঁ পরিচয় অবশ্যই আছে তাদের, অভি নীতার বড়ো দাদা আর মিলির ভালো মামু।

  • গল্প

    গল্প- আতঙ্ক

    আতঙ্ক
    – পায়েল সাহু

    ঘরে ঢুকেই সৃজার খোলা ডায়েরিটার দিকে চোখ পড়ে প্রত্যুষের..ঘরে সৃজাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে পড়তে শুরু করে ডায়েরিটা,
    কোথাও কোনো সম্বোধন ছাড়াই লেখা শুরু..

    আমাকে বুঝতে চাও? তাহলে সমুদ্রকে দেখো….
    দিগন্ত বিস্তৃত পরিধি আমার, সূর্য মুখ লুকোয় আমারই কোলে, হেসেও ওঠে আমারই পরশে। দিবা রাত্রি বালুকাবেলায় আছড়ে পড়া উত্তাল, দুরন্ত ঢেউয়ের নাচনে প্রাণ চঞ্চল, সদা হাস্যময়ী আমি….ঢেউ পার করে অতলে গভীরে গেলে শান্ত, স্থির, অপূর্ব মোহময়ী আমি…. খুঁজতে চাও? তাহলে ভয় ভীতি ফেলে এসো আমার কাছে, আর যদি না চাও তাহলে আমার বালুতটে দাঁড়িয়ে প্রাণভরানো আনন্দ নাও।
    যত রাগ, দুঃখ, অভিমান, ভালোবাসা আমার সৈকতকে ঘিরে, ঐ বোঝে একমাত্র আমাকে, আমার প্রতিটি বিন্দুতে মিশে আছে আমায় ভালোবেসে…. বাকিদের জন্যে আমি ভীষণ উদাসীন, আনমনা। আপন করতে চাও আমাকে, কাউকে ফেরাই না আমি, দু’হাত বাড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নি…. কিন্তু তারাই সহ্য করতে পারেনা আমার নির্ভীকতা, আমার লবনাক্ত স্বাদ…. ফিরতে চাইলেই মুহূর্তে ফেরাতে পারি আমি। ফিরিয়েও দিই। তবু তবু… তারা ফিরতে চেয়েও ফেরে না, বসে থাকে আমার সৈকতে। অবাক হয়ে উপভোগ করে আমার ঢেউয়ের উন্মাদনা, অবগাহনে তৃপ্তি উপলব্ধি করে।
    আমি অতলান্ত গভীর, তল পাবে না যার.. উন্মত্ততার চরম সীমায় তোমায় নিয়ে যেতে পারি.. উচ্ছাস আনন্দে তৃপ্তি দিতে পারি..দৃষ্টিসুখের আশ্রয় হতে পারি.. শুধু আমাকে আগলাতে যেও না, আমাকে করায়ত্ত করার ভাবনা এনো না.. পারবে না। আমি শুধু বাঁধা পড়ে আছি আমার প্ৰিয় সৈকতের কাছে, যাকে পেরিয়ে আমায় ছুঁতে এলে ডুববে আচমকা, অপ্রস্তুত তোমার মুষ্টির ফাঁক দিয়ে নিমেষে গলে পড়বে সে… যে শুধু মিশে আছে আমার সাথে, একমাত্র সেই আমার অতল গভীর স্পর্শ করেছে.. মিশেছে আমাতে।
    ঐ যে বিশাল নীলিমা, ওর রূপে আমি মুগ্ধ…. সারাদিন ওর দিকে চেয়েই আনমনে কাটিয়ে দিই সারাবেলা।
    আমাকে অহংকারী ভাবছো? ভাবতেই পারো। তবে জেনো ভুল ভাবছো, আমি আত্মমগ্ন থাকতেই ভালোবাসি, নিজেকেই নিয়ে মত্ত থাকতে পছন্দ করি। ভাবছো আঘাত করবে আমায়? করতেই পারো, তবে সে আঘাত আমার লাগবে না, কারণ তুমি যে আমায় ছুঁতেই পারো না, তোমার আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় আমার নোনা জলের খানিক অবশ্যই ভেজাবে তোমাকে…
    নোনা জলের আঘাত আরামপ্রদ নয় জানো নিশ্চয়ই?

    জল ভেবে আমাকে পাত্রে বন্দি করবে ভেবেছ? চেষ্টা করতেই পারো, তবে ব্যবহার করতে পারবে না আমায়।
    যে নদীরা ছুটে এসে মেলে আমার মাঝে, আপন করে নিয়ে তাদের রাখি আমার কাছে, সে আসে স্বেচ্ছায় আসে, ভুল করেও যাই না আমি তাদের ধারায় মিলতে, আশ্রয় দিই বুকের গভীরে তাদের আমি, গড়ে নি নিজের মতো ঢঙে।
    কি ভাবছো…. বিরাট শক্তিশালী আমি? তা ভাবতেই পারো, সুনামি আনতে পারি যখন তখন।
    দূরেই থাকো বরং, মাঝে মাঝে এসে দেখে যেও, তোমার ভালোবাসার পথের অপেক্ষা করবো আমি। শুধু করায়ত্ত করার ভুল কখনো করোনা। পথ হারাবে অযথা..

    সৃজার ফেলে রাখা ডায়েরি আর এই কথাগুলো কি আমার জন্যই রাখা? ভাবতে চেষ্টা করে প্রত্যুষ
    আজ সকালে অফিস যাওয়ার আগেও সৃজার সঙ্গে প্রচন্ড ঝগড়া করেছে, তারপর বেরিয়ে গেছে না খেয়েই। সৃজার এই লেখালেখির চাকরিটা আর সহ্য হচ্ছে না
    প্রত্যুষের, ঐ তো কটা টাকা মাইনে, কি এমন রহস্য আছে যে কিছুতেই ঐ চাকরিটা ছাড়তে চাইছে না? কলেজ স্ট্রিটের অফিসটায় গিয়ে দেখেও এসেছে সে, নামেই অফিস, যেন আস্ত একটা গুদাম ঘর, অজস্র বই পত্রে ঠাসা, সৃজা আর দুটি ছেলে মেয়ে সংশোধন চলেছে রাতদিন সমস্ত নামী লেখক লেখিকাদের পান্ডুলিপি। কি এমন উৎসাহ পায় কে জানে। নাকি প্রত্যুষ নিজে রিপোর্টারের চাকরি করতে করতে একটু বেশি সন্দেহজনক হয়ে পড়েছে? ভাবার চেষ্টা করে নিজেই।
    সৃজার ডায়েরিটা নিয়ে আরো একবার পড়ার চেষ্টা করে, আচ্ছা সৈকত কে? সৃজার সঙ্গে কাজ করা ছেলেটা নাকি? আচ্ছা ওদের তবে প্রেম চলছে? আর এই নীলিমা নামটা মানে ঐ সৃজার সহকর্মী মেয়েটি, যে ওদের প্রেমে সাহায্য করছে?
    ভয়ংকর একটা চিৎকার করে প্রত্যুষ ডাকে সৃজাকে। সাড়া না পেয়ে আরো বেশ কয়েকবার। শেষমেশ নিজেই রান্না ঘরের দিকে আসতে অবাক হয় বেশ…
    রান্না ঘরের দরজা তো বন্ধ, শুধু রান্নাঘর কেন গোটা বাড়ির কোথাও নেই সৃজা, রাত দশটাতেও ফেরেনি নাকি? রাগে মাথাটা দপ দপ করতে থাকে প্রত্যুষের, বিয়ের মাত্র দু’ বছরের মাথায় সব শেষ হয়ে গেলো? ভাবতে পারেনা সে আর কিছু….
    পরের সাত দিন শুধু পাগলের মত খুঁজেছে, তারপর সাহায্য নিয়েছে পুলিশের, সমস্ত রাগ একসময় আতঙ্কে পরিণত হয়েছে যে সৃজা তার ওপর রাগ করে আত্মহত্যা করলো নাকি! কিন্তু পুলিশ এসে শুধু মাত্র রান্নাঘরের জানলা ভাঙা ছাড়া আর কিছুই আবিষ্কার করতে পারে না।
    —————————————————-
    এক বছর কেটে যাওয়ার পরেও সৃজার কোনো সন্ধান না পেয়ে প্রত্যুষ আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় তারই অফিস কলিগ রূপালীকে। পুরোনো অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে রূপালীকে সে বেশ খানিকটা স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে, একটি কন্যা সন্তান নিয়ে সুখী সংসার তাঁদের তবু মাঝে মাঝেই সে যেন স্বপ্ন দেখে সৃজাকে।
    বৌকে স্বাধীনতা দিলেও মেয়ে তুলির ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য রুপ প্রত্যুষের। একটু বড় হতেই মেয়েকে দার্জিলিং-এর হোস্টেলে পাঠিয়ে দিলেও মেয়ে বাড়ি আসলে যেন মাঝে মাঝেই অন্য মানুষ হয়ে ওঠে প্রত্যুষ। ভীষণ রক্ষনশীল আচরণ, শাসন আর চিৎকারে কুঁকড়ে থাকে তুলি।
    অদ্ভুত এই আচরণের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পায় না রূপালী।
    এই পরিস্থিতিতে আরো একবার বজ্রপাত ঘটিয়ে নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বসে তুলি।
    —————————————————-
    আজ একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক ফিরোজা আত্মপ্রকাশ করবেন, যার লেখা গল্প নিয়ে এর মধ্যে বেশ কিছু সিনেমা তৈরি হয়েছে, যার লেখনী যুবক যুবতীদের কাছে ভীষণ প্ৰিয়, পাঠকদের চাহিদায় আজ শেষ অব্দি তিনি প্রকাশ্যে আসতে চলেছেন। প্রথম সারির অনেক সংবাদপত্রই তার সাক্ষাৎকার নিতে আগ্রহী, সেই কারণে প্রত্যুষকেও তার অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে।
    আজ বাড়ি ফিরে মেয়েকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে তার, রূপালীর কাছে ফোনে মেয়ের কথা শুনে ইচ্ছে করছে যেন গলা টিপে মেরে ফেলে তুলিকে, ঠিক যেমন করে সৃজাকে..
    আজে বাজে ভাবনা ঝেড়ে প্রত্যুষ এগিয়ে যায় সামনের দিকের আসনের জন্যে। ঘিয়ে রঙ্গের তসরের শাড়িতে লাল মোটিফের কাজ করা, এক হাতে সোনার বালা, অন্য হাতে ঘড়ি, কাঁচা পাকা চুলের লেখিকাকে দেখে মাথাটা যেন কাজ করছিলো না প্রত্যুষের, সৃজা তবে মরেনি? সেই ফিরোজা? কিভাবে সম্ভব হলো এসব? হাজার চেষ্টা করেও যার খোঁজ পায়নি প্রত্যুষ, তাকে আজ হাজার আলোর সামনে দেখে নিমেষে আঁধার নেমে আসে প্রত্যুষের চোখে, মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে, মুহূর্তে মনে হয় চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু পারে না, সামলে নেয় নিজেকে, সৃজা থুড়ি আজকের ফিরোজা কিন্তু বেশ সাবলীল, যেন চিনতেই পারছেনা প্রত্যুষকে। যদিও আলাদা করে কথা বলার কোনো সুযোগ পায়না সে। আর পাঁচজন সাংবাদিকের মতোই সাধারণ কিছু প্রশ্ন সেরে ফিরে আসে বাড়ি।
    একরাশ প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে মেয়ে তুলিকে সামনে দেখে রক্ত চড়ে যায় মাথায়। হাতের কাছের ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে তেড়ে যায় তুলির দিকে, তুলিকে বাঁচাতে আসা রূপালীকে ক্ষত বিক্ষত করে তোলে মুহূর্তে, দিশাহারা তুলি প্রাণ বাঁচাতে কোনোক্রমে রাস্তায় বেরিয়ে ছুটতে থাকে আর ঠিক তখনই একটা গাড়ি এসে থামে তুলির সামনে, দরজা খুলে সৃজা শীঘ্র উঠে আসতে বলে তুলিকে। পেছনে পেছনে আসতে থাকা উন্মত্ত প্রত্যুষকে পেছনে ফেলে রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যায় সৃজার গাড়ি।
    —————————————————-
    রান্না ঘরে ঢুকে আচমকাই ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রত্যুষ সৃজার ওপর, চুলের মুঠি ধরে বারবার মাথাটা ঠুকে দিতে থাকে রান্না ঘরের দেওয়ালে। সৃজার কান্না, চিৎকার কোনোটাই যেন স্পর্শ করতে পারেনা তাকে। শুধু অদ্ভুত একরকম জান্তব গলার স্বর বেরোতে থাকে প্রত্যুষের গলা দিয়ে। একসময় সৃজার মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে দেখে তাকে ছুঁড়ে ফেলে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে চলে যায় প্রত্যুষ।
    সৃজা কতক্ষণ জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়েছিল জানে না, শুধু জ্ঞান ফিরে পেয়ে সে ফোন করে তার দাদাকে, কোনোমতে সমস্ত কথা বলে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে বলে প্রত্যুষের চোখ এড়িয়ে। সৃজার দাদা কয়েকজন বন্ধু নিয়ে এসে ভোর রাতে চুপিসারে রান্না ঘরের জানলা ভেঙে উদ্ধার করে নিয়ে যায় সৃজাকে।
    সৃজার সন্দেহটা এতদিনে সঠিক প্রমাণিত হয়, প্রত্যুষ আসলে বাই পোলার ডিসঅর্ডার রোগের স্বীকার।
    বাড়ির পাশের রাস্তায় কুকুরের ভীষণ চিৎকারে বিরক্ত প্রত্যুষ তাদের তাড়াতে যায়, পরদিন সকালে দেখা যায় বেশ কিছু কুকুরের মৃতদেহ, বাড়িতে কোনো পড়শি এলে আচমকা রূঢ় ব্যবহার সৃজাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করে। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেসব কোনো কিছুই মনে থাকতো না প্রত্যুষের।
    আর তাই প্রত্যুষের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর মৃত্যুভয় পেতে থাকে সৃজা, রাতারাতি তার থাকার সমস্ত ব্যবস্থা হয়ে যায় দার্জিলিং এর একটি লেডিস হোস্টেলে। আর এখানে থেকেই জীবনটা সুন্দর একটা দিশা পায় তার। কলেজ স্ট্রিটে চাকরিটা করার সময় থেকেই বিভিন্ন লেখক লেখিকার লেখা পড়তে পড়তে সৃজাও অবসর পেলেই ডায়েরিতে লিখতো ছোটো খাটো গল্প, প্রবন্ধ। দার্জিলিং-এ এসে এখানকার একটি স্কুলে চাকরি আর বাকি অবসর সময়টা চলতে থাকে ছদ্মনামে পুরোদমে লেখা লেখি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সেসব ছাপা হতে সৃজা ওরফে লেখিকা ফিরোজা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পাঠক মহলে।
    হঠাৎ এই স্কুলেই ছাত্রী হয়ে আসে প্রত্যুষের মেয়ে তুলি।
    স্কুলের খাতায় তার নাম ঠিকানা দেখে সৃজা জড়িয়ে নেয় তার জীবনে। নিজের পরিচয়ও জানায় তুলিকে।
    নিজের মেয়ের মতোই তাকে আগলে বড় করে তোলে সৃজা। জীবনকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পূর্ণ মাত্রায় বাঁচার শিক্ষা দেয় সে তুলিকে। যদিও সৃজার ব্যাপারে সমস্ত কথা তুলি তার মা রূপালীকে বললেও বাবাকে কোনোদিনই কিছু বলেনি।
    —————————————————-
    সৃজার কথামতো আজই তুলি ভবিষ্যতে তার অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানায় বাড়িতে, প্রত্যুষ যে সেটা কোনোমতেই মেনে নেবে না, বরং তুলির কিছু ক্ষতি করে ফেলতে পারে এটা ভেবেই সৃজা তার সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে রওনা হয়েছিলো প্রত্যুষের বাড়ির দিকে…..
    সেই রাতেই সৃজা আর তুলি পুলিশ স্টেশনে পৌঁছে প্রত্যুষের সমস্ত কথা জানায় এবং রূপালীকে উদ্ধার করতে বলে।
    পুলিশের সশস্ত্র একটি বাহিনী রওনা দেয় প্রত্যুষের বাড়ির উদ্দেশ্যে। অর্ধমৃত রূপালীকে উদ্ধার করা গেলেও প্রত্যুষ অধরাই থেকে যায়।
    হারিয়ে যায় চিরকালের মতো, রেখে যায় তার পরিবারের প্রতিটি মানুষের জন্যে সারাজীবনের মতো প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয়

    ————————————–সমাপ্ত————————

  • কবিতা

    কবিতা- ভাগীদার

    ভাগীদার

    – পায়েল সাহু

    আমার একটা বন্ধু ছিলো কুটকচালি করার
    সারাটা দিন আবোল তাবোল হাজার রকম বকার,
    আমার একটা বন্ধু ছিলো ভীষণ শাসন করার
    পান থেকে খসলেই চুন, বকুনি জুটতো দেদার।
    আমার একটা বন্ধু ছিলো দেমাক ভীষণ তার
    শখ ছিলো তার সবার ওপর ছড়ি ঘোরাবার,
    আমার একটা বন্ধু ছিলো ভীষণ নরম মনের
    মন খুলে তাই সমস্ত কথার ছিলো সঙ্গী প্রাণের।
    আমার একটা বন্ধু ছিলো হাসি খুশি মজার,
    রাগী হলেও ভালো সে বাসতো আমায় অপার।
    আমার বন্ধু হারিয়ে গেছে আঁধার পথের ধারে
    চোখ ফেটে জল মানেনা বাঁধা, খুঁজি কোথায় তারে?
    বন্ধু আমার প্রাণের ভিতর, বাঁধন সুক্ষ্ম সুতার,
    আজও আমার মনের কথার সেই শুধু ভাগীদার।

You cannot copy content of this page