-
কবিতা- খোলা চিঠি
খোলা চিঠি
-পায়েল সাহুকতো দিন তোমার ফোন আসেনি শুভ,
কতদিন মাঝ রাতে আচমকা তোমার ফোনে ঘুম ভাঙ্গেনি।
ছেলের ছোটো ছোটো দুষ্টুমি আর মজার কথাগুলো তোমাকে জানানো হয়নি কতোদিন…
মাঝরাতের ফোনে তোমার সেসব মিথ্যে ভয় দেখানো
বা আমাকে দেখতে চাওয়ার হুকুম,
অনন্ত কাল কথা বলে যাওয়ার আবদার,
তোমায় ঘুম পাড়ানোর সেসব ভালোবাসা
হারিয়ে ফেললাম সব?
সত্যি কি তাই?
সত্যিই কি তুমি নেই?
চোখ দিয়ে জল আপনাআপনি গড়িয়ে পড়ে জানো।
মনে হয় এই তো কটাদিন,
তুমি আবার ফোন করবে, ছেলেকে ছেড়ে তুমি থাকতে পারবেই না,
আমার কথা না হয় বাদই দিলাম।
চোখের সামনে ভাসে শেষের দিনের ছবি…
চলে যাওয়ার আগে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলে বুকে!
ভাবতে পারিনি ওটাই তোমার শেষ আদর
ওটাই তোমার শেষ ছোঁয়া!
কি অপরাধে ছেড়ে গেলে আমাকে তাও জানতে পারলাম না।
তুমি থাকতে থাকতে তো বুঝিনি এমনভাবে ভালোবাসি তোমাকে,
তখন তো বুঝিনি তুমি না থাকলে বুকটা ফেটে যাবে…
নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করেছিলাম!
জানিনা…
আজ আর কিছুই বুঝতে পারিনা,শুধু দীর্ঘশ্বাস পড়ে শুভ,
তোমার সে আলিঙ্গন বহুদিন অব্দি শিহরিত করেছে আমায়,
চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করেছি তোমায়…
আর ভেবেছি,
এখনো ভাবি…তুমি ফিরবে আবার,
আবার জড়িয়ে নেবে তোমার বুকের গভীরে,
আবার উত্তপ্ত হবে আমাদের ঠোঁট, শরীর
ভিজবে মন অঝোর বরষায়…
ফিরে এসো…ফিরে এসো তুমি।
অধিকার দাবী করবো না আর ভুল করেও,
ভিখারিণীর মতো করে প্রেম ভিক্ষা করছি না,
ওটা তোমার ছিলো না কোনোদিনই,
উপলব্ধি করিনি কখনো।
তবু ভিক্ষা করছি তোমার সঙ্গ…
তোমার স্পর্শ,
শুধু আমার জন্য নয়, তোমার বংশধরের জন্যেও।
ফিরিয়ে দাও আবার সে আদুরে মুহূর্ত
সন্তান সুখে তোমার মুখের লক্ষ টাকার হাসি,
পিতৃত্বের দাবীতে তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা,
ফিরিয়ে দাও আমার আবার সেসব সুখের জল আল্পনা। -
গল্প- বৃষ্টি আদর
বৃষ্টি আদর
-পায়েল সাহুনন্দিতা সুন্দরী, তন্বী, গুণবতী নৃত্যশিল্পী তাই তার গুণমুগ্ধ ভক্তের অভাব হয় না। ফেসবুকের পেজে অজস্র ভালোলাগা মন্তব্যে ভরে যায় নন্দিতার প্রতিটি ছবি, অবশ্য সঙ্গে ইনবক্সও।
নন্দিতা যে এসব উপভোগ করে না এমন নয়, ভালোই লাগে তার, তবে মন ভরে না। কোথাও যেন কিছু খামতি থেকেই যায়। এইটুকু বুঝতে পারে কেউ তাকে নয় তার শরীরটাকে চায়।
সেই জন্য আজকাল কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে সে।
শুধু আকাশ ভাঙা বৃষ্টি এলেই নিজেকে স্নান করিয়ে চোখের নোনা জলের ধারায় একাকীত্ব যাপনের উৎসব করে নন্দিতা।কিছুদিন হলো নন্দিতার মায়ের জন্য একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট আসছেন বাড়িতে, ছেলেটির নাম সৌরভ, তার থেকে বয়সে কিছুটা ছোটো কিন্তু তার চোখের উজ্জ্বল দৃষ্টি, কথা বলার ভঙ্গিমা, দৃপ্ত চেহারা আকর্ষণ করে নন্দিতাকে। নানা অছিলায় নন্দিতা আসে সৌরভের সঙ্গে কথা বলতে, কেমন যেন মনে হয় সৌরভ বসে শুধু কথা বলে যাক, আর নন্দিতা মোহগ্রস্তের মতো শুনে যাক।
ক্রমশ দুজনের বন্ধুত্ব বাড়তে সময় নেয় না, whatsapp এ সারাদিন একে অন্যের ইনবক্সে নিছক বন্ধুত্বপূর্ণ কথা চালাচালি করে চলে। ভীষণ আপন, ভরসা যোগ্য মনে হয় সৌরভকে।
এতো দিনে সৌরভ এইটুকু জেনে গেছে যে ভীষণ একাকীত্ব বোধ করা নন্দিতার বৃষ্টিতে ভেজা ভীষণ পছন্দের। তাই গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি যখন আজ সকালেও থামলো না, সৌরভের ছোট্ট একটা msg ঢুকলো নন্দিতার ইনবক্সে “যাবে নাকি নদীর ধারে এই বর্ষায় নতুন করে নিজেকে খুঁজে নিতে? সঙ্গী হিসেবে যদি আমাকে চাও তাহলে বলবো আমি তৃপ্ত হতে চাই এই রুপোলি বর্ষণ ধারায় নিজেকে তোমার মধ্যে খুঁজে পেতে।”
ছোট্ট মিষ্টি মেসেজটা পড়ে উথাল পাথাল ঢেউয়ের দোলায় ভাসতে ভাসতে নন্দিতা যে কখন পৌঁছে গেছে নদীর ধারে, সে নিজেও জানেনা। কিন্তু সৌরভ কই? অচেনা জায়গায় একাকী পরিবেশে অর্ধসিক্ত নন্দিতার যেন মোহভঙ্গ হয়। এতদিন ধরে করে আসা নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই নিজে দোষারোপ করতে থাকে বারবার। চোখের আগলটা যে কখন খুলে গেছে বুঝতেই পারেনি নন্দিতা। প্রচন্ড বৃষ্টির ধোঁয়াশার মধ্যে গঙ্গার জোয়ারের জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় পায়ে পায়ে এগোতে থাকে জলের কাছাকাছি।
হঠাৎ করেই কোমরের কাছে একটা ভেজা হাতের স্পর্শে আমূল কেঁপে ওঠে নন্দিতা। “এগিয়ে যাচ্ছো আমাকে পেছনে ফেলেই? আমি যে তোমার সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি, পূরণ করবে না তুমি?” সৌরভের গলা কানে যেতেই যেন ধ্যানভঙ্গ হয় নন্দিতার। সৌরভের বুকের কাছে সরে এসে ছাতাটা দিয়ে আড়াল করে নন্দিতা বলে ওঠে “এমন ভাবেই আগলে রেখো আমাকে, যেন তোমার আমার মধ্যে এক ফোঁটা বৃষ্টির মতো ভুল বোঝাবুঝির জায়গা না থাকে।”
আদরে সোহাগে ভরিয়ে দেওয়ার নিরবিচ্ছিন্ন মুহূর্ত অনবরত সৃষ্টি হতে থাকে সৌরভের চওড়া বুকের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। -
অণু কবিতা- নক্ষত্রের চোখ
নক্ষত্রের চোখ
-পায়েল সাহুভুলে যাওয়ার অখন্ড অবসরে,
জোর করে বিস্মৃত হওয়ার চেষ্টার ধ্বংসাবশেষ ফুঁড়ে
উঁকি দেয় মৃতবৎসা এক নক্ষত্রের চোখ।
ভালোবাসার নীরব অধিকারের প্রশ্নের উত্তরে
চেয়ে থাকে শুধু আকুল হয়ে।
চির বিচ্ছেদের অন্ধকারে হারিয়েও,
মনের একফালি কুঠুরির দমকা বাতাসে
ভেসে ভেসে আসে তার আগুনে অস্তিত্বের সুগন্ধ। -
গল্প- মধুমাসের আলিঙ্গনে
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
মধুমাসের আলিঙ্গনে
-পায়েল সাহুহ্যাঁ, ওরা ভালোবাসে দুজন দুজনকে, শত অমিল, ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া সব কিছু পার করেও শেষ পর্যন্ত একসাথেই হাত ধরে চলে |
ওরা নীলাভ আর চন্দ্রিমা | দুজনেই বিবাহিত এবং জমিয়ে সংসার করে ছেলেমেয়ে নিয়ে, তবু কোথাও একটা বড়ো ফাটল ছিলো লোকচক্ষুর অন্তরালে দুজনের সংসারেই, যতটা ফাটল থাকলে একটা গোটা মানুষ ঢুকে পড়তে পারে অন্যের মনের জগতে, দখল নিতে পারে অন্যজনের সম্পূর্ণ অস্তিত্ত্বের |
নীলাভ বেশ বড়ো মাপের ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, সমস্ত দিনের ব্যস্ততা সামলেও তার শখ কবিতা পাঠ এবং আবৃত্তি করা, অন্যদিকে চন্দ্রিমা বহুদিন ধরে বাচিক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং বেশ নামী শিল্পী |
আলাপের সূত্র বাচিক শিল্প হলেও সম্পর্কটা বন্ধুত্ব থেকে আরো বেশিদূর এগোতে সময় নেয়নি |অথচ কেউই তার সংসারের ফাটলের কথা কখনো কারো কাছে স্বীকার করেনি, শুধু অনুভব করেছে অন্যের একাকিত্বের, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত রকম অভ্যাস হয়ে উঠেছে একে অপরের |
দিনটা ছিলো পয়লা বৈশাখ, শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরিতে অনুষ্ঠিত অপূর্ব এক সাহিত্য বাসরে অংশগ্রহণ করতে এসেছিলো ওরা দুজন, বাচিক স্কুলের আরো অনেকের সাথেই |
কিন্তু ফেরার সময় কিভাবে যেন আলাদা হয়ে গেলো সবার থেকে, হয়তো বা ইচ্ছে করেই | অবশ্য এমনটাই প্ল্যান ছিলো ওদের, দুজনে একা হওয়ার | নাই বা হলো নিভৃতি, তবু পাশাপাশি হাত ছুঁয়ে হাঁটা, দুজনের হাজার কথা বলা, একসাথে পাশাপাশি বসে বাড়ি ফেরার সময় টুকু একসাথে থাকা | ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়ার সময় কেউ তো কাউকে দেখতে পায়না, তাই মুখোমুখি, পাশাপাশি বসে বন্ধুত্বের উদযাপন করার সুযোগ নিলে ক্ষতি কি !
কিন্তু ওরা যখন সত্যিই একা হলো,সামান্য একটু কথার পরেই দুজনেই যেন খেই হারিয়ে ফেললো, কি যেন বলার ছিলো, কি যেন অভিযোগ ছিলো, শুধু চুপ করে পাশাপাশি আঙুল ছুঁয়ে ফেরার গাড়িতে বসে রইলো ওরা,মাঝেমাঝে দুজন দুজনের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে চাওয়া ” আমার সব টুকুই তোমার, যা কিছু ভুল বোঝা ছিলো, আজ অনুভব করে নাও, সেসবই যে মিথ্যা “|
নেমে যাওয়ার সময় আগে এলো চন্দ্রিমার, বিদায় বেলায় নীলাভ আকুল হয়ে শুধু দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো চন্দ্রিমার হাত, চন্দ্রিমার চোখে তখন টলমল করছে মুক্তোর মতো অশ্রুবিন্দু |
নীলাভর চোখের মৃদু শাসনে মৃদু হাসিতে মুখ ভরিয়ে চন্দ্রিমা বলল ” এই স্পর্শটুকু সঞ্চয় করে রাখবো চিরকাল “|
চন্দ্রিমাকে বিদায় জানিয়ে নীলাভ যেন আজ নতুন হলো, নতুন পুরুষ হলো কারো জীবনে, বিগত পাঁচ বছরের সম্পর্কে যেন নতুন রং দিয়ে গেলো মধুমাসের প্রথম দিন, চন্দ্রিমার উষ্ণতার পরশে সত্যিই যেন বৈশাখ ছুঁয়ে গেলো তাকে , তার সলজ্জ দৃষ্টির ভাষায় যেন নতুন করে চিনলো তার প্রেয়সীকে | এ কি সত্যিই পরকীয়া?? নাকি বন্ধুত্বের থেকে আরো কিছু বেশি ভরসায়,বিশ্বাসে, আবদারে, অভিযোগে গড়ে ওঠা এক মধুর সম্পর্ক | নিজের মনেই হেসে ফেলে নীলাভ, অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকা সহযাত্রীদের দৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ প্রাণখোলা আনন্দে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠলো
” দুচোখে হঠাৎ করে কালবৈশাখী/
চৈত্রের শেষ বেলা পাতা ওড়ে নাকি?/
গত বছরের মায়া ভেঙে যাবে বলে,/
রাজপথ ভেসে গেছে অচেনা কাজলে,/
তুমিও অঝোরে তাকে শুধু ভালোবেসো… এসো হে বৈশাখ, এসো এসো “|সমাপ্ত
-
গল্প- উজান
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
উজান
-পায়েল সাহুজ্বরে মাথা তুলতে পারছেনা উজান | কালীপুজোর আর দুদিন বাকি অথচ চ্যাটার্জি পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা এখনো ওর আশাতেই বসে আছে | উজানের মতো চৌকস ছেলে আর একটাও নেই এ পাড়ায়, যেমন পড়াশোনা তেমনি খেলাধুলো তেমনি team ম্যানেজমেন্ট| সবাইকে একজোট করিয়ে কিভাবে কোনো অনুষ্ঠান সামলাতে হয় উজান বেশ ভালো জানে|
কালীপুজোটা প্রতিবছর বেশ অন্যরকম ভাবে পালিত হয় চ্যাটার্জি পাড়া নবযুবক ক্লাবে |
প্রতিমা নিজে হাতে গড়ে উজান আর প্যান্ডেল সাজানোর কাজ ক্লাবের বাকি ছেলেরা করে | কালীপুজোর পরদিন কিছু অসহায় গরীব মানুষদের নতুন বস্ত্রদান, খাওয়ানো, ওই বাচ্ছাদের নিয়ে বাজি ফাটানো… বেশ কয়েকবছর ধরে নবযুবক ক্লাব সকলের ভালোবাসার জায়গা হয়ে উঠেছে|
সন্ধ্যাবেলায় বসে ক্লাবের জলসা,সেখানেও উজানের গানেই আসর শুরু, পাড়ার কচি কাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্করা অব্দি খুব আনন্দ সহকারে অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে|
কিন্তু এবারে কি হবে ভেবে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ক্লাবের নৈঋত, বিশাখ, পলাশ, নির্বাণ, শ্রেয়ানের | মূর্তি গড়া শেষ হলেও সাজসজ্জা কিছুই করতে পারেনি এখনো| প্যান্ডেলের কাজও খাপছাড়া হয়ে আছে, আসলে উজানের শরীর খারাপে ভীষণ মনমরা ওরা সকলেই |
এবারের ঠাকুর গড়ার পর আশ্চর্য হয়ে উজান দেখেছে প্রতিমার মুখ বার বার তার স্বপ্নে আসা এক নারীর মতো | নাহ, উজান তাকে চেনে না, কোনোদিন দেখেওনি, তবু রাত হলেই সেই মুখ তাকে দেখা দেয় বারবার| অনেক প্রশ্নও করে উজান তাকে, কিন্তু কোনো জবাব সে দেয়না, শুধু স্মিত হেসে কখনো উজানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, কখনো বা তার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে উজান |একদিন দুদিন নয়, বেশ কয়েকবছর ধরেই এমনটা হচ্ছে, কিন্তু সবকিছুই স্বপ্নে হলেও বড্ড বেশি যেন বাস্তব | ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে নিজের মায়ের জায়গায় তাকে কল্পনায় জড়িয়ে উজান শুয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ | নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসেও ফেলে | এসব কথা কখনো কাউকে বলেনি উজান, বন্ধু বান্ধব শুনলে হয়তো হাসবে, আর সবচেয়ে কাছের মানুষ যে হতে পারতো, সেই “মা “একদম ছোট্টবেলায় উজানকে ছেড়ে আকাশের তারা হয়ে গেছে |তাই কাউকেই বলা হয়নি আর|মায়ের মৃত্যুর কারণ টা চিরকালই তার কাছে এক রহস্য |বাড়িতে ওর মায়ের কোনো ছবিও বাবা রাখতে দেননি |
ছোট্ট থেকেই কালী ঠাকুরের প্রতি বিশেষ এক আকর্ষণ অনুভব করে উজান|ওর মায়ের গায়ের রংও শুনেছে খুব কালো ছিলো, তাই হয়তো মা কালির মধ্যেই নিজের মা কে খোঁজার চেষ্টা করেছে বার বার |মনের যত দাবী দাওয়া তার কাছেই বলেছে |ছোটো থেকেই বাবার সঙ্গে উজানের এক অনাকাঙ্খিত দূরত্ব |আর সেসব কারণেই খুব শ্রদ্ধাসহকারে ক্লাবের কালীপুজোর সমস্ত আয়োজন করে প্রতি বছর|ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ক্লাবের ছেলেদের কাছে খোঁজ নিয়ে গেছে রিমলি, ওরা সবাই জানে উজান আর রিমলির মধ্যে কিছু একটা চলছে কিন্তু সেটা উজান কখনো স্বীকার করেনি তবে ওরা আন্দাজ তো করতেই পারে | এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসিও কম করেনা ওরা|
আজ হঠাৎ রিমলি প্রস্তাব দিলো ওকে উজানের বাড়ি নিয়ে যেতে হবে, সে নিজে পঞ্চানন মন্দিরে পুজো দিয়ে ফুল নিয়ে এসেছে উজানের মাথায় ছোঁয়াবে বলে |কিন্তু উজানের বাড়ি কখনো যায়নি বলে সাহসে ঠিক কুলোচ্ছে না |
নৈঋত আর শ্রেয়ান খানিক গাঁইগুই করে রিমলি কে নিয়ে চললো উজানের বাড়ির দিকে | উজান বাড়িতে একাই থাকে সারাদিন , ওর বাবা চাকরি করেন, বাড়িতে অবশ্যই কাজের লোক, রান্নার লোক আছে, এরাই মূলত দেখভাল করে উজানকে|
ওরা তিনজনে পৌঁছতে দরজা খুলে দিয়ে রান্নার মাসি উজানের ঘর দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন তার কাজে |ওদের দেখে আধশোয়া হয়ে উঠে বসে উজান| চওড়া লাল পেড়ে ঘিয়ে শাড়ি,কপালে সিঁদুরের টিপ, মুখের দুপাশ থেকে উপচে পড়া অবাধ্য চুল সরাতে ব্যস্ত সুন্দরী রিমলি যেন আরো অপরূপা হয়ে উঠেছে| গায়ের রঙ কালো হলেও সুন্দরী রিমলি উজানের মুগ্ধ দৃষ্টি ছুঁয়ে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে |
রিমলি কে বাড়িতে আসতে দেখে উজান একই সঙ্গে ভীষণ অবাক ও আনন্দিত, যদিও কোনোটাই প্রকাশ না করে খুব শান্ত স্বরে সকলকে বসতে বলে|রিমলির কাছে সময় চেয়ে নিয়ে পুজো নিয়ে জরুরী কিছু আলোচনাও মুহূর্তে সেরে ফেলে বন্ধুদের সঙ্গে|পুজো সংক্রান্ত বেশ কিছু দায়িত্ব দিয়ে দেয় বন্ধুদের |আলোচনা শেষ হতেই ব্যস্ত হয়ে নৈঋত আর শ্রেয়ান উজানের কাছে বিদায় নিয়ে ক্লাবের দিকে রওনা দেয়| পুজোর আয়োজন নিয়ে যাবতীয় বাকি কাজ যত শীঘ্র সম্ভব শেষ করে ফেলতে হবে এবং কিভাবে সেটাও উজান বুঝিয়ে দিয়েছে ওদের|
রিমলি এতক্ষন ওদের কথার মধ্যে না ঢুকে একা একাই বাড়িটা ঘুরে দেখছিলো, ছোট্ট কিন্তু ছিমছাম সাজানো গোছানো |নৈঋত আর শ্রেয়ানের সঙ্গে ব্যস্ত থাকার জন্য প্রসাদী ফুলটা ছোঁয়ানোর সুযোগ পায়নি উজানের মাথায় | এখন ওদের দুজনকে বেরিয়ে যেতে দেখে তাড়াহুড়ো করে উজানের ঘরে ঢুকে প্রসাদী ফুলটা ওর মাথায় ছোঁয়াতে যেতেই পায়ে শাড়ি জড়িয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই উজান মুহূর্তের মধ্যে রিমলির কোমর টা জড়িয়ে টেনে আনে বুকের কাছে |
প্রবল এক আকর্ষণে নিমেষে এক হয়ে যায় দুজনের ঠোঁট, আদরে আদরে ভরিয়ে তুলে আবেগ আর বাঁধ মানতে চায়না দুজনের |
শরীরের সব আবরণ সরিয়ে দুজনে মিশে যায় দুজনের শরীরে |ওদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলেও কাছে আসা এই প্রথম| আচমকাই ঘটে যাওয়া ঘটনায় সারাজীবনের সঙ্গী হওয়ার অঙ্গীকার আরো দৃঢ় হয় দুজনের|
সেদিন রাতেই উজান বাবা কে রিমলির কথা জানায় কিন্তু তিনি রিমলির ছবি দেখে এক কথায় নাকচ করে দেন, উজানকে জানান তার একমাত্র ছেলের বৌয়ের গায়ের রঙ কালো হোক তিনি চান না |উজানের কোনো কথাই তিনি শুনতে চান না |
অদ্ভুত ভাবে সেদিন থেকে উজানের স্বপ্নে আসা সেই নারী মুখের আসাও বন্ধ হয়ে যায়|কালীপুজোর সকালে শরীর টা বেশ ঝরঝরে লাগতেই ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় উজান, সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে লেগে যায় |
রিমলিকে কিন্তু এই দুদিন কেউ দেখতে পায়নি, উজানও যে খোঁজ নিয়েছে এমনটা নয়| পুজোর মণ্ডপেও না দেখে সন্ধ্যাবেলা রিমলিকে ফোন করতে ফোন টা switch off আসে |
পুজোর কাজ মিটতে মিটতে প্রায় ভোর রাত্রি, বাড়ি না ফিরে ক্লাবেই সব ছেলেরা শুয়ে পড়েছিল বিশ্রাম নিতে |
ভোররাতের ঘুমের ঘোরে উজান আবার স্বপ্ন দেখে তার এতো বছরের স্বপ্নে আসা নারীকে | আজ তিনি স্ব মহিমায় কালী মূর্তিতে, হাতে উদ্যত খাঁড়া নিয়ে, উজানকে ডেকে তিনি বলেন “যেদিন তুই নিজের পুরুষ সত্ত্বার প্রমান দিলি নারী সঙ্গমে, তার সাথে জীবন কাটাবার, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তুই স্বীকার করলি, তবে কেনো এতো উদাসীন এখনো নিজের জীবন সঙ্গিনীর প্রতি ?
তোর মায়ের জায়গায় স্থান দিয়েছিলি আমাকে, এতো বছর তোকে আগলে রেখেছি | এখন আর আমার প্রয়োজন নেই, যে তোকে সারাজীবন আগলে রাখবে সে এসেছে তোর জীবনে|কিন্তু আজ সেও আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে শুধু মাত্র গায়ের রঙ কালো হওয়ার হীনমন্যতায় ঠিক যেমন তোর মা করেছিলো “|এতগুলো কথা বলে তিনি মিলিয়ে যান|
আচমকা ঘুম ভেঙে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে উজান | কোনো দিকে না তাকিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড় লাগায় রিমলির বাড়ির দিকে |
কাকডাকা ভোরে রীতিমতো হইচই বাঁধিয়ে দেয় উজান রিমলির বাড়িতে, হতবাক রিমলির মা বাবার চোখের সামনে রিমলির ঘরের দরজা ভেঙে উজান উদ্ধার করে রিমলির খুব ধীরে ধীরে শ্বাস পড়া অচেতন দেহ |মেলে একটি খালি হওয়া ঘুমের ওষুধের শিশিও |
তড়িঘড়ি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পথেই উজান শোনে তার বাবা গতকাল সন্ধ্যায় রিমলিদের বাড়ি এসে সমস্ত পাড়া প্রতিবেশীর সামনে প্রচন্ড অপমান করে গেছেন রিমলি ও তার বাবা মা কে |গায়ের রঙ কালো মেয়েকে তিনি কখনোই বাড়ির বৌ হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না এটাও জানিয়ে দিয়ে গেছেন |
বিকেলের দিকে রিমলি সুস্থ হতেই উজান মুখোমুখি হয় ওর বাবার|এতো বছর বাদে জানতে চায় মায়ের মৃত্যুর কারণ |সঙ্গে এও জানায় যদি সে সদুত্তর না পায় তাহলে তার মা এবং রিমলিকে আত্মহত্যার প্ররোচনার দেওয়া অপরাধে জেলের ঘানি টানাতেও পিছু হটবেনা |
ছেলের রুদ্র মূর্তির সামনে ভেঙে পড়েন বাবা| ” তোর মায়ের সঙ্গে সমন্ধ করেই বিয়েটা হয়েছিলো আমার, কিন্তু গায়ের রঙ কালো হওয়ায় কোনোদিন তাকে ভালোবাসতে পারিনি ;ঘৃণা করেছি, অনেক অত্যাচার করেছি|বিয়ের বছর ঘুরতেই তোর জন্ম | আমার মতো তোর গায়ের রঙ ফর্সা হওয়াতে তোর মায়ের ওপর আমার আক্রোশ আরো বেড়ে যায়, প্রতিদিনই তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতাম |আর তাই একদিন রাতে সে বেরিয়ে যায় আর ফেরেনি, আমিও খোঁজ করিনি|দুদিন পর তার লাশ ভেসে উঠেছিলো রেললাইনের পাশের পুকুরে|আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস বাবা ” বলে কাঁদতে কাঁদতে উজানকে জড়িয়ে ধরতে যেতেই উজান বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করা পুলিশ অফিসারকে ডেকে তার হাতে বাবাকে তুলে দেয় | “এতো বছর পরেও নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয়েও গায়ের কালো রঙের ওপর থেকে তোমার ঘৃণা যায়নি বাবা, যদি যেতো রিমলির বাড়ি গিয়ে পাড়ার সবার সামনে অপমান করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আসতে না ;তুমি শাস্তি না পেলে যে স্বয়ং মা কালী আমাকে ক্ষমা করবে না বাবা “এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বাবাকে বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে শুয়ে পড়ে উজান |কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে জানেনা, আজ আবারও দেখলো তার স্বপ্নে আসা সেই ভীষণ পরিচিত নারীকে |তিনি হাত নেড়ে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছেন আর বলছেন “তোর মধ্যে আমার সমস্ত শক্তি রইলো, পাপীকে শাস্তি দিয়ে জ্ঞানের আলোয় সমাজকে উজ্জ্বল করে তোলার দায়িত্ব রইলো তোর ওপর “| ঘুম ভাঙতেই উজান দেখলো শেষ রাতের শুকতারাটা ওর দিকেই তাকিয়ে যেন হেসে অভিনন্দন জানাচ্ছে নতুন দিনের শুরুর |সমাপ্ত
-
রম্য- রসভঙ্গ
রসভঙ্গ
-পায়েল সাহুদত্ত বাবুকে মনে আছে তো সবার?
সেই যে আগের বার পাড়াতুতো ভায়রাভাইয়ের শালীকে নিয়ে সেই ঘটনায় সোনামনি বৌদির দাওয়াইয়ের পর আর ঘেঁষেন নি তার “মনি”র দিকে।
তা যাকগে যাক, ওসব পুরোনো কথা। এখন আসি নতুন গল্পে।
দত্ত বাবুর পাশের পাড়ায় নতুন একটি মেয়ে এসেছে, মনে মনে যাকে “ফুলঝুরি” বলে ডাকেন দত্তবাবু। তা এই “ফুলঝুরি” অবিবাহিত, স্মার্ট, বয়স যাই হোক না কেনো দেখে 26 এর বেশি মনে হবে না। একই বাসে রোজ যাতায়াতের সূত্রে দত্ত বাবু ইনিয়ে বিনিয়ে আলাপটা ঠিক করেই ফেললেন। তারপর কখনো রেস্টুরেন্টে, কখনো সিনেমা হলে দেখা যেতে লাগলো দুজনকে।
এদিকে দত্ত বাবুর সেই পাড়াতুতো ভায়রাভাই বেণী বাবুর নজরে পড়তেই তিনি সটান চলে গেলেন দত্ত বাবুর স্ত্রী সোনা বৌদিকে এসব জানাতে।
ব্যাস আর যায় কোথায়….
সোনা বৌদি তো এসব শুনে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে, রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বেণী বাবুকে এই মারে কী সেই মারে, মানে দত্তবাবুর ওপরের রাগটাই আর কী হাতের সামনে বেণী বাবুকে পেয়ে……
অনেকক্ষণ শলা পরামর্শ করার পর দুজনে বেশ খানিক হো হো করে হেসে উঠলেন।
ওদিকে দত্ত বাবু বাড়ি ফিরে দেখলেন তার বৌ বাপের বাড়ি গেছে, দুদিন পর ফিরবে, একটা কাগজে লিখে রেখে গেছে, একটু অবাক হলেও দত্ত বাবু আনন্দে লাফিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন তার “ফুলঝুরি”কে, রাতটা তার সাথে কাটানোর জন্য। “ফুলঝুরি”ও রাজি। কথা হলো রাত 12টা বাজলে দত্ত বাবু চুপিচুপি সদর দরজা খুলে দেবেন যাতে পাড়াপড়শী কেউ টের না পায়।রাত বারোটা নাগাদ হঠাৎ একটা আওয়াজ পেয়ে দত্ত বাবু ছাদে উঠে দেখেন সাদা শাড়ি পড়ে এলোচুলে দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলা, খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও তিনি ভাবলেন তার আদরের “ফুলঝুরি” বুঝি তাকে surprise দিতে এসেছে এইভাবে।গদগদ হয়ে এগিয়ে যেতেই সে বলে উঠলো “কী রেঁ হ্যাঁরামজাদা, খুঁব যে দেখি তোঁর শখ, বৌ নেইঁ বলে ফুত্তির বাঁন ছুঁটেছে তাইইঁইঁ না… দাঁড়া আঁজ তোঁর এঁকদিন কি আঁমার এঁকদিন।”
এই বলে যেই না সেই নারী মূর্তি দত্ত বাবুর দিকে এগিয়েছে দত্তবাবু “বাবাগো মাগো” বলে পেছন ফিরে ছুটতে গিয়ে দড়াম করে চাড্ডি কলার খোসায় আছাড় খেয়ে পড়লেন মুখ থুবড়ে। এর মধ্যেই শুনতে পেলেন বাইরের দরজায় কেউ খট খট আওয়াজ করছে। এদিকে ততক্ষনে নাটকের পর্দা পড়ে গেছে, সাদা শাড়ি পড়া মহিলা আর কেউ নয় দত্তবাবুর বিয়ে করা একমাত্র বৌ অর্থাৎ আমাদের সোনামনি বৌদি এবং বৌদির সহকারী দত্তবাবুর সেই পাড়াতুতো শালা বেণীবাবু, যিনি সময় মতো কলার খোসাগুলো দত্তবাবুর পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ছাদের অন্ধকারে লুকিয়ে থেকে।
দত্ত বাবু আর কিছু ভাবতে পারলেন না, কলার খোসায় পিছলে গিয়ে যদিও বেশ লেগেছে কোমরে তবু টুঁ শব্দটি না করে মড়ার মতো পড়ে রইলেন ছাদে।
ওদিকে নিচে সারা পাড়া জাগিয়ে সোনামনি বৌদি আর ফুলঝুরির তরজা চলছে….আপনারা কিছু খবর জানেন নাকি তারপর দত্ত বাবুর কি হলো? জানলে জানাবেন আমাকে কেমন!
-
শ্রুতি নাটক- গাছ লাগাও
গাছ লাগাও
-পায়েল সাহু(চরিত্র- ভীষণ গাছ পাগল ব্যানার্জী বাড়ির ছেলে শুভ্র, শুভ্র’র মা, শুভ্র’র বাবা, শুভ্র’র ঠাকুমা)
মা: শুভ্র.. এই শুভ্র… কি ব্যাপারটা কি হ্যাঁ তোর? আমাকে লুকিয়ে ছাদে উঠে যাওয়া? হ্যাঁআআ.. দাঁড়া দাঁড়া…
ঠাকুমা: আহ্ বৌমা ছাড়ো তো, সকাল সকাল ছেলের পেছনে না পড়লেই নয়?
মা: আপনি থামুন মা, বাজারে গেলে সবজি, মাছ না কিনে খানকতক গাছ, গাছের চারা কিনে এনে হাজির করে, আর যত ফরমাশ আমাকে, এই সবজির খোসা ফেলবে না, ডিমের খোসা ফেলবে না, অফিস থেকে ফিরে কারো সঙ্গে কথা নেই, ছাদে উঠে গাছের সেবা করবে.. এসব চলবে না আর..
বাবা: সত্যি ছাদে পা রাখার জায়গা নেই আর।
ঠাকুমা: ওওওও তাই বুঝি? আর সেই ছাদের গাছে যখন ফল, ফুল হয় তখন তো পেড়ে আনতে বেশ ভালোলাগে, তখন তো কই লজ্জা করে না?
মা: এই দেখো তোমার মা সকাল হতে না হতেই পায়ে পা দিয়ে কেমন ঝগড়া শুরু করলো দেখো, আমার ছেলের গাছ আর আমি ফল, ফুল পাড়তে পারবো না?বাবা: উফফফ মা তোমরা কি শুরু করলে কি? থামো না…
শুভ্র: কি হলো ঠাম্মা? এতো রাগারাগি কিসের? মা কি হয়েছে বলো?
মা: তোর ঠাম্মা বলেছে আমি তোর গাছের ফল ফুল পাড়তে পারবো না।
ঠাকুমা: না রে শুভ্র, কি মিথ্যে কথা বলছে দেখ!
বাবা: তা হ্যাঁ রে শুভ্র, জানিস যখন তোর মা রাগ করে কেন আজ আবার এতো গাছ কিনে আনলি?
শুভ্র: আজ 5th জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বাবা।তাই ভাবলাম কয়েকটা গাছ কিনে নিয়ে যাই।
মা: এটা আবার কেমন দিবস? কবে থেকে শুরু হলো রে?
বাবা: হুম আমি জানি কিছুটা, প্রতি বছর 5th জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়, 1974 সালে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়, পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা এবং নতুন পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে রাষ্ট্রসংঘ পালন করে। এই বছর পরিবেশ দিবসের থিম “বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার” এই যে অতিমারী, এই যে সুপার সাইক্লোন, কেন হচ্ছে বলো তো? আসলে ভীষণ ভাবে বৃক্ষচ্ছেদন, প্রকৃতির প্রতি অসম্ভব অবহেলায় আজ এই পরিণতি। তবুও মানুষের হুঁশ নেই..
শুভ্র: হ্যাঁ বাবা তুমি ঠিকই জানো, তবে এর সূত্রপাত হয়েছিলো 1730 সালে। রাজস্থানের প্রত্যন্ত অঞ্চল খেজরিলি গ্রামে একটি রাজপ্রাসাদ গড়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন মেওয়ারের রাজা অভয় সিং-এর আদেশে শুরু হয় গাছকাটা, সেই সময় বিষ্ণই সম্প্রদায়ের মানুষ তার প্রতিবাদ করেন তিন সন্তানের জননী অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে।তাঁদের উদ্দেশ্যে, যে করেই হোক খেজরি গাছগুলোকে বাঁচাতেই হবে তাঁদের। গাছের সঙ্গে নিজেদের বেঁধে রেখে শুরু হয় প্রতিবাদ। আর এই গাছকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থাতেই রাজার সৈন্যদের হাতে মৃত্যু হয় তাঁদের।ঠাকুমা: আহা রে! কি নির্মম পরিণতি…
শুভ্র: হ্যাঁ ঠাম্মা, তবে এই প্রতিবাদ ওখানেই শেষ হয়ে যায়নি, 1963 সালে চিন ভারত যুদ্ধের পর ভারতের উত্তরাখন্ডে এই আন্দোলন শুরু হয়। উত্তর প্রদেশের করাতকল মালিকদের গাছ কাটার অনুমতি দেয় তৎকালীন উত্তরপ্রদেশে সরকার অথচ জীবনধারণের জন্য 10% বনজ সম্পদ ভোগ করতে দেওয়া হতোনা গ্রামবাসীকে। এদিকে অত্যাধিক গাছ কাটার ফলে কৃষির ফলন কমে যাচ্ছিলো, মাটি ক্ষয়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিলো সমগ্র অঞ্চলটির ওপর।
মা: তারপর? গ্রামের মানুষদের প্রতিবাদ সফল হয়?
শুভ্র: করাতকলের সদস্যরা গাছ কাটতে এলে সেখানে রুখে দাঁড়ান গওরা দেবী ও তার সঙ্গী মহিলা মঙ্গল মন্ডল। গাছকে জড়িয়ে ধরে প্রতিবাদে সরব হন জঙ্গলের বাসিন্দারা। গাছের সঙ্গে মানবিক অস্তিত্বকে আটকে রাখার এই লড়াইয়ের নাম চিপকো।
বহু লড়াইয়ের পর তাঁরা জিতেও যান।মা: চোখে জল এসে গেছিলো রে, তবু ভালো মানুষ বাঁচাতে পারলো গাছগুলোকে।
শুভ্র:কিন্তু সেই জয় সাময়িক মা, বিভিন্ন সময়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলি, চোরাশিকারিরা তো আছেই, অজস্র বাড়ি ঘর, রাস্তা, ব্রীজ তৈরি হচ্ছে আর কাটা পড়ছে অজস্র গাছ। জঙ্গলে পশুপাখিদের থাকার জায়গাতেও আমরা হাত বাড়িয়েছি, ঘন জঙ্গলের গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে রিসর্ট।
আর গাছের সংখ্যা আজ এতো কমে গেছে যে আমাদের পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে অক্সিজেন।ঠাকুমা: সত্যি মানুষ আর কবে যে সচেতন হবে!
বাবা; হুম আচ্ছা আজ একটা কাজ করলে হয় না!
শুভ্র: কি কাজ বাবা?
বাবা: আজ যদি সারা পাড়ার সমস্ত বাড়িতে একটা করে অন্তত গাছ আমরা বিলি করতে পারি, কেমন হয়?
শুভ্র: খুব ভালো ভেবেছো সত্যি..
ঠাকুমা: এই শুভ্র, তাড়াতাড়ি বাজারে যা, দেখ দেরি করলে গাছওলা আবার চলে না যায়, শিগগিরই যা, আর যেতে যেতে হিসেব করে নিস কতগুলো গাছ আনবি, কেমন?
মা: হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি যা..শুভ্র: আর আজ আমাদের স্লোগান হবে
“বিশ্ব জোড়া আজ প্রাণের আমন্ত্রণ
এসো করি সবাই সবুজের সংরক্ষণ।” -
রম্য- গ্যাসের কামাল
গ্যাসের কামাল
-পায়েল সাহুদত্ত বাড়ির কর্তার পেটে বড়ো গ্যাস হচ্ছে কদিন ধরে। পাড়াতুতো ভায়রাভাই বেণীচরণ বালার শালা নাকি নামকরা ডাক্তার, তা সেই ডাক্তারের ওষুধ খাচ্ছেন বটে তবে সেই ওষুধ খেয়ে কমা তো দূরের কথা আরো যেন বেড়ে যাচ্ছে। এক ঘরে গ্যাস ছাড়লে পাশের ঘর অব্দি গন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মহা মুশকিল…
এদিকে ভায়রাভাইয়ের বৌ মানে শালী, সে যতই পাড়াতুতো হোক না কেন, তাকে রাগালে চলবে না। অফিস আসতে যেতে তার মিষ্টি মুখ আর “জিজু টাআআআ টাআআআ” না শুনলে সেদিন শালা বাস ট্রেন কিচ্ছু সময় মতো মেলে না। তার ওপর বসের ঝাড় উপরি।
কিন্তু এখন কি উপায়, এই তো সেদিন অফিস যাওয়ার সময় “বেণী বাড়ি আছো নাকি?” একটু জোরেই বলে ফেলেছিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে বেণীর স্ত্রী ‘মণি’ মানে ওই নামেই মনে মনে দত্তবাবু ডাকেন, আর কি একগাল হেসে বুকের কাপড়টা ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসছিলো, আর ঠিক…. ঠিকককক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দ করে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো পাড়াময়।
দত্ত বাবুর আদরের মনি তো বমি করে ফেলে আর কি… আশেপাশের বাড়ির লোকেরা ছুটে এসে একজন বলে “এই বোম ফাটলো কোথায়? কেউ বলে নিশ্চয়ই কারো বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার burst করেছে তো কেউ বলে কবে ইঁদুর মরে পচে গেলো সেটা বুঝতেও পারলাম না?”
দত্ত বাবু তো লজ্জায় লাল, কি করে যে পালালেন সেখান থেকে তিনিই জানেন।
তার পরের দিন থেকেই তিনি নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলেছেন, এই গ্যাস সিলিন্ডার থুড়ি এই গ্যাসভর্তি ভুঁড়ি, ওহ্হো গ্যাসভর্তি পেট নিয়ে তিনি কিছুতেই যাবেন না তার মনির “টা টা” শুনতে |
অবশ্য পরের দিন সকালে তাকে দেখতে না পেয়ে দত্তবাবুর ‘মনি’ নিজেই ছুটে এসেছিলো হাতকাটা নাইটিটা পরে, আসলে দত্তবাবুর চিন্তায় মাথার ঠিক ছিলো না তার।
সব শুনে মুশকিল আসান ওষুধ সেই এনে দেয়।
ওদিকে দত্তবাবুর স্ত্রী সোনামনিদেবী সব দেখে বুঝে একটা ভুরু কপালে উঠিয়ে ভাবতে বসেন এর উপায়, কিন্তু ঘন্টাখানেক বাদেও ভুরু নিচে না নামায় বাধ্য হয়ে ফোন করেন বেণীবাবুকে।
বেণীবাবু যে কিছু বোঝেন না এমন নয়, তবু অপেক্ষা করছিলেন জল মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ার, তা সে জল কিছুতেই মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলো না বলে তিনিও কিছু করে উঠতে পারছিলেন না।
তবে এই সুযোগে তিনি বদলা নিয়েই নেবেন ভাবলেন।পর দিন থেকে সোনামনি দেবী সারাদিন বাড়িতে গুনগুন করে গাইতে লাগলেন “আমার যেমন বেণী তেমনি রবে বাল (চুল) ভিজাবো না” এই এক লাইনই গাইতে লাগলেন, তবে একটু জোরে হলো তখন, যখন দত্তবাবুর আদরের ‘মনি’ তার জিজুর খোঁজ নিতে এলো।
আজও ভুল করে তাড়াহুড়োয় বাড়িতে পরা হাতকাটা নাইটিটাই পরে এসেছিলেন, তবে সোনামনিদেবীর গান শুনে বেশিক্ষণ এ বাড়িতে থাকার ভরসা পেলেন না। ওদিকে বেণী বাবুও বাড়িতে তখন চিৎকার করে গাইছেন “ও মেরি সোনা রে, সোনা রে, সোনা রে, দে দুঙ্গা জান জুদা মত হোনা রে..”এখন বেণীবাবুর স্ত্রী মানে দত্তবাবুর পাড়াতুতো শালী বেশ ভালোই বুঝে গেছেন “দামে কম মানে ভালো বেণী ফার্নিচার” নিজেকে সামলে নিয়েছেন খুব তাড়াতাড়ি।
দত্তবাবুও আজকাল তার বৌ সোনামনি তার বাল মানে চুল ভিজিয়ে স্নান করছেন নাকি সেটা খেয়াল রাখছেন।
তোমরাও একটু খেয়াল রেখো তো… যতই হোক দত্তবাবুর আমাদের লোক খারাপ নয়…. তাই না?
-
কবিতা- আমার রবি
আমার রবি
-পায়েল সাহুরবি আমার প্রাণের আলো, রবি মনের আকাশ
রবি আমার মুখের ভাষা, রবি আমার নিঃশ্বাস,
রবি আমার কাঁদায় হাসায়, রবি প্রেমের ভাষায়
রবি আমার ব্যাথার প্রলেপ, রবি বাঁচতে শেখায়।
রবি আমায় জগৎ চেনায়, বাসতে শেখায় ভালো
রবি আমার দূর করে দেয় অন্ধ প্রাণের কালো,
রবি আমার ক্ষুদ্র মেধায় ঢালে জ্ঞানের আলো।
রবি আমার পূর্ণ কলস অমৃত সাগর সমান,
রবি আমার জগৎজোড়া চির ভাস্বর কিরণ
রবি আমার সদাই জাগে সহস্র শতকের গানে
রবি আমার আসন পাতে সকল চিন্তার ক্ষণে,
রবি আমার,রবি তোমার, পূর্ণতায় সবার মননে। -
কবিতা- ভোরের স্বপ্ন
ভোরের স্বপ্ন
-পায়েল সাহুমনখারাপের ভোরের স্বপ্নে ভাসে চাঁদপানা তোমার মুখ,
পূর্ণ দৃষ্টির তোমার সে চাহনি ভীষণ চেনা,
উন্মত্ত সমুদ্রের অন্তরের মতো শান্ত গভীর এক সুখ,
নিযুত অভিযোগের কৈফিয়তে শান্তির এক ঠিকানা।স্বপ্নে তুমি এসেছিলে নিয়ে অতীতের রঙিন স্মৃতি
ভালোলাগার ডানায় ভেসেছিলো স্মৃতিমেদুর মন,
তোমাকে পাওয়ার কল্পনায় মনের তখন অপ্রতিরোধ্য গতি,
তীব্র কামনায় প্রতিটি রোমকূপ যেন উন্মুখ তখন।ঘুম ভাঙা নতুন ভোরে তুমি অধরা চিরকালের মতন,
অঢেল নেশায় তবু তোমাকেই ভেবে চলা অনুক্ষণ,
ভালোবাসার উপলব্ধি বিলিয়ে তোমার বিস্তৃতি যেন বিশাল আকাশ,
সব অনুভূতি বুঝি অতীত এখন সঙ্গী কেবল দীর্ঘশ্বাস।ভোরের স্বপ্ন সত্যি করে ফিরলে আমার ঠোঁটের উষ্ণতায়,
শত অভিযোগ মুহূর্তে দ্রবীভুক্ত অশ্রুসিক্ত ব্যাকুলতায়।
অভিমানী তুমিও যে ছিলে একই পথের বাঁকে আমারই অপেক্ষায়,
নিস্তব্ধ অনুযোগের শেষে পরম শান্তি তোমার আলিঙ্গনের আশ্রয়।