• কবিতা

    আশ

    আশ
    -রুদ্র প্রসাদ

     

     

    আসবে কি…সবকিছু ফেলে আজ ???
    অশান্ত বুকের জমিতে আছড়ে পড়তে !
    তারায় আগত মরণের অপেক্ষা অতীত,
    ধৈর্য আর নেই, নাড়ির গতি ক্রমশ ক্ষীণ,
    স্ফূরিত অধর এবার সিক্ত করার পালা,
    পেশী শিথিল, মস্তিষ্ক মৃতপ্রায় – বোধশূন্য ।
    দরকার এবার একটা বিধ্বংসী ঝড়ের ;
    খড়কুটোর মতো সব উড়ে যাক চারদিকে,
    আছে যত বিভেদ আর বৈষম্য, ঘুচে যাক,
    অপলকে উপগত হোক ছায়া আর কায়া ।
    মিলেমিশে একাকারে বিলীন পঞ্চভূতে,
    পুঞ্জীভূত হোক নবজীবনের পদসঞ্চার ;
    দিকচক্রবাল কালো করে খুব মেঘ উঠুক,
    অঝোরে ঝরে পড়ুক পরম শান্তির বারি,
    ভেজা মাটির সোঁদাল গন্ধে মিশে যাক,
    আনন্দের আদিমতার সুবাস মেশা ঘাম ।
    ঊষর ধূসরে ফিরুক সবুজ প্রাণের ছোঁয়া,
    অক্লান্ত কর্ষণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাক ভূমি ।
    পিচগলা রাস্তায় নামুক নিকষ আঁধার,
    অশনি চমকে পুলকিত হোক স্নায়ুতন্ত্র ।
    বাসন্তী রঙে রাঙা হোক সারাটা আকাশ,
    মনে লাগুক জীবনের চেনা বেহাগ সুর,
    অস্বস্তি কেটে উচ্ছাসে জাগুক প্রেম ;
    সম্ভাবনাময় বীজগুলো হোক নিষিক্ত,
    স্ফূর্তিরা খুঁজে নিক রুদ্রের দীপ্ত প্রকাশ ।
    বাউলা বাতাসে বয়ে যাক উদাসী মন,
    আসুক চরাচরে সেই পূর্ণতারই আশ্বাস ;
    বৃষ্টির উচ্ছ্বসিত ধারাপাত বেগে মাতুক,
    নির্ঘোষ নিনাদে পার হোক ফাঁকা দুপুর ;
    বর্ণমালা আজ থাক না শালপাতায় ঢাকা,
    শুধু অন্ধ পরশেই চেনা হোক অলি-গলি ;
    ইচ্ছেতেই পুকুরের জলে ঢিল ছুঁড়ে দেখা,
    কেঁপে কেঁপে উঠুক শীৎকারে ভরা যৌবন,
    ভ্রূণের পরিস্ফুটন হোক মাদকতায় ভরা,
    না বলা কথার মাঝে নেমে আসুক সন্ধ্যা ।
    জলোচ্ছাসের তীব্রতা নিয়ে ভাসিয়ে দিক,
    বাঁধভাঙা প্লাবনে হারিয়েই যাক দু’কূল ;
    ধুয়ে যাক ক্লেদ, কর্দমাক্ত আবর্জনা যত,
    পদে পদে না পাওয়ার সব বেদনা নিয়ে,
    মনের কোণায় জমা হাহাকার – সবসমেত,
    ছন্দোবদ্ধ ওঠাপড়ার তালে তালে চলুক,
    প্রয়াসী শঙ্খজোড়ের উদ্যমী সমুদ্রমন্থন ।
    আগুন পুড়ে ছাই হয়ে যাক তৃপ্ত আবেগে,
    সুধাসিঞ্চনে ভরা থাকবে সঞ্চারী প্রাণ-মন ;
    জাগতিক না সামাজিক – নিয়ম বেয়াড়া,
    সচেতন অবচেতনে দ্বন্দ্ব চিরকাল, তবুও –
    অবোধে ঘোরলাগা মনের কোনও কোনায়,
    ডালি সাজিয়ে গোপনে জেগে থাক ‘আশ’।।

  • কবিতা

    অন্তর্জাত আবাহন

    অন্তর্জাত আবাহন
    -রুদ্র প্রসাদ

     

     

    আকাশে – বাতাসে মিশে বিষ,
    সমাজ ব্যবস্থা ধ্বস্ত ;
    হতাশারই সুর বাজে অহর্নিশ,
    গণতন্ত্র ভীত – সন্ত্রস্ত ।
    শিক্ষার নামে কালোবাজারী,
    ক্ষয়িষ্ণু আজ সভ্যতা ;
    শৈশব কবে স্বপ্নেই গেছে চুরি,
    বিপণনের সার নগ্নতা ।
    মূল্যায়ন যে অলীক জলসত্র,
    ‘পুঁজিবাদ’ই শেষ কথা ;
    ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা যত্রতত্র,
    অনুষঙ্গে বিপন্ন মানবতা ।
    বৈঠকী আড্ডায় সীমিত আলোচনা,
    পরশ্রীকাতরতাই কোলাহল ;
    পরার্থে নিয়োজন হাতে গোনা,
    অজাচারে নিষ্পেষিত হলাহল ।
    স্বার্থ বিনে নেই, সবই অধঃগতি,
    এই তো সামাজিক বিচার ;
    গুমরে খুঁজে ফেরে চপলমতি,
    কোথায় শেষ এই অনাচার ?
    তবুও জাগে আশা ভবে,
    বধির হবে অরাজকতা ;
    যেদিন শপথ নিয়ে চলব সবে,
    ছোঁয়ায় থাকবে সজীবতা ।
    হোক সেই আনন্দ শুরু আজ,
    হোক এখনই সেই বপন ;
    মিলেমিশে ভাগ করা হোক কাজ,
    সাকার হোক সবার স্বপন ।
    হিংসা আর দ্বেষ হোক বিদুরিত,
    ভ্রাতৃ-বিরোধ বন্ধ হোক ;
    মনুষ্যত্ব সবার হোক বিকশিত,
    পৃথিবীটা হোক জ্যোতির্লোক ।
    নারী – পুরুষের সমানাধিকার,
    প্রতিবন্ধীরও সমান মান ;
    অবারিত হোক বিবেকের দ্বার,
    সকলের তরে সমান টান ।
    সীমার বিভেদ ঘুচে যাক,
    সেবা-কার্যই সর্ব ধর্ম হোক ;
    জাত-পাত-ভেদ দূরে চলে যাক,
    আপ্লুত হোক মর্মলোক ।
    মানুষ ছিলেন কৃষ্ণ – বুদ্ধ,
    হজরত – যীশুও ছিলেন তাই ;
    সকলেরই বাণী সত্যশুদ্ধ —
    ‘জাগ্রত হোক বিবেকটাই’ ।
    এ নব উষায় এসো আজ সবে,
    মিলিত কন্ঠে দিই সে ডাক ;
    “ জাগো হে মানুষ, মানুষের ভবে,
    হীনমন্যতা নিপাত যাক ” ।
    মিলে মেলানোর সাজেই যথার্থতা,
    আন্তঃসৌন্দর্যরে করে যতন ;
    ভালো থাকা-রাখার মাঝে সার্থকতা,
    প্রচেষ্টা হোক মনের মতন ।
    বর্তমান হোক পরাক্রমী আশার,
    অকৃত্রিম আদি হতে অনন্ত ;
    হোক আগামীর সুদৃঢ় পদসঞ্চার,
    পাড়ি দিতে শেষসীমা পর্যন্ত ।।

  • কবিতা

    প্রার্থনা

    প্রার্থনা
    -রুদ্র প্রসাদ

     

     

    দুঃখের দিনে এসো না গো তুমি,
    চোখের জলই সার ।
    খুশীতে তোমার, হব আমি সুখী,
    সেই তো উপহার ।
    চরণে তোমার কোটি শতদল,
    হোক্ না সমুজ্জ্বল ।
    ও রাঙা চরণ ধোয়াবার লাগি –
    থাক না, চোখের জল ।
    মধু জোছ্নায় সুমধুর থাক,
    অমলিন সব স্মৃতি,
    পিউ – পাপিয়ার কলতানময় –
    ভাষাহীন হোক গীতি ।
    পূর্ণিমা চাঁদ খেলুক না সদা,
    তোমার ঐ আঙিনায় ।
    আমার আকাশ ভরা থাক,
    গহিন এক আঁধিরায় ।
    কল্পজনমে ও গো প্রাণপ্রিয়,
    হই যেন তব দাস ।
    জনমে জনমে ধোয়াব চরণ,
    এই শুধু অভিলাষ ।
    মানুষ হই বা কৃমি-কীট হই,
    তোমারই গো যেন থাকি ।
    যেখানেই থাকি, যেভাবেই থাকি,
    তোমাকেই যেন মনে রাখি ।
    আবার যখনই কায়াফের হবে,
    মায়াজাল হবে ক্ষীণ ।
    সবকিছু ছেড়ে তোমারই চরণে –
    হই যেন প্রিয়, লীন ।
    তুমি যে আমার, আমি তোমারই,
    এই কথাই শুধু জানি ।
    যুগে যুগে তুমি করেছ যে মান,
    তাই আমি অভিমানী ।
    আর কত কাল করবে পরখ ?
    খেলবে শুধুই খেলা ?
    কত নিশি-দিন, নিদ্রাবিহীন –
    সইব এ অবহেলা ?
    এই দেহ – মন তোমারে দিয়েছি,
    শুধু তোমারেই, প্রিয় ।
    বারেকের তরে পতিত পাবন,
    তোমার কোলেতে নিও ।
    চোখ দুটো মোর কর গো অন্ধ,
    কান দুটো কর কালা ।
    আর কারো নয়, তোমারই রূপেতে,
    আমার ভুবন আলা ।
    হৃদয় আমার বেগবতী নদী,
    এলোমেলো যায় ছুটে ।
    যদি তুমি দাও সাথ, ধরো মোর হাত,
    পড়ি ঐ পদে লুটে ।।

  • কবিতা

    অন্তর্দাহন

    1. অন্তর্দাহন
      -রুদ্র প্রসাদ

     

     

    ভুল করে তব দ্বারে এসেছিনু,
    দাও নি তো কভু ফিরায়ে ।
    আজ আমি হীন, অতিশয় ক্ষীণ,
    সবই তো গিয়াছে হারায়ে !
    রুক্ষ – শুষ্ক এ ধরাতে নেই,
    আর সেই প্রিয় মধুমাস,
    হর্ষ-বিষাদে, ‘পিউ কাঁহা’ রবে –
    আজ এ হৃদয় উদাস ।
    যত ফুল আজ ঝরে গেছে দেখ,
    দিয়াছে গন্ধ বিলায়ে !
    তবু সদা জাগি তব স্মৃতি লয়ে,
    আলয়ে তন্দ্রা ভুলায়ে !!
    তব হৃদয়েতে জাগে আজ দেখি,
    বলো কার মুখ খানি ?
    ভুলে গেছ কি তুমি, সাঁঝবেলার,
    সেই শপথের বাণী ???
    আবেগের সেই কথা তবে কি গো,
    আগে ছিল শুধুই ছল !
    কাঙ্ক্ষিত ক্ষণে, না হেরিলে –
    হত যে আঁখি ছল – ছল !!!
    আজ বুঝি বা তব পৌষ – পার্বণ ?
    ভিখারী দুয়ারে দাঁড়ায়ে —
    পড়ে শুধু তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস,
    জীর্ণ পাঁজর ছাড়ায়ে !!!
    কেতকী, কদম, যুথিকা কুসুমে,
    কত না গেঁথেছি মালিকা,
    আসি নানা ছলে, পরেছিলে গলে,
    ওগো চঞ্চলা বালিকা ।
    নুপুরধ্বনির সেই সেদিনের স্মৃতি,
    সবই কি গো ছিল ভুল,
    নিবিড়, নিভৃতে দোলা দিয়েছিল,
    তব কালো – এলো চুল !
    কনক চাঁপার সুমিষ্ট সুবাস,
    আছিল বাতাসে ছড়ায়ে !
    কাঁপা কাঁপা হাতে, অধীরানন্দে,
    ধরেছিলে মোরে জড়ায়ে ।
    থর থর থর – ভীরু হৃদয়ের,
    আধোলাজ – হাতছানি ,
    করেছিল তোমা, এ ভূমিহীনের
    অন্তর দেশের রানী ।
    সেই স্মৃতি আজ বিস্মৃতি তলে,
    গোপনে গিয়াছে হারায়ে !
    শুধু হেরিবারে সেই হাসি মুখ,
    ভিখারী যে দুয়ারে দাঁড়ায়ে ।
    ধন্য এ জনম – কোটি জনমের,
    তুমি প্রেয়সী, ওগো প্রিয়তমা,
    মনে মনে প্রতিক্ষণে, অজস্র বার
    ছুঁয়েছি – চুমেছি যে তোমা ।
    বাহুডোরে নয়, হৃদি ভরে থাকো,
    প্রেমস্মৃতিসুধা ভরায়ে,
    স্বার্থক হোক এ সুমহতী প্রেম,
    নিঃস্বর্গ প্রভা ছড়ায়ে ।
    ক্ষোভ নাই মোর, ক্ষোভ নাই প্রিয়া,
    লোভ নাই, মোর লোভ নাই ।
    আজ বিরহে কাঁদুক ‘কৃষ্ণ’চন্দ্র –
    ‘আয়ান’-এর ঘরে যাক ‘রাই’ ।।

  • কবিতা

    স্মৃতিটুকু থাক

    স্মৃতিটুকু থাক
    -রুদ্র প্রসাদ

     

     

    অনন্যা তুমি শাশ্বত, সদাই বিদূষী,
    প্রেরণা তুমি সত্যিই এক মহীয়সী ।
    দেখিয়ে তুমি আশা-ভরসার আলো,
    শেখালে, কেমনে হয় বাসতে ভালো,
    বিশ্বাসের শক্ত হাতে ধরেছ হাল,
    দিয়েছ দিশা, করেছ স-বাক ।
    মনিকোঠায় সমুজ্জ্বল, ভাস্বর তুমি,
    তোমার স্মৃতিটুকু শুধু মনে থাক ।।

     

    মনের অতল কোনে দিয়ে উঁকি,
    ভুলে যাই সেই দূর অতীতে,
    যবে উঠেছিল কুলুকুলু গীতি,
    দু-কূল ছোপানো নদীতে,
    ভুলে যাই যত ঝিনুকের সারি,
    ঢেউ এসে দোলা দিয়ে যাক;
    অন্তরের গহিনে অধিষ্ঠান তোমার,
    স্মৃতিটুকু শুধু মনে থাক ।

     

    ঐ সুদূর – ঐ মোহনায়…….
    শঙ্খচিলের ডাকের সাথেতে,
    নদী আজ কোন্ গান গায় ?
    কোন প্রেম আজও মূর্চ্ছিত করে,
    শিশিরসিক্তা জোছনায় ?
    জানি না তো তাও, জানি না !
    নিষেধের কোনও বাধা মানি না ।
    শুধু চাই, এই গোধূলি বেলায়,
    হৃদয় ছোপানো হয়ে যাক;
    আমার সবকিছুতেই তুমি রয়েছ,
    স্মৃতিটুকু শুধু মনে থাক ।

     

    কবে কোন সেই সোনাঝরা ফাগুনে,
    পোড় খাওয়া মন রাঙা হয়েছিল,
    জ্বলে পুড়ে প্রেম – আগুনে !
    স্বপ্নের বাসর গড়া হয়েছিল,
    প্রিয়ার হৃদয়ে, অতি সঙ্গোপনে;
    আশা – ভরসা, বিশ্বাসের মূল তুমি,
    মনের মানমন্দিরে থেক যতনে ।
    সময়ের সাথে তুমি যশস্বী হও,
    আমার শুভকামনা সাথে রাখ,
    যেখানেই থাকো, ভালো থেকো,
    স্মৃতিটুকু শুধু মনে থাক ।

     

    দিগন্তসদৃশ হৃদয় তোমার,
    সাথে জ্ঞানের গভীরতা অপার,
    সব কলুষতা, হতাশা মুছে দিয়েছ,
    বন্ধুত্বের অসীম দানে ধন্য করেছ,
    তাই আজ শুধু এই অবেলায়,
    ভাঙ্গা আর গড়ার এ খেলায়,
    গুপ্ত পিয়াসা – সুপ্ত হৃদয়ে –
    বারেকের তরে দিক পাক;
    যাক মুছে যত বাস্তবের গ্লানি,
    স্মৃতিটুকু তোমার, শুধু মনে থাক ।।

  • কবিতা

    ভা_লো_বা_সা

    ভা_লো_বা_সা
    -রুদ্র প্রসাদ

     

    ভালোবাসা নয় ভুল, হে প্রিয় …
    ভালোবাসা নয়কো মাটি,
    ভালো বাসা নয়, ভালোবাসা চাই,
    ভালোবাসা – সে তো খাঁটি ।
    ভালোবাসা – সে তো অন্ধ – আতুর,
    ভালোবাসা – সে তো দীন ;
    ভালোবাসা – সে তো গোপনেই থাকে,
    অতি-সঙ্গোপনে হয় লীন ।
    ভালোবাসা মাঝে জাত-পাত নাই,
    আছে শুধু হৃদয়ের টান,
    ভালোবাসা তরে ভালো বাসা ছাড়ে,
    ছাড়ে মনিময় অহং আর মান ।
    ভালোবেসে সেই চিন্তামনিরে –
    বিশ্ব হারালো নিজে …!!
    ভালোবাসা দিয়ে ভাসে নজরুল
    কমলার সরসীজে ……!!!
    ভালোবাসা – সে তো উদ্দাম বেগে –
    হৃদয়েতে জোয়ার আনে,
    ভালোবাসা – সে তো সমাজের বুকে,
    কত শত কষাঘাত হানে —
    গোঁড়ামির মুখে । চুপিসারে এসে
    খোলে যে দুয়ারের খিল,
    শত প্রহরীর মাঝে থাকে, তবু
    – চুরি হ’য়ে যায় ‘দিল্’ !
    কভু বা নীরবে অলখে সবার –
    ঝরে পড়ে আঁখিজল,
    সব থেকে তবু অজানা কারণে
    হিয়া হয় চঞ্চল ……।
    দূরে গেলে শুধু ভয়ে ভরে বুক,
    কাছে এলে আধো হাসা,
    এই কি গো প্রেম, নিকশিত হেম,
    এই বুঝি ভালোবাসা …!!!

  • কবিতা

    জীবন যেমন

    খুঁজবে সেদিন
    -রুদ্র প্রসাদ

     

     

     যে দিন সোনালি আবেশ মাখা

                             অরুনিমা সাজে …….,

     নিথর বনানী মাঝে কিচিরমিচির

               ধ্বনি তুলবে সে সুর ।

     ক্রমে দুপুরের কোলে চেপে

                          আসবে বিকেল…….,

     আবছা আলোয় বসে ভালোবাসাবাসি

                   চেনা সবই তবু অচেনা !

     বাঁধা খেয়া, ছেঁড়া পাল আপন খেয়ালে,

                           কি যেন ভাবে…!!!

     ক্লান্ত মাঝির পাশে রাখা দাঁড় আর

               এক ভাঙা হাল ।

     নিস্তরঙ্গ জলে গোধূলির রঙিন ছায়া,

               সাঁঝ বেলার প্রকাশ,

     উদাসী হাওয়ায় পাখ-পাখালীর পালা ;

               এবার ঘরে ফেরার ।

     উৎফুল্ল মন, কর্মমুখরতার অবসান ;

               শ্রান্ত – ধ্বস্ত কলেবর,

     মসীলিপ্ত আকাশে ঝকমকে তারা,

               চাঁদের স্নিগ্ধ আলো মাখা ।

     রাতজাগা প্রাণী জানান দিয়ে যায়,

               রাত বাড়ে নিস্তব্ধতায় –

     অবসানের প্রতীক্ষায় । আসছে ভোর,

               আসছে যে দিন ।

     আশ বেঁধে বুকে পাশ ফিরে আসে ঘুম,

               অনুভবে প্রশান্তির পরশ ।

     হয়ত বিলম্বিত, সাফল্য আজও অধরা,

               তবু আসবে সেদিন…….।।

  • কবিতা

    বিনয়াবনতঃ

    বিনয়াবনতঃ 
    – রুদ্র প্রসাদ

     

     

    কাব্য-গীতে ধ্বনিত সদা মৃত্যুঞ্জয়ী চিরযৌবন,
    জীর্ণ বুকে উদ্দাম শোণিত ধারায় সাজে মন ।
    নয় কোনও বিশেষ আবেশে সীমাবদ্ধ সঙ্কীর্ণতা,
    জয় ললাটিকা অমলিন বজায়ে প্রাসঙ্গিকতা ।
    রুদ্ধবাক তো হওনি কখনও পেয়ে অনন্ত বাধা,
    লহমায় দুয়ার খুলিয়ে মানসে মিলায়েছ রাধা ।
    ইহকাল পরকাল একাকারে দ্রোহকালে মেশে,
    সবহারার মথিত আকুলতা বাঙ্ময় অনায়াসে !
    লাজে অধোবদনেরে দিলে প্রেমের ভাষা অনন্ত,
    মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিরা পূজনে হয়েছে জীবন্ত ।
    শুভাশুভ সব মাঝে মূর্ত শাশ্বত বিপ্লবী চেতনা,
    ভবে ঐক্যের প্রশস্তি গাথায় মন্দ্রিত অগ্নিবীণা ।
    জগতের সাম্প্রদায়িকতাকেই ছাড়িয়ে উপরে,
    নয়কো আর বলে ডাক দিলে সাম্যবাদী সুরে ।
    মরমীয়া ঐ বহ্নিচ্ছটায় শিহরিত আধ্যাত্মিকতা,
    দিয়ে নিবেদিত দেশপ্রেম, জাগিয়েছ মানবতা ।
    বহুমুখী প্রতিভা তব সম্পৃক্ত জ্ঞানের আলোকে,
    সেথা সুধাসিঞ্চনে পুষ্ট মাধুরী উদ্ভাসিত স্বসুখে ।
    তোমার অগাধ পাণ্ডিত্য সাধারণের বাক্য হরে,
    মানসিকতা অবনমিত আজ স্বার্থসিদ্ধির তরে ।
    রেখে সমুখে দৃষ্টি আর বিদ্রোহী আদর্শে ভরসা,
    সেই উদারতার অনুসরণে মিলবে সঠিক দিশা ।
    লাভ-লোকসান বড় বালাই আকারে-প্রকারে,
    মহতী প্রাণ হে, মণিকোঠাতেই স্বাগত নমস্কারে ।

  • কবিতা

    ওরে মন

    ওরে মন !!!
    -রুদ্র প্রসাদ 

     

     

     মন, আর কত ঘুমায়ে রবি ?
    সকাল গিয়ে, দুপুর কেটে –
    অস্তাচলে রবি ।
    ওরে মন, আর কত ঘুমায়ে রবি ?

     

     আসার সময় যাতনায় পড়ে,
    করলি প্রার্থনা করজোড়ে –
    “করব আমি তোমার পূজা
    মানব জনম লভি” । 

     

    আজ কোথা, তোর সেই কথা ?
    ভুলে গেলি কি সে সব ব্যথা ?
    মানুষ হয়ে মান – হুঁশ গেল —
    ভুলে গেলি কি সবই !

     

     পৃথিবীর এই পুতুল খেলায়,
    কি পেলি তুই, সারা বেলায় ?
    সঙ্ সেজে এই রঙের মেলায়,
    খোয়ালি তুই সবই !
    মন, আর কত ঘুমায়ে রবি ?

     

     এবার ওঠ জেগে, আর নয়,
    হতাশা ভুলে যা, করিস নে ভয়,
    নতুন উদ্যমে হোক শুরু আবার,
    কিছুই তো নেই আজ হারাবার,
    আপন সহায় নিজেই হবি ।
    ওরে আমার উদাস মন,
    অবুঝ – পাগল – প্রাণধন,
    আর কত – শত কাল ভাবি,
    এই ভবে ঘুমায়ে কাটাবি …?
    মন, আর কত ঘুমায়ে রবি !!!
    মন, আর কত ঘুমায়ে রবি ??

  • কবিতা

    বন্ধু…শুধু তোমার জন্য…..

    বন্ধু…শুধু তোমার জন্য…..
    -রুদ্র প্রসাদ

     

    ধর্মশাস্ত্র, ফিদেল – কাস্ত্রো …. সব চুলোয় যাক ….,
    ট্রাম্প – মোদী – মমতা, বিতর্ক আজ মুলতবি থাক……,
    জাতের নামে বজ্জাতি গুলো সব নিপাত যাক ……..,
    বন্ধুত্ব – মৈত্রী – সমঝোতা এক্সপ্রেস স্বীকৃতি পাক ।
    দিন গুলো হবে ‘লর্ডস্’ এর মাঠে খুলে ফেলা ‘টি-শার্ট’,
    দিন গুলো হবে ‘ব্যান্ড’-এর গান, ঝকঝকে, দারুণ ‘স্মার্ট’ ।
    সকাল গুলো সুন্দর হবে তোমার সুমধুর কল্পনা নিয়ে ….;
    যে আমার নয়, সেই তোমাকে একটি বার ছুঁতে চেয়ে ….;
    জানি, তুমি কখনই তো আমার সামনে আসবে না,
    সন্দেহ ছাড়া বিশ্বাস তো আমায় কখনই করবে না ।
    কিন্তু পড়লে মনে, করবে যে ব্যাকুল, দেবে যন্ত্রণা ।
    রহস্যের আড়ালে থেকে বলবে কথা, দেবে সান্ত্বনা ।
    কী ই বা করতে পারি যখন মানে না, অসহায় এ মন !
    তবু জানি ‘প্রেম’ মানেই তো প্রতীক্ষা, সারাটা জীবন ।
    বলছি তবুও দিন গুলো হয়ে উঠুক ‘হুসেন’-এর ছবি,
    তেমনই হোক, ঠিক যেমনটি বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি ।
    দিন গুলো হোক না এক অনির্বচনীয় প্রেমকাহিনী,
    আসবে না জানি, হয়ে আমার সর্ববেদনা – বিনাশিনী !
    আমি তোমাকে বিশ্বাস করি – এই কথাটাই মানি,
    তোমার জন্য আমার হৃদয়ে শাশ্বত প্রেম আছে, জানি ।
    বুঝি মানবে না তুমি, সাথে এই সমাজ – স্বজন – পরিবার,
    তবু অামার অবুঝ মন শুধু তোমারই বন্ধুত্ব যে চায় বারবার !
    কেবলই জানি যে – তুমিই আমার কাহিনীর ‘আনারকলি’ ,
    কারোকেই পাইনি তো তাই, হিসেবে তোমার বদলি ।
    তুমি আনো প্রকৃতিতে রঙের বাহার, যেন শৈল্পিক তুলির টান,
    তোমার রঙে ভুবন রাঙিয়ে বলি, “তুমি যে আমার প্রাণ” ।
    যতই বলি, “ওহে জুলিয়েট, আমি তো তোমারই রোমিও”
    সকলে শুনে সহাস্যমুখে বলে, “এ ভুল কখনও না করিও” !
    আমি পারিনি হতে ‘তসলিমা নাসরিন’ বা ‘সলমন্ রুশদি্’ ,
    চাইলেও পারব না ভুলতে তোমার কথা, শেষ অবধি ।
    সব শুনে সমাজ সকৌতুকে অট্টহাসি হাসে আর বলে,
    “এখানে তোমার হবে নাকো ঠাঁই, অন্যত্র যাও চলে” !!!
    সবার চোখে আমি না কি ‘বড়ই বেয়াড়া, একেবারে বাতিল’ !
    বুভুক্ষু মন হাহাকার তোলে, ‘জীবনের গণিত কেন এতই জটিল’ ???
    আজ আমি নিঃস্ব, চাল-চুলোহীন, কি আর বলব তোমায় ?
    চললাম এখন, বলব না থাকতে আর খোলা জানালায় ।
    কখনও যদি আসি ফিরে, হয়ত বা আবার দেখা হবে,
    অজানা পথের অচেনা বাঁকে না হয় একটু দাঁড়িয়ে যাবে ।
    জানবে – সারাজীবন তোমার জন্য, করে যাব প্রার্থনা অবিরত,
    দেখা হলে, কষ্ট লুকিয়ে, বলব হেসে, “কেমন আছো ? ভালো তো” ???
    !

You cannot copy content of this page