• কবিতা

    বাড়ির বউ

    বাড়ির বউ
    -রেহানা দেবনাথ

     

    সদায় রাখো মুখটি ঢাকি
    নীচু করে রাখবে আঁখি
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    সবার সঙ্গে বলবে না কথা
    উঁচু করে রাখবে না মাথা
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    যতই পাও অসম্মান
    করতে হবে তাদের সন্মান
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    সহ্য করতে হবে সব অত্যাচার
    মানিয়ে চলার দায়ও তোমার
    তুমি না বাড়ির বউ!

    সবার ইচ্ছেকে দেবে প্রাধান্য
    নিজ সত্বাকে ভাবো নগন্য
    তুমি না বাড়ির বউ!

    ঘরের বাইরে যাবার ইচ্ছে কেন
    অন্তঃপুরই তোমার জগৎ জানো
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    আবার কেন চাও স্কুলে পড়তে
    সেই তো খুন্তি হবে নাড়তে
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    তাকাও কেন এদিক ওদিক?
    জানো না স্বামী তোমার মালিক
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    ব্যবসা নিয়ে নেই মাথা ঘামাতে
    পারো না নিজে সিদ্ধান্ত নিতে
    তুমি না বাড়ির বউ!!

    চাকরি করে যতই কর আয়
    সংসারে অধিকার ফলাতে নাই
    তুমি না বাড়ির বউ!

    বাড়ির বউ, বাড়ির বউ বলে বাঁধতে চাও নিয়ম নীতি দিয়ে
    কেন ভাবো না! আমিও যে মানুষ বাঁচতে চাই মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে।

  • অণু গল্প

    পয়লা এপ্রিল

    পয়লা এপ্রিল
    – রেহানা দেবনাথ

     

    অজয় সকালে ঘুম থেকে উঠতেই ওর বাবা টেবিলের দিকে হাত দেখিয়ে বললো তোর একটা পার্সেল এসেছে,খুলে দেখ।
    অজয় দেখলো গিফ্ট প্যাকেট। আনন্দের সঙ্গে খুলতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো কে পাঠিয়েছে। প্যাকেটটা অনেক যত্ন করে খুলে দেখলো তাতে লেখা আছে এপ্রিল ফুল! অজয় ওর বাবার দিকে তাকাতেই ওর বাবা ক্যালেন্ডারের দিকে আঙ্গুল দেখায়।অজয় দেখে আজ পয়লা এপ্রিল।সঙ্গে সঙ্গে ওর বাবা হাসতে শুরু করলো আর বাচ্চাদের মত এপ্রিল ফুল, এপ্রিল ফুল বলে চেঁচাতে লাগলো।

    অজয় অভিমানী সুরে বলে- এখন আমি কত বড় হয়ে গেছি তবুও তুমি আমায় প্রতি বছর এপ্রিল ফুল।তারপর বাবা আর ছেলে মিলে মা বেঁচে থাকাকালীন কিভাবে দু’জনে মিলে মাকে এপ্রিল ফুল করতো সেইসব স্মৃতির রোমন্থন করে।

    অজয় রেডি হয়ে অফিস বেরিয়ে পড়লো।মনে মনে ভাবলো আজ আর কেউ তাকে এপ্রিল ফুল করতে পারবে না।সেই ভাবনাতে ফোনে বন্ধুদের মেসেজ পর্যন্ত দেখল না।

    দুপুরে অজয়ের মোবাইলে হঠাৎ তার বন্ধু শান্তনুর ফোন। ফোন রিসিভ করতেই শান্তনু বলে ওঠে কাকুর শরীর খারাপ তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়। অজয় হাসতে হাসতে বলে আমি ভুলিনি আজ পয়লা এপ্রিল! এবছর আর আমাকে বোকা বানাতে পারবি না, কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয়!

    কিছুক্ষণ পর আবার জ্যাক এর ফোন আসে আর একই কথা বলে।অজয় এবারেও সেই একই কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
    একই ভাবে আরো দুই বন্ধু ফোন করে।অজয় মনে মনে বলে ভাবলো আজ যতই চেষ্টা কর এপ্রিল ফুল করতে পারবি না!
    কিছুক্ষণ আগেই তার বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে খাওয়া দাওয়া সেরে টিভি দেখছে।
    বন্ধুরা মেসেজ পাঠিয়েছে এপ্রিল ফুলের ভয়ে সেগুলোও দেখল না।

    সন্ধ্যা পর বাড়ি ফিরে দেখে ঘর অন্ধকার বাবা ঘরে নেই। বুকটা ছ্যাত করে ওঠে!তাহলে কি ওরা সত্যি বলছিল।

    অজয়ের দু’চোখে জল চলে আসে বাবা ছাড়া সে কিভাবে থাকবে! বাবা এখন কি অবস্থায় আছে? কোথায় আছে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা ঘুরে যায়।
    এমন সময় পাশের বাড়ির কাকিমা এসে হাতে চাবি দিয়ে বলে তুমি এতক্ষণে এলে তোমায় কতবার সবাই ফোন করলো তুমি এলে না। তোমার বাবা এখন সিটি হাসপাতালে আছে।
    কথাটা শুনেই অজয় বাচ্ছা ছেলের মত হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলে বাবার কিছু হবে না তো কাকীমা, বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই…
    কাকীমা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে তোমার বাবার কিচ্ছু হবে না উনি সুস্থ আছেন, তোমার ছোটো কাকুর হার্ট এট্যাক হয়েছে,হাসপাতালে ভর্তি। তোমার বাবা সেখানে গেছেন।
    কথা শুনে অজয় চোখ চোখ মুছতে মুছতে হাসপাতালের উদ্যেশ্যে রওনা দিল।

  • কবিতা

    চেনা অচেনা মেয়ের গল্প

    চেনা অচেনা মেয়ের গল্প
    -রেহানা দেবনাথ

     

    এই সমাজের একটি মেয়ের কাহিনী শোনাই শোনো
    অন্যসব গরীব মেয়ের থেকে আলাদা নয় কোনো।

    পাঁচবছর বয়স থেকেই মায়ের সঙ্গে যায় কাজে
    খেলা ভুলে বাবুদের কাপড় কাচে,থালা বাসন মাজে

    সবকিছুর সাথে সে করতো লেখা পড়া
    উদ্যেশ্য তার জীবনকে ভালোভাবে গড়া।

    ষোড়শী কন্যা হলো বিদ্যে বুদ্ধিতে অতুলনীয়
    রূপ আর যৌবনে হয়ে উঠলো আকর্ষণীয়!

    একদিন তার মায়ের হলো ভীষণ কাঁপুনি জ্বর
    সেদিনই পরিষ্কার করতে হবে বাবুদের বাগান ঘর!!

    অনুষ্ঠান বাড়ির কাজ সেরে দেরী হলো ফিরতে
    রাস্তায় দেখে ছোটো বাবু বসে আছে গাড়িতে।

    ক্লান্ত শরীর নিয়ে লেগেছে যেই দু এক পা হাঁটতে
    পিছনে ডাক,যাচ্ছি ওই পথে আয় ছেড়ে দেব বাড়িতে’।

    ভদ্র মানুষকে বিশ্বাস করে,করেছিল সে যে ভুল
    ধর্ষিত হয়ে তাকে, দিতে হয়েছিল তার মাশুল!!

    সমাজ আর আইনের কাছে চেয়েছিল বিচার
    কয়েকদিন পর খোঁজ আর পাওয়া যায় নি তার!!

    পৃথিবীর বুক থেকে এমনি ভাবেই কত মেয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়
    চেনা অচেনা মেয়ের কাহিনী গল্প হয়ে শেষ হয়ে যায়!!

  • কবিতা

    আমি নারী

    আমি নারী
    -রেহানা দেবনাথ

     

    আমি নারী
    যখন পরি শাড়ি
    তোমরা বলো লাগে সেক্সী
    যৌবন যেন মার কাটারি!!

    আমি নারী
    যখন পড়ি সালোয়ার
    তোমরা বলো মার ডালা
    যেন ধারালো তালোয়ার!

    আমি নারী
    যখন পরি ছোটো ড্রেস
    তোমরা বলো অতি আধুনিক
    উচ্ছন্নে যাচ্ছে দেশ!

    আমি নারী
    যখন মাথায় দিই ঘোমটা
    তোমরা বলো ঘরে আহা!
    বাইরে বেরোলেই গেঁয়োটা!!

    আমি নারী
    যখন পরি বোরখা
    তোমরা বলো সব ঢাকা
    কৌতূহল যদি একটু যায় দেখা!

    আমি নারী
    যখন পরি জিনস স্কার্ট
    তোমরা বলো চিজ হ্যায় মস্ত
    নিয়ন্ত্রনে থাকে না হার্ট!!

    আমি নারী, আমার প্রশ্ন
    কোন পোশাক সু্রক্ষা দেয় নারীর?
    তোমরা বলো কোন পোশাক পরলে
    ভাববে সবাই আমি মানুষ, নই ভোগ্য শরীর!!

  • গল্প,  প্রথম বর্ষ - ২০১৯,  বর্ষপূর্তি কলম

    প্রথম আলাপ

    প্রথম আলাপ
    -রেহানা দেবনাথ

     


    আজ ভ্যালেন্টাইনের দিনে পিংকি কফি হাউসে বসে আছে রোহিতের জন্য। একমাস আগে ওদের দু’জনের পরিবার ছবি পছন্দ করে কথা মোটামুটি ভাবে এগিয়ে রেখেছে।রোহিত লন্ডন থেকে এম.বি.বি.এস. করে এখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাকটিস করছে। ওর জেদ মেয়ের সঙ্গে আলাদা দেখা করে তারপর ফাইনাল জানাবে! পিংকির ও একই ইচ্ছে ছিল তারই ফল স্বরূপ ওদের আজ প্রথম আলাপের দিন। পিংকি মোবাইলে দেখল চারটে দশ ও একটু আগেই চলে এসেছে টেনশনের চোটে!সামনের টেবিলগুলোতে প্রেমিক প্রেমিকার দল ও তাদের হাতে গোলাপ দেখে ওর হারিয়ে যাওয়া কলেজের দিন আর নিশীতের সাথে প্রথম আলাপের কথা মনে পড়ে গেল।সেদিনও ছিল বাঙালির আরেকটি ভ্যালেন্টাইন ডে সরস্বতী পুজোর দিন। সেদিন ফার্স্ট ইয়ার এর ছাত্রী পিংকি, শম্পা,গার্গী আর চন্দ্রা মিলে প্রথম সিনেমা দেখতে যায় প্যারাডাইস হলে। সেখানে গিয়ে দেখে ওদের কলেজের পাঁচটি ছেলে ওখানে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা হলো শম্পা, গার্গী র বয়ফ্রেন্ড আর তাদের বন্ধুরা।সেদিন প্রথম নিশীতের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়। আর প্রথম আলাপেই ওর প্রেমে পড়ে যায় পিংকি। তারপর থেকে পিংকি নিশীতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কিন্তু কোনদিন বলতে পারেনি যে ওকে ভালোবাসে! ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়ে গেলে পিংকি যেদিন ভাবলো এবার সে তার মনের কথা বলে দেবে সেদিনই জানতে পারে যে গত ছয়মাস ধরে ফার্স্ট ইয়ারের সুন্দরী তনিমার সঙ্গে নিশীতের প্রেম চলছে। সেই থেকে ভাঙ্গা হৃদয়ে আর কাউকে জায়গা দেয় নি পিংকি।
    গত তিন মাস হলো পিংকির বাবা খুব অসুস্থ তার শেষ ইচ্ছে মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়া তাই পাত্র দেখার হিড়িক লেগে গেছে। পিংকিও বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারেনি। তার শুধু একটা শর্ত পাকা কথার আগে পাত্রের সঙ্গে সে প্রথম আলাপ করবে! এর মধ্যে একজন উকিল ও একজন ব্যবসায়ী পাত্রকে প্রথম আলাপেই বাতিল করেছে পিংকি।পিংকি এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে পড়ে ছিল রোহিতের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায়।প্রথম আলাপেই রোহিত এত মন খুলে কথা বলে আর নিজের জীবনের প্রতিটি পাতা পিংকির সামনে মেলে ধরে তাতে পিংকি নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা অনায়াসে বলে দেয়।রোহিত জানায় তাদের প্রথম আলাপ বছর খানেক আগে বনহুগলিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হয়েছিল যেখানে পিংকি তাকে সেভাবে পাত্তা দেয় নি বলেই হয়তো তার মনে নেই!পিংকি তখন বলে সেই জন্যই রোহিতকে এত চেনা চেনা লাগছে।পিংকি ফেরার জন্য প্রস্তুত হলে রোহিত উঠে দাড়িয়ে বলে এই আলাপই শেষ আলাপ নয় তো?
    পিংকি মিষ্টি হেসে জনায়..না। আবার দেখা হবে আপনার বিয়েতে যেখানে প্রথম আলাপ হবে নন্দিনীর সঙ্গে যার জন্য আপনি দশ বছর অপেক্ষা করেছিলেন। সেখানে তো আলাপের জন্য যেতেই হবে।পিংকি বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে বাড়াতে নিজের মনে মনে বলতে থাকে এরপর কার সঙ্গে কখন কোথায় প্রথম আলাপ হবে বিধাতাই জানে!

  • অণু গল্প

    সুখের সংসার

    সুখের সংসার
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    সাইরা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না! তার জন্মদাত্রী মা আজ তাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলছে! এই মায়ের ভরসায় এক বছর আগে দুই সন্তানের হাত ধরে পাঁচ বছরের সংসার স্বামীর ঘর ত্যাগ করেছিল। ফুলশয্যার দিন থেকেই ওমরের যৌন অত্যাচারের শিকার হয় সাইরা। সবাই বলেছিল তাকে ফুলশয্যায় রাত মেয়েদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকে! তারও স্মরণীয় হয়ে আছে বিভীষিকার রাত হিসেবে। সাইরা মনে মনে কত ভালোবাসার ছবি এঁকেছিল নতুন স্বামীকে নিয়ে কিন্তু ওমর ঘরে ঢুকেই নতুন বউয়ের সঙ্গে যে পৈশাচিক পদ্ধতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, তাতে সাইরার সব ভালোবাসা স্বপ্নগুলো দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল!

    তারপর থেকে প্রতিনিয়িত দিনে রাতে চলত ওমরের যৌন খিদে মেটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি তাতে সাইরার কোনো অজুহাত, আপত্তি চলত না!বাধা দিলে কপালে জুটত অকথ্য গালাগালি আর মারধোর।

    ওমরের ওই একটা জিনিস ছাড়া আর সব কিছু ভালো ছিল। খেতে পরতে দেওয়া, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, সবার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার!
    তাই সাইরা প্রথমদিকে লজ্জাবশত না বললেও পরে যখন দুই বৌদিদের কথাগুলো বললে তারা হেসে কথা গুলো উড়িয়ে দেয়। তারা বলেছিল সবদিক ভালো দেখলে তো আর চলে না জামাইতো সবদিক দিয়ে ভালো না হয় চাহিদাটা একটু বেশি তা মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মেছ যখন একটু সহ্য করে নিতে হবে।
    তারপর থেকে আর কাউকে সে দুঃখের কথা বলে নি।
    পাঁচ বছরের জীবনে দু’টি বাচ্ছার জন্ম দিয়েছে আর তিনবার গর্ভপাত হয়ে গেছে ওমরের যৌন খিদে মেটাতে গিয়ে। শরীরের গুপ্তাঙ্গে রোগে বাসা বেঁধেছে তবুও তার রেহাই নেই!
    ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে এইভাবেই চলতে থাকলে খুব শিগগিরই সাইরার ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে তাতেও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই ওমরের!
    বাধ্য হয়ে সাইরা তার মাকে সমস্ত কিছু জানায় আর বাপের বাড়ি চলে আসে।

    মাস খানেক পর থেকেই দাদারা জোর করে স্বামীর কাছে ফিরে যাবার জন্য। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীরা স্বামীছাড়া সুখের সংসার ভাঙা খারাপ মেয়ে বলে নিন্দে করে।

    সাইরার দাদারা তার মাকে বলেছে ছেলেদের সুখের সংসারে থেকে যদি বাকিটা জীবন কাটাতে চাও তাহলে মেয়েকে ঘর থেকে বিদেয় করো !সেই কথা শুনে, 
    সাইরা কাঁদতে কাঁদতে দুই ছেলে মেয়ের হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে কোন পথ সে বেছে নেবে? একটি তার স্বামীর ঘর যাবার পথ যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে নারীদেহ খাদক অন্য আরেকটি অজানা পথ সেখানে ভালো মন্দ কি অপেক্ষা করে আছে সে জানে না… 

  • অণু গল্প

    যে যায় লঙ্কায়,সেই হয় রাবণ

    যে যায় লঙ্কায়,সেই হয় রাবণ
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    রাজশ্রী কালো কাঁচ লাগানো গাড়ীতে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।তার গাড়ীর আগে পিছে পুলিশ সুরক্ষা বাহিনীর খান আটেক গাড়ী চলেছে।তার যাবার পথটি ফাঁকা !সে যে দেশের মন্ত্রী হয়েছে তাই সমস্ত দেশ ঘুরে জনগনের সুবিধা অসুবিধার কথা তাকে জানতে হবে, তাদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে! শিল্পপতি ও বিত্তবানদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তাদের মন রাখতে।

    রাজশ্রীর মনে পড়ে গেল যখন সে একজন সাধারণ মানুষ ছিল তখন ট্র্যাফিক জ্যাম করে কোনো মন্ত্রী গেলে তার উদ্দেশ্যে কত কটু কথা বলেছে নিজের অসুবিধার জন্য!পথ চলতি মানুষজনের, গাড়ি চালকের গালাগালি,উপদেশ নানা কথাও তার কানে ভেসে আসত।
    আজও নিশ্চয় অনেক রাজশ্রী তার মতো ওই ভীড় থেকে একই কাজ করছে…কথাটা ভাবতেই রাজশ্রীর বিবেক তাকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে।মন্ত্রী হবার পরই সে চেষ্টা করেছিল সাধারণ মানুষের মত যাতায়াত করার কিন্তু বাধ সাধে অন্য মন্ত্রীরা।তারা এই সুযোগ সুবিধা ত্যাগ করতে পারবে না।
    রাজশ্রী যে পলিটিশিয়ান তাই সে নিজেকে ওদের ছাঁচে গড়ে নেয়!না হলে মন্ত্রী থেকে সাধারণ নেত্রী তে ফিরে আসতে তার বেশী সময় লাগবে না!!তাতে না নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারবে না দশের!

    হঠাৎ গাড়ি ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল রাজশ্রী দেখতে পায় কিছু লোকজনকে পুলিশ লাঠিচার্জ করছে।কিছুক্ষণ পর সিকুরিটি অফিসার এসে জানায় পথ অবরোধের জন্য বিরোধীদলের চক্রান্তে লোকজন ঝামেলা করছে।আপনার নিরাপত্তার কারণে অন্য পথ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
    চলন্ত গাড়ী থেকে রাজশ্রী দেখতে পেলো রাস্তায় ফেলে পুলিশ মারছে তাতে অনেকে চোট পাচ্ছে।রাজনৈতিক স্বার্থে এই ছোটো ছোটো সমস্যাগুলোকে দেখেও না দেখার ভান করার শিক্ষা দিয়েছে তার রাজনৈতিক গুরু, দলীয় সাথীরা ও নোংরা রাজনীতি তাই নিজের বিবেকের টুঁটি চেপে ধরে নিজের লক্ষ্যের পথে চলে যায় রাজশ্রী।

  • গল্প

    প্রেমের খেলা

    প্রেমের খেলা
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    সোনি হাওড়া ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।পাশ দিয়ে গাড়ি ব্যস্ত মানুষজন ছুটে চলেছে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই!উদভ্রান্তের মত ছুটে চলে এসেছিল জীবনটাকে শেষ করে দেবার জন্য!কিন্তু এখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।পেটের মধ্যে তার সন্তান যে প্রথম বার লাথি মারছে।যেন বলতে চাইছে “মা আমাকে মেরো না,আমি পৃথিবীর আলো দেখতে চাই”।
    সোনির অশান্ত মন কিছুটা শান্ত হয়।সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে!
    তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে চার বছর আগে সে বড় একটা ভুল করেছে আজ আর তা করতে চায় 💐না!
    গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে দিদির বাড়িতে ঘুরতে এসে আলাপ হয় আসাদের সঙ্গে তারপর ফোন নাম্বার বিনিময় আর প্রেমের শুরু।ছয় মাস পর যখন সোনির বাড়িতে জেনে যায় ব্যাপারটা তখন অন্য একজনের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।তিনদিন পর বাপের বাড়ি ফিরে লুকিয়ে ফোনে আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।প্রেমের টানে সব ছেড়ে পালিয়ে আসে আসাদের কাছে ।তারপর বিয়ে করে দুজনে ভাড়াবাড়িতে থাকে।আসাদ কথা দেয় সুন্দরবনে গ্রামের বাড়িতে বাবা মাকে পরে বুঝিয়ে বলে দেবে!বছরের পর বছর চলে যায় সেই কথা রাখে না।সোনির বাড়ির সবাই ওদের মেনে নিয়েছে।তাদেরকেও আসাদ নিজের বাড়িতে যোগাযোগ করতে দেয় না।তিন বছরের মধ্যে দুবার জোর করে সোনির এবরশন করিয়ে দিয়েছে।সোনি শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য জোরাজুরি করলে অশান্তি শুরু হয়ে যায়।আসাদ বিগত চার পাঁচ মাস ধরে মাঝে মাঝে তিন চারদিনের জন্য উধাও হয়ে যায় কারখানায় কাজের চাপ আছে বলে।দিনদশেক আগে যখন এক সপ্তাহের বেশি হয়ে যায় বাড়ি ফেরে না তখন সোনি কারখানায় গিয়ে জানতে পারে এক সপ্তাহ ধরে আসাদ ছুটিতে আছে আর এখন মাঝে মধ্যেই এমন ছুটি নেই ।কথাটা শুনে সোনির কেমন সন্দেহ হয় ওখান থেকে গ্রামের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সেখানে হাজির হয় সন্ধ্যে বেলায়।বাড়ির সবাই অবাক তাদের চেয়ে সোনি আরও অবাক হয় যখন জানতে পারে এক সপ্তাহ আগে আসাদের বিয়ে হয়েছে তার নিজের পছন্দের মেয়ের সঙ্গে।অনেকদিন ধরে ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসাদ এখন নতুন বৌয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি গেছে।সোনি কান্না জুড়ে দেয়।লোক জানাজানি হয়ে গেলে মানসম্মান যাওয়ার ভয়ে আসাদের বাবা সেই রাত্রে ছেলেকে ফোন করে ডেকে নেয় আর সোনিকে বোঝায় পরে তাকে ঘরের বউ হিসেবে নিয়ে আসবে বলে পরের দিন ভোরবেলায় কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে এসে যখন সোনি তাকে ঠকানোর কারণ জিগ্যেস করে তখন খুব মারধোর করে।সোনি যখন জানায় যে সে পাঁচ মাসের গর্ভবতী আসাদকে জানায়নি কারণ সে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল! তখন অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করে।সোনিকে দুষ্চরিত্রের বদনাম দিয়ে ছেড়ে চলে যায় আর হুমকি দিয়ে যায় যদি গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয়বার যায় অথবা লোকজনকে জানায় তাহলে গুন্ডা দিয়ে খুন করে দেবে।সোনি আসাদের পায়ে পড়ে তার সঙ্গে থাকার জন্য কিন্তু আসাদ কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে চলে যায়।সোনি চোখে অন্ধকার দেখে।যাকে সে এত ভালোবাসে সে তার সঙ্গে প্রেমের নামে ঠকালো।সে আর বাঁচতে চায় না তাই চলে আসে এখানে। সোনির দুচোখের জল শুকিয়ে গেছে।
    সে অনুভব করছে পেটের ভিতর তার সন্তানের লাথি।সে কিছু বলছে!সোনি ঘুরে দাঁড়ায়,নাহ! সে এভাবে দুটো জীবনকে শেষ করে দেবে না।নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করবে আর আসাদকে শাস্তি দেবে যাতে আর কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন প্রেমের খেলা খেলতে না পারে।

  • কবিতা

    তোমার জন্য

    তোমার জন্য
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    তোমার জন্য সাত সমুদ্র দিতে পারি পাড়ি
    জঙ্গলেও বাঁধতে পারি সুখের ঘর বাড়ি।
    তোমার জন্য হতে পারি আমি ঘোর সংসারী
    সন্ন্যাসী হয়ে সব মোহ মায়া ত্যাগ করতে পারি।
    তোমার জন্য রাজা থেকে হতে পারি ভিখারি
    ত্রিভুবন জয় করে হতে পারি সর্বধিকারী!
    তোমার জন্য পাখি হয়ে উড়তে পারি আকাশে
    ভালোবাসার গন্ধ ছড়িয়ে দিতে পারি বাতাসে!
    তোমার জন্য পৃথিবী ছাড়তে পারি চিরতরে
    বার বার ফিরতে পারি জন্ম জনম্যান্তর ঘুরে!
    তোমার জন্য নির্বিধায় হাসিমুখে পারি মরতে
    শত্রু সকলকে নির্বিচারে পারি মারতে।
    তোমার জন্য সব সম্পর্কে টানতে পারি দাঁড়ি
    বন্ধুদের সঙ্গে এমনিতেই করতে পারি আড়ি।
    তোমার জন্য নতুন কিছু করতে পারি আবিষ্কার
    ধ্বংসের খেলায় মেতে পেতে পারি তিরস্কার।
    তোমার জন্য হতে পারি বিশিষ্ট বিখ্যাত
    অপমান গঞ্জনা নিয়ে হতে পারি কুখ্যাত।
    তোমার জন্য সদা থাকতে পারি প্রস্ফুটিত
    বিরহে নিশ্চিহ্ন করতে পারি নিজের অস্তিত্ব!

  • অণু গল্প

    প্রতিযোগিতা

    প্রতিযোগিতা
    -রেহানা দেবনাথ

     

     

    চলন্ত ট্রেনটা প্রতিদিনের মত দৌড়ে ধরতে গিয়ে পবন হাত ফসকে সজোরে প্লাটফর্মে পড়ে লাইনের দিকে গড়িয়ে পড়ে!তাকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে কিছুটা নিয়ে যাবার পর লোকজনের প্রচন্ড চিৎকারে ট্রেনটা গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে পবনের হৃদয়ের স্পন্দন ও ধীরে ধীরে কমতে থাকে! পবন শেষবারের মত চোখ বন্ধ করতে করতে শুনতে পায় মা বলছে “বাবু ট্রেন থামলে তবেই উঠবি, তাড়াহুড়ো করবি না”।

    বন্ধুরা বলছে –চল প্রতিযোগিতা করি! কে কত তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে চলন্ত ট্রেনে উঠতে পারি!!

    প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় দৌড়ে বন্ধুদের চেয়ে আগে ট্রেন ধরাটা পবনের কাছে আনন্দ ওর নেশার মত লাগত! জেতার পর আনন্দ আর ধরতো না।
    ট্রেন যাত্রীদের অনুরোধ, বিদ্রুপ, কটাক্ষ, শাসন কোনোটাই তাদের প্রতিযোগিতাকে বন্ধ করতে পারে নি।

    স্কুল চ্যাম্পিয়ন কিশোর পবনের দৌড় প্রতিযোগিতা সাঙ্গ হয় চিরদিনের মত, সেদিন হেরে যাওয়ার জন্য!!

You cannot copy content of this page