-
কবিতা- দোষ
দোষ
– শম্পা সাহাএলোমেলো আলগোছে ধরে রাখি তোকে
মাঝে মাঝে এঁকে রাখি স্বপ্নিল চোখে
প্রজাপতি পাখনায় রং কারিগরি
না জানি কখন ধরে সব জারিজুরি
ফিনফিনে ফিরফিরে পাখনায় ওড়া
বাগানী গন্ধে দেখি শুধু ঘোরাফেরা
তুই বড় আনমনা বড় বেখেয়াল
বেহাগী সুরের সাথে পাখোয়াজ তাল
একটা কামিনী গোছা শিউলির মুঠো
কানের মুক্তোঝুরি গোলাপ ও দুটো
ধরে দেখি ও ঠোঁটের পাপড়ি খানায়
আমাকে শুধুই দেখি মাতাল বানায়
তবু কেন দোষ দিস শুধু ই আমায়
শোন কোনো দোষ নেই ভালোবাসায়। -
কবিতা- আশা
আশা
-শম্পা সাহাদু একফোঁটা মণিমুক্তা যখন তিল তিল করে
হৃদয় নিংড়ানোর সাক্ষী
তাই লক্ষ্মী হবার ঝোঁক ছিলোনা কোনোদিনই
স্বপ্নেরা অন্যের ভরসায় ডোবে শুধু ডুবে মরে
ঝড়ে ভাঙে ঘর
গণতন্ত্র ভর বিপ্লব
বিদ্রোহী নারী নাম্নী
বিভীষিকাময় জ্বলন্ত রিপুময় অন্ধকার ঘরে
যাবেনা কোনোভাবে আটকানো আমাকে
জাগে প্রতি রাতে স্বপ্নেরা,
সিঁধ কাটে সমাজের কাঠামোয় ঘুণ ধরে
বিজয়ী মুকুট নির্দিষ্ট আমারি জন্য শুধু
মধু পেতে গেলে
বিষও সঙ্গী তার-ই, সব অন্ধকারই নিশ্চিত আলোয় ভরে। -
কবিতা- পরিপূর্ণতা
পরিপূর্ণতা
– শম্পা সাহাকখনো কখনো জানালার শারসি্ বেয়ে গড়াতে থাকা গলন্ত মোমের মতন
মেঠো রোদ্দুরের ঝলকানিতে পিছলে পড়া
ঠিকরে ওঠা যে সৌন্দর্য
সে তুমি নও
চোখে জ্বালা ধরানো মুঠো ফোনের মায়াবী নীলচে আলো
সেও তুমি নও
হেলেন-ও নও তুমি বা দ্রৌপদী
যার জন্য বার বার বেজে ওঠে বিউগল, সিঙা
তুমি নও বড় ফুটন্ত পলাশ রাঙা আদুরে বসন্ত কুমারী
নও কোনো সবিশেষ কিছু
জ্বাজ্বল্যমান হীরক দ্যূতি
তুমি আমার রতনের মা
যার কপালের ঘামে লেপটে থাকা দু একটা কুচো চুল
আর সাংসারিক পরিশ্রমে নাকের ডগায় জমা
দু একটা হীরক চূর্ণে
আমি পরিপূর্ণতা খুঁজে পাই। -
কবিতা- পুরুষালী
পুরুষালী
– শম্পা সাহাআমি পুরুষালী
হ্যাঁ আমি পুরুষালী
আমি জিনস্ আর শার্ট পড়ি
আমি পাড়ার ছেলেদের টিটকিরির জবাব দিই
লজ্জায় নুয়ে পড়ে,
হেসে গড়িয়ে পড়ে
বা ভয়ে জড়সড় হয়ে নয়,
মুখে ঘুঁসি মেরে সামনের পাটির
দুটো দাঁত উপড়ে ফেলে।
পাড়ার কেউ বউ পেটালে
আমি তার কলার চেপে ধরি
কেউ কোন অছিলায় আমায় শরীর স্পর্শ করলে
তার শরীরে রেখে আসি আঁচড়ের দাগ
নিদেন পক্ষে সেফটীপিনের ক্ষত।
কোন তুতো দাদা
বা তুতো কাকা জ্যাঠাদের
সহজ শিকার হইনি কোনদিন।
পাড়ার বউ কাকিমারা বলে “ধিঙ্গি”
আর ছেলেরা?
“মদ্দ মেয়েমানুষ।”
আমি ওদের কাছে
শরীরী লাস্যের প্রদর্শনী নই
যা ওদের কামাতুর দৃষ্টি পরিতৃপ্ত করে।
ঠোঁটে কোনদিন রং মাখিনি
বা লম্বা চুলে বেণী
ঐ খোঁপাই যথেষ্ট।
কেন?
কারণ আমার বাবা মারা যাবার পর
এই চারজনের সংসারে
আমিই একমাত্র রোজগেরে।
সেই ছোট থেকেই বাবার চায়ের দোকানের
আমিই বয় আমিই ক্যাশিয়ার
দুই ভাই বোনের পড়াশুনার খরচ
মায়ের হাঁপানির ওষুধ
আমিই যোগান দিই প্রতি মাসে।
আর অসুস্থ মায়ের পথ্য, ভাই বোনের
ইস্কুলের খাবার তৈরি করে
রোজ ঠিক সাতটায় এসে
দোকান খুলি।
হ্যাঁ ভোর পাঁচটায় আমাকে উঠতে হয়
ঘুমন্ত মায়ের কপালে হাত বুলিয়ে
ছোট ভাই বোনের মাথায় দুটো চুমো খেয়ে
ঘুম থেকে তুলে
আমি বাড়ি থেকে বের হই
রোজ সকাল বেলা।
যাবার পথে প্রায় দিন ই ঝামেলা করি
আমার দোকানের সামনে আড্ডা দেওয়া
চ্যাংড়াদের দলের সাথে।
হ্যাঁ আমি পুরুষালী
তাতে যদি কারো আপত্তি থাকে
আমার বয়ে গেছে
জাস্ট বয়ে গেছে।