-
কবিতা- আবাহন
আবাহন
-শিলাবৃষ্টিপেঁজা তুলো মেঘে আকাশ গিয়েছে ছেয়ে
বৃষ্টিদানারা তবু টুপটাপ ঝরে,
হলুদবসনা কন্যারা ওঠে সেজে
বরণের ডালা প্রস্তুত ঘরে ঘরে।নদীতটে সাদা কাশফুল মাথা নাড়ে
খেয়া বেয়ে আসে ওপারের মাঝি-মাল্লা
পানকৌড়িরা ছোট্ট ডানায় ওড়ে
রোদ বৃষ্টির কোনটা যে দেয় পাল্লা !ভোরের শিশির ঘাসের আগায় ব’সে
মাথা নেড়ে নেড়ে জানায় সুপ্রভাত !
সূয্যি মামার সোনালী আলোর ছোঁয়ায়
কালো মেঘ বুঝি হয়েছে যে কুপোকাৎ।কমলা আভায় সাদা শিউলির মেলা
প্রাঙ্গণে আঁকে অপরূপ আল্পনা ;
শহর গঞ্জে উৎসব সাজো সাজো
পল্লী উঠোনে ঢাকিদের জল্পনা।পদ্ম ফুটেছে মায়ের চরণ লাগি…
শালুক ফুলের ঘটেছে যে সমারোহ,
ব্যস্ততা ঐ কুমারপাড়ার দাওয়ায়,
এসো আজ সবে আগমনী গান গাহো। -
কবিতা- ক্ষত
ক্ষত
-শিলাবৃষ্টিজগদদ্ল পাথর দেখেছ কেউ!
দেখেছ রাতের অন্ধকার?
দেখেছ কি কোনো নির্জনতায় ঘেরা দ্বীপ?
দেখেছ ধূ ধূ জনহীন মরুভূমি?
দেখেছ কি প্রলয়ের সেই আতঙ্ক!আমি কিন্তু দেখেছি এর সব কটাই।
অনুভব করেছি তিলে তিলে যন্ত্রণা।
প্রতিনিয়ত শুনেছি মৃত্যুর হাতছানি।
কাছের মানুষদের অবহেলায় অপমানে
হয়েছি ছিন্নভিন্ন।
ভালোবাসার মানুষগুলোকে স্বার্থপরের মতো চলে যেতে দেখেছি।
আজ তাই জীবনের কোনো মানে খুঁজে পাই না।
পাইনা বাঁচার রসদ। -
রাজপথ
রাজপথ
-শিলাবৃষ্টি
রাজার পথ সে নয়কো জেনো,
তিনিই পথের রাজা
দোষ করলেও পায়নাতো কেউ
মস্ত বড় সাজা।
কেউ বা সাজায় সবুজ দিয়ে-
কেউ বা সাজায় রঙে,
কত মানুষ কত সাজে
বেরোয় নিজের ঢঙে।
বাঁকা-সরু-ছোট-বড়
গলি পথের শেষে-
বিশাল আকার পথের রাজা
দুহাত বাড়ায় হেসে।
কখনও বা আসেন নৃপ
কখন আবার রথ,
দেবতার পাদস্পর্শে
ধন্য সে রাজপথ।
এই পথেতেই ভালোবাসা
হাতের ওপর হাত…
পথেই হয় চাওয়া পাওয়া
একে দোকার সাথ।
গরীব ধনী সবাই হাঁটে
দুটো পায়ের বলে,
শবদেহের শ্মশান যাত্রা
হরিধ্বনি তোলে।
পথের শিশুর পথেই জীবন
পথেই তাদের ঘর,
পথই তাদের আপন করে
পথ নয়তো পর।
রাস্তায় কেউ ভিক্ষা করে
সকাল থেকে সাঁঝ-
এই দুনিয়ায় অনেক খুঁজেও
পায়নি কোন কাজ।
মরণকালে যার কেহ নাই
তারও আছে পথ,
পথিক এসে শেষ জল দেয়
সাজায় শবের রথ।
খুনোখুনি, দাঙ্গাবাজি
রাজপথের এক অঙ্গ,
নিশুত্ রাতে চোরা পথে-
আইন কানুন ভঙ্গ!
তবুও পথের হাতছানিতে
উধাও হওয়ার নেশায়…
নিরুদ্দেশের ঠিকানাতে
ঘর ছাড়লাম দোকায়।। -
কবিতা – প্রেম
প্রেম
– শিলাবৃষ্টিহৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগে
হৃদয়ের আলাপন,
ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা হয়ে
হৃদয়েই স্থাপন।
কত ভালোবাসা, কত আলো আশা
দুইটি মনের দ্বারে,
আলোর প্রদীপ জ্বলে ওঠে ঐ
নিকষ অন্ধকারে।
‘প্রেম’ এই ছোট শব্দের মাঝে
আকাশ লুকিয়ে থাকে –
ভালোবাসাহীন জীবন ফুরায়
চলতি পথের বাঁকে।
কত রঙে রূপে কত নামে এই
প্রেমের উতাল ঢেউ,
হিসেব রাখেনি, গুনতে পারেনি
ধরণীর মাঝে কেউ।
এসো আজ সখা দু’হাত বাড়ায়ে
সুহৃদ আলিঙ্গনে,
প্রাণের পরশে জাগাও হরষে
তোমার আপনজনে। -
অণুগল্প- নীরব প্রেম
নীরব প্রেম
– শিলাবৃষ্টিকতকাল কেটে গেছে … তবু কেন ছবিগুলো এত স্পষ্ট! রাতের আকাশে তাকিয়ে থাকতে বড় ভালো লাগে কবিতার। এই সময়টা কারো সাথে ভাগ করতে পারেনা সে। সময়টা শুধু নিজের- যত ভাবনার, যত স্মৃতির।
কেউই সেদিন বলে উঠতে পারেনি ‘ভালোবাসি’ এই ছোট্ট কথাটা। কী লাভ হল তাতে! একজন একাই জীবন কাটাচ্ছে, আর একজন- অনেক মানুষের মধ্যেও একা।
প্রতি মুহূর্তে সেদিন যার প্রতি টান অনুভব করতো, কারণে অকারণে ছুটে যেত- কতকাল হয়ে গেল তার সাথে দেখাই হয়নি। কবিতা বুঝতে পারতো- সৌমদার সাথে কোথাও যেন একটা যোগসূত্র ছিল সেদিন। সৌমদা সব কথা তার সাথেই শেয়ার করত। অঙ্ক করানোর ফাঁকে ফাঁকে গল্প, কথা, হাসি- ঠাট্টা কত কী …
তবু ফাঁকি ছিল না তাতে। অসম্ভব এক ভালোলাগা কাজ করতো মনের মাঝে।না……বলা হয়নি কিছুই সেদিন।
মনের ভাবাবেগগুলো মনের বাইরে আসেনি। চাকরি পেয়ে চলে গেল সৌমদা উত্তরবঙ্গের এক কলেজে। বলেও গেল না কিছু।
কবিতারও বিয়ে হয়ে গেল, সংসার আষ্টে পৃষ্ঠে ঘিরে ধরল তাকে। সময়গুলো কীভাবে যেন পেরিয়ে গেল।
রবীন্দ্র সদনে “কবিতা ও গানে গানে”র অনেকগুলো পাস পাওয়া গেছে। আজ অনেকদিন পর ভালো লাগছে খুব। দুই মেয়ে, স্বামী, দেওর সবাই একসাথে যাচ্ছে বাড়ির গাড়িতে। তবে …
চমক তখনো বাকি ছিল। সঞ্চালকের গলা কানে আসতেই বিস্ময়ে হতবাক কবিতা।
-” এরপর কবি সৌম সরকারের নতুন কাব্য ‘নীরব প্রেম’এর মোড়ক উন্মোচন হবে, আমরা তাঁকে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করছি।” -
কবিতা- দীপান্তরের বন্দীবীর
দীপান্তরের বন্দীবীর
-শিলাবৃষ্টি
দেশজুড়ে আজ রমরম্ করে-
স্বাধীন পতাকা উত্তোলন,
কোথাও চলেছে নাচ গান আর
কোথাও বৃক্ষ রোপণ।
কোথাও আবার মঞ্চ উপরি
পপ্ ডিসকোর নৃত্য,
ভারতের মাটি মাথায় ছুঁইয়ে…
আকুল আজি এ চিত্ত।
কেন জানি আজ উদাস হৃদয়-
এত যে উতল হয় !
বারে বারে আজ অনুভূতিগুলো
কুরে কুরে শুধু খায়।
শহীদ হয়েছে বীর সন্তান…
একে একে প্রতিজন……
ভারত মাতার দামাল ছেলেরা
করেছে রক্তপণ।
আন্দামানের কালাপাণি ঠেলে–
বিদেশী শাসক দল,
কত শত শত বীর সন্তানে…
পাঠালো করিয়া ছল।
চারিদিকে জল ,ঘণ জঙ্গল…
মাঝে একখানা দ্বীপ-
নেইকো সেথায় মানুষ স্বজন…
জলেনা সন্ধ্যাদীপ।
কারো হাতেপায়ে শৃঙ্ক্ষল বাঁধা,
বন্দীরা করে শ্রম ;
বন্ধু ,এসব কল্পনা নয়…
নয় এতটুকু ভ্রম ।
উঁচু উঁচু সব বিরাট পরিখা…
সেলের পরিধি ছোট,
সেলুলার জেল …লৌহ দরজা…
জানালাও নেই খাটো।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খুপরি উপরে
অক্সিজেনের তরে ।
বীর যোদ্ধারা সীমাহীন ক্লেসে-
রাত দিন কাজ করে ।
মাঝে মাঝে সব চিৎকার ক’রে,
অসীম সাহসে কয়—
” বলো সবে জয়, ভারতের জয়…
নাই ভয় ,নাই ভয় । ”
শত শত ওই বুটের আওয়াজ…
চাবুক পিঠের পরে ;
শাসকের দল শাসন করছে-
নৃশংসতার করে।
খাদ্য যা দেয় – মানুষ খায়না…
পশুরাও বুঝি তাই,
অত্যাচারের শেষ কোথা বলো…
হায়রে মানুষ ভাই !
সহ্যেরো এক সীমারেখা থাকে,
প্রতিবাদী বুক মরে ;
প্রণমি এ দিনে সংগ্রামী নেতা-
বীর সাভারকরে ।
এখনও যখন ফাঁসির মঞ্চ…
খোলা মানুষের তরে,
ভিড় করে কত স্বাধীন মানব…
সেলুলার জেল পরে !
এখনও যখন ধ্বনিত আকাশে
” জনগণমন অধি “,
সেই সেদিনের পিপুল বৃক্ষ —
বলে যায় নিরবধি !
তোমার চক্ষু শুষ্ক থাকে কি -?
বক্ষ ভেজেনা জলে?
বোবা কান্নাকে ঢাকোনা কি তুমি …
ছলে বলে কৌশলে ?স্বাধীন ভারতে স্বাধীন মানব
গগনের দিকে চায় ……
মুক্ত আকাশে মুক্ত খেচর _
মুক্ত ডানায় যায় ।। -
কবিতা- শোলোক বলা কাজলা দিদি
শোলোক বলা কাজলা দিদি
– শিলাবৃষ্টিসেও যেন এক কাজলা দিদি
হারিয়ে কোথায় গেছে
খুঁজে বেড়াই সারাটা দিন
লুকিয়ে বুঝি আছে!বল না মাগো দিদিও কি আজ
জেগে আকাশ কোলে?
হাজার তারার মতোই কি সে
মিটমিটিয়ে জ্বলে?বাঁশ বাগানের মাথায় যখন
উঠবে চাঁদের আলো,
আসবে জানি কাজলা দিদি
ঘরের প্রদীপ জ্বালো।নতুন শোলোক লিখেছে সে
শুনতে আমায় হবে,
দেরী হলে গোমড়া মুখে,
চোখ পাকিয়ে রবে।খামার বাড়ি, মরাই পাশে
পাতিলেবুর গাছ,
মনে কর মা, পাকার পুকুর
জল থৈ থৈ, মাছ?স্মৃতির ঘরে জমা মাগো
একশো হাজার কথা,
রাতের বেলা ঘুম আসেনা
চোখের পাতায় ব্যথা।জোনাক পোকা ঝিঁঝির ডাকে
রাত্রি গভীর হয়,
শোলোক বলা কাজলা দিদি
সাথেই জেগে রয়।কবেই তুমি চলে গেছ
শোক সাগরে রেখে,
ছিল পাশে কাজলা দিদি
রাখতো চোখে চোখে।ভালোবাসা স্নেহ মায়ায়
আগলাতো সে বোনে,
হারিয়ে যেতাম তেপান্তরে
নয়তো মনে মনে ।হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই
নেই তো কোথাও আলো;
ঝাপসা চোখে বৃষ্টি নামে
আর লাগেনা ভালো।বলনা মাগো কোথায় পাবো?
কোন পুকুরের পাড়ে?
বরষা রাতে যখন ঝিঁঝি
ডাকবে ঝোপে ঝাড়ে …তখন আমার শোলোক বলা
কাজলা দিদি এসে…
শোলোক বলে ঘুম পাড়াবে
স্বপ্নসুখের দেশে? -
কবিতা- আঁধার ঘরে একলা বসে আমি
আঁধার ঘরে একলা বসে আমি
– শিলাবৃষ্টিমনের মানুষ মন ভাসিয়ে দিয়ে
পাল তুলে যাস সাত সাগরের পারে,
আঁধার ঘরে একলা বসে আমি
চারণ করি স্মৃতিই অকাতরে।পাথর দিয়ে হৃদয় চাপা রাখিস
একবারো কি ভাবিসনা আজ তুই,
তোর বিহনে একলা শূন্য ঘরে
আলুথালু আঁকড়ে ধরে ভুঁই …যে থাকবে অনন্তকাল ধরে
প্রতীক্ষাতে উদাস দুটি আঁখি।
প্রেমের ভেলায় ভাসিয়ে ছিলি কেন
সময় এলে দিবিই যদি ফাঁকি?শাওন যদি আবার এলো ফিরে
ফিরলিনা তুই ভুলেও একটিবার,
প্রলয় বুঝি দমকা হাওয়ায় আসে
চারদিকে ঐ ঘনায় অন্ধকার।বাইরে যারা গিয়েছিল চলে
যে যার মতো ফিরল ঘরের পানে,
আমার ঘরে প্রদীপ জ্বলেনি তো
কেউ ফেরেনি ভালোবাসার টানে। -
কবিতা- ঘর
ঘর
– শিলাবৃষ্টিআমরা তো ভাই ঘরেই থাকি,
ঘরেই কাঁদি হাসি,
ঘরেই আমরা কর্ম করি
হোক তা সাজো বাসি।
কোন্ অতীতে যত্ন করে
সাজিয়ে ছিলাম গেহ,
অনাত্মীয় মানুষগুলো
ছিলনা পর কেহ।
কর্মক্ষেত্রে ঘরের মানুষ
কর্মে যখন বিভোর,
দু’হাত দিয়ে আগলেছি ঘর
ছিল মনের জোর।
দুর্দিনে আজ পায়ে বেড়ি,
উপায় কি আর বলো!
বিশ্রাম হোক, কটা তো দিন
একটু কষ্টে চলো।
হাতে পাতে করছে সবাই
করছে গৃহকর্ম,
কেউবা চেষ্টা করতে গিয়ে
হচ্ছে গলদঘর্ম।
পাচ্ছে হাসি কাউকে দেখে
হচ্ছে কষ্ট মনে,
‘করোনা’ ভীতি এক করেছে
সকল আত্মজনে।
নিজের হাতে আলুর চপ আর
সান্ধ্য মশলা মুড়ি,
যাই বলো ভাই চায়ের সাথে
আছে কি এর জুড়ি?
পরিবারের সবাই কেমন
একটি ছাদের তলায়!
রাত দিন ভোর বিকেল সকাল
মাতছি পুতুল খেলায়।
ছোট্টবেলার খেলাঘরে
আমরা পুতুল বুঝি,
পেছন ফিরে অবসরে
শৈশব দিন খুঁজি।
এ যেন এক নতুন ঘরে
নতুন আলো আশা,
সম্পর্কের ভাঁজে ভাঁজে
মিষ্টি ভালোবাসা।
তেমন কি আর অসুবিধে
নির্বাসন তো ঘরেই;
পাঠিয়েতো কেউ দেয়নি আমায়
সেই সে তেপান্তরেই!
ঘরে কাটাই বেশী সময়
ঘরই আমার স্বর্গ,
সময়টা তাই থমকে তো নেই
এটাই আমার গর্ব। -
কবিতা- নিয়মের ঘেরাটোপ
নিয়মের ঘেরাটোপ
– শিলাবৃষ্টিনিয়ম মেনে চল্ নারে ভাই
নিয়ম মেনে চল্,
যার সাথে আজ বলবি কথা –
নিয়ম মেনেই বল্।
ভোরের বেলা সূর্য ওঠে,
রাতের বেলা চাঁদ ,
সুসভ্য এই জগৎ মাঝে
আমরা কেন বাদ!
চক্রাকারে ঘুরছে যে কাল
গ্রীষ্ম থেকে বরষা..
প্রকৃতির এই বিবর্তনে
কর্ না একটু ভরসা।
রাতে ফোটে সব সাদা ফুল
দিনেবেলায় রঙিন –
এই নিয়মের ব্যতিক্রম তো
হয়নি কোন দিন ।
আমরা শুধু বেনিয়মে
ছোট্ট জীবন কাটাই,
পদে পদে বাধা বিপদ …
কেবল হোঁচট খাই।
নিয়ম মেনে চলছে রে দেখ্ –
বিশ্বের সব ধর্ম –
শিক্ষাকে আজ লাগাই কাজে
যেথায় আমার কর্ম।
বে-নিয়মের চাবিকাঠি-
রইল তো তোর হাতে,
যখন খুশি খুলবি তালা
দিবস থেকে রাতে।
জীবনের এই রঙ্গশালায়
আমরা নাটের পুতুল;
নিয়ম মাফিক না চললেই
গুনবি ভুলের মাসুল।।