• কবিতা

    কবিতা- নিয়ম ভাঙার কাণ্ডারীকে

    নিয়ম ভাঙার কাণ্ডারীকে
    -সঙ্কর্ষণ

    “লিখিনা পরের তরে… ” শুনে সমকাল
    হেসেছিলো দেখে চেনা বোধের আকাল,
    পরিচিত এ আওয়াজে ভারী কিছু নেই
    যা ছিলো থেকে তা যাবে যেই কার সেই।

    যে লেখা লিখেছো শুধু আপনার তরে
    মরণে যাবে তো লিখে স্মৃতিমর্মরে?
    পুরোনো ধাঁচেতে লেখা আবেগী দ্যোতনা
    তাকে তো কবিতা ব’লে বোঝাতে হ’তোনা…

    যা কিছু ভাঙার ছিলো পেরেছো কি ছুঁতে?
    এতো তো ভাঙন পাড়ে, ভাঙেনি কিছুতে।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রখর দারুণ দূরে

    প্রখর দারুণ দূরে
    -সঙ্কর্ষণ

     

     

    সারাটি দিনের যতো মুছে দিতে শোক
    সে বধূ চা’বেই শুধু রাত বড়ো হোক।

    নবনী সকাল থেকে দুপুরে আগুন
    রাতেতে আপন লীলা দেখাক ফাগুন।

    আলোতে পুরুষ যারা চষেছিলো দিক
    প্রেয়সী ক্রোড়েতে রাতে মাতাল প্রেমিক।

    আলো সে ভালো বেশী আলো ভালো নয়
    স্নিগ্ধ জোছনা তাকে ঘিরে কালো র’য়।

    প্রতিটি ঘরেই যবে এসেছে সুদিন
    ঘুমেতে রজনী মিঠে শুনিয়েছে বীণ।

    আসলে দিনেই যেন রাতের কালো
    আঁধারি আলোতে বাসি জীবন ভালো।

  • কবিতা

    কবিতা- পেরিয়ে এসেছি কতো

    পেরিয়ে এসেছি কতো
    -সঙ্কর্ষণ

     

     

    অসংখ্য তারায় ভরা, কৃত্রিম বা অকৃত্রিম
    এই সুবিশাল আকাশের কাছে
    আমার যে কথাগুলি বলার ছিলো তার সবটুকুই
    তোমাকে বলেছি… তুমি কি আকাশ তবে?
    তোমাকে তো ছোঁয়া যায়, তাকে তো তা যায়না।

    একাকী চলার পথে হলদে-সবুজ কতো পাতা
    মাড়িয়ে এসেছি, দেখেছিলো অবচেতন আর… আর
    ছিলো আবেগী দ্যোতনা মাখা শুধু কিছু নিভন্ত বাতি,
    তারা কি সবাই জ্বলেছিলো ভালোবেসে সারাদিন ধরে
    যেমন আঁধারে একা ফুরিয়েছি আমি…

    এখনও শয়নে দেখি, স্নিগ্ধ আলোর কোনো ঢেউ
    আমি বসে বেড়া দেওয়া উঠোনের মাঝে
    প্রতিটি কুঁড়ির নামে শপথ… শুধু চেয়ে নেবো
    এই শীতার্ত রাত্রির মতো একটি আরাম-কেদারা
    লেখা ছেড়ে উপভোগে মিশে যাবো জোনাকির ডানায়…

    ঢেউয়ের ভেতর থেকে মৌমাছি পদক্ষেপে
    তুমি এসে হেঁটে যাবে হৃদয়ের আদিম গভীরে।

    এক পা, দুই পা, তিন পা, চার…

  • কবিতা

    কবিতা- স্তব্ধ দহন

    স্তব্ধ দহন
    -সঙ্কর্ষণ

     

     

    ক্রমশঃ অতিবাহিত হচ্ছে একটি শীতার্ত রাত।
    সেভাবে এখনও আসেনি শীতের সময়…
    বর্ষামঙ্গলের অনুষ্ঠান পেরিয়েছে বহুদিন।

    মাঝখানে যে স্নিগ্ধ স্মৃতিটুকু থাকার কথা
    তাকে স্বেচ্ছায় ভুলে যাওয়ার নামই কবিত্ব,
    আবেগের মাপ বুঝি চিনেছিলো দুঃখ ও সুধা।

    “মহাজন গতস্য পন্থায়” ক্লান্ত সে বিন্দু
    জেনো আজ দু’দণ্ড দাঁড়াবে অতীতের কাছে।

    আলো দিতে দিতে ছটা দেখে বিস্মিত যারা
    কেন্দ্রে গোলকটিকে ছুঁয়ে দেখেনি তো…
    শোনো শোনো ঈশ্বর তুমি তাকে জ্যোৎস্না দিও ধরে,
    দূরে সরে গেছে যেন কতো দূরে সরে গেছে।

    এই মহা মহা পৃথিবীর শেষটিতে পৌঁছোতে চাওয়া
    সকলেই একদিন শেষলগ্নে হঠাৎ পৌঁছে যাবে,
    অথচ অপেক্ষায় যে ছিলো, সে’ও জানেনা কীসের…
    বিস্তৃতি ক্রমে ছোটো হ’চ্ছে, নিভে যাচ্ছে আলো।

    কেন আজ রাত হ’লে ডাকেনা তো রাতচরা পাখি
    যারা মিশে যেতে চায়, বাতিগুলো সারি সারি
    নিশ্চুপে দেখে… যে ব্যক্তি পথ ছুঁয়ে চলেছিলো আজ
    শোনেনি তো নৈকট্য চাপা পড়ে গেছে এরকমই রাতে।

    আকাশের রঙে বিলীন হ’তে বিন্দুটি যে পথ হেঁটেছিলো,
    শীতার্ত রাত এলে এঁকেবেঁকে নড়ে ওঠে ট্রিংট্রিং ট্রিংট্রিং।

  • কবিতা

    কবিতা- অদ্য শেষ রজনী

    অদ্য শেষ রজনী
    -সঙ্কর্ষণ

     

     

    এমন একটি সন্ধ্যায়
    সময় হলেই থেকে থেকে হাওয়া দিতে থাকে।
    দুয়েকটা দোকানে পুরোনো বইয়ের মতো
    একা একা শুয়ে থাকি, আকাশের দিকে দেখা।
    আলো এমনভাবে জ্বলার চেয়ে তুমি নিভে যাও।
    এখানে অব্যাহত সময়ের পারাপার…

    তবু ভাবি “থাকো” বলবোনা
    আশা করে থেকে যাই নিয়ে যাওয়া হবে।
    যা কিছু আমার, ভুলে গেছি…
    তাই বুঝি শেষ বলে শুরুটুকু রেখে চলে যাও
    ভালোবেসে কালোকে ঠকিয়ে?

    এ রাতে আড়াল রেখে চলে যাচ্ছেন মা।
    ঘুমন্ত কপালে উদযাপনের স্নেহচিহ্ন রেখে গেলে
    আমরা আবারও আশা করে থাকবো।
    বড়োরাস্তার মোড়ে জ্বলা প্রতিটি আলোতে
    শরৎ ও হেমন্তের বিদায়ী আলিঙ্গন…

    বিমূঢ় অশ্রু যেন শিশিরকে প্রশ্ন করে,
    “বেলা না যেতে খেলা কেন তব যায় ঘুচে?”

  • অণু কবিতা

    অণুকবিতা- বারি

    বারি
    -সঙ্কর্ষণ

     

    বুকেতে যদি বা রাখো পরিযায়ী ডানা
    পালকে জড়ানো আছে অচেনা ঠিকানা।

    যে মেঘে ঝরালো জল এ শুষ্ক হৃদয়ে
    আকাশও বাঁধেনি তাকে সে চেনা সময়ে।

    তুমি কি ভিজেছো তবে হে অনামী পাখি
    মুছেছো আহত ডানা না জেনে বেবাকই?

  • কবিতা

    কবিতা- কিরীটি

    কিরীটি
    -সঙ্কর্ষণ

     

    প্রয়োজনীয়তা বিলোতে যাবেনা তাঁকে
    জোনাকির আলো এঁকে রেখে গেছে শোক,
    পৃথিবীর বুকে নেমেছে যেন নরক
    হেন শীতলতা কে ছড়ালো বৈশাখে?

    নীচে থেকে গেলো তোমাদের মতো যারা
    প্রতিদান বলে শোণিতের ভাগী গুরু,
    চক্রের গতি উত্তর হোলো শুরু
    মুছে দিয়ে যাবে অতীতের আশকারা।

    রক্ষার তুমি কতোটুকু নেবে দায়
    ভাগ্যের শরে বোঝোনি কি তুমি মৃত,
    হে নিষাদরাজা কবে হবে অবহিত
    মাত্ হোলো জয়ী বিধাতার নিশানায়?

    কী সুখের আশে অসুখীর পানে চাও?
    মাথা নীচু করে তারও পরে চলে যাও।

  • কবিতা

    কবিতা- অধিকারিণীর সন্ধানে

    অধিকারিণীর সন্ধানে
    -সঙ্কর্ষণ

     

    ছেলেটি গল্প, গান, কবিতা লেখে
    পর্যায়ক্রমে সৃষ্টির সর্বত্র অবাধ বিচরণ।
    ঘোর কৃষ্ণকায়া নর্তকীরা দিগন্তে জড়ো হতেই
    তার চোখে একটি মুখ ভেসে ওঠে
    বিষণ্ন, গভীর, ক্ষীণকায়া…

    সর্বত্র দেখেও তুলিতে মায়া বাঁধা পড়েনা কখনো
    নিজেকে অত্যন্ত ব্যর্থ শিল্পী মনে হয়।
    অথচ এই আরোপিত ঈশ্বরত্ব কেবল তাড়া করে,
    এমনই জন্ম হয়ে গেছে শত সহস্র অনুভূতির…
    কায়াটুকুই সত্যি হলে ছায়াকে চোখে হারায় কি?

    এখনও বর্ষা আসে, ফুলঝরা জোছনায়
    কৈশোরে একা দোলনার নাম কবিত্ব…
    আরেকটা বসন্ত এসে দোলা দিক বুকের ভেতর।

    প্রেমিকায় মাতৃত্ব খুঁজে পাও, স্নেহতে প্রেমিকাকে।
    এসো সোনালী অতীত শুনে যাও
    শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুটি খুঁজে পাবেনা তো…
    এ মুখ ধূমকেতু রূপ ধরে একা হাসে বুকের ভেতর।

    শ্রান্ত হৃদয়, চূড়ান্ত নির্ভর হয়ে কাছাকাছি আসে
    নাতিশীতোষ্ণ একটি বলয়ের প্রলেপের দূরত্বে।
    নরনারী ওম নেয়…
    মিশে তারা যায়না তো প্রেমেরই আবেগে।

    রাত হলে মুখটিকে চাঁদে দেখে কবি,
    এ কীসের অভাব… কখনোই ফারাক রাখেনা
    মণিহার ও পেতলের ভেতর?

  • কবিতা

    কবিতা- নির্লজ্জ

    নির্লজ্জ
    -সঙ্কর্ষণ

     

    ধরে নাও দেশটি আমার একটি শরীর
    মনে হয় চলছে জাদু দুষ্টু পরীর,
    দেখোনা তীব্র ব্যাথায় ধুঁকছে কেমন?

    কারা ঐ জীবসেবাইত খুঁজছে ছাতা
    এসবই খুব চেনা এক গল্পগাথা,
    তুমি কি নিত্যনতুন দেখছো এমন?

    কেন হায় অশ্রু এলেই রক্ত ঝরে
    এখনও সন্দেহ হয় শেষ প্রহর এ,
    এ দেহে ঠুকছে পেরেক কেউ মনে হয়।

    কারা ঐ উঠলে জুতো জিভ বেরিয়ে
    সুগভীর বৈতরণী যায় পেরিয়ে,
    তরী বা’য় ধূর্ত ভাষার মিথ্যে বিনয়।

    আমাদের একটি লেখাও কেউ পড়েনা
    নলিময় রক্ত ওঠে ঠোঁট নড়েনা,
    হাসে ঐ বদ্ধ পাগল বকছে প্রলাপ।

    আমাদের উচ্চাশাতেও ঝুলছে গাজর
    ভেঙে যায় ক্ষীণ আঘাতেই অস্থিপাঁজর,
    ফাটিয়ে জন্ম নেবে কাষ্ঠগোলাপ।

    তেমন এক রাত্রি এলে যাই পালিয়ে
    আজীবন নোংরা কাদার এক নালি এ,
    এতো ভয় সব কথা ঠিক বলতে বারণ।

    খুনি তার হাত দুটিতেই রক্ত মাখা
    আমি কীট দেখতে পেলেও দৃষ্টি ঢাকা,
    নরাধম লজ্জাহীন এক মস্ত কারণ।

  • কবিতা

    কবিতা- নিষিদ্ধ পত্রপ্রেরকের স্বীকারোক্তি

    নিষিদ্ধ পত্রপ্রেরকের স্বীকারোক্তি
    -সঙ্কর্ষণ

     

    “একবার দেখুনই না যদি বদনাম ঘোচানো যায়।
    আমি আপনাকে আপনি-আজ্ঞে করতেও রাজি।
    পেছনে ছুরি বিঁধে আছে তো রক্ত মুছে নিন…
    আপনি কাউকে বিঁধিয়েছেন তো খুলে নিন।

    নাম দিচ্ছেন কেন? সাপ, বাঘ, গরু, ছাগল কেন?

    না, মানে ওদের আত্মরক্ষার অধিকার নেই?
    চরে খাওয়ার অধিকার নেই?
    পাপের ভাগ ওদের, পুণ্যগুলো আপনার তাইতো?

    আপনি সমতায় বিশ্বাস করেন অথচ মুকুটে
    মণির মতো শোভা পাচ্ছে অসংখ্য রূপক…
    অথবা তূণে ভিন্ন ভিন্ন বিষাক্ত অস্ত্র।
    এই কে, কেন, কবে, কোথায়, কী জন্য এসব
    আপনাকে প্রশ্ন করা নিরর্থক…
    শুধু বলুন এহেন দ্ব্যর্থপূর্ণ অস্তিত্ব নিয়ে আমি
    এতোগুলি শরীরী নিষ্প্রাণের ভেতর কী করছি?”

    নিজেকে এসব লিখতে বসলে
    বিবেক কাঁধে হাত রাখে, মৃদু চাপে জানান দেয়।
    হেসে ওঠে, “নিজেকে ভগবান ভাবছো নাকি?”
    নিরাশ হয়ে পড়লে বুকে প্রকৃতি জেগে ওঠে…

    তাতে জীবন্ত বন আছে, নদী আছে, পাহাড় আছে…

    শুধু মনুষ্যত্ব আরোপ করতে অন্য কোনো মানুষ নেই।

You cannot copy content of this page